আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

রাজু’র বাল্য বিয়ে ও অন্তরালের কথকতা



রাজু ছেলেটা ককসবাজার সদরের ঈদগাহ হাই স্কুল থেকে ২০১২ সালের জেএসসি পরীক্ষার্থী ছিল। বয়স আর কতইবা হবে, ১৩ থেকে ১৫ কিংবা জন্ম নিবন্ধন বহি অনুযায়ী কেবলই ১৫। বাবা সৌদিয়া প্রবাসী। পড়াশোনায় ছেলেটির আগ্রহ ছিলো না কিংবা পরিবারের তত্তাবধান সঠিক না থাকায় জেএসসি পরীক্ষার ফরম ফিলাপও হয় নি তার। সেই থেকে অনেকদিন কাজকর্ম নেই।

তবে পৈত্রিক সম্পত্তি আছে, সৌদিয়া থেকে বাপে কষ্টার্জিত টাকা পাঠায় মাসে মাসে। আরামেই থাকার কথা। কিন্তু সুখে থাকলে যে ভুতে কিলায়। তাই অকর্মা ছেলেটির মস্তিষ্ক শয়তানের কারখানা হতে দেরী হয় নি মোটেও। এক সময় বিপথে যায়, মায়ের সাথে বনিবনা হয় না, ঝগড়াঝাটিও হয় মাঝে মাঝে।

এতটুকুন ছেলে বায়না ধরলো তাকে বিয়ে করাতে হবে। দাবী মানা হলেই সে কাজ কর্ম করবে, ভাল হয়ে যাবে। একটি মাত্র ছেলে, অনন্যোপায় মা ছেলের বউ আনার জন্য রাজী হলেন। বউ গত বছর এসএসসি পরীক্ষার্থী ছিলো গোমাতলীর এক প্রতিষ্ঠান থেকে, সম্পর্কে রাজুর খালাত বোন। খালা অনেক দিন গাইগুই করলেও এক সময় রাজী হয়ে যায়।

হয়তো ভেবেছে যা দিনকাল পড়ছে, মেয়েটিকে ভালই ভালই বিয়ে দিতে পারলেই হলো। তাছাড়া, রাজুর বাপের সম্পত্তি আছে। ছেলেটি আন্ডার জেএসসি তাতে কি, আমার মেয়েটিও তো আন্ডার এসএসসি! ভাল করে দু’মুঠো খাওয়াতে পারলেই হলো। ইতোমধ্যে কেমনে কেমনে রাজুর প্রতিপক্ষ হিসেবে দাঁড়িয়ে গেলো তারই কিছু প্রাক্তণ সহপাঠি এবং ‘সোলস অব ইউছুপেরখীল’ নামের একটি সংগঠন। ভাবছে, সমাজের ভাল কাজে তাদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করবে।

তারা ছেলেটির মায়ের কাছে গিয়ে বাল্য বিয়ে না করানোর জন্য অনুরোধ করলো। প্রথমে বিয়ের কথা অস্বীকার করলেও পরবর্তীতে রাজুর মা তাদেরকে বিয়েতে দাওয়াত দেয়, সাথে ফ্রি হিসেবে কিছু অযাচিত কথাবর্তা শুনে ছেলেরা। তারুণ্যের শক্তি হয়তো অত সহজে দমে যেতে চায় নি। তারা এলাকার মেম্বার ও চেয়ারম্যানকে বিষয়টি জানালো। প্রতিবাদী ছেলেদের ঘ্যানর ঘ্যানর সহ্য করতে না পেরে ইউপি চেয়ারম্যান ও ওয়ার্ড মেম্বার ইউনিয়ন পরিষদে তাদেরকে নিয়ে বসলেন।

গোপনে খোঁজ নিয়ে খবরটি সঠিক জানলেও রাজুর মা’র অসমীচীন কথাবার্তার ভয়েই হয়তো নিজেরা এ্যাকশনে যাননি। সবকিছু শুনে পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রে একটি অভিযোগ দেওয়ার জন্য পরামর্শ দিলেন ইউপি চেয়ারম্যান। ‘‘অশিক্ষিত মা, ছেলেরা ডিসি’র চেয়ে পুলিশের ঝাড়ি ভয় পায়’- বুঝিয়ে দিলেন তিনি। দরখাস্ত রেডি করে ছেলেরা পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রে গেল। ক্যাম্প ইনচার্জের কর্তৃক তদন্তভার পেয়ে এএসআই নাজমুল হাসান পরদিনই রাজুর বাড়ি যান।

