আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

প্রসঙ্গ: বাংলাদেশে বিদেশী টেলিভিশন চ্যানেলগুলোর আগ্রাসন

কারো জন্য ভাল কিছু করতে না পারলেও কমপক্ষে ক্ষতি করা থেকে তো বিরত থাকতে পারি

দীর্ঘদিন ধরেই বাংলাদেশের বিভিন্ন গণমাধ্যমে এবং মানুষের মাঝে আলোচিত হয়ে আসছে যে বিদেশী টিভি চ্যানেলগুলোর প্রভাবেই বাংলাদেশী বিনোদন প্রচার মাধ্যমগুলো মার খাচ্ছে বা আমাদের দেশের মানুষগুলো নিজস্ব চ্যানেলের প্রতি বিমুখ হচ্ছে। বিদেশী চ্যানেল বলতে কিছু ইংলিশ এবং ভারতীয় টিভি চ্যানেলগুলোই এদেশে বেশি চলে। ইংলিশ চ্যানেলগুলো প্রধানত ইংলিশ মুভিপ্রিয় তরুণ প্রজন্ম এবং হাতে গোণা কিছু মানুষের কাছে প্রিয় হলেও দেশের বেশিরভাগ মানুষ যেহেতু ভারতীয় চ্যানেলগুলোর প্রতি আকৃষ্ট তাই আগ্রাসনে এইসব চ্যানেলগুলোকেই বেশি দায়ী ধরা হয়। সম্প্রতি বাংলাদেশে ভারতীয় মুভি আমদানী প্রসঙ্গে এই বিষয়টি আরও সোচ্চার হয়ে উঠেছে যে আমাদের দেশে ভারতীয় চ্যানেলের সহজপ্রাপ্যতা এবং ভারতে আমাদের চ্যানেলগুলোর দুর্মূল্যই বাংলাদেশে ভারতীয় চ্যানেলগুলোর অবাধ প্রচলনের জন্য দায়ী। কিছু মানুষের দাবী আমাদের দেশে ভারতীয় টিভি চ্যানেল প্রচার বন্ধ করা হোক।

আসুন দেখা যাক আসলে এই আগ্রাসনে ওই বিদেশী চ্যানেল গুলোই দায়ী নাকি দায়ী আমাদের বিনোদন প্রচারকারী মাধ্যমগুলো এবং তাদের প্রচার কৌশল। প্রথমে আসা যাক দর্শক প্রসঙ্গে; আমাদের দেশের টেলিভিশনের সিংহভাগ দর্শকই বাড়ির গৃহিণী, শিশু কিশোর এবং তরুণ প্রজন্ম এবং বাকি যারা দর্শক আছেন তারা হয়তো খবরের শিরোনাম দেখেই ঘুমিয়ে পড়েন কিংবা কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়েন; এরা বেশির ভাগ কর্মজিবী মানুষ। দেখা যায় যে প্রথম ভাগের মোটামুটি সবাই হিন্দি সিরিয়াল, মুভি এবং কার্টুন ছবির প্রতি আকৃষ্ট। আর এক অংশ আছেন দেশপ্রেমের জোরে দেশীয় চ্যানেলের অনুষ্ঠান দেখেন। এখন প্রশ্ন হলো কেন তারা দেশীয় এতগুলো চ্যানেল এত এত প্রোগ্রাম ছেড়ে ওইসব বিদেশি অনুষ্ঠান বেশি দেখেন।

কারণ; কারণ খুব কঠিন কিছু নয়। গৃহিণীরা স্বভাবতই সাংসারীক বিষয়ের নাটক, সিরিয়াল, মুভি দেখতেই বেশি পছন্দ করেন। শিশুরা কার্টুন আর মজার মজার অনুষ্ঠানে মজা পায়। আর তরুণ প্রজন্ম মুভি, নতুন মুভির প্রচারণা আর গানের অনুষ্ঠান পছন্দ করবে এটাই স্বাভাবিক। আমাদের দেশীয় চ্যানেলগুলোতে তো এই রকম সব ধরনের অনুষ্ঠানই প্রচার হয়।

তারপরেও কে সবাই ওইসব বিদেশী চ্যানেলগুলো বেশি দেখেন? তাহলে আমাদের দেশীয় চ্যানেলগুলোর দুর্বলতা কোথায়? বলতে দ্বিধা নেই যে উল্লেখিত দর্শকরা মোটামুটি সবাই টিভি দেখেন বিনোদনের জন্য। গৃহিণীরা সংসারের কাজকর্ম সেরে টিভির সামনে বসেন রিল্যাক্স হয়ে বিনোদন পেতে। শিশুরা স্কুলের পড়া শেষ করে কার্টুন দেখে একটু বিনোদনের জন্য। আর তরুণরাও মুভি দেখে গান শোনে পরিপূর্ণ বিনোদনের জন্যই। প্রযুক্তির উন্নয়নের জন্য এবং দেশীয় রাজনীতিবিদদরে কল্যাণে আমরা আজ বেশ কয়েকটি টিভি চ্যানেল পেয়েছি।

