সোমবার দিন শেষে রিজার্ভের পরিমাণ ছিল ১৬ দশমিক ৯৪ বিলিয়ন ডলার। অতীতের সব রেকর্ড ছাড়িয়ে মঙ্গলবার দিনের শুরুতেই তা ১৭ বিলিয়ন ডলারের ঘর অতিক্রম করে বলে বাংলাদেশ ব্যাংকের ফরেক্স রিজার্ভ অ্যান্ড ট্রেজারি ম্যানেজমেন্ট বিভাগের মহাব্যবস্থাপক কাজী ছাইদুর রহমান জানান।
তিনি জানান, এই রিজার্ভ দিয়ে ছয় মাসের আমদানি ব্যয় মেটানো সম্ভব।
ছাইদুর রহমান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “প্রবাসীদের পাঠানো রেমিটেন্সের উপর ভর করেই রিজার্ভ এই উচ্চতায় পৌঁছেছে। এছাড়া রপ্তানি আয় বৃদ্ধি রিজার্ভ বাড়ার পেছনে অবদান রেখেছে।
”
ছাইদুর বলেন, “চলতি অক্টোবর মাসের ১৮ দিনে (১ অক্টোবর থেকে ১৮ অক্টোবর পর্যন্ত) ৮০ কোটি ডলার রেমিটেন্স দেশে এসেছে। কোরবানির ঈদের আগে পরিবার-পরিজনের কাছে বেশি টাকা পাঠানোয় রেমিটেন্স বেড়েছে। ”
নভেম্বর মাসের প্রথম সপ্তাহে এশিয়ান ক্লিয়ারিং ইউনিয়নের (আকু) সেপ্টেম্বর-অক্টোবর মেয়াদের আমদানি বিল পরিশোধ করতে হবে।
এর আগ পর্যন্ত রিজার্ভ ১৭ বিলিয়ন ডলারের উপরেই অবস্থান করবে বলে জানিয়েছেন ছাইদুর রহমান।
“আমদানি ব্যয় বাড়লেও রেমিটেন্স ও রপ্তানি আয়ের ইতিবাচক ধারার কারণে রিজার্ভ বাড়ছে,” বলেন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এই কর্মকর্তা।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের রিজার্ভ সংক্রান্ত তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের শেষ সময়ে (২০০১ সালের সেপ্টেম্বরে) রিজার্ভ কমে এক পর্যায়ে প্রায় ১ বিলিয়ন ডলারে নেমে এসেছিল। সে সময় আকুর দুই মাসের পুরো বিল পরিশোধ করলে রিজার্ভ ১ বিলিয়ন ডলারের নীচে নেমে আসবে বলে আকুর বিল অর্ধেক শোধ করা হয়েছিল।
বাংলাদেশের ইতিহাসের সেবারই প্রথম আকুর বিল পুরোটা পরিশোধ না করে অর্ধেক করা হয়েছিল।
বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) গবেষণা পরিচালক জায়েদ বখত বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “দেশের অর্থনীতির জন্য এটা খুবই ভালো খবর যে, সরকার বিশাল অংকের রিজার্ভ রেখে ক্ষমতা ছাড়তে যাচ্ছে। পরে যে সরকারই দায়িত্ব নিক না কেনো তাদের জন্য স্বস্তিদায়ক হবে।
”
গত অর্থবছরে রেমিটেন্স প্রবাহে ১২ দশমিক ৬ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হলেও চলতি অর্থবছরের শুরুতে নিম্মমুখি ধারা লক্ষ্য করা যায়।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৩-১৪ অর্থবছরের প্রথম তিন মাসে গত বছরের একই সময়ের চেয়ে রেমিটেন্স ৮ দশমিক ১ শতাংশ কমেছে।
অক্টোবর মাসে আগের তিন মাসের চেয়ে রেমিটেন্স বাড়বে বলে জানিয়েছেন ছাইদুর রহমান।
