আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

চূড়ান্ত হার্ডলাইনে জামায়াত!



একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল আব্দুল কাদের মোল্লাসহ সাজাপ্রাপ্ত ৫ নেতাকে বাঁচাতে এবার চূড়ান্ত হার্ডলাইনে যাচ্ছে জামায়াত-শিবির। জানা গেছে, শীর্ষ নেতৃত্বকে ফাঁসির দড়ি থেকে বাঁচাতে বিএনপিকে পাশে টানা, সরকারের ওপর কূটনৈতিক চাপ সৃষ্টির পাশাপাশি গোপনে সরকারের সঙ্গে যোগাযোগসহ সব ধরনের প্রচেষ্টা চালাচ্ছে দলটি। তবে সব প্রচেষ্টা ব্যর্থ হলে রাজপথেই এর সমাধান খুঁজতে চূড়ান্ত কর্মসূচি নিয়ে মাঠে নামবে তারা। জামায়াত-শিবিরের একাধিক নেতা ও শীর্ষ নেতৃত্বের ঘনিষ্ঠ সূত্রগুলো বিষয়টি নিশ্চিত করেছে বাংলানিউজকে। রাজপথের আন্দোলনে সমর্থন ও সহানুভূতি লাভের জন্য এখন জোটের প্রধান শরিক বিএনপি, ধর্মীয় সংগঠন হেফাজতে ইসলামসহ অন্যান্য ধর্মীয় দলগুলোকে পাশে টানতে মরিয়া দলটি।

জামায়াতের প্রভাবশালী নেতা ও নায়েবে আমির দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর আপিল শুনানি শুরু হচ্ছে মঙ্গলবার ২৪ সেপ্টেম্বর। সাজাপ্রাপ্ত নেতাদের মধ্যে আপিল শুনানির অপেক্ষায় আরও আছেন সাবেক আমির গোলাম আযম, সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ, সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল কামারুজ্জামান। জামায়াতের নেতারা মনে করছেন, সরকার কাদের মোল্লার রায় কার্যকর করতে চাচ্ছে। তারপর কামারুজ্জামান ও সাঈদীর রায়ও বাস্তবায়ন করবে তারা। এমন অবস্থায় নেতাদের বাঁচাতে সর্বশক্তি দিযে মাঠে নামা ছাড়া কোনো বিকল্প নেই তাদের জন্য।

এখনই শক্ত অবস্থান নিতে না পারলে সাঈদীসহ অন্য নেতাদের রায় কার্যকরের দিকে যাবে সরকার। অন্য আরেকটি সূত্র বলছে, মামলা সিরিয়াল অনুযায়ী এখন সাঈদীর মামলা আগে চলে আসবে। তাই সাঈদীর রায় বাস্তবায়ন ঠেকাতে যেকোনো উপায়ে রাজপথে কঠোর হবে দলটি। এর অংশ হিসেবেই কাদের মোল্লার রায়ের প্রতিবাদে গত বুধ ও বৃহস্পতিবার দুই দিনের হরতালে সাংগঠনিক শক্তি দেখানো ছাড়াও ঝিমিয়ে পড়া কর্মীদের উজ্জীবিত করার চেষ্টা করেছে জামায়াত-শিবির। এ বিষয়ে জামায়াতের অন্যতম নীতিনির্ধারক ও দলটির নির্বাহী পরিষদের সদস্য হামিদুর রহমান আযাদ এমপি বাংলানিউজকে বলেন, সরকার যদি জনগণের দাবি তোয়াক্কা না করে একগুয়েমি, দাম্ভিকতার পরিচয় দেয় এবং হঠকারী পন্থা অবলম্বন করে, তাহলে জনগণ এর দাঁতভাঙ্গা জবাব দেবে।

