আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

তাঁর জন্য ভালবাসা যিনি সারাজাহানের জন্য আল্লাহর রহমত -২

কল্যাণের কথা বলি, কল্যাণের পথে চলি।

প্রথম কিস্তি: কে তিনি =============================== মানবতার বন্ধু তিনি - কল্যাণ ও সমগ্র সৌন্দর্যের বিমূর্ত প্রতীক। রহমত, ভালবাসা, করুণা, দয়া ও মানুষের প্রতি শুভকামনার পরিপূর্ণ সমাবেশ ঘটেছে তাঁর চরিত্রে। তিনি আদমের সন্তানদের শ্রেষ্ঠতম - আল্লাহর বাণীবাহকদের সর্দার। হেরা গুহার অন্ধকারে তাঁর কাছে কুরআনের নূর পাঠানো হয়েছে মানবতাকে মূর্খতার আঁধার থেকে বের করে জ্ঞানের আলোয় উদ্ভাসিত করতে।

=============================== কেন ভালবাসা তাঁর জন্য? তাঁকে ভালবাসতে হবে কারণ তিনি জগতসমূহের জন্য রহমত। তাঁর সম্পর্কে আল্লাহর বাণীঃ “আমরা তোমাকে জগৎবাসীদের জন্য রহমত হিসেবেই শুধু পাঠিয়েছি। ” (আল-আম্বিয়া; ২১:১০৭) ইমাম মুসলিম আবূহুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেছেন, “তাঁকে বলা হলো, ইয়া রসূলুল্লাহ! মুশরিকদের জন্য বদ-দুআ করুন। জবাবে তিনি বললেন, আমাকে অভিশাপ দানকারী হিসেবে নয় বরং রহমত হিসেবে পাঠানো হয়েছে। ” বিশ্বাসী হিসেবে তাঁকে ভালবাসতে হবে কারণ তিনি বিশ্বাসীদের প্রতি দয়ালু ও অনুগ্রহশীল।

আল্লাহ্ তাআলা এ ব্যাপারে তাঁর সম্পর্কে আমাদের জানিয়েছেন নিম্সোক্ত ভাবেঃ “তোমাদের কাছে তোমাদের মধ্য থেকেই একজন রসূল এসেছেন। তোমাদের ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া তাঁর কাছে দুঃসহ কষ্টদায়ক, তোমাদের সার্বিক কল্যাণের আকাঙ্খী তিনি। আর মুমিনদের প্রতি সহানুভুতিশীল ও দয়ালু। ” (আত-তওবা; ৯:১২৮) তাঁকে ভালবাসতে হবে কারণ তাঁকে এক সতর্ককারী এবং শিক্ষক হিসেবে পাঠিয়ে মহান আল্লাহ্ আমাদেরকে সঠিক পথের নির্দেশনা দিয়েছেন। “আমরা তোমাকে সমগ্র মানব জাতির জন্য সুসংবাদদাতা ও সাবধানকারী হিসেবেই শুধু পাঠিয়েছি।

” (সাবা; ৩৪:২৮) তাঁর মাধ্যমেই আমাদেরকে কিতাব ও হিকমতের শিক্ষা দেয়া হয়েছে যা তাঁর আবির্ভাবের আগে আমাদের জানা ছিলনা। আল্লাহ্ তাআলা ইরশাদ করেছেন, “তিনিই সেই সত্ত্বা যিনি নিরক্ষরদের মধ্য থেকে তাদেরই একজনকে রসূল হিসেবে পাঠিয়েছেন যিনি তাদের কাছে তার (আল্লাহর) আয়াত সমূহ পড়ে শোনান, তাদের পরিশুদ্ধ করেন এবং তাদেরকে কিতাবের ও বিজ্ঞানের শিক্ষা দান করেন। অথচ এর আগে এরা ছিল সুস্পষ্ট ভ্রান্তিতে নিমজ্জিত। ” (আল-জুমুআ; ৬২:২) তাঁকে ভালবাসতে হবে কারণ তিনি আমাদের উপর সাক্ষী হবেন সেদিন যেদিন সব মানুষেরা তাদের রবের সামনে সমবেত হবে! আল্লাহ - পবিত্র ও মহান - সূরা নিসায় তার নবীকে সম্বোধন করে বলেছেন, “কেমন হবে তখন যখন আমরা প্রত্যেক জাতির মধ্য থেকে একজন সাক্ষী বের করে আনবো আর তোমাকে এদের বিরুদ্ধে আমরা সাক্ষী হিসেবে দাঁড় করাবো। ” (৪:৪১) তাঁর মাধ্যমে আল্লাহ আমাদেরকে এক ভারসাম্যপূর্ণ জাতির মর্যাদা দিয়েছেন।

