আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

স্বপ্নচোর- ২য়পর্ব

দ্যা ব্লগার অলসো.....

জানালা দিয়ে বাইরে তাকালো জয়। মুরাদপুরের এই বস্তিতে সকাল হয়ে গেছে অনেক আগেই। ছাপোষা মানুষগুলো বেরিয়ে গেছে জীবিকার সন্ধানে। যাদের কোনো কাজ নেই তারা এদিক-ওদিক বসে অলস সময় কাটাচ্ছে। জয় গুনে দেখেছে, মোট বাহান্নটা ঘর আছে এই বস্তিতে।

তার মধ্যে তিনটে বাদে অধিকাংশই ছালা-টালা দিয়ে কোনোরকমে দাঁড় করানো। সেই তিনটে ঘরের একটা হচ্ছে, বস্তির মালিকের লোক কাসিমের, যে এখানকার হর্তা-কর্তা। দ্বিতীয়টা নিশিকন্যা পারুলের, বুভুক্ষ লোকদের মনোরঞ্জন করে যে ভালোই ইনকাম করে। আর অন্য ঘরটা জয়ের, লোক ঠকানো যার কাজ। অন্য ঘরগুলোর তুলনায় এই তিনটা ঘর মোটামুটি ভালো।

ছালার বদলে বেড়া, ভেতরে সিঙ্গেল খাট, চারখুঁটিঅলা একটা টেবিল, মোটামুটি এই হলো ঘরের আসবাব। তবে সবচাইতে বড় ব্যাপার হচ্ছে, ঘরগুলোতে ইলেকট্রিসিটি আছে। তাই পাঁচশো টাকা ঘর ভাড়ার সাথে এর জন্য আলাদা একশো টাকা গুনতে হয় ওদের। হাতমুখ ধুয়ে রেডি হয়ে নিল জয়, বেরুতে হবে আজ, অনেকদিন বসে থেকে টাকার টান পড়ে গেছে। দু’মাসের ঘরভাড়া বাকি পড়ে গেছে।

তাছাড়া কালুর বউটার অপারেশনের জন্যও অনেক টাকার দরকার। রাস্তার মোড়ে মদিনা হোটেলে ঢুকল জয় নাস্তা করার জন্য। ওকে দেখেই রোজকার মতো সালাম দিল ফখরুদ্দিন, হোটেলের মালিক। তারপর প্রতিদিনের মতো কুশল জিজ্ঞেস করল, জয় অপেক্ষা করতে লাগলো কখন সেই কথাটা বলবে ফখরুদ্দিন,যেটা বলার জন্য এতো ধানাই-পানাই। ‘চাকরি-বাকরি হলো কিছু?’ বলল ফখরুদ্দিন।

‘এই, চেষ্টা করছি, হয়ে যাবে ইনশাল্লাহ। ’ ‘কতোবার বললাম তোমাকে, এই দেশে তোমার মতো আইএ পাশ ছেলের চাকরি হবে না, কতো গ্রাজুয়েট রাস্তায় রাস্তায় ঘুরছে। ওসব চাকরির ধান্ধা বাদ দাও, চাক্তাইয়ে আমার চালের আড়তে ম্যানেজার হিসেবে জয়েন করো, ওখানে তোমার মতো একটা ছেলের খুব দরকার। জানোই তো, আজকাল বিশ্বাসী লোক পাওয়া কতো মুশকিল। ’ জানি চান্দু, জানি, তোমার মতলব জানি, মনে মনে বলল জয়।

প্রথমে চালের আড়তের ম্যানেজার, তারপর তোমার মেয়ের ম্যানেজার। ‘তুমহারি মকসদ জিন্দেগিমে পুরি নেহি হোগি’। ওই ‘কালো মোষটাকে’ মরে গেলেও বিয়ে করছিনা আমি। মুখে বলল-‘ভেবে দেখি। ’ খেতে খেতেই সেদিনের ঘটনা মনে পড়লো ওর।

ফখরুদ্দিন সেদিন ওকে বাড়িতে দাওয়াত করেছিলো। জয় জিজ্ঞেস করেছিলো কী উপলক্ষ। ‘এমনিই, তেমন কিছুনা, বাইরে বাইরে ঘুরো, কী খাও, না খাও, দুটো ভালো-মন্দ খাবে। ’ জয় তখন বুঝতে পারেনি এই জামাই আদরের মানে কী। তবে সত্যি সত্যিই যে ফখরুদ্দিন জামাই আদর করার জন্যই ওকে ডেকেছিলো, ও ভুলেও তা কল্পনা করেনি।

ফখরুদ্দিনের বউ ওকে পাঁচ সেকেন্ড পরপর যেভাবে বাবা বাবা করছিলো, জয়ের মনে হচ্ছিলো আসলেই সে মহিলার জন্মদাতা পিতা নয়তো! হাতে বানানো নানান রকমের পিঠা, দোকান থেকে আনা হরেক রকম নাস্তা দিয়ে আপ্যায়ন করা হলো ওকে। জয় তখনো জানেনা পর্দায় এতোক্ষণ শুধু ছবির পাত্র-পাত্রীদের নাম দেখানো হচ্ছিলো। আসল অভিনয় শুরু হলো এর পরেই। ক্রমশ.....


এর পর.....

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।