আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

শুধুই মা......

জীবনকে ভালোবাসি, তার চেয়েও বেশী ভালোবাসি মেয়েকে।

যখন রাত্রি নিঝুম নেই চোখে ঘুম, একলা শূন্য ঘরে, তোমায় মনে পড়ে মাগো তোমায় মনে পড়ে .................. জানি অনেকেই গানটি শুনেছেন আর অনেকের হয়তো অনেক প্রিয় গান ও এটি। আমার অনেক ভালো লাগে গানটি। তবে গানের কথার মতো শুধু নিঝুম রাতেইনা মাকে যে কত সময় কতভাবে মনে পড়ে আমার, অনেকেরই হয়তো আমার মতো এমন অনুভূতি হয়। বিয়ের পর থেকে যেন মাকে মিস করার পরিমাণ দিন দিন বাড়তে থাকে।

নতুন সংসারে প্রতি পদে পদে মেয়েরা মায়ের অভাব অনুভব করে, বিশেষ করে তখন যখন সেই ঘরের পরিবেশ তার অনুকূলে না থাকে। আমি অবশ্য খুব বেশী প্রতিকূল অবস্থায় ছিলাম্না, তবু শাশুড়িকে খুব ভয় পেতাম বলে একটু দূরে দুরেই থাকতাম। ছুটির দিনগুলোতে বাসায় থাকলে টুকিটাকি রান্নার চেষ্টা করি। একটু স্পেশাল আইটেম ট্রাই করি। কিন্তু আগে রান্নার অভিজ্ঞতা না থাকাতে সেই রান্নার আগে থেকে শুরু হয় আম্মুর কাছে ফোনে কোচিং ক্লাস নেয়া।

আর রান্নার মাঝখানে তো আরও বেশ কয়েকবার এটা সেটা জিজ্ঞেস করে জ্বালাতামই আম্মুকে। আম্মু কখনো বিরক্ত হয়না । এটা একটা অবাক করার মতো বিষয় যে আমার আম্মু খুব একটা বিরক্ত হয়না। এতো ধৈর্য নিয়ে থাকতে পারে এমন মানুষ খুব কম দেখেছি আমি জীবনে। এটা ছোটবেলা থেকে দেখছি।

আমরা ছোটবেলায় অনেক দুষ্ট ছিলাম, বিশেষ করে আমার ভাইয়া। আম্মু এজন্য কখনো আমাদের মেরেছেন বলে মনে পড়েনা। আব্বু বাধ্য হয়ে কঠোর রূপ ধারণ করেছিলেন তখন। রান্না করতে গেলে আম্মুর কাছে বারবার ফোন করে জেনে নেই এই রান্নাটা আম্মু কিভাবে করতো। তখন যতই আম্মুর রেসিপি ফলো করে রান্না করিনা কেন, আম্মুর হাতের রান্নার মতো যেন স্বাদ পাইনা।

মায়ের হাতের রান্না করা খাবারের জাদুই যেন অন্যরকম। আম্মুকে এখনো বাসায় থাকলেও মিস করি। মনে হয় যদি এখন আম্মুর কাছে থাকতাম বা আম্মু যদি আমার কাছে থাকতো। পড়াশুনা শেষ করে যখন চাকরির অপেক্ষায় বাসায় অলস সময় কাটাচ্ছিলাম, সেই দিনগুলো যে কি আরামে কাটিয়েছি। সকাল ৯টা/ ১০টায় ঘুম থেকে উঠতাম, উঠেই মজার মজার নাস্তা রেডিমেড পেতাম।

কখনো আম্মু ডাকতোনা কোন সাহায্যের জন্য। আমিও স্বার্থপরের মতো নিজে আরাম করে ঘুমিয়ে তারপর উঠতাম। আর এখন কখনো নিজে নাস্তা বানাতে গেলে বুঝি এই সময়টায় একটু সাহায্য কতটা উপকারী। অসুস্থ হলে আরও বেশী গায়ে লাগে আম্মুর পাশে না থাকাটা। ছোটবেলা থেকে আমাদের দুবোনের একটা বদভ্যাস ছিল আমরা অসুস্থ হলেই আম্মুকে জোর করে পাশে বসিয়ে রাখতাম।

অন্য কোন কাজে যেতে দিতামনা। কেমন অদ্ভুত মানসিকতা কাজ করতো তখন, মনে হতো আম্মু পাশে বসে থাকলেই বুঝি যন্ত্রণাটা অনেক কমে যেতো। মায়ের ক্ষমতা বুঝি এমনই । সব ডাক্তারি বিদ্যার উর্ধে মায়ের ভালোবাসা বা একটুখানি স্পর্শ। বিয়ের আগে দেখা যেতো হয়তো ছোটখাটো কারনে আম্মুর উপরে রেগে যেতাম বা রাগারাগি করতাম।