তদন্ত করে অফিসে ফিরতে না ফিরতেই ‘নেতা হওয়ার পথে থাকা’ এক ছেলে গিয়ে হাজির। অনিয়ন্ত্রিত নেতার মতো তার আচরণে নাজমুল হাসানের মনটাও হয়তো বিষিয়ে ওঠে। পরদিনই শুনি, রাজুর মা হার্ট এটাক করেছেন, রাজুকে কারা যেন অপহরণ করেছে! খবর পেয়ে স্থানীয় মেম্বার, আমি ও রাজুর দুলাভাই গিয়ে দেখি, রাজুর মা’কে সেলাইন দেওয়া হয়েছে বাজারের একটি ফার্মেসীতে। আমাদের দেখে একটু নড়ে চড়ে কাত হয়ে শুয়ে থাকলেন। ফার্মেসী থেকে হার্ট এটাকের চিকিৎসা পরবর্তী রাজুর মা সুস্থ্য হয়ে বাড়ি ফিরে গেলেন।

পরিকল্পনামাফিক ইতোমধ্যে রটিয়ে দেওয়া হলো, প্রতিবাদী ছেলেদের নামে অপহরণ মামলা দেওয়া হবে। একদিকে প্রতিবাদী হওয়ার কারণে মা-বাবার বকুনি, অপরদিকে অপহরণ মামলার ভয়। যে যার কাজে ফিরে যায় ছেলেরা। এর কয়েকদিন পরে পথিমধ্যে রাজুর দেখা। - বিয়েতে সবাই রাজী? - মা-ও রাজী, আমিও রাজী! - যারা তোমার বাল্য বিয়ের বিপক্ষে নেমেছে তাদের দাওয়াত দিবা? - ৪০০ জন বৈরাত খাবে, বন্ধুদেরকে দাওয়াত দিবে বলছে মা’য়।

উপর কথাগুলি গত জুনের। আজ সেই রাজুর বিয়ে। তথ্য সেবা কেন্দ্রের মনসুর ভাইকে ফোন দিয়ে বলি, চলেন বিয়েতে যাই। উনি বললেন, যাওয়া হবেনা, গেলে অফিসিয়ালী ঝামেলা হতে পারে! বেলা দেড়টার দিকে ককসবাজার সদর ইউএনও কাজী মোঃ আবদুর রহিম স্যারকে বিষয়টি অবগত করি। আগ্রহ নিয়ে তিনি ব্যাপারটি শুনলেন, জানালেন ঈদগাঁও ক্যাম্প ইনচার্জ ও ইসলামাবাদ ইউপি চেয়ারম্যানকে তিনি ফোন দেবেন।

অন্যদিকে, তদন্ত কেন্দ্রে দেয়া আবেদনটি উইথড্র করে নেবার আগ্রহ প্রকাশের মাধ্যমে ক্যাম্প ইনচার্জকেও বিষয়টি স্মরণ করিয়ে দেওয়া হলো। এখন সন্ধ্যা পেরিয়ে রাত। রাজুর বিয়ে হয়ে গেছে। প্রশাসন ব্যাপারটি এড়িয়ে গেছে হয়তো। অন্যদিকে, এসব কর্মে তারুণ্যকে উৎসাহিত করার জন্য এলাকায় যারা দায়িত্বশীল, অবস্থাদৃষ্টে মনে হয় তারাও ব্যাপারটিকে এড়িয়ে গেলেন।

কারণ উভয় পক্ষ রাজী বলে যে কোনভাবেই হোক, কাগজপত্র রেডি করেই বিয়েটা হয়েছে। তবে, প্রতিবাদ করতে গিয়ে অন্তত প্রবোধ না পাওয়া ছেলেরা এ যাত্রায় হেরেছে কিন্তু তাদের চোখমুখের চাহনি বলছে, আগামীতেও যে কোন অসুন্দর কাজ দেখে তারা সদর্পে গর্জে ওঠবে।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে ১২ বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.