আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

বাঙ্গালীর দেশ-বিদেশঃ ভালো থাকা, মন্দ থাকা

পুনরায় রৌদ্রহীন রৌদ্রে আমি, পথহীন পথে

বিদেশ পর্ব ==================== যারা দেশে আছেন তাদের যদি এখন প্রশ্ন করা হয়, ‘কেমন আছেন?’- মুষ্টিমেয় কিছু লোক ছাড়া সবাই হয়তো একবাক্যে বলে উঠবেন, ‘ভালো নেই’। আর যেসব বাংলাদেশী বিদেশে আছেন তাদের এ প্রশ্ন করা হলে অনেকেই হয়ত বলবেন, ‘ভালো আছি’। কিন্তু কান পাতলেই একটা গোপন দীর্ঘশ্বাস শোনা যাবে। প্রবাসী অনেকেই আছেন যারা ভিনদেশের নাগরিকত্ব নিয়ে স্থায়ী হয়ে গেছেন, দেশে আর ফিরবেন না। কিন্তু যে দেশের নাগরিক হয়েছেন মনে-প্রাণে সে দেশকে আপন করে নিতে পারেন নি।

অন্য দেশের নাগরিকত্ব নিলেও তাই এরা ফেলে আসা দেশ নিয়ে সারাক্ষণ মেতে থাকেন। প্রবাসীদের এ দীর্ঘশ্বাসের অনেক কারণ আছে— প্রথমত, বেশীরভাগ প্রবাসীরই নিকট আত্মীয়-পরিজন দেশে আছেন। কাগজ-পত্রের জটিলতা বা বিভিন্ন কারণে আনতে পারছেন না। তাই, দু’দিকের টানা-পোড়ন। দ্বিতীয়ত, ভিন্ন সংস্কৃতিতে বেড়ে ওঠার কারণে বাঙ্গালী কখনো মূলধারার জনগোষ্ঠীর সাথে মিশতে পারে না।

আপনি একটা আমেরিকানের সাথে বন্ধুত্ব করবেন, দেখা যাবে আপনার হাজারো সমস্যা- আপনি বারে যেতে পারেন না, ড্রিঙ্ক করেন না, পোর্ক খান না, হালাল মাংস খোঁজেন। এত বাধ্যবাধকতা নিয়ে এদের সঙ্গে মিশতে আপনি নিজেই সংকোচ বোধ করবেন। ভিন্ন মানসিকতা, ভিন্ন সংস্কৃতির কারণে বিদেশে বাঙ্গালী নিজস্ব পরিমন্ডলে আবদ্ধ। মূলধারা থেকে বিচ্ছিন্ন জনগোষ্ঠী কখনো মানসিক শান্তিতে থাকে না। বাঙ্গালীও নেই।

তৃতীয়ত, বিদেশে যখন আপনি থাকবেন, তখন আপনি মোটামুটি একটা ‘আননোওন এনটিটি’। এখানে আপনি যত কিছুই হোন না কেন, কেউ সেটা পাত্বা দেবে না। অবশ্য আপনি যদি সিনেটর, গভর্ণর বা পাবলিক সেলিব্রিটি হোন সে অন্য কথা। তবে সে পর্যন্ত যেতে বাঙ্গালীর দেরী আছে। অথচ দেশে কত অল্পতেই কত স্বীকৃতি! আপনি একটা সরকারী বা নামকরা বেসরকারী প্রতিষ্ঠানের উর্ধ্বতন কর্মকর্তা হন, সবাই বলবে অমুকের তমুক।

আপনি একটা প্রমোশন পেলেন, চারদিকে ছড়িয়ে পড়বে সে কথা। এ আত্মপ্রসাদ আপনি বিদেশে পাবেন না। রবিঠাকুর বলেছেন, ‘বাঙ্গালীকে আত্মপ্রসাদের স্তুতি ঢোঁকে ঢোঁকে গিলাইতে হয়, পরিমাণে কম হইলে তাহার অসুখ বোধ হয়’। বিদেশে বাঙ্গালীর মনের অসুখ তো হবেই। স্তাবকরা যে সব দেশে।

কে এখানে আপনার খোঁজ রাখবে? তাই দেখা যায়, নিউইয়র্ক, ডালাস ইত্যাদি যেসব শহরে বাঙ্গালী বেশি, সেখানে তারা দেশী সাংস্কৃতিক সংগঠন, রাজনৈতিক সংগঠন- এসব নিয়ে মারামারি, কাটাকাটি করেন। যতটা না দেশপ্রেম, তার চেয়ে বেশি স্তুতি অর্জনের চেষ্টা। মূলধারায় তো সুযোগ নেই; তাই অন্তত নিজস্ব পরিমন্ডলে। এতসব নিয়ে প্রবাসী বাঙ্গালীর তাই ‘ভালো আছি’ বলতে দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে যায়! (চলবে) (আগামী পর্বে সমাপ্য – স্বদেশ পর্ব)

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।