আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ইউরোপের গীর্জাতন্ত্র ও বর্তমান

রাজা-প্রজা সবাই থাকবে নির্বিশেষে, পাল্টে দেবে দুনিয়ার সব মিথ্যে-কানুন হেসে।

ইউরোপীয় চার্চ ও রোমের পোপেরা তৎকালীন মানুষের বিবেককে ক্রয় করে নিয়েছিল ফলে ধর্ম সম্পর্কে অনেক ভুল ধারণার জন্ম হয়। যাজক শ্রেণীর লোক উচ্চাভিলাষ চরিতার্থ করার জন্য ধর্মীয় মত বিশ্রীভাবে বিকৃত করত। ক্রমাগত বিপুল পরিমাণ অর্থ আদায়ের কারণে পোপকে অধস্তন যাজকগণ ঘৃণা করত আবার যাজকদের ঠিক একই কারণে ঘৃণা করত জনগন। যাজকদের টেবিলগুলো ছিল স্বর্ণখচিত।

তাদের চারপাশ ঘিরে থাকতো অর্ধউলঙ্গ বালিকা দল। গীর্জায় ও মঠে কুমারীদের অবস্থা ছিল অনেক খারাপ। আত্মার-উন্নতি সাধনের পথ ছেড়ে তারা দেহের চাহিদা মেটানোর দিকে ঝুঁকে যায়। পোপেরা মোটা টাকার বিনিময়ে পাপমোচন সার্টিফিকেট বিক্রি করতো। তারা একে "ইকিউম্যানিক্যাল কাউন্সিলের ইন্ডালজেন্স" বলতো।

এই কাউন্সিলের আবার ধর্ম পরিবর্তন এবং পরিবর্ধনের অধিকার ছিল। তারা এও বলে যে যদি কেউ এই সার্টিফিকেটকে নিরর্থক বলে প্রচার করে তাহলে তাকে ধর্মচ্যুত করা হবে। ক্রমে পোপ অধিকতর সম্পদশালী হয়ে রাজনৈতিক ক্ষেত্রে ভুমিকা রাখতে শুরু করেন। রাজনৈতিক ক্ষেত্রে বিচরণ পর্যায়ে পোপদের সাথে শুরু হয় রাষ্ট্রনায়কদের লড়াই। লড়াই যখন চলতো তখন পোপেরা জনগণের উপর অধিক কর আরোপ করে দিত।

করভারে জনগণ অসন্তোষ প্রকাশ শুরু করলো। এই অসন্তোষকে কাজে লাগালো রাষ্ট্রনায়কেরা। তারা গীর্জার শোষণের বিরুদ্ধে জনগণকে আরো খেপিয়ে তুলল। তারা যাজক এবং পোপদের গোপন পাপাচার ও অমিতাচারের কাহিনী জনসমক্ষে প্রচার করা শুরু করলো। পাদ্রীসুলভ পোশাকের আড়ালে যে লাম্পট্য আত্নগোপন করেছিল তা জনগণের সামনে নগ্ন হয়ে যায়।

পোপ আর যাজক শ্রেণীর এই সমস্ত অনৈতিক কার্যকলাপ জনগণের কাছে তুলে ধরার সবচেয়ে বড় অস্ত্র ছিল সাহিত্যের উপকরণ। নাটক, গান, কবিতা, গল্প ইত্যাদিতে ফুটে উঠত তৎকালীন গীর্জাতন্ত্রের সকল কার্যকলাপ। এইসব অস্ত্র ছিল চরম আঘাত। এর পরিণতিতে ভয়ানক নেতিবাচক আত্মপ্রকাশ করলো যার ফলে ইউরোপে ধর্ম এবং জীবনের মাঝে সম্পর্ক স্থাপনের সব সম্ভাবনা বিলীন হলো। ধর্মীয় মতবাদ এবং সমাজ ব্যবস্থা পৃথক হওয়া শুরু করলো।

এরকম আরো লাখখানেক উদাহরণ দেয়া যাবে গির্জাতন্ত্রের বরাতে। এইসমস্ত অন্যায় আর অধঃপতনের বিরুদ্ধে বিদ্রোহের নিশান উড়িয়ে মার্টিন লুথার, জন ক্যালভিন এবং উলরিখ উইংলী Protestantism-এর জন্ম দেন। শুরু হল যুদ্ধ। পোপের দোষে দুষ্ট হল ধর্ম। ইউরোপ যুদ্ধ করেছিল গীর্জাতন্ত্র কর্তৃক সৃষ্ট ভেজাল খ্রিস্টবাদের বিরুদ্ধে যার মূলনীতি ও মূল্যমান দূষিত হয়ে গিয়েছিল।

তাদের যুদ্ধ ছিল গীর্জার লোকদের শোষণ ও স্বেচ্ছাচারের বিরুদ্ধে। কিন্তু তাদের উদাহরণ অনুসরণ করে অন্যান্য স্থানেও ধর্মের বিরুদ্ধে লড়াই শুরু হয়ে গেল। এ ক্ষেত্রে বিভিন্ন ধর্মের পার্থক্য আর বেশিষ্ট্যগুলোকে বিবেচনা করে দেখা হল না। ইউরোপীয় সাহিত্য, শিক্ষা, শিল্প, রাজনীতি, অর্থনীতি, জীবনসত্তা তাই আজ ঢেকে আছে ধর্ম-বিরুদ্ধ সুর নিয়ে। আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থার রোল মডেল ইউরোপ কেন্দ্রিক আর আমরা সেই শিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে নিজ ধর্মকেও তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করতে দ্বিধাবোধ করছি না।

ধর্মের কথা উঠলেই উদাহরণে টেনে আনছি গির্জাতন্ত্রের সেই শোষণ আর বৈষম্যের কথা। আমরা ভিন্ন ধর্মালম্বীরা ইউরোপীয় সাহিত্য আর দর্শনের নিচে হাবুডুবু খেয়ে ধর্মকে মনে করছি সকল নষ্টের মূল। ধর্ম হচ্ছে আফিম! গড ইজ ডেড! ধর্ম কোন নৈতিকতার মাপকাঠি নয়! ধর্ম সব অশিক্ষিতের জন্য! আসল অধঃপতনের শুরু এখান থেকেই। (আল্লাহ নৌজ দ্যা বেস্ট) কাঁচামাল সরবরাহঃ ইংল্যান্ডের ইতিহাসঃ ডঃ ওয়াজেদ আলী, A Social History of England: Dr. A.N. Johri, English Literature: William J. Longর The Decline & Fall of Roman Empire: Edward Gibbon European Civilization: Edward Eyre

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।