আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

অসুস্থ!



কারও সঙ্গে মনোমালিন্যটাইপের কিছু হলে ভীষণ এলামেলে হয়ে যায় সামিয়ার ভেতরটা। তার উপর একান্ত আশ্রয় বাবা মার সঙ্গে... দ্বগ্ধ হতে হতে অসুস্থ হয়ে যায় সামিয়া। মায়ের ডাকে খেতে যায় না। কলেজে যায় না। মা ও দুবারের বেশি আহ্লাদ করতে আসেন না।

সামিয়া অবশ্য বাবারজন্য অপেক্ষা করছে। বাবা এলেই খেতে যেত। ক্ষুধা ও একদমই সহ্য করতে পারে না, কিন্তু ছোট হবার ভয়, হেরে যাবার ভয় এবং আদর না পেয়ে পরাজিত হবার ভয়। রাত গিয়ে সকাল হলো। বরাবরের মতো সকালে ঘুম ভাঙে।

পেটের ভেতরটা খাখা করে। ইশ! কাজের মেয়েটা যদি লুকিয়ে কিছু... ইদানীং ওর লোকটার কথা খুব মনে পড়ে। ১বছরের বেশি যার সঙ্গে ওর ঘরকরা হয়নি। লোকটা একটু খেয়ালিটাইপের ছিল। সবকিছুতেই একটু বেশি উত্তেজিত ভাব।

আদর করবার সময় হুঁশ থাকত না, আবার হুটহাট রেগে গেলেও মুখে যা আসত তাই বলত। বাপ মা তুলে গালি। তারপর মাথা ঠাণ্ডা হয়ে গেলে স্যরি টরি বলে, হাতে পায়ে ধরে একেবারে লজ্জায় ফেলে দিত সামিয়াকে। মাসখানেক কাটাবার পরই সামিয়া সিদ্ধান্ত নেয় এর সঙ্গে কন্টিনিউ করা যাবে না। ওর চাই এমন একজন মানুষ যে অস্তিত্বে একদমই ইন্টার ফেয়ার করবে না।

সে থাকবে তার মতো, আর ও থাকবে ওর মতো। সারাদিনে কথা হবে দু থেকে চারটি। দুজনেই অফিস থেকে ফিরে নিজেদের প্রয়োজনগুলো সেরে নেবে। যার ইচ্ছা বিশ্রাম নেবে, যার ইচ্ছা ছাদে যাবে। একর ভালোলাগার সামগ্রি অপরে হবে না।

কিন্তু ওর স্বামী চাইতো সামিয়ার প্রতিটি মুহূর্ত সে জুড়ে থাকবে। সারাদিন রাত চব্বিশঘণ্টা সামিয়া শুধু তার স্বামীকেই ভাববে। স্বামীকে আহ্লাদিত করতে ব্যস্ত থাকবে। তার কি ভালো লাগে কী মন্দ লাগে এসব নিয়েই হবে জীবন ওর। বেচারা অফিস থেকে এসে বলত আমি ছাদে যাচ্ছি, এসো চা নিয়ে বসি।

সামিয়ার তখন ইচ্ছ করত বেলকনিতে অথবা ছাদেই একা বসে কবিতা পড়তে। স্বামীর সঙ্গেও সেটা পড়া যেত তবে তাতে ও নিজেকে খুঁজে পেত না। মনে হতো একজন মানুষকে খুশি করার জন্যই সব করছে। ওর কিছু নেই। অথবা ওই মানুষটা চাইছে ওকে বুঝাতে যে সে ওকে খুব ভালোবাসে, স্ত্রীকে নিয়ে সুখের স্বর্গ গড়তে চায়...ইত্যাদি স্বার্থপরের মতো ভাবনাগুলো ওকে ওর স্বামীর কাছ থেকে সরিয়ে রাখত।

তবে এখন সবচে বেশি মনে পড়ছে লোকটার কেয়ার! ওকে কেউ কিছু বললে লোকটি তাকে জীবনের সেরা শত্রু জ্ঞান করতো। যত গুণই থাক রোকটি আর সে দেখতে পারত না। তার স্ত্রীকে কেন মন্দকিছু বলল। আজ বাবা মার সঙ্গে যে বাধল এতেও ওর স্বামী ওকে একবাক্যে সমর্থন করত। হয়ত বলত- মেয়েতো একটু আহ্লাদি হবেই বাবামার উচিৎ সমঝে চলা।

ছেলেমেয়ের সব কথায় বাবামার কষ্ট পেলে চলে? আমিতো আমার মাকে যা তা বলি গালি দেই তার পানের বাটা ছুঁড়ে ফেলি তাইবলে কি আমি আমার মাকে ভালোবাসি না? মা কি আমাকে ছেড়ে যায়? সত্যিই তাই ও রেগে গেলে কাউকে ছাড়ে না। ওর বাবা মা যদি আমার বাবা মার মত হতো তাহলে ওকে কোনওদিন আর সন্তান বলে স্বীকারই করত না। এসব ভাবতে ভাবতে কেমন ক্লান্ত বোধ করে সামিয়া। সেইদিনটাও পাড় করে না খেয়ে। কাজের মেয়েটা রুমে খাবার দিয়ে গেছে।

ও খায়নি। রাতে বমিকরে। শব্দ শুনে কাজের মেয়েটা ছুটে আসে। ওর কাছে শুনে মাও আসে। গায়ে হাত দিয়ে দেখে জ্বর! তারা সিমপ্যাথি অনুভব করেন।

মেয়েকে জোরকরে খাওয়াতে চান। সামিয়ার জিদ আরও বাড়ে। বাবা ডাক্তার চাইলে কঠিন পণ করে। মা রাতটা দেখতে চান। আর মেয়েকে যতোরকমের আদর আছে তোষামোদ আছে সব বিনিয়োগ করেও খাওয়াতে না পেরে হাল ছেড়ে দেন।

অনেক রাতে একটা ফোন আসে সামিয়ার। মেয়ে কণ্ঠ! কে বলছ মা? মেয়েকণ্ঠের প্রতি সামিয়ার বাবার একটু দূর্বলতা আছে। যে মেয়েই ফোন করুক সে ভাবে তার বড় মেয়ে লামিয়া বুঝি! তার চোখ আদ্র হয়ে ওঠে, কণ্ঠ ভারি হয়ে আসে। ইচ্ছেকরে অনেক্ষণ কথা বলে। কিন্তু পারে না।

এতো রাতে? তোমারকি কোনও সমস্যা হয়েছে মা? না আঙ্কেল! আমিতো ঘুমিয়ে ছিলাম, হঠাৎ একটা স্বপ্ন দেখে ঘুম ভেঙে গেলো। কী স্বপ্ন দেখলে? কণ্ঠে উৎকণ্ঠা বাবার। না মানে, রাতের স্বপ্ন রাতে বলতে নেই। আঙ্কেল সামিয়াকি ভালো আছে? না, মা ওতো ভীষণ অসুস্থ! আশ্চর্য একটিবার মনে হলো না আমাদের খবর দেয়ার কথা? আঙ্কেল ওর সঙ্গে কথা না বলতে পারলে আমি সান্ত্বনা পাচ্ছি না, প্লিজ! একটু দেবেন? ওর কী অসুখ? কখন থেকে? আচ্ছা মা আমি দিচ্ছি। বলে বাবাই ফোনটা নিয়ে ওর রুমে গেলেন।

অনেক ডেকেও সামিয়াকে জাগাতে পারলেন না। তার চিৎকারে ছুটে এলা অন্যরা। ....(চলবে)

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।