আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

বন্যপ্রাণী ও জীববৈচিত্র্য রক্ষায় এগিয়ে আসুন

দুর্গম গিরি কান্তার মরু দুস্তর পারাপার হে, লঘি্নতে হবে রাত্রি নিশিতে যাত্রীরা হুশিয়ার

প্রবাহমান স্রোতের মত প্রকৃতি তার আপন গতিতে চলছে যুগ যুগ ধরে৷ প্রকৃতির এই চলার গতি একটি নান্দনিক ভারসাম্য বজায় রেখে চলছে অনন্তকাল ধরে৷ আর প্রকৃতির এমন ভারসাম্যময়তার কারনেই এখনো টিকে আছে আমাদের এই স্বপ্নের প্রথিবী৷ আমরা (কেবল মানবজাতি) প্রকৃতির সেই ছান্দসিক গতিকে বাঁধা দিচ্ছি কেবলই নিজেদের সামান্য স্বার্থের কারনে৷ এমন স্বার্থপরতার বিপরীতে ভয়ংকর সব প্রাকৃতিক বিপর্যের সম্মুখীন হতে হচ্ছে গোটা মানবাজাতিকে৷ প্রকৃতির নিদারুন সৃষ্টি বৃক্ষ আমাদেরকে অঙ্েিজন দিয়ে শারীরবৃত্তীয় সবকাজ ঠিক রেখে যেমন বাঁচিয়ে রাখছে তেমনী কার্বনড্রাইঅঙ্াইড শোষন করেও পরম উপকার করে যাচ্ছে৷ অথচ কত সহজে আমরা ভূলে যাই এমন নিঃস্বার্থ ভালবাসাকে৷ সমস্ত পৃথিবীটাই বৈচিত্র্যময়৷ বৈচিত্র্যময় জীববৈচিত্র্যের এক বিশাল আধার আমাদের এই পৃথিবী৷ জীবৈচিত্র্যের অন্যতম উপাদান হচ্ছে প্রকৃতি ও প্রাণী৷ প্রকৃতি বা পরিবেশ না থাকলে যেমন প্রাণীর অস্তিত্য কল্পনা করা যায়না তেমনী প্রাণী না থাকলে পরিবেশও প্রয়োজনহীন হয়ে পড়ে৷ সমস্ত পৃথিবীটাই এক সূত্রে গাঁথা৷ সমুদ্র আর পাহাড় কেবল ভূখন্ড আর জীববৈচিত্র্যকেই আলাদা করেছে মাত্র৷ পৃথিবীর সর্বত্র জীববৈচিত্র্য এক নয়৷ কোথাও মরুভূমি আর কোথাও বরফ৷ কিন্তু আমাদের সোনার বাংলাদেশ বন্যপ্রাণী আর জীববৈচিত্র্য সমৃদ্ধ এক স্বগর্ীয় ভূমি৷ এখানে কেবল বনে জঙ্গলে নয়, গ্রামে-গঞ্জে, শহরে ঝোপঝাড়ে সবখানে বন্যপ্রাণীর অবাধ বিচরণ৷ অথচ আমাদের দেশে বন্যপ্রাণীর সচেতনতার বড়ই অভাব৷ বন্যপ্রাণীকে শত্রু কিংবা রহস্যভরা চোখে দেখতে আমরা খুবই অভ্যস্ত৷ বন্যপ্রাণীকে আমরা ভালবাসার চোখে দেখতে পারিনা৷ সাপ দেখলেই মেরে ফেলতে হবে! এ জেন অন্যরকম এক আনন্দ৷ অতিথি পাখি দেখলেই লোভ জাগে খেয়ে দেখার৷ আমাদের দেশীয় অনেক পাখিই আজ বিলুপ্ত কিংবা হুমকীর সম্মখীন৷ উপযুক্ত পরিবেশ আর জীববৈচিত্র্যের ব্যাপক ধ্বংসের ফলে প্রাণী বৈচিত্র্যের ভারসাম্য ব্যপকভাবে ধ্বংস্ব হচ্ছে৷ ছোট্ট বেলায় ডালিম গাছে ভোরের দোয়েল পাখি দেখলেই বলতাম, এ আমাদের জাতীয় পাখি৷ অথচ আজ অনেক ছেলেমেয়েরাই জাতীয় পাখি চিনতে বা দেখাতে হয় ইন্টারনেটে বা বইয়ের পাতায় ছবি দেখে৷ সন্ধ্যা হলেই বাড়ীর পাশের কোন বড় গাছে চোখ বড় করে তাকিয়ে থাকত পেঁচা৷ দেখামাত্রই দৌড়ে ঘড়ে ঢুকে যেতাম৷ অথচ আজ অনেক বছর হলো পেঁচার দেখা পাইনা৷ এখন আর সেই বড় বড় বৃক্ষ নেই, নেই ঝোপ-ঝাড়৷ কেবলই ইট-পাথরের ইমারত আর কোলাহল৷ আমি তখন অনেক ছোট৷ আমাদের একটি