আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

শিলালিপি -৭



( রিয়েল মনে হয় কষ্ট পেয়েছে । তাঁর প্রতি বিনীত ভাবে বলছি- এ নষ্ট শিলালিপির প্রতিটা পাতা প্রতিটা লাইন প্রতিটা শব্দ প্রতিটা ক্ষন, পল অনু পল নানান দুঃখ কষ্টে ভরা । সস্তা অনুভুতির জন্য কোন বর্ণ এখানে সংযজন আমি করিনি । তাঁরপরও সে চাইলে আমি তাঁর কাছে মাফ চেয়ে নেব । যাকে ভালোবাসি তাঁর পায়ে পড়া আমার মত এ অভাজনের জন্য সম্মানের ।

তাকে নিয়ে অসম্ভব সত্য ও অসাধারন কিছু কীর্তির কথাও আমি উল্লেখ করেছিলাম । সে নিশ্চয়ই সেসব দেখেছে) । এডমিশন টেস্ট এর সময় চলে আসলো দেখতে দেখতে । যথেষ্ট পড়াশোনা নাই তহবিলে এ সত্য আমি হাড়ে হাড়ে টের পেলাম কোচিং করতে গিয়ে । ইয়াসমিন একদিন ডেকে নিয়ে বলল- তোমার তো মনে হয় কিছু হবেনা নাকি হবে ? আমি বললাম- হবে না মনে লয় ।

‘ তাইলে তুঁমি তোমার পথ দেখ । খেইল খতম’ - এই নারী আমাকে ঝুলাইয়া রাইখা আমার তিন বন্ধুর লগে প্রেম করছে একে একে । আমি গাধা আশায় আশায় বুক বাইন্ধা বইসা থাকছি । নারী আমারে বুলি শোনায় ফিউচার নাই তো আমি নাই । আমি কোন মতে কষ্ট করে বললাম, যা আমার চউখের সামনে থিক্কা বিদায় ল ।

হারামি মাগি, তোর মা মাগি তোর চৌদ্দ গোষ্ঠী মাগি হারামির জাত । শেষ, সব শেষ হয়ে গেল । আমি নিরবে ফিজিক্সে অনার্স করতে লেগে গেলাম । কিন্তু মন বিদ্রোহ করে বসল । তিন মাসে একদিনও ক্লাসে গেলাম না ।

১৯৯৭ সাল শেষ হয়ে ৯৮ এর এপ্রিল মাস । বড় আপা বিরাট লাট বহর নিয়ে হাজির কুরবানি ঈদ করার জন্য । এই প্রথম জীবনে একটা ভালো উপলব্ধি আসলো । সিদ্ধান্ত নিলাম এটাই করব । আপা ঈদ শেষে ফেরার পর তাঁর সাথে সিলেট চলে যাব ।

একমাস সেখানে থেকে পড়ব । পরের বার যেন খুব ভালো ভাবে এডমিশন টেস্ট গুলো অন্তত দিতে পারি । তখনও এ বছরের সব টেস্ট শেষ হয়ে যায়নি । শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়য়ের পরীক্ষা সামনের মে মাসের ২১ তারিখে । এপ্রিলের ২৭ তারিখে পাহাড়িকা এক্সপ্রেস ট্রেনে উঠে বসলাম ।

আপার সাথে নতুন বাচ্চা, কাজের লোক দুইজন। বৃদ্ধা শাশুড়ি, দুলাভাই এবং আমি । চারটা সিটে সবার ব্যক্তিগত ব্যগ হাঁতে হাঁতে নিয়ে কোন রকম গাঞ্জাগুঞ্জি করে বসলাম । আমাদের সাথে আরও আছে বড় বড় তিনটা সুটকেস ( সব গুলোতে সম্ভবত পাথরে ঠাঁসা ), চারটা কাচা মাংসের ব্যগ আর দুইটা প্লাস্টিকের বড় বড় ঝুড়ি ( ঝুড়ি ঠাঁসা দুধের টিন, বাটি, চামচ, প্লাস্টিকের ফ্লাস্ক, বাচ্চার কাপড় চোপড় সহ হাজার রকমের হাবিজাবি )। ট্রেন থেকে নেমে দুলাভাই তাঁর বউ বাচ্চা আর মাকে নিয়ে সামনে হাঁটতে শুরু করল ।

দুই কাজের মেয়ে দুইটা ব্যগ নিয়ে সামনে বাড়ল । হায়রে কপাল । টন কে টন বস্তা নিয়ে নিরবে দাঁড়িয়ে রইলাম । কিছুক্ষন পর দুলাভাই হন্তদন্ত হয়ে ফিরেই চিৎকার শুরু করলেন আমি কোন খানের কান বাল এই ঢঙ্গে । পাঁচটা ব্যাগ কাধে পিঠে নিয়ে টলতে টলতে টেক্সি পর্যন্ত গেলাম ।

