ছোট্ট একটা পাড়ার গলিতে আলো খেলা করছে ট্রাফিক সিগনালের মতো। কিন্তু আলোর রঙটা সাদাকালো... তিন রঙা নয়। কারণ? গলির স্ট্রিটলাইটটা মৃতপ্রায় হয়ে জ্বলছে আর নিভছে। খোলা একটা ডাস্টবিন থেকে পঁচা একটা গন্ধ গলিটাকে গুমট করে রেখেছে, নিঃশ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছে। আর চলার পথটাতো সুয়ারেজের পাইপটা ফেটে গলিত লাশের মতো পড়ে আছে।
আরে ওখানে কে? ডাস্টবিনটাতে একটু নড়াচড়া। কেউ কি কিছু খুঁজছে? হারানো কিছু? একটু আগিয়ে দেখতে পাই একজন মধ্যবয়সী মহিলা ময়লা ঘেঁটে চলছে। যেন তার সন্তান লুকিয়ে আছে ওর মাঝে। নাহ্ খুবই বিরক্ত লাগছে... বলে উঠলাম, 'এই কি হচ্ছে ওখানে...যাও...চলে যাও...'। মনে মনে ভাবলাম, 'এরা যে কিভাবে ঢাকায় এল...শহর আর শহর রইল না'।
মহিলা চোখ তুলে চাইলো। আচমকা একটা শীতল স্রোত বয়ে গেল পিঠ দিয়ে। আমরা এদের ভীত চোখ দেখতে অভ্যস্ত...ঘৃণা ভরা চোখ নয়। আবার ওর কাজে ও ব্যস্ত হয়ে পরে। কি জানি একটা কৌতুহল আমাকে দাঁড় করিয়ে রাখে।
হঠাৎ দেখি ওর চোখ উজ্জ্বল হয়ে উঠলো একটা ছোট্ট প্যাকেট পেয়ে। প্যাকেটে কিছু মুরগির হাড়গোড়, পাখনা আছে। ওটা নিয়ে সে ছুটে চলছে।
নর্দমার পানি ওর পায়ের আঘাতে এদিক ওদিক ছিটকে পড়ছে।
একটু সামনে একটা শিশু শুয়ে আছে।
শিশু বললে তোমার আমার চোখের সামনে যে ছবিটা ভেসে উঠে ঐ বাচ্চাটা ও রকম না। ওর শুধু বড় একটা মাথা, বড় বড় এক জোড়া চোখ আর শুখনো একটা হাড় জিরজিরে শরীর। তবুও তো মানুষের বাচ্চা - তাই শিশু বলা। কঙ্কালসার শরীরের দুটি মানুষ ধুকে ধুকে বেঁচে থাকা। ওর মা কোথা থেকে একটু লবণ জোগাড় করে ঐ হাড়গোড়গুলো আগুনে পুরিয়ে বাচ্চার মুখে টুলে দিচ্ছে।
বাঁচিয়ে রাখতে চায় তার অস্তিত্বকে... জানাতে চায় তোমার আমার শহর আজ ওদের রক্তের উপর দাড়িয়ে। চোখ ব্যাথা করছে... মন আজ পালাতে চাচ্ছে... ভয় পাচ্ছে। কেন জানি আজ মনে হচ্ছে কোথাও মহাপ্রলয় শুরু হবে... আমিও থাকব ঐ মিছিলে...হয়ত মিছিলের দলে বা মিছিল দিয়ে পদদলিত হয়ে। তবে থাকবো আমার পাপমোচন করতে।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।