আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

একজন হার না মানা মানুষের কথা - ২

-

১ Click This Link ২ নীল পরিকল্পনা করে ফেলল জেদের বশেই। ঠিক হলো- এই মাঠেই এই দলকেই হারাতে হবে খেলে। এবং তা করতে হবে যত দ্রুত করা যায় ততোই স্বস্তির হবে। জগতে কেউ কেউ আছে যে একবার একটা নির্ধারন করে ফেললে তা সম্পূর্ণ না করা পর্যন্ত হাল ছাড়ে না। কিন্তু নীলের বয়সে ততটুকু আশা করা বাড়তি বলেই ঠেকা উচিৎ।

তথাপি এই ছেলেটি কিন্তু সেইরকম অসাধ্যকে আয়ত্ত্বে আনতে বদ্ধ পরিকর হয়ে উঠলো। প্রথম কাজ হলো একটা বল কেনা। মা’র কাছে কিছুক্ষন আবদার করার পর তাও পাওয়া গেল। তবে তা সন্ধ্যার সাথে সাথে ঘরে ফেরার প্রতিশ্রুতির বিনিময়ে। এই বেলা দল বানানোর কাজ।

খালি হাতে বাড়ি বাড়ি যেয়ে ত আর লাভ হতো না। বল হাতে নিয়ে খেলার আমন্ত্রনে দুরন্ত কিশোরদের বেঁধে রাখা সহজ হয় না। তাই প্রথম দুদিনেই সাত জন যোগার হয়ে গেল। এ ক’জনে মিলে বাড়ির উঠোন তো রাস্তার অলি গলিতে সুযোগ পেলেই চললো ঐ বেচারা বলের উপর লাগাতার অত্যাচার। তখন ঐ সাত জন মিলেই মেতে উঠলো খেলায় ওরা।

বাকি ছয় জনের মধ্যে পাশের বাড়ির ছেলেটা - ঐ যে ‘সবুজ’। ও’র গড়নটা বয়সের তুলনায় একটু যেন বেশী বেশী হয়ে গিয়েছিল। আর সাথে এক ক্লাসে দু’বার থাকার কারনে সে তখনো হাইস্কুলে পা দিতে পারেনি। নীল ওকে দেখেই ঠিক করে নিয়েছে যে-ওই হবে মেইন ডিফেন্ডার। উপরে স্ট্রাইকিং এ ওই থাকবে।

রবিন আর সাকিব দুই উইং এ খেলবে। ওদের চিপ গুলো দারুন হয়। বল্টু যথারীতি কিপিং করবে। হাইট কম হলে কি ওর ব্যাটা একটা স্প্রিং। তিরিং বিরিং করে লাফাতে পারে।

রনকটা একটু দুর্বল। ড্রিবল অত সুবিধার না। তবে উৎসাহ আছে ষোল আনা। আপাতত রাইট ব্যাক এ আছে ও। মিড ফিল্ডে আছে সাকিব।

ওর পা’এ ব্যথা পেয়েছে কাল। শেষ পর্যন্ত খেলতে পারবে কি না কে জানে। এই অবস্থায় ওদের তাই আরো কমপক্ষে চার জন দরকার। এই পাড়া’র আর কেউ নেই বাকি। এবার তাই ওরা সদলে গেল পাশের পাড়ায় বাকি প্লেয়ার জোগারের চেষ্ঠায়।

যে পাড়ায় মাঠ ছিল; সে পাড়াতে যেয়ে ওরা খোঁজ পেয়ে গেল আরো ৩ জন প্লেয়ার। মূলতঃ এরা ওদের দলে চান্স পায়নি। খেলার সুযোগ পেয়ে তারাও খুব খুশী হলো। তাদের কাছ থেকে জানা গেল আরকজন খুব ভাল মিড ফিল্ডার ছিল এ পাড়ার দলে। কিন্তু টীম ক্যাপ্টেনের সাথে মন কষাকষিতে সে দল ছেড়ে দিয়েছে।

এই খবরটা লুফে নিল নতুন গড়ে ওঠা দলটি। আর তাদের প্রস্তাবে তাই নিম রাজী হয়ে থাকলো ঝানু মিড ফিল্ডার রাশেদ। বাকি তিন জনের মধ্যে শাহীন চলে এলো স্ট্রাইকিং এ । আর রকিব লেফট ব্যাক আর মিল্টন থাকবে রাশেদের সাপোর্টে। নেশা, জেদ আর একাগ্রতা থাকলে অনেক কঠিন কাজেও অক্লান্ত পরিশ্রম করা যায় অনায়াসে।

