আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ক্যাডেট লাইফ স্মৃতিচারণ - ১

এই বৃষ্টি ভেজা রাতে তুমি নেই বলে...সময় আমার কাটেনা....

আজকে মনটা ভাল না । পুরনো স্মৃতি গুলো বারবার মনে পড়ে যায় । ১ মাস ১৭ দিন হল ক্যাডেট কলেজ থেকে একবারে ছুটি নিয়ে এসেছি । ২৪শে জুন , এই দিনটার জন্য ৬ বছরের অপেক্ষা । অথচ যেদিন ২৪ জুন এসে গেল , মনে হচ্ছিল দিনটা কি আসার খুব দরকার ছিল? ২০০১ সালের ১২ই মে ।

বাবা মায়ের হাত ধরে ক্যাডেট কলেজের আঙিনায় প্রবেশ । আমি তখন ক্লাস সেভেনে কেবল উঠলাম । ভেবেছিলাম ক্যাডেট কলেজ না জানি কত ভাল হবে ! কিন্তু কিছুক্ষণ পরই কল্পনার সাথে বাস্তবকে মেলাতে পারছিলাম না । কি অদ্ভুত সব নিয়ম কানুন ! রুমে বড় ভাইদের কেউ আসলে দাড়িয়ে সালাম দিতে হবে, তাদের অনুমতি ছাড়া আর কোন কাজ করা যাবে না। 'ভাইয়া কাজ করব?"জিগাসা করে নিতে হবে ।

তারপর যখনই কোন বড় ভাইয়ের সাথে দেখা হবে সালাম দিতে হবে , সব যায়গায় দৌড়িয়ে যেতে হবে, টেবিলে খবার সময় উপরে তাকান যাবেনা,কারো গায়ের সাথে টাচ লাগলে সরি বলতে হবে,টেবিলে হাত রাখা যাবে না । এরকম আরো অনেক নিয়ম কানুন । সবসময় ভয়ে ভয়ে থাকতাম , না জানি কি ফল্ট হয়ে গেল , ভাইয়া বোধহয় এখনই ধরবে । কিছু করলেই মার খেতে হত । সেই মাইরের কথা না হয় নাই বললাম ।

দিন গুনতাম কবে জুনিয়ররা আসবে। আমাদের সব কষ্টের অবসান ঘটবে। অবশেষে সেইদিন আসলো আমরা সিনিয়র হলাম । তখনকার কথা আর কি বলব। নিজেকে খুব সিনিয়র মনে হত।

নতুন নতুন পাওয়া ফ্রিনেস গুলো ভালমতন ইুজ করতাম । ক্লাস সেভেনের যেসব সীমাবদ্ধতা ছিল সেগুলোর বেশির ভাগই ক্লস এইট এ শিথিল হয়ে গেল । যদিও ভেবেছিলাম জিবনে জুনিয়রকে পানিশমেন্ট দেব না , কিন্তু মাথা ঠিক থাকতনা। জুনিয়রের কোন ফল্টের জন্য যখন কোন সিনিয়র মাইর দিত তখন কার না মেজাজ খারাপ হবে ! এরপর ক্লাস নাইনে উঠলাম । ক্যাডেট কলেজে ক্লাস নাইন মানে অনেক সিনিয়র ।

দুই ব্যাচ সিনিয়রদেরকে ক্লাস সেভেন যমের মত ভ্য় করত । তাই নিয়ম । দুই ব্যাচ সিনিয়র খুশী মানে সবাই খুশী । তাই অনেক ভাব মারা হত । যখন মনে হত নাহ ঠিকমত সম্মান করছে না জুনিয়ররা , মিটিং ডাকা হত, আর মিটিংএর সিদ্ধান্ত একটাই মাইর ।

পাঠকরা এটাকে নিষ্ঠুরতা মনে করতে পারেন কিন্তু এটা অনেক ফলদায়ক । মাইরের উপরে আসলেই কোন ওষুধ নাই । কত ছোট ছোট স্মৃতি মনে আসে , কোনটা ছেড়ে কোনটা বলব? ভাইয়েদের চোখ ফাকি দিয়ে জানালায় কম্বল টাঙিয়ে গভীর রাতে রুমে ক্রিকেট খেলা । খাটের ডাশা ভেঙে ব্যাট আর মোজার ভেতর কাগজ ঢুকিয়ে বিশেষ নিয়মে বানানো বল । আমাদের নিচের রুমের ভাইয়ারা টের পেয়ে পরেরদিন ডাকল ।

চাপা মারলাম আমরা রাতে নামাজ পড়ার জন্য খাট টানাটানি করে জায়গা বের করছিলাম । ভাইয়ারা বিশ্বাস করল বলে মনে হল না, কিন্তু সেদিনের মত আর কিছু না বলে ওয়ার্নিং দিয়ে ছেরে দিল । কয়েকদিন বন্ধ । তারপর আবার আরেকদিন অধিক সতর্কতার সাথে আবার খেলা । কয়েকবার এমন হবার পর কঠিন মাইর খাইলাম ।

তারপর ভাইয়ারা বলল এখন থেকে খেলবা কিন্তু বেশী শব্দ করবা না । পাছায় ব্যথা নিয়েও আমাদের মনে কি যে আনন্দ ! মুখে খুব অপরাধী আর দুঃখী ভাব নিয়ে দাড়িয়ে আছি (যদি বেশী আনন্দ দেখলে আবার মাইর দেয়!)তখন ক্লাস এইটে আমরা । তারপর থেকে শুরু হল টেস্ট ম্যাচ । আহ কি দিনই না গেছে!! ক্লাস টেনে শুরু হল পড়াশোনার চাপ । মনে আছে ক্লাস নাইনের টার্ম এন্ড পরীক্ষায় ৪৬ জনের মধ্যে হয়েছিলাম ৪৫ তম ।

খুব মন খারাপ হয়েছিল । তারপর পড়াশোনা শুরু করে দিলাম । খুব কষ্ট হত । একটা বছর কিছুই পড়ি নাই। সব কিছু নতুন করে পড়া শুরু করলাম ।

তখন জীবনে নতুন একজনের আবির্ভাব । তার প্রেরণাতেই পড়াশোনা করলাম । অনেকদূর এগোলাম । মাত্র এক বছরে পজিশন আসল ৩ । এরপর এস এস সি পরীক্ষা চলে এল ।

সে জন্য আমরা হাউজে (আমাদের রুম গুলোকে আমরা হাউজ বলি) পাকাপাকি ভাবে চলে আসলাম । ওই সময়টা আমার জীবনের সর্বশ্রেষ্ঠ সময় । কী করি নি তখন ! আমরা সারাদিন হাউজে থাকতাম । তখন কেবল নতুন নতুন সিগারেটে টান দেওয়া শিখেছি । আমাদের রুম গুলোতে কোন সকেট নেই ।

তাতে কী ? ফ্যানের রেগুলেটর খুলে ফেললাম । টয়লেটের সামনের অব্যাবহৃত লাইটের তার খুলে এনে দুটো ব্লেডের মাঝখানে রবার লাগিয়ে তারের সাঠে সংযুক্ত করে দিলাম আর লাগিয়ে ডিলাব রেগুলেটরের সাথে । ব্লেডের প্রান্ত পানিতে ডুবিয়ে দিলেই চমৎকার ওয়াটার হীটার । রেগুলেটরের তার ঘষা দিয়ে স্পার্ক করে তুলো ধরে জ্বলত আগুন । তাই দিয়ে জ্বলত সিগারেট ।


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.