আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ভোটার তথ্য সংগ্রহ কেন্দ্র থেকে -৪

আমি জবাব দিতে এসেছি, যারা জবাব চায়, তবে অবান্থর নয়।

আমি এইবার ছবিযুক্ত ভোটার তালিকার কার্যক্রমে তথ্য সংগ্রহের দায়ত্বে ছিলাম। তো বিচিত্র সব মজার এবং দুঃখের অভিজ্ঞতা অর্জন করেছি। ধারাবাহিক তা লিখে যাব। তো বন্ধরা শুরু করি।

কলিং বেল টিপ দেওয়ার পরে যিনি দরজা খুললেন, উনার বয়স ৫০+, ক্লান্ত একজন মানুষ মনে হল। চেহারায় তা স্পষ্ট। উনি ভিতরে যেতে বললেন। আমাকে বাসাটির প্রথম রুমে বসতে দিয়ে ভিতরে চলে গেলেন। আমি ঘরে ঢুকেই টাসকি খেয়ে গেলাম।

দেখি মেহেদীর ঢালা সাজানো আছে। কাচাঁফুলের মালা । আরো কাচাঁফুল। দ্বন্দে পরে গেলাম। ঘরে কোন জনমানবের চিহ্ন নেই।

তাহলে কি এই বৃদ্ধ বয়সে উনি বিয়ে করতে যাচ্ছেন। অনেক চিন্তার মধ্যে যখন ঘুরপাক খাচ্ছিলাম তখন তিনি আসলেন। বসলেন। আমার পরিচয় দিলাম। তিনি আমাকে ফরম পূরণের কাজ শুরু করতে বললেন।

কাজ যথারীতি শুরু করলাম। আমার মধ্যে এমনিতেই প্রথম থেকে উনার স্ত্রীর বিষয়ে কৌতুহল ছিল। এখন ফরম যখন উনার স্ত্রীর নামের ঘরে এলাম তখন তিনি আমাকে বললেন আপনি এটা এড়িয়ে যান। আমি নাছোড়বান্দা। আমি বললাম হয় আপনি অবিবাহিত/বিপত্মীক লিখেন না হয় বিবাহিত লিখলে স্ত্রীর নাম লিখতে হবে।

তিনি বললেন আমি বিবাহিত এবং স্ত্রীর নাম লিখব না। আমি বললাম আচ্ছা, ঠিক আছে। আপনি যদি স্ত্রীর নাম না লিখে বিবাহিত লিখেন তা হলে আমাকে জবাবদিহী (কতৃপক্ষের কাছে) করতে হবে। আপনি এর কারণ বললবন যেন আমি যথাযথ (কর্তৃপক্ষকে) জবাব দিতে পারি। এরপর উনি শুরু করলেন।

আমি একটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী অধ্যাপক হিসেবে রিটায়ার্ড করেছি। আমি হাই এডুকেটেড পারসন। তারপর ও আপনাকে বলি। আমার স্ত্রীর একজন উচ্চাবিলাসী মহিলা। তাই আমার এই চাকরিতে সে সন্তুষ্ট নয়।

তাই সে আমার সাথে প্রায়ই ঝগড়া করত। প্রায় বিশ বছর আগে আমাকে ছেড়ে আমেরিকা চলে যায়। আমার শ্বশুড় তার মেয়ের পক্ষ হয়ে আমার পাসপোর্ট নিয়ে নেই যাতে আমি আমেরিকা যেতে না পারি। হলো ও তাই। আমার ও আর ভাল লাগল না ।

চাকরি সময় শেষ হবার আগে ছেড়ে দিয়েছি। আমার শ্বশুড় আমাকে মানুষ দিয়ে পিঠিয়েছে। আমার ছেলে মেয়ে সব তার মায়ের পক্ষে। শুধু আমার ছোট ছেলেটি আমার পক্ষে। তাদের মা তাদরেকে আমেরিকা নিয়ে গেছে।

আমি একা বাংলাদেশে। আমার গ্রামের বাড়ীতে যাইনা। কারণ ছোট কাল থেকে শহরে ছিলাম। গ্রামের মানুষ ভালভাবে নিবে না। তাদের সাথে মিলতে পারব না।

আমার মন এতই বিধস্ত যে কারো সাথে তেমন মিশতে ও পারি না। আমার সব আছে। ছেলে, মেয়ে, স্ত্রী কিন্তু সবাই থেকে ও নেই । যে স্ত্রীর কারণে আমার আজ এই অবস্থা তার নাম কি আপনি আমার জাতীয় পরচিয় পত্রে লিখতে বলেন? পাল্টা প্রশ্ন ছুড়ে দিল আমার দিকে। আমি বললাম, না।

এরপর আবার শুরু করলেন। আমি আমার ছোট ছেলেটাকে নিয়ে চিন্তায় ছিলাম। তাকে দেশে এনে একটা দেশীয় মেয়ের সাথে বিয়ে দেয়ার চিন্তা ছিল। আজ তা থেকে ও মুক্তি পাচ্ছি। এই দেখছেন না? ফুল, মেহেদী।

সব তার জন্য। আজ তার বিয়ে আমি ছাড়া আর কেউ নেই তার বিয়েতে। কারণ আমেরিকা থেকে তারা আসবেনা ভাইয়ের বিয়েতে। কথা শুনছিলাম আর আমি কোথায় যনে হারিয়ে গেলাম যেখান থেকে নিজেকে আর বের করে আনতে পারিনি। আসার সময় বললাম, স্যার আমায় ক্ষমা করবেন।

আপনাকে কষ্ট দেয়ার জন্য। উনি বললেন, না সমস্যা নাই। আপনাকে বলে হলে ও তো আমার মনটা কিছু হালকা হল। অনেক দিন। কাউকে একথাগুলো বলতে পারছি না।

অনেককে বলেছি। তবে তা অনেক দিন আগে। হায়রে জীবন-----------

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.