পোষা গরু কোন এক অজ্ঞাত রোগে মারা গিয়েছিল৷ পাড়া থেকে দূরে একটি ঝোপঝাড়ের পাশে ফেলে রাখা হয়েছিল৷ মূহুর্তেই মিষ্টির গন্ধ পেয়ে পিপড়া যেমন ছুটে আসে ঠিক তেমনি অসংখ্য চিল আর শকুন এসে ছিড়ে ছিড়ে খেতে লাগল মৃত গরুটিকে৷ আমাদের সে কি হইচই, বাধভাঙা আনন্দে মেতে উঠতাম৷ অথচ আজ মাত্র কটি বছরের ব্যবধানে কোথায় যেন হারিয়ে গেল সেই পরিচিত শকুনের দল৷ এমনি করে প্রতিদিন হারিয়ে যাচ্ছে আমাদের প্রাণী জগতের অনেক প্রাণী৷ ছোট বেলায় আমাদের এলাকার এক পাখি শিকারী দেখে খুব মজা পেতাম৷ প্রায়ই দেখাতাম একটি শিকারী ঘুঘু একটি খাঁচায় বন্ধী করে তাকে দিয়ে অনেক ঘুঘু ধরে বন্দী করত৷ আমরা খুব উত্‍সাহ নিয়ে দেখতাম আর মজা পেতাম৷ তখন বুঝিনী প্রকৃতি থেকে কি হারিয়ে ফেলছি৷ বন্যপ্রাণী বিষয়ে পড়ালেখা করতে গিয়ে বুঝতে পারছি এমন অজ্ঞতা আর কিছু নির্দয় মানুষের জন্যই প্রকৃতি আজ নিদারুন কষ্টে তাকিয়ে আছে অবাক বিস্ময়ে৷ আমার খুব ইচ্ছে করে পুরোনো দিন গুলোতে ফিরে যেতে৷ প্রাণী বৈচিত্র্যের এমন সুন্দর এক দেশ বাংলাদেশ সত্যি বিস্ময়কর৷ অথচ এর মানুষ গুলো আরো বিস্ময়কর৷ এদেশের বেশীর ভাগ মানুষই বন্যপ্রাণী বিষয়ে একেবারেই অজ্ঞ৷ অনেক শিক্ষিত মানুষ এমনকি পরিবেশ ও বন বিভাগের অনেকেই বন্যপ্রাণী আইন ও এদের রক্ষনাবেক্ষন সম্পর্কে খুব একটা সচেতন নয়৷ মিডিয়া কিংবা সরকারও এ বিষয়ে প্রচার প্রচারনায় তেমন উত্‍সাহী মনে হয় না৷ অথচ মানব অস্তিত্বের রক্ষার জন্য প্রকৃতির ভারসাম্য রক্ষায় ও জীববৈচিত্র্যের উন্নয়নের জন্য আমাদের ব্যাপক গুরুত্ব দেয়া প্রয়োজন৷ প্রাণী ও জীববৈচিত্র্য রক্ষায় ব্যাপক আইনের শাসন ও সচেতনতা বৃদ্ধি প্রয়োজন৷ জেলা, থানা, ইউনিয়ন, গ্রাম পাড়া কিংবা মহল্লা-মহল্লায় এ নিয়ে মিটিং, সেমিনার ও জনসচেতনতামূলক কার্যক্রম হাতে নেয়া প্রয়োজন৷ কেবল বনে বা অফিসে বসে দ্বায়িত্ব পালন করলেই সমগ্র জীববৈচিত্র্য ও প্রাণী রক্ষা সম্ভবপর নয়৷ যে সকল প্রাণী বাণিজ্যিকভাবে চাষ করা যায় যেমন হরিন, কচ্ছপ, ব্যাঙ, কুমির, সাপ ও খরগোশ সহ আরও কিছু প্রাণী বাণিজ্যিকভাবে চাষ করার জন্য মানুষকে উদ্বুদ্ধ করা ও সহজ প্রক্রিয়ায় চাষ বা ফার্মিং করার ব্যবস্থা করা৷ এতে করে বন্যপ্রাণীর উপর অত্যাচার, পাচার কিংবা হত্যা কমবে৷ পাশাপাশি দেশের অর্থনীতির চাকাও সচল হবে৷ বিলুপ্তপ্রায় বা বিরল প্রজাতির প্রাণীসমূহের সঠিক চাষ বা ফার্মিংয়ের মাধ্যমে এদের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখা সম্ভবপর হবে৷ তাই সকলের প্রতি আহ্বান আসুন বন্যপ্রাণীকে ভালবাসি নিঃস্বার্থভাবে৷ নতুন প্রজন্মের কাছে যেন রেখে যেতে পারি ভারসাম্যময় এক নতুন পৃথিবী৷

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.