হ্যা,তাই।
জন্মসুত্রে এমন এক বংশধারার বাহক আমি,আমার শরীরে এমন এক পরিবারের রক্ত দৌড়ায়-যারা নিজেদের বংশগৌরবে গর্বিত ভীষণ। এবং ছেলেবেলা থেকে আমাকেও সেই শিক্ষাই দেয়া হয়েছে। শেখানো হয়েছে বংশগৌরবে গর্বিত হতে,গলার রগ ফুলিয়ে ঝগড়া করতে নিজের স্বজনদের পক্ষে। আমরা বিশাল একটি,বিশেষ একটি,বিখ্যাত একটি পরিবারের অংশ।
পরিবার তাই সবার আগে।
তবে শিক্ষা মনে হয় কাজে আসেনি। আমার মত তুচ্ছ প্রাণী ঠিক সাহস করে উঠতে পারেনি অহংকারী হবার। (অহংকার করতে কলিজা লাগে,জানেনই তো!আর আমি ভীতুর ডিম। )আমার মত ক্ষুদ্র মানুষ কখনোই বন্ধু মহলে সাহস করে পরিবারের নামের ফুটানী করতে পারেনি।
(করতে গেলেই যে নিজেকে আরও বেশী তুচ্ছ মনে হয়েছে!)
কি করে পারবে বলুন?
হতে পারে আমার শরীরের অর্ধেকটা রক্ত সেই বংশের,যারা বংশ পরম্পরায় বাংলাদেশকে নেতৃত্ব দিয়ে আসছে। হতে পারে আমার মা কোনো এক সাবেক প্রধান মন্ত্রীর চাচাতো বোন। আমার খালাদের কেউ সেই প্রধানমন্ত্রীর প্রটোকল,আবার মামা-খালুদের কেউ মন্ত্রী। আর ভাইয়েরা সব রাজনৈতিক নেতা। ... .. হতে পারে আমার রক্তের অর্ধেকটা এমন।
কিন্তু বাকি অর্ধেক?বাকি অর্ধেক তো এসেছে সেই সাদামাটা মানুষ গুলো থেকে,যাদেরকে কৃষক বলা হয়। আমার চাচারা সকলেই বড় বেশী সাধারন মানুষ,আমার মায়ের ভাষায় "চাষা-ভূষা"। আমার কোকিলের মতো খালাতো-মামাতো কাজিনদের মাঝে আমি তাই বড় বেশী বেমানান। কাকের মতো। কাজিনদের ভাষায়-"খ্যাত"।
এ পরিবারের ছেলে-মেয়েরা লেখাপড়া করে প্রাইভেট ভার্সিটিতে,আমি সরকারীতে কেন করছি?এরা ফ্যাশনেবল কাপড় পড়ে,বই নয়। আমি কেন পড়ছি?লেট নাইট পার্টি করার মত স্মার্ট নই আমি,স্যাটেলাইট টিভি আর লেটেস্ট ফ্যাশন নিয়ে বেশীক্ষন গল্প করা আমাকে দিয়ে হয় না। অবশ্যই আমি খ্যাত,তাই না?
আমি বেয়াড়াও। কারন কাল নির্বাচন আর আমাদের আসন থেকে আমার যে ভাইজান প্রার্থী হয়েছেন,তাকে ভোট দিতে রাজি হচ্ছি না আমি। ইচ্ছা প্রকাম করেছি "না" ভোট দেবার।
অগ্যতা মাতৃদেবী নাখোশ এই তুচ্ছ প্রাণীর প্রতি। এবং কথা বলা বন্ধ। আমার পিতৃদেব সহ বাড়ির সকলে যে মার্কায় ভোট দেবে,সেই মার্কায় সিল দিতে আমার কি আপত্তি-কারও মাথায়ই আসছে না। তুচ্ছ প্রাণীর যে বিদ্রোহ করারও অধিকার নেই। কাউকে বোঝাতে পারি না যে-আমার চাই না তোমাদের খমতা আর জৌলুস।
আমি চাই না নামী আত্মীয়দের নামের আড়ালে হারিয়ে যেতে। আমি শুধু আমি হতে চাই। ভালো হোক,মন্দ হোক.. .. ..তবু নিজের মতোই হতে চাই।
মাত্র তেইশে কি বোঝে মানুষ পলিটিক্সের?বড় হও,বুঝবে। আপাতত আমাদের কথাই শোনো।
একটা ভোট নষ্ট করার মানে হয় না। -আমার সম্পর্কে পরিবারের এমনটাই মতামত এবং উপদেশ।
হ্যা,"রাজাদের এই নীতির" তেমন কিছুই বুঝি না আমি। কিন্তু এটুকু বুঝি যে অন্যের বিবেচনায় ভোট দিলে,সেটা আসলে দেবারই কোনো প্রয়োজন নেই।
আমার বোঝাটা কি ভুল????
