আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

সাকার ফাঁসি * ট্রাইব্যুনালের আদেশ * ২৩ অভিযোগের ৯টি প্রমাণিত চার অভিযোগের জন্য ফাঁসি *বাকিগুলোর জন্য মোট ৭০ বছর কারাদণ্ড



একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধের সময় মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় অভিযুক্ত বিএনপির শীর্ষনেতা বর্তমান সংসদ সদস্য সালাউদ্দিন কাদের (সাকা) চৌধুরীকে চারটি অভিযোগে ফাঁসির আদেশ দেয়া হয়েছে। অপর পাঁচ অভিযোগে আরও ৭০ বছর কারাদণ্ড- দেয়া হয়েছে। তাঁর বিরুদ্ধে হত্যা, গণহত্যা, অপহরণ ও আটকের অভিযোগে এ আদেশ দেয়া হয়। ট্রাইব্যুনালের দেয়া বিএনপির কোন শীর্ষনেতার বিরুদ্ধে এটাই প্রথম রায়। এর আগে ৬টি মামলার রায় দেয়া হয়েছে, তাঁরা সবাই জামায়াতের শীর্ষ নেতা ছিলেন।

চেয়ারম্যান বিচারপতি এটিএম ফজলে কবীরের নেতৃত্বে তিন সদস্যবিশিষ্ট আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ মঙ্গলবার এ ঐতিহাসিক রায় প্রদান করেছেন। ট্রাইব্যুনালে অন্য দুই সদস্য ছিলেন বিচারপতি জাহাঙ্গীর হোসেন সেলিম এবং বিচারপতি আনোয়ারুল হক। রায়ের আদেশে বলা হয়, মানবজাতির বিরুদ্ধে এমন জঘন্য অপরাধ করার জন্য তার সর্বোচ্চ শাস্তি প্রাপ্য বলে আমরা ঐকমত্যে পৌঁছেছি। আইনপ্রণেতা হলেও তাঁকে মনে রাখতে হবে, তিনি নিজেও আইনের উর্ধে নন। রায়ের তিনটি পর্যবেক্ষণে বলা হয়েছে- (১) বিচারের প্রাথমিক পর্যায়ে সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী আদালতের ডেকোরাম (শালীনতা) ভঙ্গ করে অস্বাভাবিক আচরণ করতেন।

(২) ট্রাইব্যুনালের বিচারকরা আদালতে প্রবেশ ও বের হওয়ার সময় এজলাসে উপস্থিত সবাই দাঁড়ালেও তিনি বসে থাকতেন, কোন সময়ই দাঁড়িয়ে শ্রদ্ধা প্রদর্শন করেননি। (৩) ট্রাইব্যুনালের বিচারকদের তিনি চেয়ারম্যান ও মেম্বার সাহেব বলে সম্বোধন করতেন। তিনি পার্লামেন্টের সদস্য হয়েও ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরণ করেছেন। ট্রাইব্যুনালকে নানাভাবে অবজ্ঞা করেছেন, এগুলো নিন্দনীয়। তবে এ পর্যবেক্ষণ রায়ের ক্ষেত্রে কোন প্রতিফলন ঘটবে না।

অভিযুক্ত সাকা চৌধুরীর দেয়া ডকুমেন্ট এলিবাই (অন্যত্র থাকার অজুহাতে রেহাই পাওয়া) দেয়া প্রমাণ করে তিনি ঘটনাস্থলে ছিলেন। রায়ে বলা হয়েছে, সাকা চৌধুরী বিদেশে গেছেন, এটা ঠিক নয়। মূলত একাত্তরের ২০ সেপ্টেম্বর মুক্তিযোদ্ধারা চন্দনপুরে সাকার জিপে আক্রমণ করেছিলেন, তাতে তিনি আহত হন। সেই আক্রমণে গ্রেনেড হামলায় গাড়িচালক নিহত হন। সাকা জখম হয়ে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন।

সেখানে যে ডাক্তার (ডা. একেএম শফিউল্লাহ) তাঁকে চিকিৎসা দিয়েছিলেন, সেই ডাক্তার ট্রাইব্যুনালে এসে সাক্ষী দিয়েছেন। যে সমস্ত মুক্তিযোদ্ধারা গ্রেনেড চার্জ করেছিলেন তারাও ট্রাইব্যুনালে এসে সাক্ষী দিয়েছেন। এ প্রসঙ্গে প্রসিকিউটর রানা দাশগুপ্ত বলেছেন, সাকা এ বিষয়েও নাটকের অবতারণা করেছেন। এমনকি তাঁকে আহত অবস্থায় যিনি হাসপাতালে এনেছিলেন সেই এএসএম মাহাবুরও ট্রাইব্যুনালে সাক্ষী দিয়েছেন। উল্লেখ্য, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ এর এটি তৃতীয় রায়।