যার কিছু লোগো স্যামপল চিত্রে প্রদর্শিত। এবার মূল কথায় আসা যাক। আমাদের এইসব টিভি চ্যানেলগুলোর কোনটিকে পরিপূর্ণ বিনোদনের মাধ্যম বলা যায়। বিনোদন মানে বিনোদন ( সঙ্গীত, নৃত্ত, মুভি, কার্টুন, মিডিয়া জগতের খবর), কিন্তু এর মাঝে ছেদ পরলে তা হয়ে ওঠে বিরক্তিকর। এক সময় যখন শুধুমাত্র বিটিভি ছিল তখন দেখতাম গৃহিনীরা খুব মজা করে মুভি দেখছেন।

ঠিক খবর প্রচারের সময় তারা উঠে গিয়ে সংসারের ছোট ছোট কাজ সের নিতেন। কিন্তু এখন আর সেই সময় নেই। এখন তারা রিমোট চেপে ঠিকই পছন্দ মত বিনোদনের চ্যানেল খুজে নিচ্ছেন। তারা নিশ্চয় হরতালে গাড়ি ভাংচুড়, নেতা-নেতৃদের গুণগান, ঞ্জাণীগুণীদের টক শো এই গুলোতো বিনোদন পান না। শুধু তারাই নন সাথে আমরাও।

দেশের এক সময়ের জনপ্রিয় বিটিভি এখন মনে হয় ইত্যাতি ছারা অন্য অনুষ্ঠান আর কেউ দেখেন কিনা সন্দেহ। আমাদের দেশে টিভি চ্যানেল বৃদ্ধি পেলেও প্রচার কৌশলের কিন্তু পরিবর্তন হয় নাই। বিশেষ বিশেষ সময়ের সংবাদ, প্রতি ঘন্টার সংবাদ, সংবাদ শিরোনাম, সারাদিনের সংবাদের উপর বিশেষ আলোচনা, টক-শো এইসব সবার প্রয়োজনীয় অনুষ্ঠান হলেও বিনোদনের জন্য যে উপযুক্ত নয় এ কথা অনস্বীকার্য। সংবাদ, টক-শো সব দেশের টিভিতেই প্রচার হয়। এই গুলো জাতীয় জীবনে অপরিহার্য।

কিন্তু সেসব দেশে সংবাদের জন্য আলাদা টিভি চ্যানেল আছে। যাদের ইচ্ছা তারা চব্বিশ ঘন্টা দেশ-বিদেশের সংবাদ দেখতে পারেন। আছে মুভি, গানের জন্য আলাদা চ্যানেল। কিন্তু আমাদের দেশে একমাত্র বিনোদন মনে হয় সংবাদ। আমাদের নাটকের মান অনেক দেশ থেক যথেস্ট ভাল, মুভিও ইদানিং বেশ উন্নতি করছে, গানেও আমরা কম সমৃদ্ধ নই।

সংবাদ প্রচারের জন্য কয়েকটা চ্যানেল নির্দিস্ট করে বাকি চ্যানেল গুলো বিনোদনের জন্য ছেরে দিলেই হয়। দেশের অনেকেরই দাবী আমাদের প্রতিবেশী দেশ ভারতে যদি আমাদের দেশীয় চ্যানলেগুলো সহজমূল্যে প্রচারের ছার দেয়া হয় তা হলে হয়তো আমাদের দেশীয় অনুষ্ঠান তাদের মাঝে প্রচার পাবে। কিন্তু তার আগে আমরা ভেবে দেখেছি কি আমরা তাদের সামনে কি প্রচার করব??? কম মূল্যে হোক আর বেশি মূল্যে হোক তারা নিশ্চয় টাকা দিয়ে আমাদের দেশিয় নেতা-নেতৃদের উন্নয়নের বাণীতে কিংবা বিরক্তিকর টক-শো তে বিনোদিত হবেন না। আমরাও কিন্তু এখানে ভারতীয় খবরের চ্যানেল দেখি না। মুভি কিংবা গানের চ্যানেল দেখি।

আসলে অন্যের দোষ ধরার আগে আমাদের নিজেদেরই আগে সংশোধন দরকার।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।