আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

প্রসঙ্গ : শাহ এ এম এস কিবরিয়া হত্যাকান্ড

প্রান্তজন

সমাজ,রাজনীতি,অর্থনীতি সহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে পরিচিত বাংলাদেশের এক মেধাবী সন্তান শাহ এ এম এস কিবরিয়া । আন্তর্জাতিক অঙ্গনে খ্যাতিমান নিপাট এই ভালোমানুষকে চির প্রস্থান নিতে হলো নির্মম গ্রেনেড হামলায়। কিবরিয়া হত্যাকান্ডের ৩ বছর অতিক্রান্ত হওয়ার পরও এই মামলার তদন্ত শেষ হয়নি। নতুন করে তদন্ত শুরু হওয়ার পর বলা হচ্ছে এ ঘটনার সঙ্গে হরকাতুল জিহাদ জড়িত। কিবরিয়া পরিবারের দাবী এ হত্যাকান্ডের পেছনে বিগত সরকারের রাঘব-বোয়ালরা জড়িত।

এখন প্রশ্ন আন্তর্জাতিকভাবে আলোচিত এ নির্মম ঘটনার এই যদি হয় পরিণতি তাহলে অন্যান্য মামলার ভবিষ্যৎ কী হতে পারে ? ২০০৫ সালের ২৭ জানুয়ারি হবিগঞ্জের বৈদ্যের বাজারে স্থানীয় আওয়ামী লীগের সমাবেশে গ্রেনেড হামলায় প্রাণ হারান স্থানীয় সাংসদ ও সাবেক অর্থমন্ত্রী শাহ এম.এ.এস কিবরিয়া সহ ৫জন। এ ঘটনার পর হবিগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুল মজিদ খান বাদী হয়ে হত্যা ও বিস্ফোরক আইনে দুটি মামলা দায়ের করেন। এ মামলা সি আই ডিতে স্থানান্তর করে তদন্ত কর্মকর্তা নিয়োগ করা হয়। এবং তৎকালীন সিলেটের ডি আই জি কে প্রধান করে ৬ সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। আর গ্রেপ্তার দেখানো হয় জিয়া স্মৃতি পরিষদের কেন্দ্রীয় সভাপতি ও হবিগঞ্জ জেলা বিএনপি’র সহ সভাপতি আব্দুল কাইউমসহ স্থানীয় বিএনপির ১০ নেতাকর্মীকে।

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা সিআইডির সিনিয়র এ.এস.পি মুন্সি আতিক ওই বছরের ২১ মার্চ এই ১০জনকে অভিযুক্ত করে আদালতে চার্জশীট দাখিল করেন। চার্জশীটে বলা হয়,চুনারুঘাটের আসামপাড়া থেকে গ্রেনেড সরবরাহ করা হয় এবং আব্দুল কাইউম বিএনপির মনোনয়ন পেয়ে সহজে নির্বাচিত হতে পারবেন এজন্য তার অনুগতদের দিয়ে কিবরিয়াকে হত্যা করেছেন। তদন্ত কমিটিও একই ধরণের রিপোর্ট জমা দেন। মামলার বাদী চার্জশিট প্রত্যাখান করে মামলার অধিকতর তদন্ত দাবী করে আদালতে কয়েকদফা আবেদন করেন। পরবর্তীতে উচ্চ আদালত আবেদন গ্রহণ করে বিচারের কার্যক্রম স্থগিত করে মামলাটি কেন অধিকতর তদন্ত করা যাবেনা এ জন্য সরকারের প্রতি রুলনিশি জারী করেন।