এর আগে ট্রাইব্যুনাল-১-এ জামায়াতের সাবেক আমির গোলাম আযম ও মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর রায় ঘোষণা করা হয়। আর ট্রাইব্যুনাল-২ এর আগে ৪টি রায় ঘোষণা করেছে। সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর বিরুদ্ধে প্রসিকিউশনের আনা ২৩টি অভিাযোগের মধ্যে ৯টি সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হয়েছে। ১৪টি অভিযোগ প্রমাণিত হয়নি। ট্রাইব্যুনালের রায়ে বিচারপতি বলেন, মানবতাবিরোধী অপরাধের ২৩টি অভিযোগের মধ্যে ৯টি ঘটনায় সাকা চৌধুরীর সংশ্লিষ্টতা সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হয়েছে।

এর মধ্যে চারটি চার্জ ৩, ৫, ৬ ও ৮ নম্বর অভিযোগে হত্যা ও গণহত্যার দায়ে সাকা চৌধুরীকে মৃত্যুদ- দেয়া হয়েছে। ১৭ ও ১৮ নম্বর অভিযোগে অপহরণ ও নির্যাতনের দায়ে ৫ বছর করে ১০ বছর কারাদ-। ২, ৪ ও ৭ নম্বর অভিযোগে হত্যা, গণহত্যা, লুটপাট, অগ্নিসংযোগ ও দেশান্তরে বাধ্য করার মতো অপরাধে জড়িত থাকা এবং এর পরিকল্পনা করার দায়ে ২০ বছর করে ৬০ বছর কারাদ- দেয়া হয়েছে। প্রমাণিত যে চারটি অভিযোগে হত্যা ও গণহত্যায় ফাঁসি হয়েছে তা হলো, ৩ নম্বর অভিযোগে গহিরা শ্রী কু-েশ্বরী ঔষধালয়ের প্রতিষ্ঠাতা নূতন চন্দ্র সিংহ হত্যা, ৫ নম্বর অভিযোগে সুলতানপুরে শ্রী নেপাল চন্দ্র ও তিনজনকে হত্যা, ৬ নম্বর অভিযোগে ঊনসত্তরপাড়ায় ৬৯-৭০ জনকে গণহত্যা এবং ৮ নম্বর অভিযোগে চট্টগ্রাম আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাতা শেখ মোজাফফর আহমদ ও তাঁর পুত্র আলমগীরকে হত্যার দায়ে ফাঁসির আদেশ দেয়া হয়েছে। আর প্রমাণিত অপহরণ ও নির্যাতনসংক্রান্ত অভিযোগে আনা হয়েছে, ১৭ নম্বর অভিযোগে নিজাম উদ্দিন আহম্মেদকে অপহরণ ও নির্যাতন, ১৮ নম্বর অভিযোগে সালেহ উদ্দিন আহমেদকে অপহরণ ও নির্যাতন।

আর এ দুই অভিযোগে সাকাকে দেয়া হয়েছে ৫ বছরের সশ্রম কারাদ-। ২, ৪ ও ৭ নম্বর অভিযোগে তাঁকে দেয়া হয়েছে ২০ বছরের কারাদ-। আর যে সব অভিযোগ থেকে তাঁকে অব্যাহতি দেয়া হয়েছে সেগুলো হলো ১, ১০, ১১, ১২, ১৪, ১৯, ২০ ও ২৩ নম্বর অভিযোগ। এ ছাড়াও যে অভিযোগগুলো নিয়ে আদালত কিছু বলেনি সেগুলো হলো ৯, ১৩, ১৫, ১৬, ২১ ও ২২ নম্বর অভিযোগ। সকাল ১০টা ৪২ মিনিটে সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীকে এজলাসে আনা হয়।

এর পর ১০টা ৪৪ মিনিটে চেয়ারম্যান বিচারপতি এটিএম ফজলে কবীর, দুই সদস্য বিচারপতি জাহাঙ্গীর হোসেন সেলিম ও বিচারপতি আনোয়ারুল হক তাদের আসন গ্রহণ করেন। চেয়ারম্যান বিচারপতি এটিএম ফজলে কবীর জনাকীর্ণ আদালতে পিনপতন নীরবতার মধ্যে রায় পড়া শুরু করেন। প্রথমে তিনি বলেন, আজ আমরা সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর রায় ১৭২ পৃষ্টা প্রস্তুত করেছি। রায়ের দুই অংশ দুই সদস্য পড়বেন। এর পর বিচারপতি আনোয়ারুল হক ১০টা ৪৫ মিনিটে রায় পড়া শুরু করেন।