এতে সরকারের অস্তিত্ব হুমকির মধ্যে পড়বে। জানা গেছে, রায় বাস্তবায়ন থেকে সরকারকে বিরত রাখতে বহির্বিশ্বের সহানুভূতি নিজেদের পক্ষে নিতেও লবিং এবং দূতিয়ালি জোরদার করেছে জামায়াত। এছাড়া সরকারের ওপর চাপ সৃষ্টিতে বিদেশিদের কাছে ধরনা অব্যাহত রাখবে তারা। এরই ধারাবাহিকতায় কাদের মোল্লার রায়ে আগের দিন মার্কিন রাষ্ট্রদূত ড্যান ডব্লিউ মজীনার সঙ্গে এবং রায়ের একদিন পর বৃহস্পতিবার ব্রিটিশ হাইকমিশনারের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন জামায়াত নেতা ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক। রায়ের আগেও বিভিন্ন সময় কানাডা, অস্ট্রেলিয়ার হাইকমিশনার, মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশের কূটনৈতিক, জাতিসংঘের আবাসিক প্রতিনিধিসহ বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূতদের সঙ্গে নিয়মিত বৈঠক করেছেন ব্যারিস্টার রাজ্জাকের নেতৃত্বে জামায়াতের একটি প্যানেল।

এমনকি ট্রাইব্যুনালের ‍রায়ে জাতিসংঘের হস্তক্ষেপ কামনা করে সেখানে চিঠিও পাঠিয়েছে জামায়াত, এমনটাই জানা গেছে একটি সূত্রে। জানা গেছে, আন্দোলনকে বেগবান করতে হেফাজত ইসলামকে ফের মাঠে নামানোর পরিকল্পনা করছে জামায়াত। এর অংশ হিসেবে দীর্ঘদিন নীরব থাকার পর জামায়াতের পরিকল্পনাতেই নাকি শনিবার চট্টগ্রামে ওলামাদের নিয়ে বৈঠক করেছেন হেফাজতের আমির আহমদ শফী। জামায়াত সূত্র বলছে, সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রী পুত্র জয়ের কয়েকটি বক্তব্য ও ৫ মে হেফাজতের সমাবেশে পুলিশি অভিযানের বিষয়টিকে সামনে রেখে ফের মাঠে নামানো হবে হেফাজতকে। এজন্য চট্টগ্রাম জামায়াতের কয়েকজন নেতা কাজ করছেন।

আর তাদের মনিটরিং করা হচ্ছে কেন্দ্র থেকে। হেফাজতসহ ধর্মীয় সংগঠনগুলোকে মাঠে নামাতে ফের ধর্মীয় অপপ্রচারও শুরু করেছে জামায়াত-শিবির। সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রী পুত্র জয়ের কিছু বক্তব্যকে বিকৃত করে উপস্থাপনের চেষ্টা করে জামায়াত ঘেঁষা মিডিয়া ও অনলাইনগুলো। এর মধ্যে জয়ের একটি বক্তব্য ‘দেশে জঙ্গি কমাতে হলে মাদ্রাসার সংখ্যা কমাতে হবে’ সহ আরও কয়েকটি বক্তব্যও উল্লেখযোগ্য। জয় একটি মদের দোকানে সামনে দাঁড়িয়ে মদ খাচ্ছেন, এমন মিথ্যা ছবিও স্যোশাল মিডিয়ার ছড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে।

এদিকে আন্দোলনে বিএনপিকেও পাশে চায় জামায়াত। তত্ত্বাবধায়ক সরকার ইস্যুতে ঈদের পর সরকার পতনের এক দফা আন্দোলনে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়ে রেখেছে বিএনপি। অতীতে এসব ইস্যুতে জামায়াত বড় ভূমিকা না রাখলেও এবার আটঘাট বেঁধেই তারা নামবে সরকার পতনের কর্মসূচিতে। শিবিরের সাবেক সভাপতি ও জামায়াতের বর্তমান কর্মপরিষদের একজন সদস্য বাংলানিউজকে জানান, একা আন্দোলন করে সরকারকে হয়তো নড়ানো সম্ভব হবে না। নেতাদের বাঁচাতে যেভাবে হোক সরকার পতন ঘটানের আন্দোলনে শরিক হতে হবে।

