আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

বাকরুদ্ধ!

.... তবুও আমি স্বপ্ন দেখি ... (স্বপ্ন, বাস্তব এবং ব্লগের সর্বস্বত্ব ব্লগার কতৃক সংরক্ষিত)

আমি অপেক্ষা করছিলাম। রীতিমত শ্বাস বন্ধ করে অপেক্ষা। নাহ, কোন বিশেষ দলের জয়ের জন্য নয়। ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা ছিল একটা ড্রয়ের। রুদ্ধশ্বাসে অপেক্ষাও তারই প্রতিক্ষায়।

আন্তর্জাতিক ফুটবলের প্রধান কোন আসরে (বিশ্বকাপ, ইউরো বা কোপা) কখনও গ্রুপ পর্যায়ে টাই-ব্রেকারের দেখা মেলেনি আজ পর্যন্ত। আসলে দেখা মেলার কথাও নয়। অনেকগুলো যাদি-তবে এক হলেই কেবল দেখা মেলে। পারমুটেশন-কম্বিনেশন করে এত যদি-তবে মেলার সম্ভাব্যতা নিতান্তই নগণ্য। কিভাবে যেন আজ সেই নগণ্য সম্ভাব্যতার দিন এসে দাড়িয়েছিল।

নিজেদের প্রথম দুই খেলায় অনেকটা আইডেন্টিকাল ফলাফল দেখিয়ে শেষ খেলায় নিজেদের মাঝে শ্রেষ্ঠত্বের লড়ায়ে নেমে ছিল তুরষ্ক এবং চেক রিপাবলিক। পয়েন্ট টেবিলের যে দশা ছিল, তাতে খেলা ড্র হলে পয়েন্ট, জয়-পরাজয়, গোল গড় বা গোল ব্যবধান, কোন কিছুতেই তাদের মাঝে বিভেদ সৃষ্টি করার উপায় ছিল না। যেহেতু একটা দলই কেবল পরবর্তি পর্যায়ে যেতে পারবে পর্তুগালের সাথে, অতএব টাই-ব্রেকারই হতো একমাত্র সমাধান যা এখন পর্যন্ত বিশ্ব ফুটবল ইতিহাসের প্রধান কোন আসরে হয়নি। খেলার শুরু থেকেই চেক রিপাবলিকের প্রাধান্য বিস্তার একটু ভয় ধরাচ্ছিল বটে, তবে আশা জেগে ছিল হয়তো ড্র-ই হবে। ৩৪ মিনিটে প্রথম গোল তুরষ্কের পোস্টে ঢোকার পরও আশা ছিল, ছিল ৬২ মিনিটে দ্বিতীয় গোল ঢোকার পরও।

মন বলছিল হয়তো তুরষ্ক ফিরে আসতে পারবে খেলায়। হয়তো। হায়! এভাবেতো ফিরে আসার আশা করিনি। ৭৫ মিনিটে করা তুরষ্কের প্রথম গোলের পর আমার জার্মান-প্রবাসী বন্ধু গুগল টকে জানালো স্টুটগার্টের দিকে নাকি অনেক টার্কিশ আছে যারা রীতিমত কান্নাকাটি শুরু করে তুরষ্ক হারলে। এখন তারাও আমার মত রুদ্ধশ্বাসে অপেক্ষা করছে আরেকটি গোলের জন্য।

১ - ২ গোলে তুরষ্ক পিছিয়ে আছে। খেলার মূল সময়ের বাকি আর মাত্র তিন মিনিট। একটা গোল, শুধু একটা গোল। ঈশ্বরের কাছে প্রর্থনা, খেলোয়াড়দের পায়ের কাছে প্রর্থনা। তিন মিনিটে একটা গোল কত খেলায়-ইতো হয়।

তুরষ্ক কি পারবে না? হ্যা, পেরেছে। ৮৭ মিনিটে নিহাত-এর করা গোলে চুল-চেরা হিসেবের সেই নগণ্য সম্ভাব্যতা বেরিয়ে আসলো দিনের আলোয়, ইতিহাসে প্রথমবারের মত। টাইব্রেকারে গড়াতে যাচ্ছিল খেলাটি। কিন্তু এ কি হলো! প্রর্থনা কি তবে ঈশ্বরের কাছে একটু বেশিই হয়ে গেল। ঈশ্বর, দুটো গোল চেয়ে ছিলাম, বোনাসটা কোথা থেকে এলো? দুই মিনিট পরেই নিহাতের করা তুরষ্কের তৃতীয় গোলে শুধু নিহত হলো না চেক রিপাবলিকের কোয়াটার ফাইনালে যাবার স্বপ্ন, নিহত হলো আমার এবং আমার মত আরও অনেক আজব ফুটবল পাগলের যারা প্রতিনিয়ত প্রত্যাশা করে কিছু ভিন্ন দৃশ্যের।

এমন কিছু যা আগে কখনও হয়নি। এমন পথের রেখার যেখানে আগে কখনও হাটা হয়নি, যেন রবার্ট ফ্রস্টের সেই বিখ্যাত দ্যা রোড দ্যাট নট টেকেন! কিন্তু সে পথের রেখা যে সব সময় দেখা যায় না। ইতিহাসে-শতাব্দিতে দু-একবার আসে। আজও এসেছিল, তবে নিয়তীর অদ্ভুত হেয়ালীতে কোথা থেকে কি হয়ে গেল - যেন এখনও ঘোরের মাঝে আছি। চেক রিপাবলিক জিতে গেলে খারাপ লাগতো না, ২ - ০ গোলে এগিয়ে থাকা দল জিতবে, সেটাই স্বাভাবিক।

কিন্তু দুই গোলে পিছিয়ে থাকা দল যখন খেলার শেষ পনের মিনিটে তিন গোল করে এক বিরল সম্ভাবনার কফিনে শেষ পেরেক ঠুকে জয় ছিনিয়ে নেয়, তখন ভাষা হারিয়ে যায়। এক শব্দের ব্যকরণসমৃদ্ধ একটি বাক্যই অবশিষ্ট থাকে - বাকরুদ্ধ !!! বিঃ দ্রঃ - সংযুক্ত ছবিটি কোন গোল নয়। এটি একটি বিরল সম্ভাবনার হত্যা, যার জন্য হয়তো প্রতিক্ষা করতে হবে দশকের পর দশক আবার! ১৫ জুন ২০০৮

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।