আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

নিত্য সংলাপ-১

ইমরোজ

আজ সন্ধ্যার দিকে মহসিন হলে বন্ধুর কাছে গেলাম। উদ্দেশ্য ছিল কিছু নোট নিব। কারণ পরীক্ষা চলছে। তার রুমে দুজন নেতা বসেছিলেন। ছাত্রদলের সভাপতি একজন আরেকজন কী একটা জানি।

কিছুক্ষণ পরে তারা রুম থেকে বের হলে হাফ ছেড়ে বাঁচলাম। নেতা মানুষেরা নাকি কম কথা বলেন। কথা যেখানে যতটুকু বলার দরকার ঠিক ততটুকুই। আমি আমার এই বিশাল দেহখানা নিয়ে যখন প্রবেশ করলাম ছোট্ট রুমটাতে তখন নেতা আমাকে দেখেও না দেখার ভান করলেন। যেন আমি একটা কীট পতঙ্গ গোছের কিছু হব।

সালামের উত্তর তো দিলেনই না, একবার জিজ্ঞাসাও করলেন না, আমার নাম কী অতথা কোথায় থাকি। দুজন নেতা রুম থেকে বের হবার পর বেশ ভাল লাগছিল। কিন্তু তখনই বন্ধুকে দেখলাম প্যান্টে পা চালিয়ে দিল। বললাম, কই যাস? -চল বের হই। সন্ধ্যার সময় কিছু খেতে ইচ্ছে করছে।

-তপনকে একটা ফোন দে, ওরেও নিয়ে যাই। তপন থাকে সূর্যসেন হলে। তাকে ফোন দিতেই জানা গেল আমাদেরকেই সূর্যসেন হলে যেতে হবে। মহসিন হলের পেছনের নির্জন রাস্তাটা দিয়ে হেটে দু'জন গল্প করতে করতে যাচ্ছি। একটু একটু শীত, তার সাথে যোগ হয়েছে পাতা পোড়ানোর গন্ধ।

আহ! সন্ধ্যেটা কী যে চমৎকার! বন্ধুদের সাথে কথা বলতে গেলে সবথেকে বেশি যে জিনিসটা প্রাধান্য পায় সেটা হলো, আমার তো কিছুই হল না। মানে প্রেম পীড়িতি বলে এখনও কিছু হল না। এই নিয়েই দুজনের মধ্যে কথা চালাচালির এক পর্যায়ে সূর্যসেন হলের কাছে চলে এলাম। তপন সেখানেই দাঁড়িয়ে ছিল। আমি তপন, আর দিপু তিনজন মিলে হাটা ধরলাম টিএসসির দিকে।

তপনের মুখে গানের কলি ফুটছে। মাঝে মাঝে বিরতি দিয়ে আমাকে বলছে, তোর তো কোন চিন্তা নাই, পড়া সব শেষ। -হ! তরে কইছে। পড়ি কখন যে পড়া শেষ হবে? -ওদিকে দিপু হেসেই যাচ্ছে। দিপুর এই স্বভাবটা আমার ভাল লাগে।

সে কারণে অকারণে হাসতে পারে। অনেক হাসে। তার হাসির যেন কোন শেষ নাই। হাকিম চত্বরের ওখানে তিনজনে মিলে তিনটা পাকোড়া খেলাম। আজকে সসটা ভাল হয়েছে।

এখানে একেক দিন একেকটা জিনিস ভাল হয়। কোনদিন সসটা ভাল হয়, কোনদিন, পাকোড়ার ভেতরের জিনিস মজাদার হলেও বাইরে ভাল মত ভাজি হয় না। আবার কোনদিন দেখা যায় একেবারে সবই বাজে, শুধু প্ল্যাটটা ঝকঝকে পরিস্কার। মানে পাকোড়াও ভাল, প্ল্যাটও পরিস্কার, এরকম কোনদিন পাওয়া ভাগ্যের ব্যাপার। টিএসসির চত্বরে উঠে অনেক্ষণ আলাপ হলো।

আলাপের বিষয় বস্তু, আমাদের দিকে কেন মেয়েরা তাকায় না, কবে তাকাবে, এখনও হলো না তো আর কবে হবে, মেয়েরা আসলে কী চায়, ছেলেরাই কী চায়। দিপু বলে উঠল, যদি একটা মেয়েকে তুই ভালোবাসিস সত্যিকার অর্থে, কিন্তু তার হাতটা ধরবি না এরকম সংকল্প করে রাখেছি তাহলে ভুলে যা তাকে, কারণ ছ্যাকা সে তোকে দিবেই। আমি বললাম, মাথা খারাপ করিস না তো আমার, বহুত টেনশনে আছি পরীক্ষা নিয়ে। কথাটা বলতেই কথাগুলো ঘুরে গেল পরীক্ষার দিকে। কিন্তু ঘুরে ফিরে বিষয় বস্তু একটাই।

আমিও ডুবে যাই তাদের আলোচনায়। তপন অনেক চিন্তায় থাকে। ঢাকা শহরের আর গ্রাম গঞ্জের যে অবস্থা তাতে তার মনে হয় না কপালে একতা সৎ মেয়ে জুটবে। সতী মেয়ে পাওয়া তো ভাগ্যের ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে আজকাল। কথাকতটা সত্য কতকটা মিথ্যা বলতে পারি না।

এইভাবেই কথার তরে কখন যে শাহবাগ মোড়ের কাছে চলে এসে পড়লাম তার খবরও নাই। এক কাপ চা খাওয়া হলো না। কারও পকেটে আজকে টাকা নাই। সেখানে সময়ের স্বল্পতার জন্য আড্ডার ইতি টানতে হলো।


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।