আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

রুদ্ধশ্বাস জয়ে শীর্ষে মোহামেডান

মাঠে স্তব্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে আবাহনীর ক্রিকেটাররা। মাঝে মাথায় হাত দিয়ে বসে অতিরিক্ত ফিল্ডার মোহাম্মদ আল আমিন। মাঠ ছাড়ার সময় দলের এক ক্রিকেটার গজরাতে গজরাতে বলছিলেন, ‘বাউন্সার দেওয়ার জন্য স্কয়ার লেগ, লং লেগে দুজন ফিল্ডার বাউন্ডারিতে রাখা হলো অথচ বল করল ফুল লেংথ...। ’ ওই আল আমিনের একটি ক্যাচ হাতছাড়া আর ওই ফুল লেংথের শেষ বলেই শেষ আবাহনীর সামান্য সম্ভাবনাটুকুও। শেষ ওভারে মোহামেডানের প্রয়োজন ছিল ৫ রান।

আলাউদ্দিন বাবুর প্রথম দুই বলে রান নিতে পারলেন না মুক্তার। তৃতীয় বল পয়েন্টে আল আমিনের হাত ফসকে চার। পরের দুটি বল আলাউদ্দিন করলেন শর্ট, মুক্তার ব্যাটে-বলেই করতে পারলেন না। কিন্তু শেষ বলটি কী মনে করে ফুল লেংথ করলেন, ঠেকিয়েই পড়িমরি ১ রান নিয়ে নিলেন মুক্তার ও শামসুর। মোহামেডান শিবিরে তখন বাঁধনহারা উল্লাস।

ড্রেসিংরুম থেকে ছুটে এসে ক্রিকেটার-কর্মকর্তারা আলিঙ্গন করছেন দুই অপরাজিত ব্যাটসম্যানকে। অসাধারণ এক অপরাজিত সেঞ্চুরিতে মোহামেডানের দুর্দান্ত জয়ের নায়ক শামসুর, শেষ দিকে ছোট্ট কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ এক ইনিংস খেলেছেন মুক্তার। মাঠের মতো গ্যালারির হাজার দুয়েক দর্শকের মাঝেও তখন হতাশা আর উচ্ছ্বাসের নানা রূপ। সঙ্গে একদিকে সমর্থকদের অবিরাম গালাগাল, আরেক দিকে তালির বন্যা। কাগজে-কলমের শক্তির বিচারে এবার আবাহনী-মোহামেডান বড় শক্তি না হতে পারে, ঐতিহ্য আর নামের ভারে এখনো ঢাকা লিগের সবচেয়ে কাঙ্ক্ষিত লড়াই এটিই।

মিরপুরে ম্যাচটাও হলো জমজমাট। অসংখ্যবার কর্তৃত্বের হাতবদল হওয়া ম্যাচ মোহামেডান ৩ উইকেটে জিতেছে শেষ বলে। মিরপুরে ২৮২ রান তাড়ায় মোহামেডান জুপিটার (৫) ও উপুল থারাঙ্গাকে (১১) হারায় শুরুতেই। ৪১ বলে ৫১ করে রানের গতিটা তবু ধরে রেখেছিলেন দিলশান। নাবিল সামাদকে ছক্কায় ফিফটি করার পরের বলে দিলশান যখন পয়েন্টে ক্যাচ দিলেন, মোহামেডানের রান ৩ উইকেটে ৭৬।

শামসুরের সঙ্গে ৪৯ রানের জুটির পর সীমানায় ধরা পড়লেন রাজিন সালেহ (২১)। মোহামেডান ম্যাচে ফেরে পঞ্চম উইকেটে শামসুর আর নবীর ৮৭ রানের জুটিতে। ৩ চার ও ২ ছয়ে ৪৫ বলে ৪৭ নবীর। শামসুর ৬৮ বলে ফিফটির পর সেঞ্চুরি ছুঁয়েছেন ১১১ বলে, ব্যাটিং দেখে কখনোই মনে হয়নি রান তাড়ার চাপ ভর করেছে। সাতে নেমে ১২ বলে ১৮ রানের গুরুত্বপূর্ণ ইনিংস খেলেছেন অধিনায়ক মাশরাফি।

আর শামসুর-মুকতারের অবিচ্ছিন্ন ৩৮ রানের জুটিতে জয়। ব্যাটিংয়ে মন দিতে আবাহনীর অধিনায়কত্ব ছেড়েছেন শাহরিয়ার নাফীস। রান পাননি তবু। ৩১ রানের উদ্বোধনী জুটির পর মাশরাফি এক ওভারেই তুলে নেন শাহরিয়ার (১৯) ও নাজিমউদ্দিনকে (৯)। নতুন অধিনায়ক ইন্ডিকা ডি সরমকে (৩৩) নিয়ে ৫৫ রানের জুটিতে ধাক্কাটা সামাল দেন আরেক শ্রীলঙ্কান থারাঙ্গা পারানাভিতানা (৬১)।

অবশ্য আবারও দলের সেরা ইনিংসটি খেলেছেন অনূর্ধ্ব-১৯ দলের ব্যাটসম্যান মোসাদ্দেক। ৬৭ বলে ৭৬ রানের দুর্দান্ত ইনিংসটায় ৩টি চারের সঙ্গে ছিল ৪টি ছয়। বাঁহাতি স্পিনার মুরাদ খানের ১ ওভারে ২৬ রানসহ ২২ বলে ৪৯ করেছেন থিলিনা কান্দাম্বি। দ্বিতীয় স্পেলে অসাধারণ বোলিংয়ে আবাহনীর তিন শ পেরোনোর সম্ভাবনায় রাশ টেনে ধরেন মাশরাফি। শুধু ৪ উইকেট পেয়েছেন বলেই নয়, বাউন্সারের প্রদর্শনী আর আগ্রাসী বোলিংয়ে মাশরাফি মনে করিয়ে দিয়েছেন সেরা সময়কে।

ম্যাচ জিতে শতভাগ সাফল্যে পয়েন্ট টেবিলের শীর্ষে এখন মোহামেডান। আবাহনী-মোহামেডান ম্যাচের আড়ালে ঢাকা পড়ে গেছে, নইলে সবচেয়ে বেশি আলোচনায় থাকার কথা ছিল ফতুল্লার ম্যাচটাই। যেখানে আগের ম্যাচে আবাহনীকে হারানো প্রাইম দোলেশ্বরের শিকার কাগজে-কলমে লিগের সেরা দল শেখ জামাল ধানমন্ডি ক্লাব। বাঁহাতি স্পিনে ৬ উইকেট নিয়ে তাইজুল ইসলাম শেখ জামালকে গুটিয়ে দিয়েছেন ৯৩ রানে! দ্বিতীয় উইকেটে জুনায়েদ ও জহুরুলের ৫৬ রানের জুটিতে একপর্যায়ে শেখ জামালের রান ছিল ১ উইকেটে ৬০। পরের ৩৩ রানে নেই ৯ উইকেট! লিস্ট ‘এ’-তে আগের চার ম্যাচে ১ উইকেট নেওয়া তাইজুল কাল ১০ ওভারের টানা স্পেলে ১৯ রানে নিয়েছেন ৬ উইকেট! ৭ উইকেটে জিতে প্রাইম দোলেশ্বর পেয়েছে তিন ম্যাচে দ্বিতীয় জয়।

সোর্স: http://www.prothom-alo.com

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.