আপনারাই বলুন।
সাহায্য করুন এই অবার্চীন বালিকাকে।
এককালে এই বংশের বুকেই অনেক বড় একজন মানুষ জন্মেছিলেন। যে মানুষটা আমাদের জন্য ¯স্বপ্ন দেখেছিলেন স্বাধীন একটা রাষ্ট্রের। যিনি ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে আছেন মানচিত্রের বুকে ছোট্ট এই দেশটির জন্ম ইতিহাসের সাথে।
সে মানুষটিকে আমি দেখিনি,সে প্রশ্নই ওঠে না।
শুধু গল্প শুনেছি,ঠিক যেভাবে আপনারাও শুনেছেন। আমি জানিনা আজ তিনি বেচে থাকলে বাংলাদেশটার চেহারা কেমন হতো। আমি জানিনা।
কিন্তু আমার ভাবতে ভালো লগে। আমার ভাবতে ভালো লাগে যে তিনি বেচে থাকলে হয়তো সবকিছু এমন হতো না।
বাংলাদেশকে তিনি কখনোই এতটা অসহায় হয়ে পড়তে দিতেন না.. .. ..
আমার ভাবতে ভালো লাগে। আশা করতে ভালো লাগে।
বোকামি,তাই না?আগেই তো বলেছি-আমি খ্যাত,বোকা, তুচ্ছ এক অবার্চীন বালিকা। নির্বাচনী হাওয়া আপাতত যার কাছ থেকে নিজ মাকে,নিজ পরিবারকেই দূরে নিয়ে গেছে।
একদিন আমার এক শিক্ষক বলেছিলেন-“প্রচলিত নিয়ম যখন ভালো লাগে না,তখন নতুন নিয়ম তৈরি করতে শেখো।
তোমরা নতুন প্রজন্ম যখন নতুন ধারা নিয়ে আসবে,তখনই কেবল বদলাবে বাংলাদেশের ভবিষ্যত। তার আগে নয়। "
মাঝে মাঝে আমিও তাই ভাবি।
ভাবি-কাউকে না কাউকে তো এগিয়ে আসতেই হবে। অবশ্যই আসবে কেউ।
হতে পারে সেই কেউদের ভীড়ে আমিও একজন হবো! আবার সঙ্কাও জাগে মনে পরখনেই। ভাবি-আমিও কি বদলে যাবো তখন? নিজেদের দল কমতায এলে হয়ে উঠবো লোভী আর অহংকারী?খমতা আর অর্থের চাকচিক্যে আমার পরবর্তী প্রজন্মেরা বখে যাবে এমন কুৎসিত ভাবে?সকলের পরিণতি যদি এই একই রকম হয়,তাহলে সেই "এগিয়ে আসার' মানেটাই বা কি হলো?
কিন্তু এমনটা ঘটবে না। আমি আশা করি যে ঘটবে না। ভবিষ্যতে বাংলাদেশের কর্নধার হবে এমন কিছু মানুষ,যারা এই দেশটাকে সত্যি সত্যি ভালোবাসবে-শুধু খমতার সিংহাসনকে নয়। যারা এই দেশের সাদামাটা মানুষ গুলোকে ভালোবাসবে,নিজেদের জানবে তাদেরই একজন হিসাবে।
যারা সেই দিনের খোজ আনবে,যখন এদেশের একটি মানুষও খালি পেটে ঘুমাতে যাবে না। আমি থাকি আর না থাকি,কিন্তু সেই দিন অবশ্যই আসবে। আসতেই হবে।
হয়তো নিকট ভবিষ্যতে নয়,কিন্তু অদূর ভবিষ্যতে অবশ্যই!
আমি জানি সেই সময় আসবে। আমি জানি,বিশ্বাস করি,স্বপ্ন দেখি।
স্বপ্ন না দেখলে স্বপ্ন সত্যি হবে কি করে?
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।