আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ত্রিপুরা ভ্রমণ: বিচ্ছিন্নতায় মিলনের বোধ – ২

হয়তো আমি কোন কিছু সম্পর্কে নিশ্চিত নই

বিস্তর চড়াই-উৎরাই পেরিয়ে অর্থাৎ রাস্তার খানাখন্দ পেরিয়ে পৌঁছলাম ধরখারে। তখন বেলা সাড়ে ১১টা। ধরখার থেকে আখাউড়া চেকপোস্টের দূরত্ব প্রায় ১০ কিলোমিটার। ট্রলারে গেলে সময় লাগবে দু’ঘণ্টারও বেশি। অগত্যা ঢাকা থেকে তাড়ানো বায়ুদূষণকারী বেবিট্যাক্সি ১৮০ টাকা দিয়ে ভাড়া করে পৌঁছলাম আখাউড়া চেকপোস্টে।

সময় লাগলো ঘণ্টাখানিক। আমরা যে রাস্তা দিয়ে ধরখার থেকে আখাউড়া চেকপোস্টে এসেছি, সেটিই আগরতলা যাওয়ার মুল রাস্তা। কিন্তু কে বলবে এটি আন্তর্জাতিক রুটের রাস্তা? এই রাস্তার বেহাল দশা নিয়ে প্রথম আলোতেই এক মাসের মধ্যে দুটি রিপোর্ট বেরিয়েছে। কর্তৃপক্ষের টনক নড়েছে কি-না জানি না, কিন্তু রাস্তার কোনো উন্নতি নেই। অবস্থা এমন যে আখাউড়া স্থলবন্দর দিয়ে আমদানি-রপ্তানি পর্যন্ত বন্ধ হয়ে গেছে।

ঢাকার বাস আগরতলা যায় না শুধু এই রাস্তার কারণেই নাকি! আমাদের কাছে অবশ্য মনে হয়েছে রাস্তার অবস্থা এতোটা সকরুণ নয় যে সারাদিনে কষ্টেসৃষ্টে একটি বাস যাওয়া যাবে না। পুরো রাস্তার মধ্যে মাত্র এক কিলোমিটার অংশ সবচেয়ে খারাপ। আমার কাছে মনে হয়েছে, ঢাকা-আগরতলা রুটে যাত্রী কম থাকার কারণে হয়তো ঢাকা থেকে যাওয়া শ্যামলী পরিবহনের বাসটি বন্ধ হয়ে গিয়েছে। আখাউড়া পৌঁছে সারলাম ইমিগ্রেশন ও কাস্টমসের কাজ। সাইজে বিশাল নয়, কিন্তু ফরমে এতো ঘর- যে পূরণ করতে করতে বিরক্তি ধরে গেলো।

তাছাড়া ফরমে লেখার মতো পর্যাপ্ত জায়গাও নেই। কিন্তু কিছু করার তো নেই! এদিকের সব আনুষ্ঠানিকতা সারার পর সারতে হলো ওদিকেরগুলো। তবে ওদের ফরম আমাদের তুলনায় কম বিরক্তিকর। ফরমে লেখার জায়গা যেমন যথেষ্ট আছে, তেমনি অনাবশ্যক তথ্যও জানতে চায় না তারা। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে এ ব্যাপারে মনোযোগ দেওয়ার অনুরোধ করবো।

পাসপোর্টে সিলছাপ্পড় মেরে আমরা এখন আগরতলায়। এবং প্রথমেই মনে হলো, পেটে ক্ষুধা। হাতে একটাও পয়সা নেই। সত্যি বলছি, হাতে-মানিব্যাগে বা পকেটে একটিও পয়সা ছিলো না। কিছু ডলার ছিলো।

সেগুলো ভাঙাতে হবে। কোথায় ভাঙাব? পাশেই স্টেট ব্যাংক অব ইন্ডিয়ার বুথ। সেখানে ৫০ ডলার ভাঙালাম। চার্জ হিসেবে ১০০ রুপি কেটে রাখলো। এ প্রসঙ্গে জানিয়ে রাখি, ভারত গেলে যখনই আপনি ব্যাংকে ডলার ভাঙাতে যাবেন, তখনই চার্জ হিসেবে পাসপোর্ট প্রতি ১০০ রুপি কেটে রাখবে, তা আপনি যতো পরিমাণ ডলারই ভাঙান না কেনো।

সুতরাং প্রয়োজনে এক পাসপোর্টে এনডোর্স করা ডলার ব্যাংকে ভাঙালে একবারেই ভাঙানো ভালো। না হলে আপনিই ঠকবেন! আর কার্ব মার্কেটে ভাঙালে চার্জ কাটাকাটির ঝামেলা নেই। তবে আগরতলায় কার্ব মার্কেটে ডলার ভাঙালে তারা ব্যাঙ্কের তুলনায় কম রেট দেয়। এই অদ্ভুত নিয়ম আর কোথাও আছে কি-না জানি না। সারাজীবন শুনে এসেছি, ব্যাংকে ভাঙালে কম পাওয়া যায়, বাইরে বেশি।

এখানে ঠিক উল্টো। রিকশা করে পৌঁছলাম আগরতলা শহরে। ১৫ রুপি ভাড়া। রাস্তা অনুপাতে ভাড়া খুব বেশি মনে হলো। খুব বেশি বড় শহর নয়।

আমাদের ময়মনসিংহ বা রাজশাহীর মতো। দু’টি হোটেল ঘুরে একটিকে পছন্দ করলাম। মানুষ আমরা তিনজন। হোটেল ম্যানেজারকে বলে ডাবল বেডের রুমে একস্ট্রা বেডের ব্যবস্থা করা হলো। অবশ্য এ জন্য ১০০ রুপি একস্ট্রা চার্জ দিতে হবে।

সবমিলিয়ে আমাদের হোটেল ভাড়া দাড়ালো রাত প্রতি ৭৬০ রুপি। ৬০০ রুপি ডাবল বেড + ৬০ রুপি ভ্যাট + একস্ট্রা বেড চার্জ ১০০ রুপি । কিছুক্ষণ বিশ্রাম নিয়ে বেরুলাম শহর দেখতে। পরিচিত একজনের ঠিকানা নিয়ে এসেছিলাম। তার সাথেও দেখা করলাম।

তারপর চারজনে মিলে ঠিক করলাম আগামী এক সপ্তাহ কোথায় কোথায় বেড়ানো যায়। সবকিছু ঠিকঠাক করে রাত ১২টায় গেলাম ঘুমাতে। পরদিন তাড়াতাড়ি উঠতে হবে। এভাবে চলে গেলো ত্রিপুরা রাজ্যে আমাদের প্রথমদিনটি। আগামীকাল যাবো মেলাঘরের সাগরমহলে, দেখবো ত্রিপুরার রাজার গ্রীষ্ম ও বর্ষাকালীন অবকাশযাপন কেন্দ্র নীরমহল, যেখানে একবার রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরও গিয়েছিলেন।


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.