আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

সশস্ত্র ও সাম্যের জননী



শক্তি ব্যতীত কোন কাজ হয় না। দেবী-দুর্গা শক্তির প্রতীক। অসুরকে বা অশুভকে বিনাশ করতে হলেও শক্তির প্রয়োজন। তবে শক্তির সঙ্গে লক্ষ্মী সরস্বতী, কার্তিক গণেশ কেন? এইজন্য যে, লক্ষ্মী অর্থাৎ সিদ্ধি। শক্তি অর্থ বিদ্যা-ক্ষাত্রশক্তি ও সিদ্ধত্ব সহযোগে অসুরকে বিনাশ করে থাকে।

অর্থাৎ যত প্রকার সামর্থ্য থাকবে সব কিছু দিয়েই একমাত্র অশুভকে বিনাশ করতে হবে। দুর্গা নারীররূপিণী কেন? নারী যদি অশুভকে আশ্রয় দেয় তাহলে আর কেউ তাকে বধ করতে পারে না। তাই নারীরই কর্তব্য জীবন ও জগতকে সুস্থ ও স্ফূর্ত করে তুলতে অসুর ও অশুভকে নাশ করা। বিশ্বজোড়া অন্যায়, অশান্তি, দাবানল, হিংসা, সাম্প্রদায়িকতার যুগে জননীর সশস্ত্র হওয়ার বিকল্প কোথায়? বাংলাদেশের পরিপার্শ্ব বিবেচনা করলে সশস্ত্র হওয়াটা জননীদের জন্য নৈতিকও বটে। সমসাময়িক কালে দুর্গাকে আমরা আত্মরক্ষা ও বরাভয়ের জন্য নিতে পারলেই আমাদের লাভ।

চারদিকে এত উৎপাত, এত অনাচার আর অমঙ্গলের কালে তিনি শুধু শান্তির প্রতীক হয়ে থাকতে পারেন না। শক্তি, যশ ও জয়ের ত্রয়ী সমাহারে দুর্গাকে চাই। বাঙালি মাত্রই ভাবপ্রবণ ও স্নেহাতুর। নিজের গ্রহে মাতা, স্ত্রী, ভগিনি ও কন্যার মধ্যে বাঙালি স্নেহেরই এক পূর্ণ মূর্তি প্রত্যক্ষ করে। বাঙালি পিতামাতা আপন স্নেহের দুলালী কন্যাকে স্বামী গৃহে পাঠিয়ে দিয়ে নিত্য চোখের জলে তার স্মৃতি তর্পণ করে এবং বছরান্তে শরৎকালে একবার কয়েক দিনের জন্য কন্যাকে গৃহে এনে স্নেহ পিপাসার কিছুটা নিবৃত্ত করেন।

কন্যার আগমনে ও গমনে যে আনন্দ ও বেদনার সঞ্চার হয় তা দুর্গাপূজার ভেতর দিয়ে বাঙালি পিতামাতা অনুভব করেন। তাই দুর্গাপূজা বাঙালি হিন্দুর অন্তর উৎসারিত স্নেহ মূর্তির আরতিও বটে। দেশের আর প্রবাসী বাঙালির জন্য দেবী দুর্গার প্রতীক হোক ঐক্য ও ভালোবাসার। অহম, হিংসা, বড়-ছোট ভেদাভেদে নিজেদের হীন করার অপচেষ্টা বন্ধ হোক দেবীর শক্তিতে। অন্তরের লোভ-লালসা, রিপুর অসুর দমনে সকাতর প্রার্থনা জানাই, মা ও সন্তানের সম্পর্কে যে অমলিন চিরসুন্দর প্রেম তাতেই গড়ে উঠুক দুর্গাপূজার প্রবাসী বলয়।

শারদ উৎসবের মেজাজে জননীকেও যেন সবার করে তুলতে পারি। ধর্ম, বর্ণ, সম্প্রদায় ভেদে হিংসাহীন সম্প্রীতির প্রতীত দশভুজা যেন দশ জাতি, দশ সংস্কৃতি ও মানুষের মিলন কেন্দ্র হয়ে উঠতে পারে। এটাই প্রার্থনা এবারে। 'নীল আকাশে কে ভাসালে সাদা মেঘের ভেলায়' চড়ে কাশবনে শরৎ নেমে আসে। সবাইকে শারদীয় শুভেচ্ছা।

উৎসবের দিনগুলো কাটুক মহা আনন্দে। । *মহালয়া এবং পূজার ছবিগুলো বনানী মন্ডপ থেকে তোলা

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.