আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

সাধাসিধে মানুষ (ক্যাম্পাস-স্কুল জীবনের স্মৃতি কাহিনী)

জীবনকে খুব কাছ থেকে দেখতে চাই। গতানুগতিকতার গন্ডি থেকে মুক্তি চাই। এতে হয়তো শুনতে হবে অনেক অপমানের বাণী। ভয় করি না।

আমি তখন ক্লাস এইটে এ পড়ি।

আমার স্কুলটার নাম ছিল গভঃ ল্যাবরেটরি হাই স্কুল। আমি আমার ক্লাসে মোটামুটি নতুন ছিলাম। তাই হয়তো ক্লাসে কথা কম বলতাম। সবাই আমাকে তাই শান্ত শিষ্ট লেজ বিশিষ্ট ভাবত। যেন আমি সাধাসিধে মানুষ ,আমি তাই কিছু মনে করতাম না ।

যার যা মন চায় ভাবুক না। আমি সবাইকে আমার বন্ধু ভাবার চেষ্টা করতাম। আমার মনে আছে আমি যেদিন প্রথম স্কুলটায় যাই সেদিন এক জন ছেলে আমাকে বলে তুমি কি হিন্দু? আমি একটু অবাক হলাম কারণ প্রথম দেখায় কেউ কাউকে তো এ রকম কথা জিজ্ঞাসা করেনা। তারপর ও হাসি মুখে বললাম না ভাই আমি মুসলমান। -কিনতু কেন ভাই? -না আমাদের ক্লাসটা তো মালাউন মুক্ত তাই ভাবলাম এবার আবার কেউ হিন্দু এল নাকি? আমি একটু হাসলাম বললাম ও ঠিক আছে ।

আমি বুঝতে পেরেছি। এর মধ্য এ আমার অনেকের সাথেই পরিচয় হল। সবচেয়ে মজার বিষয় হল যে ক্লাসের সবচেয়ে দুষ্ট ছেলেটি আমার ভাল বন্ধু হয়ে গেল। আমি লক্ষ্য করলাম এই ছেলেটি কে অন্য ছেলেরা কেন যেন অনেক ভয় পায়। কিছুদিন পর বুঝতে পারলাম কেন ওকে সবাই ভয় পায়।

সে অন্যদের উপর সরদারি করত। অন্যদের সাথে তার কিছু গোলমাল হলে ও তাদের কে মারতো। আচ্ছা আমি তো এখনো ওর নামই বলিনি। ওর নাম রকিব। আমি রকিবকে খুব ভাল বুঝতাম।

রকিব ও তার মনের অনেক কথা আমার সাথে শেয়ার করত। যাই হোক এবার আমার গল্পের টাইটেলে আসি। শুরুতেই আমি বলেছিলাম যে আমি বেশ শান্ত ছিলাম ক্লাসে। কার সাথে দরকার ছাড়া খুব একটা কথা বলতাম না। কিন আমার ক্লাসে কিছু ছেলে ছিল যারা আমাকে অনেক বোকা ভাবতো।

ভাবত নতুন ছেলেটা তো একবারে বেকুব। চুপচাপ বসে থাকে। ওরা আমাকে নিয়ে অনেক মজা করত। ওরা আমাকে নিয়ে অশালিন কিছু কথা বলতো। আর নিজেরা পশুর মতো হাসতো।

আমার অনেক রাগ লাগত। কিনতু কিছু বলতামনা। চুপচাপ থাকতাম। তিন জন ছেলের কথা আমি এখনো মনে করতে পারি যারা আমাকে নিয়ে সবসময় অনেক ফাজলামো করতো। তাদের নাম হল অমি,রাব্বি আর মোল্লা।

মোল্লা সবচেয়ে বেশি দুসষ্টামি করত। মানে খারাপ কথা বেশি বলত। একদিন চুপচাপ ওফ পিরিওডে ক্লাসে বসে আছি। অমি এসে আমাকে বলল আচ্ছা তুমি কোন টিচারের কাছে পড়? আমি বললাম হ্যা পড়ি কেন? -ও আচ্ছা। কার কাছে পড় তুমি -আমার বাসায় এক ভাইয়া আছে।

উনার কাছে পড়ি। তখন আমি আমাকে হটাত করে বলল তোমার বইতে একটা কথা লিখি। তুমি বাসায় গিয়ে তোমার স্যার কে জিজ্ঞাসা কর। এই বলে আমার বইতে সে খুব একটা খারাপ শব্দ লিখল। (কথাটা লিখা গেল না) আমি আর মেজাজটা কন্ট্রোল করতে পারলাম না।

আমি সাথে সাথে অমির কলার চেপে ধরলাম। বললাম তুমি কি লিখলা? -তুমি কি তোমার মাকে এই নামে ডাক? বলেই দুইটা চড় মারলাম ওর গালে। সবাই বেশ অবাক। নতুন ছেলেটার এত রাগ। এমন সময় বাংলা স্যার গোকুল স্যার আমাদের ক্লাসে এলেন।

তিনি মারামারি করছি দেখে দু'জনকেই কাছে ডাকলেন। রকিব পুরো ব্যাপারটা স্যার কে বলল। স্যার সব শুনে বললেন ক্লাসে নতুন কেউ দেখলে তোমাদের আর আনন্দ ধরে না? বলেই মোল্লা ,অমি,রাব্বিকে অনেক মারলেন। আমকে স্যার বললেন বাবা তুমি মন খারাপ করনা। এই ক্লাসে অনেক ভাল ছেলে আছে।

স্যারের কথা শুনে আমার চোখে পানি এসে যাচ্ছিল। স্যার বললেন তুমি ব্যাপারটা হেড স্যারকে বলবে। ওরা আমার কাছে তখন মাফ চাইল। ক্লাসে আর ৭০ জন ছিল। সবাই দেখল।

স্যারকে বললাম স্যার ওদের কে মাফ করে দেন। স্যার নিজের চশমা খুলে পকেট থেকে রুমাল বের করে চোখ মুছতে মুছতে বললেন ওর থেকে কিছু শেখো তোমরা। শেষ কথা সেদিনের পর থেকে আমার বন্ধুর সংখ্যা অনেক বেড়ে গেল। আমি ক্লাস ক্যাপ্টেইন হলাম এরপর। আগের চেয়ে অনেক ফ্রী হলাম সবার সাথে।

আর সেই তিন জন আমাকে দেখলে অপরাধির মতো চেয়ে থাকতো। ইমির

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.