বিচারপতি জাহাঙ্গীর হোসেন ১১টা ১২ মিনিট এবং চেয়ারম্যান বিচারপতি এটিএম ফজলে কবীর ১২টা ৪৫ মিনিটে রায় পড়া শুরু করেন। আদেশ দিয়ে ট্রাইব্যুনালের তিন বিচারপতি দুপুর ১টা ১৬ মিনিটে এজলাস কক্ষ ত্যাগ করেন। এ সময় এজলাস কক্ষে সাংবাদিক, আইনজীবী, পর্যবেক্ষক, গোয়েন্দা সংস্থা ও তদন্ত সংস্তার কর্মকর্তাদের উপস্থিতি ছিল চোখে পড়ার মতো। রায় উপলক্ষে ট্রাইব্যুনালের ভেতরে ও বাইরে নেয়া হয়েছিল কঠোর নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা। প্রসিকিউশন ও আসামিপক্ষের আইনজীবী ছাড়াও সাকার স্ত্রী, ছেলে-মেয়ে ও অন্য আত্মীয়স্বজন উপস্থিত ছিলেন।

রায় ঘোষণার পর প্রসিকিউটর ও সুশীল সমাজের নেতৃবৃন্দ বলেছেন, এ রায়ের মাধ্যমে জাতি দীর্ঘ ৪২ বছর পর কলঙ্কমুক্ত হয়েছে। আমরা এখন রায় বাস্তবায়নের দাবি জানাচ্ছি। রায়ের পর সাকার স্ত্রী ফরহাত কাদের চৌধুরী বলেছেন, এটা রাজনৈতিক রায়। একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে ফাঁসির দ- ঘোষণার পর এজলাস কক্ষে স্বভাবসূলভ ভঙ্গিতেই হাসলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও সংসদ সদস্য সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী (সাকা চৌধুরী)। এ সময় তিনি ট্রাইব্যুনালকে বলেন, ‘এটা মিনিস্ট্রি থেকে বেরিয়েছে।

ইন্টারনেটে আছে তো। আইন মন্ত্রণালয়কে ধন্যবাদ দিলাম। ’ রায় ঘোষণার পর সাকার আইনজীবী এএসএম আহসানুল হক হেনা বলেছেন, আমরা এ রায়ের বিরুদ্ধে আপীল করব। রায়ের বিষয়বস্তু আগেই প্রকাশ হয়েছে, এমন অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে এ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম বলেছেন, ‘এটি মিথ্যা কথা। আমি এ্যাটর্নি জেনারেল হয়ে জানতে পারলাম না; উনারা পেলেন কিভাবে? এটি একটি মনগড়া কথা।

যাঁরা উপস্থিত ছিলেন ॥ রায় ঘোষণার সময় ট্রাইব্যুনালে এ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম, প্রসিকিউশনের প্রধান সমন্বয়ক অতিরিক্ত এ্যাটর্নি জেনারেল এমকে রহমান, চীফ প্রসিকিউটর গোলাম আরিফ টিপু, প্রসিকিউটর সৈয়দ হায়দার আলী, রানা দাশগুপ্ত, মীর ইকবাল হোসেন, হৃষিকেশ সাহা, জেয়াদ আল মালুম, মোহাম্মদ আলী, মোখলেসুর রহমান বাদল, আব্দুর রহমান হাওলাদার , আলতাফ উদ্দিন আহম্মেদ, একেএম সাইফুল ইসলাম, মোঃ সাহিদুর রহমান, সুলতান মাহমুদ সিমন, ড. তুরিন আফরোজ, নুরজাহান বেগম মুক্তা, আবুল কালাম, মোঃ জাহিদ হোসেন, রেজিয়া সুলতান বেগম, সাবিনা ইয়াসমিন খান, তাপস কান্তিবল, শেখ মোসফেক কবির, সৈয়দ সায়েদুল হক, তদন্ত সংস্থার সমন্বয়ক এমএ হান্নান খান ও সানাউল হক এবং মামলার তদন্ত কর্মকর্তা নুরুল ইসলাম উপস্থিত ছিলেন। এ ছাড়া একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সভাপতি শাহরিয়ার কবির ও সহসভাপতি ড. মুনতাসির মামুনসহ অনেকেই উপস্থিত ছিলেন। গুজব ভিত্তিহীন ॥ আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ এর দেয়া সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর ফাঁসির রায় আইন মন্ত্রণালয় থেকে দেয়া হয়েছে বলে যে গুজব ছড়ানো হয়েছে, তা একেবারেই ভিত্তিহীন ও অমূলক বলে জানিয়েছেন আইন প্রতিমন্ত্রী এ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম। মঙ্গলবার বিকেলে সচিবালয়ে আইন প্রতিমন্ত্রীর কক্ষে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, সারাদিন এ ব্যাপারে তদন্ত করে গুজবের কোন সত্যতা পাইনি। এটা একেবারেই ভিত্তিহীন ও অমূলক।