পরবর্তীতে সরকার আপিল করলে সুপ্রিম কোর্ট এ মামলা শুনানীর জন্য ৬ সদস্য বিশিষ্ট বেঞ্চ গঠন করেন। বিগত সরকার থাকা অবস্থায় এ মামলার আর কোনো অগ্রগতি হয়নি। বর্তমান সরকার আসার পর কিবরিয়া পরিবারের দাবীর প্রেেিত নতুন করে তদন্তের কাজ শুরু হয়। নতুন কর্মকর্তা এ ঘটনার সঙ্গে হরকাতুল জিহাদের সম্পৃক্ততা পাওয়া গেছে বলে সংবাদ মাধ্যমকে জানান এবং শীঘ্রই চার্জশিট দেয়া হবে বলে ঘোষণা দেন। তাহলে প্রশ্ন আগের তদন্ত ভুল ছিল! আগের তদন্ত কর্মকর্তা সংবাদ মাধ্যমকে জানিয়েছেন তিনি এ ঘটনায় হরকাতুল জিহাদের জঙ্গিদের সম্পৃক্ততার কোন প্রমাণ পাননি।

অন্যদিকে সাবেক অর্থমন্ত্রী শাহ এ.এম.এস কিবরিয়া ছেলে ড. রেজা কিবরিয়া সংবাদ মাধ্যমকে জানিয়েছেন, গ্রেনেড হামলার সুষ্ঠু তদন্ত হয়নি। নিরপে তদন্ত হলে সত্যিকারভাবে বেরিয়ে আসবে কারা এ হত্যাকান্ডের সাথে জড়িত। তিনি সাবেক সরকারের মন্ত্রী, এমপি’রা এ ঘটনার সম্পৃক্ত রয়েছেন উল্লেখ করে এর সুষ্ঠু তদন্ত দাবী করেন। কিবরিয়া হত্যাকান্ড বিগত সরকারের আমলে বাংলাদেশের রাজনৈতিক হত্যাকান্ডের মধ্যে আন্তর্জাতিকভাবে সবচেয়ে বেশী আলোচিত। এই হত্যাকান্ডের সুষ্ঠু বিচার হবে ,এমন জোরালো দাবী ছিল দেশে বিদেশে।

কিন্তু তিনবছরেও এ মামলা তদন্তের গন্ডি পেরুতে পারেনি। একবার চার্জশিট দেওয়ার পর এখন আবার নতুন করে চার্জশিট দেওয়ার চেষ্টা চলছে। স¤প্রতি ২১ আগষ্ঠ গ্রেনেড হামলার ঘটনায় বিএনপি সরকারের এক মন্ত্রীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। নতুন করে এই ঘটনার রহস্য উন্মোচন হচ্ছে। এ ঘটনা যে রাজনৈতিক সিদ্বান্তে করা হয়েছিল তা এখন প্রকাশ পাচ্ছে।

কিবরিয়া হত্যাকান্ডে রাজনৈতিক নেতৃত্ব জড়িত থাকার সম্ভাবনা থাকার পরও তদন্ত কেনো ঐদিকে অগ্রসর হচ্ছে না। কেবল জঙ্গিরা এ হত্যাকান্ড ঘটাতে পারে না । নিশ্চয়ই এর আড়ালে রাজনৈতিক প্রতিহিংসা কাজ করেছে। এর আসল তদন্ত কি হবে? জাতি কি প্রকৃত সত্য জানার অধিকার রাখেনা ? তিন বছরে যে মামলা তদন্তের গন্ডি পেরুতে পারেনি এখন সরকারের উচিত এ মামলাকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে প্রকৃত রহস্য উন্মোচন করা। এত এত সংস্কারের আওয়াজ তুলতে পারা আর বিচার ব্যবস্থা নিয়ে গর্ব উচ্চারণের পরও একটি নির্মম হত্যাকান্ডের বেলায় সরকার নীরবতায় প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।

এর সুরাহা কী হবে না ? একজন নিপাট ভালোমানুষ , দেশপ্রেমিক রাজনীতিবিদ আর বরেণ্য অর্থনীতিবিদ শাহ এ এম এস কিবরিয়া হত্যাকান্ডের বিচার কি আলোর মুখ দেখবে ...

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।