এই নব গঠিত দলটিও তাই জোঁকের মত লেগে থাকলো ফুটবল নিয়ে। সবার মাঝে দিনে দিনে ঘনিষ্ঠতা বাড়তে থাকলো। নীল, সবুজ আর রাশেদ এই দলটির চালিকা শক্তি হয়ে উঠলো সময়ের হাত ধরে। নিজেদের মোটামুটি প্রস্তুত করে একদিন ওরা পাশের পাড়ার মাঠে গেল ওদের খেলা দেখতে। যাওয়ার আগে ওদের ছোট মিটিং হলো।

রাশেদ সেখানে বুঝিয়ে বললো যে শুধু মাঠের খেলা না যে কোন খেলা জিততে হলে চাই হাওয়ার খেলা। ও বলে চললো আজ তোমাদের সবাইকে ওদের ভাও বুঝতে হবে। আমরা এখনো ওদের বলি নি যে ওদের সাথে আমরা খেলা দিব। তাই আমরা যাব ওদের মাঠে। ছড়িএ ছিটিয়ে বসে থাকবো সাইড লাইনে।

আর যে যেখানে খেল তারা প্রতিপক্ষের ঐ পজিশনের প্লেয়ারদের খেলা দেখবে ভাল করে। সাথে দেখবে তোমার যার সাথে টক্কর লাগবে। এই বলেই সে তার মুষ্টি দুটি বন্ধ করে আন্তঃমুখী করে সজোরে বাড়ি খাওয়ালো। একটু মুচকি হেসে নীল যোগ করলো - স্ট্রাইকার দেখবে ওদের ব্যাক আর ব্যাক দেখবে ওদের স্ট্রাইকার কে। সবুজ কিছুটা জোশে থাকে সব সময়।

ও চেঁচিয়ে উঠলো- ব্যাটাদের এক্কারে সাইজ করে দেব । তারপর ওরা ছোট ছোট দলে ভাগ হয়ে মাঠের চার দিকে ছড়িয়ে ছিটিয়ে বসে খেলা দেখল আর বুঝে নিতে থাকলো মাঠের বাইরে থেকে ভিতরকার থিওরী - হাওয়ার খেলা। খেলা শেষে সবাই ফিরে গেল যার যার বাসায়। পরদিন সকাল সকাল সবাই জড় হয়ে ঝালাই করে নিল প্রতিপক্ষের কলা কৌশল আর নিজেদের রণকৌশল। সেদিন বিকালের জন্য সবাই অধীর হয়ে উঠলো।

আজকেই যুদ্ধ ঘোষনা করা হবে। ঐ পাড়ার প্লেয়াররা যখন একে একে মাঠে এসে ওয়ার্ম আপ শুরু করলো নীলদের দলটি মাঠের পুর্ব দিক থেকে সারি বেঁধে প্রবেশ করলো। সামনে সবুজ, রাশেদ আর নীল। বাকিরা পিছে। একেবারে মাঠের মাঝ বরারবর এসে ওরা টীম ক্যাপ্টেন এর মুখোমুখি দাঁড়ালো।

আগত সৈন্যদলের মনোবল যে আকাশ ছোঁয়া তা একবার দেখেই বুঝে নিল ক্যাপ্টেন। পরিবেশ হাল্কা করার জন্য সে তার ভাইস কে বললো- হ্যা রে রাশেদ দেখি ঐ ছোকরাদের নিয়ে দল করেছে। হুম্‌ম। টিটকারির সুরে সায় জানালো ভাইস ক্যাপ্টেন যে এখন এই দলের মিড ফিল্ডার। তাদের অবজ্ঞাকে পাত্তা না দিয়ে নীল এবার বললো -আমরা তোমাদের সাথে খেলতে চাই।

প্রথমবার হেসে ঊড়িয়ে দিলেও দ্বিতীয় দফায় সবুজ যখন একটু গলার স্বর উঁচু তুলে বললো- ভাইজানেরা কি ডর খাইছেন নি? আমাগো লগে খেলবার মন কয় না! হুম্‌ম ? চকিতে ক্যাপ্টেন মুখ ঘুরিয়ে দেখে নেয় সবুজকে। তারপর খুব শান্ত ভঙ্গীতে প্রশ্ন করে - বেশ, কবে খেলতে চাও? এবারে নীল উত্তর দিল- আগামী পরশু। এই মাঠে। বিকাল সাড়ে চারটায়। ৩ আসছে...


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.