দিন দুয়েকের মধ্যেই জেনে গেলাম অথর্ব শালা তাঁর বোনের বাড়িতে থাকতে গেলে তাকে কেমন জীবন যাপন করতে হয় । সব মেনে নিলাম । সকালে আপা দুলাভাই কলেজে চলে যায় । আমি গরম দুধ বোতলে ভরে ভাগিনার সামনে বসে থাকি । সে দশটায় ঘুম থেকে উঠে একটা পর্যন্ত তাড় স্বরে চিৎকার করে কাদতে থাকে ।

এক ফোটা দুধ বা অন্য কিছু সে মুখে নেয় না । আমি তাঁর সামনে নাচি গাই কাঁদি হাসি সবি করি । চিতকারের পরিধি বাড়তে থাকে । কাজের মেয়েটা কোন সময় এসে একটু ছুয়েও দেখেনা , মজা লয় । আপা একটার দিকে ফিরে প্রথম যে প্রশ্নটা করে টা হল- তুই এতক্ষন আমার ছেলেরে কি করছস ? সে এতো কান্দে কা ? ওর পিঠে ঠোঁটে এতো লাল লাল দাগ কিসের ? দেখি তোর হাঁত দেখা নখ দেখা ।

আমি দেখাই আর মনে মনে ক্ষয় হই । এই বোন আমাকে সারা জীবন কোলে কোলে রেখেছে । আর এখন সে কিভাবে কথা বলে কিভাবে তাকায় । হায়রে জীবন । আমার ভয় করতে শুরু করল তাঁদের বাসায় চুরি হবে আর তখন আমাকে দোষারোপ করবেনা ।

ঘাড় ধরে বের করে দিবে । দুপুরে ভাত খেয়েই পড়তে বসি । বিকেলের আগেই দুলাভাই ডাকতে শুরু করে তাড়াতাড়ি তাঁর সাথে বটেশ্বর বাজারে যাবার জন্য । প্রতিদিনই একটা মিষ্টি কুমড়া কিনে বাসায় নিয়ে আসি পরদিন সকালে রুটির সাথে ভাজি হিসাবে, দুপুরে তরকারি এবং রাতে ডাল কুমড়োর তরকারি খাবার জন্যে । মিষ্টি কুমড়া মিষ্টি কুমড়া মিষ্টি কুমড়া ।

এভাবেই টানা তেইশ দিন কোন রকমে পার করলাম । কুমিল্লা থেকে সব বন্ধুরা সিলেটে এলো শাবিপ্রবি টে পরীক্ষার জন্য । অনেক দিন পর এদের দেখা পেয়ে পাগল হয়ে যাবার জোগাড় । দৌড়ে বাসায় এসেই বইপত্র গোছাতে শুরু করলাম । ‘আপা কাল সকাল সাতটায় কুমিল্লা চলে যাব আর আজ রাতে হোটেলে থাকব সবাই এক সাথে ।

‘ আর কোন কিছু না বলেই বইপত্র নিয়ে ভোঁ দৌড় । প্রচণ্ড হই হুল্লোড় করে রাত কাটালাম । সকাল ছয়টায় হোটেল থেকে বের হলাম ট্রেনের উদ্দেশ্যে । নাচতে নাচতে এসে দেখি গেটে দুলাভাই হাসি মুখে দাঁড়িয়ে আছে । আমার মন খারাপ হয়ে গেল ।

শুধু শুধু লোকটার উপর আমি রেগে আছি । তাঁর সাথে আমার নিম্নলিখিত কথাবার্তা হল । দুলাভাইঃ আজকে মজার একটা ঘটনা ধরা পড়ল । আমিঃ সবই মজার ঘটনা । আপনে কি ধরলেন সেইটা আগে বলেন ।

দুলাভাইঃ কাজের মেয়েটা এতদিন নানান খারাপ কাজ যা করতেছে সেইটা আমি আর তোমার আপা ঠিকই আন্দাজ করছিলাম । কিন্তু কালপ্রিট ধরতে পারি নাই এতদিন... আমিঃ এখন কি ধরা পড়ল ? দুলাভাইঃ মোটামুটি নিশ্চিত হয়েছি । আমিঃ বাহ ভালো তো । সে করছে টা কি? দুলাভাইঃ সে তোমার আপার বেশ কিছু কাপড় চোপড় আর টাকা চুরি করে আজ ভোর আনুমানিক ৫ টায় পালিয়েছে । আমিঃ কি সর্বনাশ ।

পুলিশে খবর দেন । দুলাভাই, ট্রেন ছেড়ে দিয়েছে আমি উঠলাম । পরে বাকি কথা বলব । বাই দুলাভাইঃ বাই । ইয়ে জাকু, সে কি তোমার সাথে যাচ্ছে? এই ক্ষতিটা না করলে হত না? ট্রেন হেলে দুলে প্লাটফরম ছেড়ে বাইরে এসে পড়েছে ।

আমি জানি এখন একটা দীর্ঘ বাক নিয়ে সে সিলেট শহরকে বিদায় জানাবে । সোজা সামনের দিকে আমি তাকিয়ে আছি । ওইতো অজগর সাপের মত ধিরে সুস্থে বাক নিচ্ছে । মনে মনে বলছি বিদায় । বিদায় হে পবিত্র শহর ।

৩রা নভেম্বর ২০১৩ ইং রাত ৩ টা ৩৫ মি ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।