আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

কবিতাঃ এক কাপ চায়ের ময়নাতদন্ত

হাসন রাজায় কয়, আমি কিছু নয় রে আমি কিছু নয় !
চায়ের সুগন্ধে যখন আবার মাতাল হয় অলফ্যাক্টরী স্নায়ু তখন টং-এর দোকানে বন্ধু কজন মিলে আঙুল নাচাই ‘চা দরকার ! চা দরকার ! এক্ষুনি তিন কাপ চা চাই !’ নিকোটিনের বিষে ভিজে আমাদের ক্ষয়িষ্ণু আয়ু যখন অপেক্ষারত, কাপভর্তি ধোঁয়া ওঠা চা হাজির হয় হাহা-হাহা করে হাসে নিঃশব্দে আঙুলের পোখরাজ-মণি সিগারেটে বিঁধে থাকে তিনজনের তিনটে তর্জনী- তখনও – আমাদের ‘মহান সিগারেট’ অজর-অমর-অক্ষয় ! দারুচিনি-মাখা জলে আমাদের ভ্রান্ত মাথা চাঙ্গা হয়ে ওঠে মস্তিষ্কের চতুষ্কোণে একটু-আধটু মৌরীর গন্ধ উড়ে ফেরে বসে থেকে পরিচিত রূপবতী কীর্তনখোলাটির তীরভরা ভীড়ে এই ধোঁয়া, এই জল, চা-পাতারা রক্তে মিশে চাঁদ হয়ে ফোটে কর্পাস ক্যালোসামের গাঢ় জমাট অন্ধকার নক্ষত্রবিহীন আকাশে তারা কথা কয়- হাজার রাত্রির বেঙ্গমীদের গুহ্য তথ্য, তারা কাঁদে-হাসে সবচেয়ে বড় কথা, তারাই অসাধারন ছন্দ তোলে আমার ছন্দহীন ঠোঁটে ! আজ তাই নিকোটিনের চাইতেও দারুন ক্ষমতাবান তাকে কাঠগড়ায় চাই ! এই এক কাপ চায়ের ময়নাতদন্ত করা হোক ! এই ভরা মজলিশে শ্রমিক থেকে প্রেমিক, চালক থেকে বালক চাকর থেকে চা-খোর, সত্যবাদী থেকে মিথ্যেবাদী সবাই-সব্বার সম্মুখে আজ ব্যবচ্ছেদ করা হবে একটি দুটি এলাচ খোসা অথবা চিনির দানায় প্রানজাগানিয়া শক্তিটির উৎস কি কাপভরা প্রানহীন চা’য় ? -সকাল-সন্ধ্যে চায়ের নেশাগ্রস্থ একজন সাধারন মানুষের চোখে । এটি কোন ডায়াবেটিক চা নয়, ব্লু বেরি কিংবা জেসমিন টি ? উঁহু ! গ্রীন টি নয়, মিন্ট টি নয়, চায়না অথবা আইস-টিও নয় এটি সিলেটের চা-বাগানের কোন চা-পাতা আর দুধের অন্বয় বাগানে যে পাতা তুলতে দারিদ্রের উর্ণায় বন্দী বাধ্য কুলীটি একদিন হঠাৎ করে নিজের শরীরে আবিষ্কার করে ভয়ংকর কুষ্ঠের বিষ, দুধ মিশিয়ে জ্বাল দেয়া সেই অতি সাধারন পাতা ‘ক্যামেলিয়া সাইনেসিস’- যা এদেশের লক্ষ লক্ষ মানুষ পান করে চলেছে ভিজিয়ে বিস্কুট অথবা রুটি ! তাদের জানবার ইচ্ছে নেই ভারতবর্ষের দীর্ঘতম ‘গৃহযুদ্ধ’টি কেন হয়েছিল ? তারা জানতে চায় না মহান আমেরিকার স্বাধীনতার ইতিহাস তারা পড়ে নি, চা-পান ছিল ব্রিটিশ রাজের প্রতি শ্রদ্ধার প্রকাশ তাদের পড়বার ইচ্ছে নেই ‘আফিম যুদ্ধ’ও; সেটি কোথায় অথবা কেন হয়েছিল ? লুঙ্গি অথবা ধুতি পরা নিয়ে টঙের ঘরে বিস্তর তর্ক জুড়লেও তারা জানতে চায় না এই ‘চা-পান’ তাদের নিজস্ব ঐতিহ্য কিনা, ‘চা’ শব্দটি পুরোপুরি দেশী কিনা ! তারা চা পান করে মনের আনন্দে, এইসব নিয়ে ভাবতে তাদের বয়েই গেল ! আমরা এই খোলামেলা উদ্ভট মর্গে দাঁড়িয়ে তাদের তাচ্ছিল্য করছি না বরং প্রশংসা করবো । চায়নার ইলেকট্রনিক সামগ্রী হাতে নিয়ে আরবদের উদ্ভাবিত তাস খেলে, টার্কিশ কাবাব অথবা ইটালিয়ান পিৎজা খেয়ে গ্রীক গনতন্ত্রের চর্চা করা গেলে ‘চা’ শব্দে আমাদের কিসের মানা ? ‘চা’ তাই আমাদের ! এই বাংলার লক্ষ-কোটি আমজনতার মহেন্দ্রমরম বৃষ্টি-ঝড়ের প্রত্যেক ঠান্ডা বাতাসে; থাকুক লোডশেডিং কি গা-ঘামা গরম রাত দুপুরে চায়ের দোকানের ঝাঁপ খুলতে আমরা খুঁজবো না বাহানা ! চায়ের সুগন্ধে যখন আবার মাতাল হবে অলফ্যাক্টরী স্নায়ু তখন টং-এর দোকানে বন্ধু কজন মিলে আঙুল নাচাবো ‘চা দরকার ! চা দরকার ! এক্ষুনি কাপে-কাপে চা খাবো !’ নিকোটিনের বিষে ভিজে যাক- ক্ষয়ে যাক আমাদের ক্ষয়িষ্ণু আয়ু ! এই চায়ের পোস্ট-মর্টেম রিপোর্টে মিথ্যে হলেও তবু লিখে দেবো এই আখ্যানঃ ‘চায়ের ধোঁয়া’য় শুধু অমৃত- চিরযৌবনের অনাবিষ্কৃত সমাধান ! চায়ের ধোঁয়ায়-ধোঁয়ায় ভরে যাক শহরের ধূলিমাখা উদ্বাস্তু বায়ু !! -------------------
 

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।