আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

পায়ের তলায় সর্ষে-1

খুব গোলমেলে, নিজেও ভাল জানি না। তবে আছে,এই ঢের।

এক হপ্তা আপিস ফাঁকি দিয়ে কলকাতার এমাথা ওমাথা ঘুরে ঘুরে সিনেমা দেখে দেখে তিনি এক্কেরে হা কেলান্ত। বিকেলে ভাতঘুম সেরে খিচড়ানো মেজাজ নিয়ে উঠেছেন, মুখে গান ভালো ও ও ও ও লাগে না আ আ আ আ ... কিছু ভালো ও ও ও ও লাগে না আ আ আ আ ... নিজের গান গাওয়া শেষ হলে হুকুম হল, গান শোনাও! : কি গান? : 'আকাশে ছড়ানো মেঘের কাছাকাছি'। তো খুঁজে পেতে ক্যাসেট বের করে গান শোনানো হল তারপর আবার নিজের গলায় শুরু হল ভালো ও ও ও ও লাগে না আ আ আ আ ... কিছু ভালো ও ও ও ও লাগে না আ আ আ আ ... : আর কি কত্তে পারি, কি কল্লে ভালো লাগবে? জিগাইলাম কোথাও যাবে? একদিনের জন্যে? সকালে গিয়ে বিকেলে ফিরে আসব।

তো ত্বরিত্ জবাব, চলো। : কোথায় যাব? : সে দেখা যাবে! খানিক পরেই আবার এখন বেরিয়ে গেলে হয় না? : এখন? এই রাত ৯টায়? : হ্যা! ঁহাওড়া ষ্টেশন চলো, ওখান থেকে ট্রেনে করে কোথাও একটা যাওয়া যাবে! পুরুলিয়া কিংবা অন্য কোথাও! একটু ঘাবড়েই গেলাম। জিজ্ঞেস করলাম, ট্রেনে কি বসে যাবে না শোয়ার ব্যবস্থা হবে? : বসে যাবে! শুনে আরেকটু ঘাবড়ালাম। ছেলের জন্মদিন ছিল, সারাদিনই প্রায় রান্নাঘরে কেটেছে, এখন আমি আমার নক্সিকাঁথা মুড়ি দিয়ে ঘুমাবো তা না লোকাল ট্রেনে করে অজানার উদ্দেশ্যে বেরনো? অতটা সাহস করে উঠতে না পেরে বলাম, কাল ভোরে বেরই। তো বলল, ওকে! একটা ব্যাগ একদিনের মত গুছিয়ে নাও, পরশু ফিরব।

মোবাইল ফোনে ভোর সাড়ে চারটের এলার্ম সেট করে ঘুমাতে গেলাম যখন রাত তখন প্রায় একটা। এলার্ম যখন বাজতে শুরু করলো তখন ভাবলাম, থাগ্গে! বাজুক ওটা, আমি বর ংআরেট্টু ঘুমাই! কিন্তু বেড়াতে যাওয়ার লোভে ঘুমানো গেল না। উঠেই পড়লাম আমার নক্সি কাঁথা সরিয়ে রেখে। এখানে ভোর সাড়ে ছ'টার আগে বাস পাবো না তাই হন্টন শুরু বিদ্যাসাগর সেতুর টোলপ্লাজার উদ্দেশ্যে। সেখান থেকে বাসে করে ধর্মতলার বাস গুমটিতে।

এবার প্রশ্ন হল যাব কোথায়? টিকিটঘরের দেওয়ালে সব নাম লেখা আছে, এখান থেকে কোথায় কোথায় বাস যাবে। জায়গার নাম দেখে নিয়ে সে আমারে জিগাইলো, ফেজারগঞ্জ যাবে? : সেটা কোথায়? সেখানে কি আছে? : চলো না। তোমার ভাল লাগবে। : চলো তাইলে! কাউন্টারে জিজ্ঞেস করে জেনে নেওয়া হল , এই বাস যাবে 'নামখানা' অব্দি, তিন ঘন্টা মত লাগবে, ফেজারগঞ্জ যেতে হলে নদী পেরিয়ে আবার বাস, ঘন্টা খানেকের রাস্তা। মনে মনে হিসেব করে নিলাম, ক'টা নাগাদ পৌঁছুব, কতক্ষণ সময় থাকবে হাতে বেড়ানোর জন্যে ( এর আগে একবার ঐ কাউন্টারের বুড়ো দাদুর কথা শুনে জব্বর ফেঁসেছিলাম কাজেই আর রিস্ক নিতে রাজী নই )।

