আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

নিত্য সংলাপ-৩

ইমরোজ

ভালবাসার জলাঞ্জলি! দুপুর দুইটার সময় একটা পরীক্ষা ছিল। মিডটার্ম। তাও এমন একটা সাবজেক্টের উপর যেটা আগে কোনদিন পড়ি নাই। দুইটা বাজার দুই ঘন্টা আগেই রওনা দিলাম ক্যাম্পাসে। নিউমার্কেট আর নীলক্ষেতের ভেতর দিয়ে আসা কতকটা এলাহি কান্ডের মত মনে হয়।

চতুর্দিকে এত মানুষ এত গাড়ি, রিকশা, বাস, টেম্পো, সিএনজি ইত্যাদি যে কোনদিকে যাব সেটা আর বুঝতে পারি না। সামনে আগালে রিকশায় বাড়ি খাই, পেছালে টেম্পো মেরে দেয়, পাশে সিএনজি ঐপাশে বাস। এর মাঝখান থেকে একটা রিকশা কলা ভবনে যাওয়ার জন্য যখন ৮ টাকায় রাজি হয় তখন নিজেকে অনেক সুখী মনে হয়। ক্যাম্পাসে গিয়ে হাতের নোটগুলো কাগজের অর্থহীন টুকরোতে পরিণত হয়। পড়াশোনা ভুলে গিয়ে বন্ধুদের সাথে আড্ডায় সময় কাটে।

এমন করেই সময় কাটতে গিয়ে আজকে আমার বন্ধুর ইতিহাস শুনে ফেললাম। পরীক্ষার মধ্যেই খেয়াল করছিলাম তার মন খারাপ। তার দুর্দান্ত নাম, চঞ্চল। সেই ছেলেটাই কীনা একেবারে চুপ হয়ে ফিরছে। তার মুখে কোন হাসি নেই, নেই কোন হইচই।

চঞ্চল আমাদের মধ্যে সব থেকে বেশি নাচোয়া ছেলে। তার এমন অবস্থা আমাকে মর্মাহত করবে এইটাই স্বাভাবিক। কোন এক পরীক্ষার দিন আমাকে বলেছিল, তোর সাথে কথা আছে একটু সময় দিস। আমার আর সময় দেওয়া হয় নাই। ওর বিয়ে করার কথা ছিল পালিয়ে গিয়ে।

সেটা জানতাম। ও আমাকে আগে বলেছিল। সেটা নিয়েই সমস্যাটা হয়েছে বুঝতে পারলাম। ঘটনা যা শুনলাম সেটা হলো এরকম গত ২০ শে অক্টোবর তারা দুইজন বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়েছে। বিয়ের পরে মেয়ে মেয়ের আর ছেলে ছেলের বাসায় সহি ভাবে পৌছায় গেছে।

তারা পরে একত্রে থাকবে। এখন শুধু প্রেম চলুক। আর বিয়েটা নিয়ে পরে আর কোন বাধ সাধতে পারবে না কেউ। আমার বন্ধুর দৃষ্টিকোণটা এমনই ছিল। কিন্তু কোথা থেকে কী হয়ে গেল! গত তেসরা নভেম্বর মেয়েটা তাকে ফোন করে বলে, বিয়ে করা উচিৎ হয় নাই।

বার বার এর কারণ জিজ্ঞেস করে বন্ধুবর কোন উত্তর পেল না। তবে মেয়ের পরিবারে সবারই জানা হয়ে গেছে। সমস্যা তেমন কিছুই হত না। নব্য বিবাহিত স্বামী স্ত্রীর ভেতরেই ব্যাপারটা থাকতে পারত। কিন্তু তা হলো না।

পরের দিন মেয়েকে আর পাওয়া যাচ্ছে না। মেয়ের বাবা তো চঞ্চলের বাড়িতে ফোন করে তোলপাড় করলেন। আমার মেয়েকে কোথায় লুকিয়ে রেখেছিস, আমি ক্যাইস করে দেব। ব্যাপারটা ভয়ংকর। চঞ্চলের পরিবারের সবাই জানল তাদের ছেলের অকাজে তাদের নামে মামলা হচ্ছে।

ঐদিকে মেয়ের বাবা কাজী সাহেবকে টাকা দিয়ে বিয়ের শর্ত বাতিল করালেন। কাজী সাহেবও অকপটে স্বীকার করলেন ছেলে মেয়েটাকে জোরপূর্বক বিয়ে করেছে। তাহলে আইনত এই বিয়ে টিকে না। মেয়ে কিন্তু তখনও লাপাত্তা। চঞ্চলের বাসায় পুলিশ আসবে আসবে করছে।

এমন সময় পরের দিন সকাল দশটায় মেয়েটাকে পাওয়া গেল তারই এক বান্ধবীর বাসায়। যাহোক, কেইস উইড্রো হল। কিন্তু ঝামেলা তো অত সহজে যায় না। মেয়েকে তার পরিবার (মা নেই) থেকে চঞ্চল সম্পর্কে কিছু বিস্ময়কর তথ্য উপস্থাপন করা হলো। এবং সবথেকে আশ্চর্যের কথা হলো মেয়ে সেগুলো বিশ্বাস করেছে।

সে এখন চঞ্চলের সাথে সবরকম সম্পর্কের কথা অস্বীকার করছে। চঞ্চলের সাথে যোগাযোগও এখন বন্ধ। বন্ধুবর মেয়ের বান্ধবীর কাছে ফোন করে করে যতটুকু পারে হৃদয়ের দাবী থেকে তার নব্য বিবাহিতা স্ত্রীর সমস্ত খবরই নিচ্ছে। কী আজব পৃথিবী!

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।