টিউলিপ
সিলভিয়া প্লাথ
অনুবাদ: আয়শা ঝর্না
টিউলিপ ফুল এত বেশী উষ্ণ, এখানে এখন শীত
দেখ চারপাশ কেমন সাদা তুষারাচ্ছন্ন, শান্ত
আমি নিজেকে শান্ত করতে শিখছি, নিজেই
নিজেকে সুস্থিরভাবে বিছানায় রাখছি,
যেভাবে আলো থাকে শুয়ে সাদা দেয়ালে, এই বিছানায় এই হাতে।
আমি নই কেউ, উত্তেজিত হবার কিছুই নেই আমার।
নার্সদের দিয়ে দিয়েছি আমার দিনের পোষাক আর নাম ইতিহাস দিয়েছি এ্যানেসথেটিস্টদের, শরীরটা দিয়েছি সার্জনদের।
তারা আমার মাথাকে বালিশ আর বিছানার মধ্যে এমনভাবে রেখেছে যেন একটা চোখ দু'টো সাদা অঁাখিপল্লবের ভেতর যা কখনো বন্ধ হবে না,
বোকা ছাত্রছাত্রী, সবকিছুই ভেতরে নেয়া উচিৎ ছিল।
নার্সরা আসা যাওয়া করছে, তারা কোন সমস্যা নয়, যেন সিগালরা তাদের সীমান্তবত্তী ভূমিতে করছে যাওয়া আসা, তারা প্রত্যেকে প্রতিটি কাজ একইভাবে করে ফলে এটি খুব অসম্ভব তাদের সংখ্যা গোনা।
আমার শরীর তাদের কাছে যেন নুড়িপাথর, তারা এর যত্ন নেয়,
খুব সুন্দর করে ধুয়েমুছে দেয়।
তাদের উজ্জ্বল সূঁচের মধ্যে দিয়ে আমাকে করে দেয় অনড়, এনে দেয় ঘুম।
আমি হারিয়ে ফেলেছি আমাকে আমি যেন একটা অসুখের ব্যাগেজ
যার উজ্জ্বল চামড়া সারারাত জ্বলে যেন কালো পিলবক্স,
আমার স্বামী এবং শিশুরা হাসছে পারিবারিক ছবির ভেতর,
ছোট্ট হুকের মতো তাদের হাসি বিঁধছে অামার চামড়ায়,
আমি সবকিছুকে এড়িয়েছি, ত্রিশ বছরের একটি কার্গো বোট
একগুয়েভাবে ঝুলছে আমার নাম ঠিকানায়।
তারা আমাকে আমার প্রিয় সহগগুলি থেকে মুছে ফেলেছে।
সবুজ প্লাস্টিক ট্রলিতে সাজসজ্জহীন, ভীত, শায়িত আমি
আমার টি-সেট, বইগুলো চোখের সামনে দিয়ে সরে সরে যাচ্ছে, আমার মাথার উপর দিয়ে বয়ে গেছে জলপ্রবাহ।
এখন একজন সন্ন্যাসী আমি কখনোই ছিলাম না শুদ্ধ।
আমি কোন ফুল চাইনি, চেয়েছি শুধু হাতদু'টো উল্টে নিতে
এবং পুরোপুরি খালি করতে
কি নির্ভার তা তুমি ভাবতেও পারবে না।
এই শান্ত সমাহিত ভাব বিদ্ধ করতে পারে তোমাকে,
এটা কিছু জিজ্ঞেস করে না, একটি নামের ট্যাগ, কিছু তুচ্ছ গহনা,
যা শেষে একজন মৃতের জন্য করা হয়।
আমি কল্পনা করছি এটা তাদের মুখ বন্ধ করছে
যেন ধ্যানগ্রস্থ সমাধি পাথর।
টিউলিপগুলি এত বেশী লাল তাদের
পূর্বের জায়গায় যেটি আমাকে কষ্ট দেয়।
এমনকি গিফট পেপারের ভেতর দিয়ে আমি
টের পাই তাদের নিঃশ্বাস,
তাদের হালকা করে বাঁধা সাদা ফিতার ভেতর
যেন ভীত ছোট্ট শিশু,
তাদের লালছটা আমার মর্মে কথা বলে, যোগাযোগ করে।
তারা অস্পষ্ট যেন ভাসছে, ভারে শুইয়ে রাখছে আমাকে।
বিমর্ষ করছে তাদের আকস্মিক লাল জিভ আর রঙ দিয়ে
গলা পর্যন্ত ডুবিয়ে রাখছে এক ডজন লাল টিউলিপ।
এর আগে আমাকে কেউ লক্ষ করেনি এখন করছে
টিউলিপগুলো আমার দিকে ফিরে তাকিয়েছে
এবং আমার পেছনের জানালা
যেখানে দিনে একবার আলো
ধীরে ধীরে হয়ে আসে ক্ষীণ,
এবং আমি আমাকে দেখছি শায়িত, হাস্যকর
একটি কাটা কাগজের ছায়া সূর্য আর টিউলিপের চোখের মধ্যে,
এবং আমার কোন মুখচ্ছবি নেই,
আমি নিজেই নিজেকে করতে চাইছি নিঃশ্চিহ্ণ।
প্রাণবন্ত টিউলিপগুলো আমার অক্সিজেন নিয়েছে শুষে।
তারা আসার আগে বাতাস ছিল অনেক শান্ত
আসা এবং যাওয়া, শ্বাসের পর শ্বাস বিরতিহীনভাবে।
তখন টিউলিপগুলো তা পূরণ করল
একটি বড় গোলযোগের মতো।
এখন বাতাস অপ্রতিহতভাবে ঘুরছে
তাদের চারপাশে যেভাবে নদীর প্রবাহ বয়ে যায়
একটি ডুবন্ত ইন্জিনের চারপাশে।
টিউলিপগুলো আমার মনোযোগকে
কেন্দ্রিভূত করেছে, ভাল লাগছিল
কোন শর্ত ছাড়াই তারা দুলছিল, নিচ্ছিল বিশ্রাম।
দেয়ালগুলো নিজেরাই হয়ে উঠছিল উষ্ণতর
টিউলিপগুলো যেন পেছনের কোন বাধা ভয়ঙ্কর প্রাণীগুলোর মতো
তারা আফ্রিকার কিছু বড় বেড়ালের মতো খুলছে মুখ।
এবং আমি আমার হৃদয় সম্পর্কে সজাগ
আমাকে ভালবাসে বলেই এটি খোলে বন্ধ হয়,
আমি যে পানি খেলাম তা উষ্ণ এবং লবণাক্ত
যা স্বাস্থ্যের মতো দূর কোন দেশ হতে বয়ে আসে।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।