আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

মায়ের পায়ের নীচে সন্তানের বেহেস্ত



সন্তান প্রতিপালনের সবচেয়ে বেশি কষ্ট স্বীকার করেন মা। এ জন্য পবিত্র কুরআন মজিদে বলা হয়েছে, ­‘আমি (আল্লাহ) মানুষকে নিজের মাতা পিতার সাথে সুন্দর আচরণের তাকিদ দিয়েছি। কেননা তার মা তাকে অত্যন্ত কষ্ট করে নিজের পেটে ধারণ করেছে এবং অতি কষ্টে তাকে ভূমিষ্ঠ করেছে এবং পেটে ধারণ ও দুধ পান করানোর (কঠিন কাজ) মুদ্দত হলো আড়াই বছর। ’ (সূরা আল-আহকাফ, আয়াত নং-১৫)। ‘আমি মানুষকে তাদের মাতা-পিতার ব্যাপারে উত্তম আচরণের তাকিদ প্রদান করেছি।

কেননা তার মা কষ্টের পর কষ্ট স্বীকার করে তাকে গর্ভে ধারণ করেছে এবং দুই বছর পর সে বুকের দুধ খাওয়া ছেড়েছে। তুমি তোমার নিজের সৃষ্টির জন্য আমার শোকর আদায় করো এবং তোমার লালন-পালনের জন্য পিতা-মাতারও কৃতজ্ঞতা আদায় করো। ’ (সূরা লুকমান, আয়াত নং-১৪)। পবিত্র কুরআন মজিদের এ বর্ণনাভঙ্গিতে এটা সুস্পষ্ট হয় যে, মা সেবা, ভালবাসা, আনুগত্য, ভাল আচরণ ও কৃতজ্ঞতা পাওয়ার বেশি অধিকারী। সাহাবী হজরত আবু হুরায়রা রা: হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘একজন সাহাবী নবী করিম সা: এর কাছে এসে তাকে জিজ্ঞাসা করলেন­ আমার কাছে খেদমত পাবার সবচেয়ে বেশি হকদার কে? রাসূলে করিম সা: বললেন­ তোমার মা।

সাহাবী বললেন­ তারপর? রাসূল সা: বললেন­ তোমার মা। সাহাবী বললেন­ তারপর? রাসূল সা: বললেন­ তোমার মা। সাহাবী বললেন­ তারপর? রাসূল সা: বললেন­ তোমার পিতা এবং তারপর পর্যায়ক্রমে তোমার আত্মীয়-স্বজন। ’ (সহিহ বুখারি, মুসলিম, তিরমিযি, আবু দাউদ শরিফ)। এ হাদিসের ব্যাখ্যায় হজরত ইবনে বাত্তাল অত্যন্ত সুন্দর কথা বলেছেন­ খিদমত ও আচরণে মাতার হক পিতার থেকে তিন গুণ বেশি।

কেননা শিশুর ক্ষেত্রে মাতা এমন তিনটি কাজ করে থাকেন যা কোনো পিতার পক্ষে চিন্তা করাও কঠিন। গর্ভাবস্খায় মাতা শিশুকে পেটে ধারণ করে নিয়ে বেড়ায়। অত:পর জন্মদানের কষ্ট স্বীকার করেন এবং নিজরে দুধ পান করান। একবার এক ব্যক্তি রাসূলে করিম সা:-এর কাছে হাজির হয়ে অভিযোগ করল­ হে আল্লাহর রাসূল! আমার মা খারাপ মেজাজের মানুষ। প্রিয় নবী সা: বললেন­ ‘নয় মাস পর্যন্ত অব্যাহতভাবে যখন সে তোমাকে পেটে ধারণ করে ঘুরে বেড়িয়েছে, তখনতো সে খারাপ মেজাজের ছিল না।