এ ব্যাপারে আইন মন্ত্রণালয়ের কিছু করার নেই জানিয়ে কামরুল বলেন, ট্রাইব্যুনালই এ ব্যাপারে আইনগত ব্যবস্থা নেবে। রায়ের কপি আগে বের হওয়ার অভিযোগ যুদ্ধাপরাধীদের বিচার বানচালের ষড়যন্ত্রের অংশ। স্বস্তির নিশ্বাস ফেলবে ॥ এ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম বলেছেন, স্বাধীনতার ৪২ বছর পর হলেও সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর রায়ের মাধ্যমে একাত্তরে নিহতদের পরিবার স্বস্তির নিশ্বাস ফেলবে। তিনি বলেন, মুক্তিযুদ্ধের সময় সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী হিন্দু সম্প্রদায় এবং সাধারণ মানুষের ওপর নির্যাতন চালিয়েছেন, এ অপরাধের গভীরতা নির্ণয় করে আদালত সঠিক রায় দিয়েছে। তিনি আরও বলেন, রায় পাঠ করার সময় বলা হয়েছিল, সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী পাঁচবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন, এ কথা বলার পর সাকা চৌধুরী যে আচরণ করেন, তা আদালতের প্রতি অসম্মানজনক।

প্রসিকিউটররা যা বলেন ॥ সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর ফাঁসির রায় আগেই প্রকাশ হয়ে যাওয়া প্রসঙ্গে প্রসিকিউটর তুরিন আফরোজ বলেন, ‘আমরা শুনেছি এ রকম একটি খবর, রায়ের কপি হাতে আসেনি। অনলাইনে প্রকাশিত কপি ও মূল রায়ের কপি দেখতে হবে কতখানি মিল আছে। ’ তিনি আরও বলেন, আগে থেকেই এ বিচার প্রক্রিয়ার বিরুদ্ধে নানা ষড়যন্ত্র চলছে। ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা হচ্ছে কিনা, এটাই মুখ্য বিষয়। এ মামলার প্রসিকিউটর জেয়াদ আল মালুম বলেন, এ রায়ের মধ্য দিয়ে আবারও প্রমাণিত হলো বিচার না পাওয়ার সংস্কৃতি থেকে জাতি মুক্ত হবে।

তিনি বলেন, ’৭১-এ যাঁরা নির্যাতনের শিকার হয়েছেন, তাদের পরিবার ৪২ বছর অপেক্ষা করেছে বিচারের জন্য। এ রায়ে তাদের মনে স্বস্তি ফিরে এসেছে। যাঁরা সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দিয়েছেন, তাদের হুমকি দেয়া হয়েছে। প্রসিকিউটর রানা দাশগুপ্ত বলেছেন, আমাদের প্রত্যাশা অনুযায়ী রায় হয়েছে। সাকা হাসছিলেন ॥ যুুদ্ধাপরাধের মামলার রায় পড়ার সময় সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী সারাক্ষণই হাসছিলেন।

তিনি বিভিন্ন মন্তব্য করছিলেন। ৩ নম্বর অভিযোগ পড়ার সময় তিনি বলেন, ‘৩০ লাখ তো মারা গেছে। বলে দিলেই হয়, আমি ২০ লাখ মেরেছি। রায় তো গতকালই ওয়েবসাইটে পাওয়া গেছে। সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী ট্রাইব্যুনালে আসার সময় তাঁর পরনে ছিল সাদা পাঞ্জাবি, সাদা পাজামা ও চামড়ার স্যান্ডেল।

আদালতে তাঁর স্ত্রী ফরহাত কাদের, ছেলে ফাইয়াজ কাদের চৌধুরী ও মেয়ে ফারজিত কাদের চৌধুরী উপস্থিত ছিলেন। আলাদা কিছু নয় ॥ বিশিষ্ট গবেষক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. মুনতাসির মামুন বলেছেন, এটা আলাদা করে দেখার কিছু নেই। গোলাম আযমের পর এ রায় দেশের মানুষ অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছিলেন। সাকা পার্লামেন্ট সদস্য থাকার পরও ট্রাইব্যুনালে যে আচরণ করেছেন, তাঁর শরীরের ভাষা থেকে বুঝা যায় তিনি একাত্তরে কী ধরনের অপরাধ করেছেন। এ রায়ের মাধ্যমে জাতি ন্যায়বিচার পেয়েছে।

