আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

আমার বাবা হওয়া, ১২০০ টাকা ও ৮ ব্যাগ রক্তের কাহিনী



জুলাই ৭, ১৯৯৯। সকাল বেলা কুমিল্লা থেকে ঢাকা এলাম। আজ ছোট বোনের জন্মদিন। এ দিনটি আমাদের পরিবারে বেশ ঘটা করে পালন করা হয়। সবার ছোট আর আল্লাদী বলেই হয়তো! ওর জন্মদিনের প্রোগ্রাম শেষ করে রাতে বড়ো বোনের বাসায় থেকে গেলাম।

আমার বৌয়ের শরীরটা তেমন ভালো যাচ্ছিলো না। ভাবলাম,পরদিন বিকেলে আমাদের পারিবারিক ডাক্তার রওশন আরা আপাকে দেখিয়ে তারপর কুমিল্লা ফিরে যাবো। পরদিন সকাল থেকে বৌয়ের শরীর বেশ খারাপ হয়ে পড়ে। প্রেশার কোনোভাবেই কন্ট্রোল করা যাচ্ছিলো না। তাছাড়া পেটে বাচ্চার নড়াচড়া টের পাওয়া যাচ্ছে না।

বিকেলে ডাক্তার আপার চেম্বারে আসলাম। আপা তখোন মগবাজার ওয়ারলেস গেটের পাশে বিশাল সেন্টার সংলগ্ন মেডিস্টোন ক্লিনেকে (এখন সম্ভবত ক্লিনিকটি নেই) বসতেন। আপা তার রোগী দেখে বললেন- প্রেশার খুব বেশি, পেটের ভেতর পানি কমে গেছে, বাচ্চার নড়া চড়া টের পাওয়া যাচ্ছে না...। তার মতামত হচ্ছে, অপারেশন করতে হবে এবং যতো দ্রুত সম্ভব। আমি হতভম্ব ।

বলে কী !! বাবুর বয়েস মাত্র ৭ মাস প্লাস...। ডাক্তার আপার প্রতি আমাদের পরিবারের সবার অগাধ আস্থা। এর আগে আমাদের পরিবারের ৩/৪ টি বাবু তার হাতে হয়েছে। দ্রুত সিদ্ধান্ত নিতে বললেন। রাজী হলাম আমি।

ওটিতে ঢুকার আগে ডাক্তার আপা বললেন, আপনার তো অনেক সাহস। সে জন্যই আপনাকে বলা...। মা আর বাচ্চা দুজনের অবস্থাই খারাপ। একজনের আশা ছেড়ে দিতে হবে। আমি চেষ্টা করবো...বাকী কথা আমার কানে আর ঢুকেনি।

ওটিতে ঢুকে গেলেন তার রোগীকে নিয়ে। আমি বাইরে দাঁড়িয়ে...। ভাই বোন আর বন্ধু বান্ধবে ভরে গেছে ক্লিনিক। আমার শাশুড়ি ও এলেন নারায়ণগন্জ থেকে। আধা ঘন্টা পর এক নার্স বেরিয়ে এলো হাসি মুখে।

বললো,আপনার ছেলে হয়েছে, মিষ্টি খাওয়ান। বাচ্চার মা কেমন আছে ? প্রশ্ন করার আগেই নার্স আবার ঢুকলেন ওটিতে। ক্ষাণিক বাদে ডাক্তার আপা বেরিয়ে এলেন। বললেন, আপনার বাচ্চা খুব ছোট, ইনকিউবিটরে রাখতে হবে। মনোয়ারা হাসপাতালে চলে যান।

আমি বলে রেখেছি। ছেলেকে নিয়ে আমি দৌড়ালাম। ওকে ইনকিউবিটরে রাখা হলো। আবার এলাম বৌয়ের কাছে। ডাক্তার আপা আমাকে ডেকে বললেন, আপনার স্ত্রীর প্রচুর রক্তক্ষরণ হয়েছে।

রক্ত দিতে হবে। কমপক্ষে ৪/৫ ব্যাগ। রক্তের গ্র“প বি পজেটিভ। ছোট ভাই তার বন্ধুদের বলে ঘন্টা খানেকের মধ্যে ৭/৮ জন ডোনার ব্যবস্থা করে ফেললো। সে রাত এবং পরদিনের মধ্যে ৮ ব্যাগ রক্ত দিতে হলো।

সারারাত সে অচেতন ছিলো। সকালে জ্ঞান ফিরে প্রথমে তার বাচ্চার কথা জানতে চাইলো। বললাম, ভালো আছে। বিশ্বাস করলো না। কাঁদতে কাঁদতে আবার জ্ঞান হারালো।

১ দিন পর ছেলেকে মায়ের কাছে আনা হলো। সে যাত্রা মা আর ছেলেকে ২৩ দিন ক্লিনিকে থাকতে হয়েছিলো। আপা ডিসকাইন্ট করার পরও বিল এসেছে ৬৩ হাজার টাকা। অথচ আমি মাত্র ১২০০ টাকা নিয়ে কুমিল্লা থেকে ঢাকায় এসেছিলাম। আমার সে ছেলে রোদ্দুর এখন ক্লাসে থ্রিতে পড়ে।

গবর্ণমেন্ট ল্যাবরেটরি স্কুলে...

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.