আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

একটুকু ভূতের ভয়...

. আমাদের বাড়ির সামনে বিশাল মোল্লাপুকুর। প্রাচীনকালে এই পুকুরে বিয়ের সময় গৃহস্থের প্রয়োজনে থালা-বাসন-পাতিল-ভেসে উঠত। কোন এক গৃহস্থের বউ একবার একটি বাসন ফেরত না দেয়ায় তার পর থেকে সেই সুবিধা বন্ধ আছে। পুকুরের মাঝখানে বিশাল এলাকা জুড়ে পানির বুদবুদও উঠত এক সময়। গ্রামের লোকেরা জানত পুকুরে গুপ্তধনের অনেকগুলো মটকি ছিল।

সেগুলো থেকেই উঠত বুদবুদ। কোন এক রাতে সবগুলো মটকি একসাথে পুকুর ছেড়ে চলে যায়। যে কারণে পুকুরের দক্ষিণ দিকে একটা নালা তৈরি হয়। নালাটা আজও আছে। এই গা ছমছম করা পুকুরের চারপাশ ঢাকা ছিল নানা ধরনের গাছে।

উত্তর কোণে ছিল বিশাল এক বাঁশঝাড় আর একটি তুলা গাছ। তালগাছ তো ছিলই। গ্রামের লোকেরা জানে ভূত থাকার সবচেয়ে আদর্শ গাছ হল তুলা গাছ আর তাল গাছ-বাঁশঝাড়ে থাকে পেত্নী। শৈশব পেরিয়েছি এই পুকুর সম্পর্কে নানা ধরনের কিংবদন্তী শুনে শুনে। পুকুরে দিনের বেলায় গোসল করা ছিল ডালভাত।

মাছও ধরেছি। কিন্তু রাত হলেই পুকুরের চেহারা বদলে যেত। হয়ে যেত রহস্যপুরীর কোন পুকুর। আমাদের হাট ছিল শশীগঞ্জ বাজার। শুক্র আর মঙ্গল বার হাট।

রাতে হাট থেকে ফেরার সময় এই পুকুরের পাশ দিয়েই বাড়ি ঢুকতে হত। সাধারণত একা ফেরা হত না। শুধু ভূতের ভয়ে এক সাথে কয়েকজন হলে গ্রামের পথ ধরতাম। হাতে থাকত তিন ব্যাটারির টর্চ লাইট। গ্রামে ঢুকে সবাই যার যার মত আলাদা হয়ে বাড়ি যেত।

বাড়ি ঢুকতে গিয়ে প্রায়ই এই পুকুরটা একা পার হতে হত। সারা পথ চুপচাপ এলেও এখানে এসে আমার গলা চিরে বেরিয়ে এত গান। হেড়ে গলার চিৎকারে কখনো কখনো বাড়ির কুকুরগুলো ডেকে উঠত। আমার সাহস বেড়ে যেত। কখনো সব চুপ থাকত।

নিঝুম প্রান্তরে একা বাজত আমার কণ্ঠনিসৃত গান। রাতের নিরবতার মত আমার ভয়কেও খানখান করার আপ্রাণ চেষ্টা চালাতে চালাতে বাড়ি ঢুকতাম। অনেকে সেই গান শুনত। আর মুখ টিপে হাসত। দিনের বেলায় কেউ কেউ খোঁচা দিয়ে বলত, তোদের বাড়ি মনে হয় নতুন বয়াতি এসেছে।

কাল গান শুনলাম। আমি গা মাখাতাম না। দিনের বেলার সব পালোয়ানই যে রাতের বেলা ওই পুকুর পাড়ে বিড়াল হয়ে যেত সেটা সবার জানা ছিল। দীর্ঘ পনের বছর পর বাড়ি গিয়ে সেই পুকুরে গোসল করেছিলাম। পুকুরটা আগের আকারে থাকলেও আমার চোখে আগের মত বড় লাগেনি।

রাতের বেলা পুকুর পাড় ধরে একা একা হেঁটে নানা বাড়ি গিয়েছিলাম -এতটুকু ভূতের ভয় চেপে ধরেনি। পুকুরের উত্তর কোণে বাঁশঝাড় আর তুলা গাছটি এখনো আছে। আমি বাঁশ ঝাড় আর তুলা গাছের দিকে তাকিয়ে দীর্ঘশ্বাস ফেলেছি। কত সহজে মানুষের শৈশব-কৈশোরের উপলব্ধি তাকে ছেড়ে চলে যায়! ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে ১৩ বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.