’ সেই ব্যক্তি বলল­ ‘হজরত! আমি সত্য বলছি সে খারাপ মেজাজের। ’ তখন মহানবী সা: বললেন­ ‘তোমার খাতিরে সে যখন রাতের পর রাত জাগত এবং নিজের দুধ পান করাত, সে সময়তো সে খারাপ মেজাজের ছিল না। ’ সেই ব্যক্তি বলল­ ‘আমি আমার মায়ের সেসব কাজের প্রতিদান দিয়ে ফেলেছি। ’ রাসূলে করিম সা: জিজ্ঞেস করলেন­ ‘সত্যিই কি তুমি তার প্রতিদান দিয়ে ফেলেছ?’ সে বলল­ ‘আমি আমার মাকে কাঁধে চড়িয়ে তাঁকে হজ করিয়েছি। ’ মহানবী সা: সিদ্ধান্তমূলক জবাব দিয়ে বললেন­ ‘তুমি কি তাঁর সেই কষ্টের বদলা বা প্রতিদান দিতে পার, যা তোমার ভূমিষ্ঠ হওয়ার সময় সে স্বীকার করেছে?’ একবার হজরত জাহিমাহ রা: রাসূলে করিম সা:-এর খিদমতে হাজির হয়ে বললেন­ হে আল্লাহর রাসূল! আপনার সাথে জিহাদে অংশগ্রহণ করাই আমার ইচ্ছা।

এখন এ ব্যাপারে পরামর্শ গ্রহণের জন্য আপনার কাছে এসেছি, বলুন এ ব্যাপারে আপনার নির্দেশ কি? রাসূল সা: তাকে জিজ্ঞেস করলেন­ তোমার মা কী জীবিত আছেন? হজরত জাহিমাহ রা: বললেন­ জ্বি, জীবিত আছেন। তখন রাসূলে করিম সা: ইরশাদ করলেন­ তাহলে তুমি ফিরে যাও এবং তার খিদমতেই লেগে থাক। কেননা তার পায়ের নিচেই জান্নাত। (ইবনে মাযাহ, নাসায়ি শরিফ)। মানুষ যদি বড় কোনো গুনাহও করে তাহলে তার শাস্তি থেকে এক ব্যক্তি প্রিয় নবী সা:-এর খিদমতে উপস্খিত হয়ে বলতে লাগল ­ হে আল্লাহর রাসূল! আমি একটি বড় গুনাহ করে বসেছি।

আমার জন্য কি তাওবার কোনো পথ খোলা আছে। রাসূলে করিম সা: বললেন­ তোমার মা কি জীবিত আছেন? সে বলল­ আমার মাতো জীবিত নেই। অত:পর রাসূল সা: বললেন­ তোমার খালা কি বেঁচে আছেন? সে বলল­ জ্বী, বেঁচে আছেন। রাসূল সা: বললেন­ খালার সাথে সুন্দর আচরণ কর। মায়ের খেদমতের গুরুত্ব সম্পর্কে সাহাবি হজরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস রা: বলেছেন­ ‘আল্লাহর নৈকট্য এবং সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য মায়ের সাথে উত্তম আচরণের চেয়ে বড় আমল আমার জানা নেই।

’ মা যদি অমুসলিমও হয় তবুও তার সাথে সদ্ব্যবহার করতে হবে এবং তার সম্মান ও খেদমত করতে হবে। হজরত আসমা রা: বলেন­ ‘রাসূল সা:-এর জীবিতাবস্খায় আমার মা মুশরিকা থাকাকালীন আমার কাছে আসে। আমি রাসূল সা:-এর খিদমতে আরজ করলাম­ আমার মা আমার কাছে এসেছে অথচ সে ইসলাম থেকে বিচ্ছিন্ন। সে ইসলামকে ঘৃণা করে, এমতাবস্খায়ও কী আমি তার সাথে উত্তম ব্যবহার করব? রাসূলে করিম সা: বললেন­ অবশ্যই তুমি তোমার মায়ের সাথে আত্মীয়তার সম্পর্ক রক্ষা করতে থাক। ’ (সহিহ বুখারি শরিফ)।

পৃথিবীতে মায়ের খিদমত না করলে কিংবা মায়ের প্রতি কোনোরূপ খারাপ আচরণ করলে, মাকে কষ্ট ও দু:খ দিলে সন্তান যত ইবাদত-বন্দেগি আর নেকের কাজই করুক না কেন, তার পক্ষে জান্নাত লাভ করা কখনোই সম্ভব হতে পারে না। পরিশেষে বলা যায়, মায়ের সন্তুষ্টি ও তার মমতাপূর্ণ অন্তরের দোয়া দীন ও দুনিয়ার সবচেয়ে বড় সৌভাগ্য। পক্ষান্তরে দীন ও দুনিয়ার সবচেয়ে মারাত্মক দুর্ভাগ্য হলো সন্তানের প্রতি মায়ের দু:খ ভারাক্রান্ত হৃদয়ের বদদোয়া।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.