কাউন্টার থেকে দেওয়া টিকিটের সময় মেনে ঠিক পৌনে সাতটায় বাস ছাড়ল। যেখানে বসলাম তার সামনে একটিমাত্র সিট, যাতে কন্ডাক্টর এর বসার কথা। তার ঠিক পেছনে জানালার পাশের আসনে আমি বসে বুঝতে পারলাম, আটকে গেছি! বাঁদিকে জানালা, ডানদিকে তিনি আর সামনের ঐ সিটে আমার হাঁটু ঠেকে আছে যাতে করে আমার নট নড়ন চড়ন অবস্থা! কিন্তু সেগুলোকে মোটেও আমল না দিয়ে টুকটুক কথা বলছি আর জানালা দিয়ে বাইরে দেখছি। বাসে উঠে বসার খানিক পরেই তিনি আমারে জিগাইলেন, তোমার কাছে ঐ গানটা আছে 'কি ঘর বানাইলাম আমি শূণ্যেরও মাঝার' ? : বোধ নেই। কম্প্যুটারে আছে কীনা খুঁজে দেখতে হবে।

: ফিরে এসে খুঁজে দেখো না, আছে নিশ্চয়ই! আর না থাকলে অক্ষ'কে বলো, ও ঠিক পাঠিয়ে দেবে! বাস কলকাতা শহর ছাড়িয়ে এগুচ্ছে ডায়মন্ড হারবারের দিকে। তিনি আমাকে দেখিয়ে দিচ্ছেন এদিকে রায়চক। সামনেই ডায়মন্ড হারবার, আমরা নদীর পাশ ধরে এগিয়ে যাবো। আমি বাইরে তাকিয়ে বুঝতে পারছিলাম না আমি কি বাংলাদেশের ভেতর দিয়ে কোথাও যাচ্ছি নাকি ভারতবর্ষের? দুপাশের দৃশ্যাবলী যে খুব চেনা! যেন বেনাপোল বর্ডার পেরিয়ে বাস এগোচ্ছে ঢাকার দিকে! রাস্তার পাশের ফলকে নামগুলো শুধু অন্য নইলে সেই এক পরিচিত দৃশ্য। ছোট ছোট গঞ্জের মত সব জায়গা পেরিয়ে বাস চলছে।

কখনও গ্রামের ভেতর দিয়ে তো কখনও বা দু'পাশে ফসলের মাঠ। কোথাও খানিকটা জল জমে আছে তো সেখানে , ঐটুকু জলে বিছিয়ে আছে শাপলার পাতারা। ছোট্ট ছোট্ট পুকুর গাছের ফাঁক দিয়ে চোখে পড়ে আর সেইসব পুকুরেও অজস্র শাপলা। আমি বারে বারেই যেন অনেকটা করে পথ পিছিয়ে গিয়ে চলে যাচ্ছিলাম ছেলেবেলায়। শাপলা বিলে।

কিন্তু এখানে কোন বিলে নয়, হাঁটু অব্দি জমা জলেই যেন বিছিয়ে আছে শাপলা। এখনও সেভাবে ফোটেনি, কোথাও বা কলি মেলছে তো কোথাও আধফোটা। বাসগুমটির কাউন্টারের কাকুর কথামত ঠিক তিন ঘন্টাতেই বাস এসে পৌঁছালো নামখানায়। একটা গঞ্জ মত জায়গা, নদীর পারের গঞ্জ। অনেকটা মেঘনাপারের ভৈরববাজারের মত।

এই নদীটির নাম হাতানিয়া দোয়ানিয়া। দেখে আশ্চর্য হলাম, নদীতে সেতু নেই। কলকাতার এত কাছে এই রকম একটা জায়গা আছে, যার এপার-ওপার দুপারেই বাস চলে কিন্তু নদী পেরুতে হয় নৌকায় করে! ভাবতে পারিনি সত্যিই। আমার পতি গল্প শোনাল রাজনৈতীক ডামাডোলে সরকার বাহাদুর হার মেনে এখানে নৌকোর ব্যবস্থা করে দিয়ে দায় সেরেছেন। পঁচিশ পয়সা করে টোল দাও আর তারপর নৌকোয় চড়ে ওপারে চলে যাও।

এর মাঝেই মাঝি এসে বলে, প্রাইভেটে যাবেন বাবু? রিজার্ভ? সেটা কি সিস্টেম জিগিয়ে জানা গেল, ১০টাকা নেবে মাঝি, সেই নৌকোয় আর কাওকে তুলবে না, নদী পার করে দেবে। আর ঐ টোলের নৌকোয় গেলে একটা নৌকোতে ৪৫জন লোক হবে তবে নৌকো ছাড়বে আর ততক্ষণ অপেক্ষা করতে হবে। দেখে শুনে প্রাইভেট যাওয়াই সাব্যস্ত হল আর আমরা বেশ ফুরফুরে মন নিয়ে ( আমি অন্তত ) ওপারে পৌঁছে গেলাম দেখতেই দেখতে। ও হ্যাঁ। বলতে ভুলে গেছি বাস থেকে নেমেই সুলভ শৌচাগার থেকে প্রাকৃতিক কাজ-কম্ম সেরে পাশের রেষ্টুরেন্ট থেকে ছেঁড়া পরোটা আলু মটরের তরকারি সহযোগে ভরপেট জলযোগ সেরে নিয়েছি, শেষপাতে জিলিপি! আর অবশ্যই চা।

চা আমি একাই খেলাম, ভোরের বাসীমুখের এক কাপ চায়ের পরে আমার কত্তা আর চা খান না। (চলবে)

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।