হয়তো আমি কোন কিছু সম্পর্কে নিশ্চিত নই
আগেই বলেছি, উদয়পুরে যা হয়েছিলো তা অন্য কোথাও হয়নি।
উদয়পুরে কী হয়েছিলো সেটি বলার আগে অন্য প্রসঙ্গে কিছু কথা বলে নিই। আমরা সাধারণত একটি এলাকায় গিয়ে দু’চারদিন থেকেই সেই এলাকা সম্পর্কে মূল্যায়ন করে ফেলি। মূল্যায়ন করি সেখানকার মানুষদেরও। এটি কতোটা ঠিক তা নিয়ে জোর বিতর্ক আছে সমাজবিজ্ঞানী ও নৃতাত্ত্বিকদের মাঝে।
কিন্তু যদি প্রথম দর্শন ও প্রথম ব্যবহার মানুষের কাছে গুরুত্বপূর্ণ হয়, তাহলে হয়তো এর একটি তাৎপর্য থাকে। সে হিসেবে আমি বলবো, আমাদের প্রতি মেলাঘরের সনজয়দাদা যে উষ্ণ ব্যবহার করেছেন, সেই ধরনের আন্তরিক এবং উচ্ছ্বল ব্যবহার যদি সেখানকার মানুষের স্বাভাবিক চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য হয়, তাহলে সেখানকার মানুষ অবশ্যই আপনার মনকে ছুঁয়ে যাবে একমাত্র তাদের ব্যবহার দ্বারাই।
অটো (বেবিট্যাক্সি বা সিএনজি স্কুটারকে সেখানে অটো বলা হয়) রিজার্ভ করে আমরা রওনা হলাম উদয়পুরের দিকে। ভাড়া নিলো ১৫০ রুপি। আস্তে ধীরে দু’পাশের প্রকৃতির রূপ দেখতে দেখতে যাচ্ছি।
প্রায় পুরোটা সময়ই আমাদেরকে সঙ্গ দিলো গোমতি নদী। এই পাহাড়ি গোমতি নদীই কিন্তু পরে কুমিল্লায় প্রবেশ করেছে। বেশ ভালো রাস্তা। যাওয়ার পথে দেখলাম বনের মধ্যে বেশ কিছু জায়গায় কাজ চলছে। খোঁজ নিয়ে জানলাম ত্রিপুরার পর্যটন বিভাগ এই কাজ করছে।
পুরো ত্রিপুরাতেই দেখেছি পর্যটন ও বন বিভাগ অনেক কাজ করছে। আমাদের এই দুটি বিভাগ পর্যটকদের আকর্ষণের জন্য এরকম উদ্যম নিয়ে কাজ করলে পর্যটকের সংখ্যা বেড়ে যেত বহুগুণে। ত্রিপুরায় যে সব জায়গায় আমরা বেড়িয়েছি, সেরকম অনেক ট্যুরিস্ট স্পট আমাদের এখানে পড়ে আছে অবহেলায়।
দুপুরের মধ্যেই পৌঁছে গেলাম উদয়পুরে। ছোট্ট ছিমছাম মফস্বল শহর।
লোকসংখ্যা খুব বেশি নয়। উঠলাম গোমতি নদীর নামে রাখা ট্যুরিস্ট লজে। সেখানে আবার খাওয়া-দাওয়ার ব্যবস্থা নেই। পাশেই একটি হোটেলে খেলাম। বাংলাদেশ থেকে এসেছি বলে সে কী খাতির! অসহ্য রকমের ঝাল সিদল ভর্তাসহ সবজি, মুরগি এবং পাঠার মাংস (ত্রিপুরায় আপনি খাসির মাংস বলে কোনো শব্দ শুনবেন না, সব পাঠার মাংস) দিয়ে পেটপুরে খেয়ে দুপুরে ঘুম দিলাম।
বিকেলে বেরুলাম শহর থেকে তিন কিলোমিটার দূরে মাতাবাড়ি নামক জায়গায়।
সেখানে প্রায় কয়েকশ বছর আগে নির্মিত একটি মন্দির আছে। কথিত আছে, এই মন্দিরটি হিন্দুদের ৫১ পীঠের একটি। তখনকার রাজা স্বপ্নে দেবীর আদেশ পেয়ে চট্টগ্রামের একটি মন্দির থেকে মাতা ত্রিপুরেশ্বরীর বিগ্রহটি সেখানে স্থাপন করেন। পরে মন্দিরের পাশে একটি পুকুর খনন করার সময় একই ধরনের আরেকটি ছোট বিগ্রহ পাওয়া যায়।
দুটি বিগ্রহই এখন মন্দিরে রাখা আছে। দেখতে আকর্ষণীয় এই মন্দিরটির (ছবি দেখুন। ছবিটি নেওয়া হয়েছে ত্রিপুরার পর্যটন বিভাগের ওয়েবসাইট থেকে) গঠন বেশ মজবুত বলেই মনে হলো।
তবে মন্দিরের সাথে আকর্ষণীয় হলো এর পুকুরটিও। পুকুরের বিশাল বিশাল সব মাছ এবং বেশ কয়েকটি কাছিমও রয়েছে।
দর্শনার্থীরা সেখানে মাছ ও কাছিমদের মুড়ি, বিস্কিট ইত্যাদি খাওয়ায়। মাছগুলো কেউ ধরে না, এখানেই জন্ম ও মৃতু্য। মন্দিরের চতুর্দিকে রয়েছে প্যাড়ার দোকান। আপনি যেই মন্দিরে ঢুকতে যাবেন, অমনি চারদিক থেকে শোরগোল উঠবে, দাদা আসেন, দিদি আসেন, জুতা রেখে যান, প্যাড়া নিয়ে যান। জুতা রেখে যান মানে হচ্ছে, মন্দিরে ঢুকতে গেলে আপনাকে কোথাও না কোথাও জুতা রেখে উঠতে হবে কিন্তু সেখানে জুতা রাখার কোনো ব্যাবস্থা নেই।
ফলে এসব দোকানগুলোতেই জুতা রাখার একটি ব্যবস্থা করা হয়েছে। দোকানীরাই জুতা পাহারা দিবে, যদি আপনি কিছু প্যাড়া কিনেন এ আশায়।
মাতাবাড়ি থেকে ট্যুরিস্ট লজে ফিরলাম। আলাপ হলো সেখানকার ইনচার্জ ভদ্রলোকের সঙ্গে। বেশ অমায়িক মানুষ।
তাড়িয়ে তাড়িয়ে গল্প করতে ভালোবাসেন। মাঝে মাঝে বিরক্তি লাগলেও ভদ্রলোকের এতো অভিজ্ঞতা যে, শুনলেন লাভ ছাড়া ক্ষতি হবে না।
আগের পর্বে বলেছিলাম উদয়পুরে যা হয়েছিলো তা অন্য কোথাও হয়নি। সেটা সত্যি। উদয়পুরে থাকা এবং বেড়ানো আমাদের কাছে যতোটা বোরিং লেগেছিলো, তা অন্য কোথায় লাগেনি।
আগামীকাল আমরা সিপাহীজলা হয়ে ফিরছি আগরতলায়।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।