জাতির প্রত্যাশা পূরণ হয়েছে। বিশেষ করে চট্টগ্রামের হিন্দু জনগোষ্ঠীকে নিশ্চিহ্ন করার উদ্যোগ নিয়েছিল সাকা চৌধুরী। একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সভাপতি শাহরিয়ার কবীর বলেছেন, তিনি জন্মগত অপরাধী। তাঁর রক্তের মধ্যে অপরাধ বহন করছে। সাকার স্ত্রীর বক্তব্য ॥ আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ এ মৃত্যুদ-প্রাপ্ত বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও সংসদ সদস্য সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর স্ত্রী ফরহাত কাদের চৌধুরী তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় এ রায়কে রাজনৈতিক হিসেবে অভিহিত করেছেন।

ট্রাইব্যুনাল থেকে বেরিয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এটা অবশ্যই রাজনৈতিক রায়। আদালত মনে করেছে আমরা সব মিথ্যা বলছি আর উনাদের (সরকার পক্ষ) সব কথা সত্য। আপীল করবেন কিনা, এ প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আপীল কোথায় করব। বাইরে গণজাগরণ হবে আর আপীল বিভাগেও এই আদালতের মতোই রায় দেয়া হবে। নিরাপত্তার চাদরে ট্রাইব্যুনাল ॥ বিএনপি নেতা সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর রায়কে ঘিরে ট্রাইব্যুনাল অঙ্গনে নেয়া হয়েছিল কঠোর নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা।

তিন স্তরবিশিষ্ট নিরাপত্তা নেয়া হয়। অন্য রায়ের দিন যে ধরনের নিরাপত্তা নেয়া হয়, তার চেয়েও বেশি নিরাপত্তা নেয়া হয়। আমাদের তদন্ত সার্থক হয়েছে ॥ তদন্ত সংস্থার প্রধান হান্নান খান বলেন, এ মামলায় আমরা যথেষ্ট শ্রম দিয়েছি। শত প্রতিকূলতা সত্ত্বেও আমরা তদন্ত চালিয়ে গিয়েছি। আমরা এ মামলার কাজ ভালভাবে তদন্ত করে প্রমাণ করতে পেরেছি।

এটা আমাদের অর্জন। আজ আমরা একটি প্রত্যাশিত রায় পেয়েছি। মামলার ধারাবাহিকতা ॥ সাকা চৌধুরীর মামলায় উভয়পক্ষের শুনানি ও যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষে গত ১৪ আগস্ট রায় ঘোষণার জন্য অপেক্ষমাণ (সিএভি) রাখা হয়। গণহত্যা, হত্যা, অপহরণ, নির্যাতন, লুট ও দেশান্তরে বাধ্য করাসহ মানবতাবিরোধী অপরাধের ২৩টি অভিযোগের মধ্যে ১৭টিতে সাক্ষ্য ও যুক্তি উপস্থাপন করেছে প্রসিকিউশন। ২০১১ সালের ১৪ নবেম্বর সাকা চৌধুরীর বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দাখিল করা হয়।

একই বছরের ১৮ নবেম্বর আনুষ্ঠানিক এ অভিযোগ আমলে নিয়ে ২৩টি অভিযোগে বিচার শুরুর নির্দেশ দেয় ট্রাইব্যুনাল। ২০১২ সালের ১৪ মে প্রসিকিউশনের সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হয়ে গত ২৮ জুলাই তা শেষ হয়। প্রসিকিউশনের ৪১ এবং আসামিপক্ষে চার জনের জবানবন্দী নেয়া হয়। একাত্তরের এপ্রিল থেকে আগস্ট পর্যন্ত চট্টগ্রামের বিভিন্ন স্থানে ৪৩৭ ব্যক্তিকে হত্যার সঙ্গে জড়িত থাকা ছাড়াও চট্টগ্রামের রাউজানের শাকপুরা, ঊনসত্তরপাড়াসহ বিভিন্ন স্থানে গণহত্যা চালানোরও অভিযোগ রয়েছে সাকার বিরুদ্ধে। এ সব অপরাধ সাকা চৌধুরীর উপস্থিতি ও নির্দেশে এবং পাকিস্তানী সেনাদের মাধ্যমে সংঘটিত হয়।

অত্যাচার-নির্যাতন ও হত্যার ক্ষেত্রে চট্টগ্রামে সাকা চৌধুরীর বাড়িকে ‘গুডস হিল’ টর্চার সেল হিসেবে ব্যবহার করা হয়। এখানে মুক্তিযোদ্ধা, সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের লোক, শিল্পী-সাহিত্যিক, সাংবাদিক ও নারীদের ধরে নিয়ে নির্যাতনের পর হত্যা করা হতো বলে প্রসিকিউশনের অভিযোগে উল্লেখ করা হয়। প্রথম গ্রেফতার ॥ ২০১০ সালের ২৬ জুন হরতালের আগের রাতে রাজধানীর মগবাজার এলাকায় গাড়ি ভাংচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনায় একই বছরের ১৬ ডিসেম্বর সাকা চৌধুরীকে গ্রেফতার করা হয়। পরবর্তীতে ১৯ ডিসেম্বর মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে আটক দেখানো হয়। এর পর থেকে তিনি কারাগারে।