“আর এভাবেই আমরা তোমাদেরকে একটি ভারসাম্যপূর্ণ, মধ্যমপন্থী উম্মত বানিয়েছি যাতে করে তোমরা মানব জাতির উপর সাক্ষী হতে পারো এবং রসূলও তোমাদের উপর সাক্ষী হন। ” (২:১৪৩) তাঁকে ভালবাসতে হবে কারণ তিনি আমাদের জন্য একমাত্র পূর্ণাঙ্গ-অনুকরণীয় আদর্শ; আমাদের মহান শিক্ষক। “তোমাদের জন্য আল্লাহর রসূলের জীবনে রয়েছে সর্বোত্তম আদর্শ। (এ আদর্শ) এমন প্রত্যেক ব্যক্তির জন্য যে আল্লাহ্ ও পরকালের আশা পোষণ করে এবং বেশী বেশী আল্লাহর স্মরণ করে। ” (আহযাব; ৩৩:২১)।

মানবীয় চরিত্রের সর্বোত্তম বৈশিষ্ট্য দিয়ে তাঁকে সৃষ্টি করা হয়েছে। আল্লাহ্ ঘোষণা দিয়েছেন, “আর আপনি চরিত্রের সর্বোত্তম মর্যাদায় অধিষ্ঠিত। ” (আল-কালাম; ৬৮:৪) চরিত্রের এ সৌন্দর্য আমাদের মাঝে সৃষ্টির দায়িত্ব তাঁকে পাঠানো হয়েছে। তিনি যথার্থই বলেছেন, “নিশ্চয়ই আমাকে পাঠানো হয়েছে মানব চরিত্রের পূর্ণাঙ্গতা বিধান করার জন্য। ” তাঁকে ভালবাসতে হবে কারণ তাঁর মাধ্যমে আল্লাহ এ দীনের পূর্ণতা দান করেছেন এবং এ দীনকে আর সমস্ত দীনের উপর বিজয়ী করার ওআদা করেছেন।

তিনি বলেছেন, “আজকের দিনে আমি তোমাদের জন্য তোমাদের দীনকে পরিপূর্ণ করে দিলাম; আর তোমাদের প্রতি আমার নিআমত সম্পন্ন করলাম; এবং ইসলামকে তোমাদের দীন হিসেবে মনোনীত করলাম। ” (আল-মায়িদা; ৫:৩) আল্লাহ – রব্বুল আলামীন – তাঁকে পাঠিয়ে নিজ দীনকে আর সব ভ্রান্ত দীনের উপর করবেন, যে বিজয়ী দীনের গর্বিত এবং কৃতজ্ঞ অনুসারী আল্লাহ দয়া করে আমাদের বানিয়েছেন। তিনি ঘোষণা করেছেন, “তিনিই সেই সত্ত্বা যিনি তাঁর রসূলকে পাঠিয়েছেন হিদায়াত ও সত্য দীন সহকারে, যাতে করে তিনি একে আর সব দীনের উপর বিজয়ী করে দিতে পারেন, যদিও মুশরিকরা এটি পসন্দ করেনা। ” (আত-তওবা; ৯:৩৩ / আস-সফ; ৬১:৯) তাঁকে ভালবাসা দুনিয়ার আর সব কাজের চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। তাঁকে ভালবাসতে ব্যর্থ হলে ব্যর্থতাকেই করতে হবে অনন্ত জীবনের সঙ্গী।

