আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

নামের মাহাত্ম্য ২

তুমি রবে নীরবে...
বুয়েটের স্মৃতিচারণ করছিলাম, হয়তো কারো ভালো লাগে নি, আসলে স্মৃতি সবসময় নিজের কাছে মধুর। যা হোক আরেকটু বিরক্ত করা যাক। অনেক সময় এমন হয় যে, বন্ধুরা কাউকে কাউকে বিশেষ কিছু নামে ডাকে, পরে সেটাই তাদের পরিচিতি হয়ে যায়। আমারো এমন একটা নাম ছিলো (যেটা কিনা আমার মোটেই পছন্দ ছিলো না)। সেটা ১ম বর্ষের কথা।

কেবল ২য় সপ্তাহ চলছে। সেদিনের ক্লাস শেষ। আমি আমার স্বপ্নের জায়গা ঘুরে ঘুরে দেখছি... (বুয়েট আমার কাছে একটা স্বপ্নই ছিলো ছোটোবেলায়) , সাথে ২ বন্ধু, যারা আবার যমজ। পুরো ক্যাম্পাস ঘুরে দেখছি, এমন সময় একবড় ভাই এর আগমন। আমরা আগে শুনে এসেছি আর্কির বড়ভাইরা নাকি র‌্যাগ দিতে পটু।

ওই বড়ভাই আমাদের পাকড়াও করলেন আর্কির সামনেই। আমরা তো ভয়ে মোটামুটি অস্থির, কি না কি করবে, পরে বন্ধুদের সামনে মুখ দেখানো যাবে কিনা, সেসব ভাবছি। কিন্তু আমাদের অবাক করে দিয়ে ভাইয়া আমাদের কোনো র‌্যাগই দিলেন না!!!! বরং অনেক ভালো ভালো কথা বলতে লাগলেন। যেমন আমাদের প্রতিবছর কত ব্যাগ রক্ত দরকার, কত ব্যাগ পাওয়া যায়, সেই সব কথা, আমরা তো র‌্যাগের হাত থেকে বেচে যাওয়ার আনন্দে তার সব কথাতেই সায় দিতে লাগলাম (তখন যদি বুঝতাম এর ফলাফল কি হবে... ) । যা হোক এরই মধ্যে কোনো একফাকে তিনি আমাদের রক্ত দিতে বলেছেন এবং আমরাও রাজি হয়ে গেছি তা টেরই পাইনি।

যা হোক, রক্ত দেয়ার স্থানে গেলাম, আমি বেশ খুশি, একটা মহৎ কাজ করতে যাচ্ছি, অন্য ২জন একটু অনিচ্ছা সত্ত্বেই যাচ্ছে মনে হলো। যাওয়ার প আমাদের একটা ফর্ম পুরণ করতে দেয়া হলো, যথারীতি পুরন করলাম, করার পর দেখাগেলো আমার বয়স ১৮ হতে আর ২ মাস বাকি... তখন যারা ওখানে ছিলেন তারা বললেন যে, আমি অপ্রাপ্ত বয়স্ক, সুতরাং আমার রক্ত নেয়া যাবে না। আমি অনেক বার বলার পরও তারা রাজি হলেন না। এদিকে আমার বাকি ২ যমজ বন্ধু রক্ত দেয়া শুরু করেছে, আমি আর কোনো কাজ না পেয়ে তাদের উপদেশ দেয়া শুরু করলাম রক্ত দেয়া অনেক মহান কাজ ইত্যাদি ইত্যাদি... তারা মোটামুটি অগ্নি দৃস্টি নিয়ে আমার কথাগুলি চুপচাপ শুনে গেলো, কিন্তু কোনো উত্তর দিলো না... আমিও ওদের কে খোচানোর সুখানুভুতি নিয়ে বাড়ি ফিরে এলাম। তখন ও বুঝি নি যে, এই ঘটনার জের সারা বুয়েট জীবন বয়ে বেড়াতে হবে... পরেরদিন ক্লাসে গেলাম, দেখি সবাই আমার দিকে তাকিয়ে হাসছে, আমি ব্যাপারটা তখনও ঠিক আন্দাজ করতে পারিনি, পরে ক্লাস ব্রেকের সময় শুনলাম আমার ওই গুনধর বন্ধু সবাইকে বলেছে যে, আমি রখ দিতে গেছিলাম, কিন্তু আমি নাকি নাবালক, তাই আমার রক্ত নেয়া হয় নি।

শুনে সবাই হাসতে হাসতে লুটোপুটি খেতে লাগলো, আমি যতই সবাইকে বুঝাতে যাই ব্যাপারটা আসলে তেমন নয়, কিন্তু কেই আর আমার কথায় কান দেয় না... বরং সেদিন থেকে আমাকে সবাই শুরু করলো 'নাবালক' নামে ডাকা... আর আমার প্রতিকৃতি আকা হোলো এমন..... (আচ্ছা, আসলেই কি আমার কথা শুনে এমন মনে হয়? মাঝে মাঝে তো আমি নিজেই চিন্তায় পরে যাই,.. :p । বন্ধুদের সাথে সেইসব মজার দিন গুলি এখন খুবই মিস করি......)
 

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।