ওই বছরের ১৪ নবেম্বর তাঁর বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দাখিল করা হলে ১৭ নবেম্বর তা আমলে নেয় ট্রাইব্যুনাল। ২০১২ সালের ৪ এপ্রিল ট্রাইব্যুনাল-১ তাঁর বিরুদ্ধে ২৩টি অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরু করে। ওই বছরের ১৪ মে ইমেরিটাস অধ্যাপক আনিসুজ্জামানের জবানবন্দীর মধ্য দিয়ে প্রসিকিউশনপক্ষের সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হয়। এর পর দীর্ঘ ১৫ মাস ধরে চলা সাক্ষ্যগ্রহণ শেষ হয় চলতি বছরের ২৪ জুলাই। এ সময়ের মধ্যে তদন্তকারী কর্মকর্তাসহ প্রসিকিউশনপক্ষে সাক্ষ্য দেন ৪১ জন ও আসামিপক্ষে চারজন।

২৮ জুলাই থেকে যুক্তি উপস্থাপন শুরু হয়ে ১৪ আগস্ট তা শেষ হয়। যাদের মামলার রায় হয়েছে ॥ যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের জন্য ২০১০ সালের ২৫ মার্চ পুরাতন হাইকোর্ট ভবনে স্থাপন করা হয় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। মামলার সংখ্যা বাড়াতে এবং নিরপেক্ষ ও দ্রুত মামলার কাজ শেষ করার লক্ষ্যে ২০১২ সালের ২২ মার্চ আরেকটি ট্রাইব্যুনাল গঠন করা হয়। ২১ জানুয়ারি বাচ্চু রাজাকার হিসেবে পরিচিত আবুল কালাম আজাদকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদ-ের রায় প্রদান করা হয়। যদিও তিনি পলাতক রয়েছেন।

একই ট্রাইব্যুনাল ৫ ফেব্রুয়ারি জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল আব্দুল কাদের মোল্লাকে যাবজ্জীবন কারাদ- প্রদান করে। ৯ জুন জামায়াতের আরেক সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল কামারুজ্জামানকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃতুদ-ের রায় প্রদান করা হয়। পাশাপাশি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ গত ২৮ ফেব্রুয়ারি জামায়াতের নায়েবে আমির মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদ-ের রায় প্রদান করে। ১৫ জুলাই গোলাম আযমের রায়ে ৯০ বছরের কারাদন্ড প্রদান করা হয়। এর দুই দিন পর ১৭ জুলাই আলী আহসান মুজাহিদকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদ-ের রায় প্রদান করা হয়েছে।

সর্বশেষ আপীল বিভাগ ১৭ সেপ্টেম্বর কাদের মোল্লার রায় ঘোষণা করে। এ রায়ে কাদের মোল্লাকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদ- প্রদান করা হয়েছে। যে সমস্ত অভিযোগ প্রমাণিত মধ্যগহিরা গণহত্যা ॥ ১৩ এপ্রিল এ সমস্ত হত্যাকা- সংঘটিত হয়। সকাল আনুমানিক সাড়ে ৬টা থেকে ৭টার মধ্যে সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর নেতৃত্বে পাকিস্তানী হানাদার বাহিনীর একদল সদস্য গহিরা গ্রামে হিন্দু অধ্যুষিত পাড়ায় সশস্ত্র অভিযান চালায়। অভিযান চালিয়ে নিরীহ নিরস্ত্র হিন্দুদের ডাক্তার মাখল লাল শর্মার বাড়িতে জড়ো করা হয়।

সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর উপস্থিতিতে পাকিস্তানী দখলদার বাহিনীর সদস্যরা ব্রাশফায়ার করে তাদের হত্যা করে। নূতন চন্দ্র সিংহ হত্যা ॥ সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী পাকিস্তানী দখলদার সেনাবাহিনী নিয়ে ঘটনাস্থল গহিরা শ্রী কু-েশ্বরী ঔষধালয়ে আসেন। সেখানে তাঁর নির্দেশে নূতন চন্দ্র সিংহকে গুলি করে হত্যা করা হয়। পরে তিনি নিজে গুলি করে মৃত্যু নিশ্চিত করেন। জগতমল্লপাড়া গণহত্যা ॥ সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী স্থানীয় সহযোগীদেরসহ পাকিস্তানী দখলদার সেনাবাহিনীর সদস্যদের নিয়ে হিন্দু অধ্যুষিত জগতমল্লপাড়ায় সশস্ত্র অভিযান চালায়।