কারণ দুনিয়ার আর সব ব্যক্তি, বস্তু এবং বিশ্বাস, এমনকি নিজ সত্ত্বার উপর তাঁর ভালবাসাকে প্রাধান্য দিতে ব্যর্থতার মানে হলো বিশ্বাসের অপূর্ণতা। পার্থিব জীবনের সব অর্জন, সব আপাতঃ সাফল্য মূলতঃ অর্থহীনতায় পর্যবসিত হবে যদি রসূলের - সল্লাল্লাহু আলায়হি ওআ সাল্লাম - প্রতি ভালবাসার প্রমাণ দিতে ব্যর্থ হয় কেউ। ইমাম আহমদ (রঃ) তাঁর মুসনাদে ও ইমাম বুখারী (রঃ) তাঁর সহীহতে আবদুল্লাহ ইবন হিশাম (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেছেন, ‍‍‌‌‌‌‌“আমরা রসূলুল্লাহ্ (সল্লাল্লাহু আলায়হি ওআ সাল্লাম) এর সাথে ছিলাম আর তিনি উমর ইবন খাত্তাব (রাঃ) এর হাত ধরে ছিলেন। উমর (রাঃ) তাঁকে (সল্লাল্লাহু আলায়হি ওআ সাল্লাম) বললেন, ‘ওগো আল্লাহর রসূল, আপনি আমার কাছে আমার নিজের সত্ত্বা ছাড়া আর সব কিছুর চাইতে বেশী প্রিয়। ’ আল্লাহর নবী - সল্লাল্লাহু আলায়হি ওআ সাল্লাম - বললেন, ‘সেই সত্ত্বার কসম! ততোক্ষণ পর্যন্ত নয় (মানে তুমি ঈমানদার হতে পারবেনা) যতক্ষণ আমি তোমার নিজের সত্ত্বার ছেয়েও তোমার কাছে বেশী প্রিয় হবো।

’ উমর (রাঃ) তখন বললেন, ‘আল্লাহর কসম! এখন আপনি আমার কাছে আমার নিজের চেয়েও বেশী প্রিয়। ’ রসূলুল্লাহ্ (সল্লাল্লাহু আলায়হি ওআ সাল্লাম) তখন বললেন, ‘হাঁ, এখন (তুমি ঈমানদার হয়েছো)। ’” ইমাম আহমদ (রঃ) তাঁর মুসনাদে এবং ইমাম মুসলিম (রঃ) তাঁর সহীহতে আনাস ইবন মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেছেন, “রসূলুল্লাহ্ (সল্লাল্লাহু আলায়হি ওআ সাল্লাম) বলেছেন, তোমাদের কেউই ঈমানদার হতে পারবেনা যতক্ষণ আমি তার কাছে তার সন্তান, পিতা এবং দুনিয়ার আর সমস্ত মানুষের চেয়ে বেশী প্রিয় হবো। ” ইমাম বুখারী (রঃ) ও মুসলিম (রঃ) আনাস ইবন মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেছেন যে রসূলুল্লাহ্ (সল্লাল্লাহু আলায়হি ওআ সাল্লাম) বলেছেন, “তিনটি গুন এমন যার মাঝে ওগুলো বর্তমান সেই মূলতঃ ঈমানের স্বাদ আস্বাদন করেছে: (১) ঐ ব্যক্তি যার কাছে আল্লাহ্ ও তাঁর রসূল জগতের সবকিছুর চেয়ে প্রিয়; (২) ঐ ব্যক্তি যে শুধু আল্লাহর ওআস্তে কাউকে ভালবাসে; এবং (৩) ঐ ব্যক্তি যে ঈমান থেকে কুফরীতে ফিরে যাওয়াকে তেমন ঘৃণা করে যেমন ঘৃণা করে সে আগুনে নিক্ষিপ্ত হওয়াকে। ”


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.