এক্ষেত্রে তত্ত্বাবধায়ক ইস্যুতে বিএনপির সঙ্গে যুগপৎ আন্দোলনে যাবে জামায়াত। হামিদুর রহমান আযাদ এমপি বলেন, জাতীয়তাবাদী ও ইসলামী শক্তিকে ধ্বংস করার যে পাঁয়তারা সরকার করছে, তা রুখতে অতীতের চেয়ে এবার আরো শক্তভাবে মাঠে নামছি। এদিকে ভবিষ্যতের আন্দোলনের জন্য নেতাকর্মীদের প্রস্তুত হওয়ার নির্দেশ দিয়েছে জামায়াত-শিবির। চূড়ান্ত আন্দোলনে গেলে গ্রেফতার, নির্যাতন এমনকি গুমের ঘটনাও ঘটতে পারে, এমনটা ভেবে নিয়েই নেতাকর্মীদের তিন স্তরে ভাগ করে প্রস্তুত রাখা হয়েছে বলে জানা গেছে। জামায়াতের সূত্র বলছে, আন্দোলনের স্ট্রাইকিং ফোর্স শিবিরের তিনটি আলাদা বাহিনী গঠন করা হয়েছে।

প্রাইমারি, প্রশিক্ষিত এবং সর্বশেষ ক্যাডারভিত্তিক। প্রথমে প্রাইমারি কর্মীদের দিয়ে মাঠ গরম করা হবে। এরপর নামবেন বিভিন্ন সময় ট্রেনিং করা কর্মীরা, যারা প্রায় সবাই প্রশিক্ষিত। এতেও কাজ না হলেও হাতে অস্ত্র দিয়ে মাঠে নামানো হবে সর্বোচ্চ প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ক্যাডারদের। জামায়াত-শিবির নেতাদের দাবি, আইনিভাবে নেতাদের বাঁচানোর সকল প্রক্রিয়া এখন শেষের পথে।

রায়কে প্রভাবিত করা বা বদলানোর সকল পথ এখন বন্ধ। কাদের মোল্লার ক্ষেত্রে এখন শুধু রিভিউ আবেদন বাকি আছে। আইনে সে সুবিধা পাওয়াও অনিশ্চিত। তাই চূড়ান্ত আন্দোলনে যা যা দরকার তার সবটুকুই প্রয়োগ করতে প্রস্তুতি নিচ্ছে দলটি। এ বিষয়ে শিবিরের কেন্দ্রীয় সহকারী প্রচার সম্পাদক জামাল উদ্দিন বাংলানিউজকে বলেন, সরকার প্রহসনের বিচার করে নেতাদের ফাঁসি দেবে, আর আমরা বসে থাকবো, এটা হবে না।

সরকারের অবিচারের সকল জবাব দিতে শিবির প্রস্তুত। জামায়াত নেতাদের দাবি, রায় ঘোষণার পর প্রত্যেক হরতালে মানুষ যেভাবে রাস্তায় নেমেছে, রাস্তা অবরোধ করেছে এটা সরকারের জন্য একটা ম্যাসেজ। এরপরও যদি সরকার রায় কার্যকরের দিকে যায় তাহলে পরিস্থিতি বেসামাল হয়ে যাবে। তাই সরকার সে ভুল করবে বলে তারা মনে করেন না। শিবির কেন্দ্রীয় কয়েকজন নেতা জানিয়েছেন, গত বছর নভেম্বর থেকে যে ধারাবাহিক আন্দোলন চলছে তাতে নেতাকর্মীরা জেল,জুলুম আর নির্যাতনে অনেকটা ঝিমিয়ে পড়েছিলেন।

তাদের উজ্জীবিত করতে গত মে-জুন মাস জুড়ে বার্ষিক, ষান্মাসিক সম্মেলনের পাশাপাশি বিভাগীয়, মহানগর, জেলা, বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের দায়িত্বশীলদের নিয়ে একাধিকবার বৈঠক করেছেন শিবির সেক্রেটারি আব্দুল জব্বার। সেখানে যে শাখার নেতাকর্মীরা গ্রেফতার হয়েছেন তাদের আপাতত ছুটি দিযে নতুনদের দিয়ে ওই সব কমিটি পুনর্গঠন করা হয়েছে। এছাড়া জামিনে বের হওয়া নেতাকর্মীদের রাখা হয়েছে রিজার্ভে। Click This Link

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.