এখানে গুলিতে ৩২ নারী-পুরুষ মারা যান। সুলতানপুর বণিকপাড়া ॥ সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী কতিপয় অনুসারী নিয়ে চট্টগ্রাম জেলার রাউজানের সুলতানপুর গ্রামে হামলা চালায়। সশস্ত্র অভিযান চালিয়ে এলাকার নেপাল চন্দ্র ধর, মনিন্দ্র লাল ধর, উপেন্দ্র লাল ধর ও অনিল বরণ ধরকে একত্রিত করে গুলি করে হত্যা করে। ঊনসত্তরপাড়া গণহত্যা ॥ সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী হিন্দু জনগোষ্ঠীকে পরিকল্পিতভাবে হত্যার জন্য রাউজানের ঊনসত্তরপাড়ায় সশস্ত্র অভিযান চালায়। ওই পাড়ায় পাকিস্তানী সেনা ও তাদের দোসররা এলাকার হিন্দু নর-নারীদের স্থানীয় খিতিশ মহাজনের বাড়ির পেছনে পুকুরপাড়ে শান্তি মিটিংয়ের নামে একত্রিত করে।

সেখানে সাকা চৌধুরীর প্রত্যক্ষ উপস্থিতিতে পাকিস্তানী সেনারা নিরীহ নিরস্ত্র ও একত্রে বসানো হিন্দু নর-নারীদের ওপর ব্রাশফায়ার করে হত্যা করে। সতীশ চন্দ্র পালিত ॥ সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর নেতৃত্বে একদল পাকিস্তানী সেনাসদস্য রাউজান পৌরসভা এলাকায় সতীশ চন্দ্র পালিতের বাড়িতে প্রবেশ করে। সতীশ চন্দ্র পালিত ওই সময় ঘরের ভেতর থেকে রেরিয়ে এসে পাকিস্তানী সেনাদের সঙ্গে ইংরেজীতে কথাকাটাকাটির একপর্যায়ে সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী বলে, ‘তাকে মেরে ফেলতে হবে। ’ এ কথা বলার সঙ্গে সঙ্গে সৈন্যরা সতীশ চন্দ্র পালিতকে ঘরের ভেতর যেতে বলে। তিনি পেছন ফিরে ঘরের ভেতর প্রবেশ করার সময় পাকিস্তানী সৈন্যরা তাঁকে গুলি করে হত্যা করে।

শেখ মোজাফ্ফর আহম্মেদ হত্যা ॥ চট্টগ্রাম আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাতা শেখ মোজাফ্ফর আহম্মেদ ও তাঁর পুত্র শেখ আলমগীরসহ তাঁর পরিবারের সদস্যরা প্রাইভেটকারযোগে চট্টগ্রামের রাউজান থেকে চট্টগ্রাম শহরে আসার পথে হাটহাজারী থানাধীন খাগড়াছড়ি-রাঙ্গামাটি তিন রাস্তার মোড় থেকে অপহরণ করে তাদের হত্যা করা হয়। নিজামউদ্দিন অপহরণ ॥ সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী তাঁর আরও ২-৩ সহযোগীসহ পাকিস্তান সেনাসদস্যরা চট্টগ্রাম জেলার কোতোয়ালি থানার হাজারী লেনের জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরীর পোড়োবাড়ী থেকে মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক নিজামউদ্দিন আহম্মেদ এবং সিরাজ, ওয়াহেদ ওরফে ঝুনু পাগলাকে অপহরণ করা হয়। অপহরণ করে গুডস হিলে নিয়ে যাওয়া হয়। দেশ স্বাধীন হওয়ায় আগপর্যন্ত বন্দী ছিলেন। এখলাস মিয়া অপহরণ ॥ আসামি সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর পিতা ফজলুল কাদের চৌধুরীর ঘনিষ্ঠ সহচর মুসলিম লীগ নেতা শিকারপুর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মৃত শামসু মিয়া সহযোগী তিনজন রাজাকারসমেত চট্টগ্রাম জেলার চান্দগাঁও থানাধীন মোহারা গ্রামে আব্দুল মোতালেব চৌধুরীর বাড়িতে যায়।

