আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

শিলালিপি ২য় কিস্তি



আমরা বাসা বদল করে পাশের একটা জরাজীর্ণ বাড়িতে ভাড়া উঠে গেলাম । এখানে জংলায় কলমি লতা, ডোবায় কচু অফুরন্ত । প্রকৃতি যাকে দান করে সেখানে অফুরন্ত পরিমানেই করে, আর যার দিকে ফিরে তাকায় না নিরপেক্ষ আচরন টুকুও সে পায়না মহান খেলোয়াড়ের কাছ থেকে । হয়তো এটাই প্রকৃতির নিয়ম । কিছুদিনের মধ্যেই বড় আপাও তাঁর পড়াশোনার পাঠ চুকিয়ে হাজির হল ডক্টরস হাউস নামক এই নরকে ।

বাবার মাসে মাসে ৮০০ টাকার দুশ্চিন্তা দুর হল । আমরা গোপন সূত্রে জানতে পারলাম ৫৬ বৎসর বয়সে হলেও এইবার আমার বাবা নামক নরকের কিটের প্রমোশন হবে, সহকারী অধ্যাপক হবেন । বেতন বেড়ে একলাফে দাঁড়াবে ৪৮০০ টাকায় । আমাদের বাসা টাকার খনি হয়ে যাবে । আমার মাদকাসক্তি খুব সামান্য পরিমানে বাড়তে থাকল ।

আমার মেঝো ভাই পড়াশোনা, প্রেম, রক্তে লেখা চিঠি, কাফনের কাপড় ছেড়ে মিউজিকে আসক্ত হয়ে পড়ল । প্রতি মাসেই কোন না কোন বাদ্য যন্ত্র কেনা হচ্ছে । বাবা তাঁর ছেলের মেধায় মুগ্ধ আর মা বিছানায় শুয়ে শুয়ে তাল দেয় । আহা কি আনন্দ কি আনন্দ । আমরা কচু ঘেচু ছেড়ে কলমি লতায় মন দিলাম ।

ভাজা শাক সাথে ভাজা মরিচ । এমন সু-খাদ্য বুহুদিন খাইনি । এক মাসের মধ্যেই জংলি শাক, কলমি সব সাবার । আত্মীয়দের কাফেলা ঘন ঘন আসতে শুরু করল । একটা কাঁঠাল কিংবা হাঁস নিয়ে পাঁচ সাত জনের দল গড়ে দশদিন করে বেড়ায় ।

আমরা সবাই লাইন দিয়ে ফ্লোরে ঘুমাই ঠিক কমলাপুর রেলওয়ে ষ্টেশনের মত । মাথার কাছে একটা কয়েল জ্বলে । আমার আবার ঘুমাতে দেরি হত । নিঃশব্দে কয়েলটা টেনে আমার মাথার পাশে নিয়ে আসতাম। পরদিন অবধারিত ভাবে মাথা ব্যাথায় ভুগতাম কয়েলের বিষাক্ত ধোঁয়ার কারনে ।

যারা বেড়াতে আসত সারা রাত কিভাবে যে এতো গ্যাস ছাড়ত বুঝতে পারতাম না । ফজরের আগেই একে একে সবাই বাথরুম নোংরা করে ফেলত । গন্ধে ধারে কাছে পর্যন্ত যাওয়া যায়না অথচ এদের কোন বিকার নেই । আমি মগে পানি নিয়ে উঠানে মুখ ধুতাম । শুধু বেড়ানোতেই এরা ক্ষান্ত থাকতো না ।

নানান ছিলি সব কজে ভাত খাবনা, আর আসব না মার্কা হুমকি দিত প্রায় প্রতিদিন । ঘরের সদস্যদের মধ্যে এ নিয়ে বিবাদ হত । মেঝো ভাই ইন্টার পাশ করে অনার্সে, সেজ ভাই বরিশাল মেডিক্যালে পড়তে চলে গেল । বাসার সবচে নিরিবিলি ঘরটা দখল করে একটা হারমোনিয়াম, তিনটা ছোট বড় কিবোর্ড, একটা ড্রামস সেট, দুইটা হাওয়াই গিটার, দুইটা ইলেকট্রিক গিটার, চারটা স্পিকার দিয়ে প্যানাসিয়া শিল্প গোষ্ঠীর জাঁকজমক উদ্বোধন করলেন মেঝো ভাই । ঘোষণা করে দিলেন ছয় মাসের মধ্যেই যদি টিভিতে শো করতে না পারেন তাহলে মিল্টন নামটা কেটে ফেলবেন ।

এ কথা শুনে আব্বা খুশিতে তিনটা লাফ দিলেন আর মা শুয়ে শুয়ে দোয়া দেন । প্রায়ই ভাবি উনি এসব কেনার এতো লাখ টাকা পায় কোথায় ? বড় ভাই সবে একটা হাসপাতালে ডিউটি শুরু করেছে, আপা বেকার এবং কোন বিয়ের সম্বন্ধ আসে না । বুড়ি হয়ে পেকে যাচ্ছে কিন্তু কোন খবর নাই । সেঝ ভাই মাসে ১৬০০ করে টাকা নেয় আর আমি সবে ভিক্টোরিয়ার ১ম বর্ষের উঠতি ক্যাডার । কোমরে সব সময় থাকে কারেন্টের তারে বানানো চাবুক হাঁতে সিগ্রেট ।

বাবার চাকরির মেয়াদ আছে আর মাত্র ছয় মাস । আমরা গোপনে বিভিন্ন রকম তন্ত্রে মন্ত্রে জড়িয়ে পড়লাম বোনটাকে বিয়ে দেবার জন্যে । আজ ডিম পড়া তো কাল পানি পড়া পরশু কোমর বন্ধনী ধারন – এই ভাবে কাটতে লাগল আমাদের এইসব দিনরাত্রি । ভবিষ্যৎ শিলালিপির দিন পঞ্জিকা ।


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।