এই ধারা অর্থবছরের বাকি নয় মাসেও অব্যাহত থাকবে বলেও আশা প্রকাশ করেছেন তিনি।
জায়েদ বখত বলেন, এবার হয়তো সাড়ে ১২ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হবে না।
তবে গত অর্থবছরের চেয়ে বেশি রেমিটেন্স দেশে আসবে।
“দুই ঈদের মাঝখানে হওয়ায় সেপ্টেম্বরে রেমিটেন্স কম এসেছে। প্রতি বছরই এমন হয়। বাকি মাসগুলোতে রেমিটেন্স বাড়বে আশা করা যায়,” বলেন তিনি।
২০১৩-১৪ অর্থবছরের জুলাই-সেপ্টেম্বর সময়ে ৩২৭ কোটি ৩ লাখ ডলারের রেমিটেন্স দেশে এসেছে।
২০১২-১৩ অর্থবছরের জুলাই-সেপ্টেম্বর সময়ে এসেছিল ৩৫৫ কোটি ৮৬ লাখ ডলার।
অন্যদিকে ২০১৩-১৪ অর্থবছরের জুলাই-সেপ্টেম্বর সময়ে রপ্তানি আয় বেড়েছে ২১ দশমিক ২৪ শতাংশ।
গত ১৩ অগাস্ট দেশের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বিদেশি মুদ্রার সঞ্চিতি ১৬ বিলিয়ন ডলার অতিক্রম করে।
এরপর আকুর দেনা পরিশোধের পর তা আবার ১৬ বিলিয়ন ডলারের নিচে নেমে আসে।
২২ সেপ্টেম্বর তা ফের ১৬ বিলিয়ন ডলার অতিক্রম করে।
আন্তর্জাতিক মানদন্ড অনুযায়ী, একটি দেশে তিন মাসের আমদানি ব্যয় মেটানোর বিদেশি মুদ্রা মজুদ থাকতে হয়।
বাংলাদেশ ব্যাংকের বিবৃতি
এদিকে মঙ্গলবার কেন্দ্রীয় ব্যাংক এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে, রিজার্ভ বৃদ্ধিতে যে সব কারণ অবদান রেখেছে তারমধ্যে উল্লেখযোগ্য রেমিট্যান্স প্রবাহের প্রবৃদ্ধি। আর এই প্রবৃদ্ধি বাংলাদেশ ব্যাংকের নেয়া কার্যক্রমের ফসল।
এতে বলা হয়, ব্যাংকিং পথে রেমিট্যান্স পাঠানোকে উৎসাহিত করার জন্য বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোকে বিদেশে এক্সচেঞ্জ হাউজ প্রতিষ্ঠা ও ড্রয়িং এরেঞ্জমেন্ট এর অনুমোদন দেয়া হয়েছে। মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ কার্যক্রম বেগবান করা হয়েছে এবং এ বিষয়ে সচেতনতামূলক কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়েছে।
বৈদেশিক মুদ্রা-টাকার বিনিময় হার স্থিতিশীল থাকার ফলেও রপ্তানিখাত ও প্রবাসী আয় প্রেরণ উৎসাহিত হয়েছে। বেসরকারি খাতে বৈদেশিক মুদ্রায় ঋণ গ্রহণ অনুমোদন করায় বৈদেশিক মুদ্রার আন্তঃপ্রবাহ বেড়েছে।
খাদ্য উৎপাদন বিশেষত চালের উৎপাদন বৃদ্ধি পাওয়ায় বর্তমানে চাল আমদানি করতে হচ্ছে না। এছাড়া জ্বালানি তেলসহ আমদানিযোগ্য অন্যান্য পণ্যের দাম আন্তর্জাতিক পর্যায়ে হ্রাস পাওয়ায় এবং বিলাস দ্রব্যের আমদানি নিরুৎসাহিত হওয়ায় সার্বিক আমদানি ব্যয় হ্রাস পেয়েছে। জ্বালানি তেল আমদানি বাবদ আইডিবির ঋণ সহায়তার ফলেও আমদানি ব্যয়ের চাপ বর্তমানে হ্রাস পেয়েছে বলে বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়েছে।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।