সেখানে গিয়ে তারা মোঃ সালেহউদ্দিনকে অপহরণ করে। আসামি সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী এগিয়ে গিয়ে মোঃ সালেহ উদ্দিনের বাম গালে একটি চড় মারে। যাঁরা সাক্ষী ছিলেন ॥ ঘটনার সাক্ষীরা হচ্ছেন বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ ড. আনিসুজ্জামান, চট্টগ্রামের ব্যবসায়ী সলিমুল্লাহ, মুক্তিযোদ্ধা সিরাজুল ইসলাম সিরু বাঙালী, শহীদ নূতন চন্দ্র সিংহের ভাতিজা গৌরাঙ্গ সিংহ ও পুত্র প্রফুল্ল রঞ্জন সিংহ, শহীদ পরিবারের সন্তান মুক্তিযোদ্ধা এ্যাডভোকেট নির্মল চন্দ্র শর্মা, আব্বাস উদ্দিন আহম্মেদ (আব্বাস চেয়ারম্যান), শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শাবি) উপাচার্য মোঃ সালেহউদ্দিন, ব্যবসায়ী পরাগ ধর (ক্যামেরা ট্রায়াল), চট্টগ্রামের মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক সাবেক ছাত্রনেতা কাজী নূরুল আফসার, মুক্তিযোদ্ধাদের গ্রুপ কমান্ডার সৈয়দ মোহাম্মদ মাহবুবুল আলম, শহীদ পরিবারের সদস্য অরুণাংশু বিমল চৌধুরী ও তাঁর ভাতিজা আশীষ চৌধুরী, অধ্যক্ষ গোপাল চন্দ্র দাশ, সাংবাদিক নিজাম উদ্দীন আহমেদ, ফয়েজ আহমেদ সিদ্দিকী, একজন ক্ষতিগ্রস্ত নারী সাক্ষী (ক্যামেরা ট্রায়াল), শহীদ পরিবারের সদস্য দেবব্রত সরকার, মুক্তিযোদ্ধা সঙ্গীতশিল্পী সৈয়দ ওয়াহিদুল আলম জুনু, শহীদ পরিবারের সদস্য শেখ মোরশেদ আনোয়ার, মুক্তিযোদ্ধা আবুল বশর, শহীদ পরিবারের সদস্য অনিল বরণ ধর, মুক্তিযোদ্ধা বনগোপাল দাশ, শহীদ পরিবারের সদস্য বাবুল চক্রবর্তী বুলবুল, মুক্তিযোদ্ধা আবু তাহের চৌধুরী, মোঃ সোলায়মান, ডা. একেএম শফিউল্লাহ, শহীদ পুত্র পরিতোষ কুমার পালিত, শহীদ পরিবারের সদস্য সুবল চন্দ্র শর্মা, শহীদ পরিবারের সদস্য মোঃ নাজিম উদ্দিন, শহীদ পরিবারের সদস্য সুজিত মহাজন, শহীদের স্ত্রী বাসন্তী ঘোষ, মাহমুদ আলী, বিজয় কৃষ্ণ চৌধুরী, কামাল উদ্দিন এবং শহীদ পরিবারের সদস্য চপলা রানী। আর জব্দ তালিকার সাক্ষীরা হলেন, বাংলা একাডেমীর সহকারী গ্রন্থাগারিক এজাব উদ্দিন মিয়া, চট্টগ্রামের রাউজান থানার জিআরও এএসআই মোঃ এরশাদুল হক, সাবেক জিআরও এসআই মোল্লা আব্দুল হাই এবং চট্টগ্রামের বিভাগীয় গণগ্রন্থাগারের বুক শর্টার কাওসার শেখ। এ ছাড়া অন্য চার সাক্ষী মৃত জ্যোৎস্না পাল চৌধুরী, মৃত জানতি বালা চৌধুরী ও মৃত আবুল বশর এবং ভারতে থাকা বাদল বিশ্বাসের তদন্ত কর্মকর্তার কাছে দেয়া জবানবন্দীকেই সাক্ষ্য হিসেবে গ্রহণ করেছে ট্রাইব্যুনাল।

গত ১৭ জুন থেকে ২৮ জুলাই পর্যন্ত সাকা চৌধুরীর পক্ষে সাফাই সাক্ষীদের সাক্ষ্যগ্রহণ ও প্রসিকিউশনের জেরা সম্পন্ন হয়। সাফাই সাক্ষী ॥ সাকা চৌধুরী নিজেসহ মোট ৪ জন সাক্ষী সাফাই সাক্ষ্য দিয়েছেন। অন্য তিন সাফাই সাক্ষী হচ্ছেন তাঁর কলেজজীবনের বন্ধু নিজাম আহমেদ, এশিয়া প্যাসিফিক ইউনিভার্সিটির ট্রাস্টি বোর্ডের সদস্য কাইয়ুম রেজা চৌধুরী এবং সাবেক রাষ্ট্রদূত আব্দুল মোমেন চৌধুরী।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।