বিয়ের পর থেকে যখন আম্মুর অভাব প্রতিদিন হারে হারে টের পেতাম তখন থেকে চেষ্টা করেছি কোনভাবেই আম্মুর সাথে রাগারাগি বা খারাপ ব্যবহার না করতে। নিজে মা হওয়ার পর থেকে মনে হয় সেই চেষ্টা আরও জোরদার হয়েছে। কারণ তখন থেকেই পরিপূর্ণ ভাবে উপলব্ধি করতে পেরেছি আমাদের বেড়ে উঠা বড় হওয়া আর ভালো মানুষ হয়ে উঠার পেছনে একজন মায়ের অবদান কতটা। এ ব্যাপারে কোন ভাষার ব্যাবহারই যেন পর্যাপ্ত নয়। খাওয়া দাওয়া নিয়ে আমরা তিন ভাইবোনই খুব বিরক্ত করতাম।

অনেক সময় রাতে না খেয়েই ঘুমিয়ে পড়তাম। আম্মু তখন কতশত বার অনুনয় বিনয় চালাত আমাদেরকে খাওয়ানর জন্য। এটা আমার মা এখনো করে মাঝে মাঝে ভাইয়া বা ছোট বোনটা খাওয়া নিয়ে যন্ত্রনা করে বলে। শেষ পর্যন্ত জয়ী হয় আম্মুই। কত বিরক্ত যে হতাম তখন।

আর এখন মেয়েটা না খেয়ে থাকলে বুঝি আম্মু কেন এমন করতো। আমরা তখন খেয়ে উঠলে মনে হতো যেন আম্মুর পেটটা ভরত। এখন প্রতিদিন কথা বলি আম্মুর সাথে, সকালে বিকালে বা যখনই মনে পড়ে। তবু যেন মনটা ভরেনা। ছুটির দিনে সকাল থেকে শুরু হয় আম্মুর ফোন দেয়া, বারবার একই কথা, বাসায় আয় বাসায় আয়।

সপ্তাহে একটি বা দুটি ছুটির দিন, দেখা যায় অনেক কাজ জমে থাকে সেই দিনের জন্য। তাই অনেক ইচ্ছে থাকা স্বত্তেও সম্ভব হয়না মায়ের অনুরোধ রাখা। উল্টো আম্মুকে অনুরোধ করি আমার বাসায় আসার জন্য। তার পক্ষেও সংসারের কাজ ফেলে আসা সম্ভব হয়ে উঠেনা। সে আবার উল্টো আমাকে অনুরোধ করতে থাকে যাওয়ার জন্য।

এটা সেটা কাজের দোহাই দেই, পরে আম্মুও লক্ষী মেয়ের মতো মেনে নেয় আমার না যাওয়াটা আর আবার আমার পরবর্তী ছুটির দিনের অপেক্ষায় থাকে। মাকে নিয়ে লেখা অনেক কষ্টের। হাজারো স্মৃতি মাকে নিয়ে। কোনটা ছেড়ে কোনটা লিখি। আবার যাই লিখিনা কেন, মনে হয় মন মতো মনের ভাব ফুটিয়ে তুলতে পারছিনা।

পরম নির্ভরতার স্থান মায়ের কোল। সবচেয়ে বড় আশ্রয় মা। আমার মেয়েটা তার বাবার ভক্ত বেশী, তবুও রাতের বেলা একবার না একবার আমার বুকে আসবেই। মাকে অনেক অনেক বিশেষণে বিশেষিত করেও তার প্রকৃত মহিমা তুলে ধরা যায়না। বেশীরভাগ মানুষেরই সফল অবস্থানের পেছনে মায়ের অবদান থাকে সবচাইতে বেশী।

তাই সবার কাছে অনুরোধ থাকবে আর যার সাথে যাই করেন না কেন মায়ের মনে কখনো কষ্ট দেবেন না দয়া করে। মাকে খুশী না রাখতে পারেন সমস্যা নেই কিন্তু তাকে দুঃখী যেন না করেন সেই দিকে খেয়াল রাখবেন। কারন মাকে কষ্ট দিয়ে জীবনে কেউ কখনো ভালো থাকতে পারেনা। সব মায়েরা তাদের সন্তানদের নিয়ে অনেক ভালো থাকুক এই দোয়া করি।



এর পর.....

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।