আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

টিনের তলোয়ার ২০১৩

অথচ ব্লগিংটাই করতে চেয়েছিলাম।
ফেইসবুক দৈনিক প্রচুর সময় খায়। কিছুটা অতীত পরিক্রমায় বুঝলাম ব্লগে আমার সুদীর্ঘ বন্ধাত‌্বের বিষয়টা ফেইসবুকের সাথে অনেকখানি জড়িত। ফুটসফাটুস দুএকলাইন লিখে ফেললাম, পছন্দমতো লিঙ্ক দিয়ে দিলাম, তারপর বাকি কথা মন্তব্য-প্রতিমন্তব্যে। বেশ একটা নেশার মতো।

ব্লগের চাইতে অনেক দ্রুত পিনিকে পৌঁছে দেয়। আগে দিনের যখনই হোক যেখানেই হোক ইন্টারনেটওয়ালা কম্পু পেলেই একবার ব্লগে একবার ফেইসবুকে ঢু মারতাম। সেখানে নিকট অতীতে দেখা গেছে প্রতি দশ বারের মধ্যে চারবারের বেশি ব্লগে ঢোকা হচ্ছে না, অথচ ফেইসবুকে দশবারই। সপ্তাহ খানেক আগে দিলাম ফেইসবুক বন্ধ করে। কতদিনের জন্য জানি না।

নেশাটা এমনভাবে ধরে বসেছে, কখন ক্ষণিকের উত্তেজনায় ফুড়ুৎ করে লগইন করে বসি ঠিক নাই। তাই নিজের কাছে কোনরকম প্রতিশ্রুতি ছাড়াই স্রেফ বন্ধ করে রাখলাম।
কারণ নেটে বাংলা লেখা এবং লিখতেই থাকার জন্য বছর সাতেকের কিছু আগে থেকে আমরা যারা ব্লগে সমবেত হয়েছিলাম, নেটে সক্রিয় থাকতে ব্লগিংটাই তাদের জন্য ফরজে আইন। না লিখতে না লিখতে একসময় লেখার অভ্যাসটাই হারিয়ে যায়। তাতে ক্ষতি লেখকের নিজের ছাড়া কারো না।

কারণ আলগ লেখকের সংখ্যা হু হু বেড়ে চলছে এবং সেটা বাড়তেই থাকবে। যারা লিখতে থাকবে তাঁদের কথাগুলি বলা হতে থাকবে। যারা লিখবে না তাঁদের কথাগুলি বলা হবে না। বিষয়টা ঠিক এরকমই সহজ।
তাই ফিরলাম।

জোর করেই ফিরলাম। কিন্তু কী লিখবো? ব্লগ হন্তারক আইন আঙ্গুলে গিট্টু মারার সবরকম ব্যবস্থা করে রেখেছে। এই আইনের ধারাউপধারাগুলি রীতিমতো ১৮৭৬ সালের নাট্যনিয়ন্ত্রণ আইনের সমতুল্য। কোন কথায় কখন কার কোন অনুভুতি আহত হবে তার কোন নিয়ম নাই। সব থেকে বিপজ্জনক হচ্ছে কোন লেখাটা অনুভুতিতে আঘাত হানার মতো বা উস্কানিমূলক তা আইন প্রয়োগকারী সংস্থা নির্ধারণ করবে।

অর্থাৎ রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসের ব্যবস্থা পাকাপাকি। বাংলা ব্লগাবর্ত বেড়ে উঠবার ক্ষেত্রে বাংলাদেশে ১৯৭১ সালে গণহত্যায় জড়িতদের সর্বোচ্চ শাস্তির দাবী আর সেই সূত্রে ধর্মের রাজনৈতিক ব্যবহারের সর্বাাত্মক বিরোধিতায় সেক্যুলার চেতনার মতাদর্শিক লড়াইটাই প্রভাবকের কাজ করেছে। সেখানে বিরোধি মতানুসারিদের প্রতিক্রিয়াশীল অনুভুতিকে আহত করা এবং তাঁকে পরিবর্তনের পথ দেখানোই সারকথা। যারা সকলের জন্য ভালো কথা বলতে চেয়েছেন তাঁরা অন্তত বাংলা ব্লগাবর্তে সুবিধা করে উঠতে পারেন নাই। সকলের জন্য ভালো কথা বলতে গেলে একই সাথে মা কালী আর রক্তবীজ অসুরের পক্ষে বা একই সাথে মজলুম আর জালিমের পক্ষে কথা বলতে হয়।

ঐভাবে পেশাদার সুশীলগিরি হয়। ব্লগিং হয় না।
তাহলে ব্লগিং করবো কীভাবে? ব্লগ হন্তারক আইনকে শ্রদ্ধা করে এই প্রশ্নের সমাধান অসম্ভব। লিখে যেতে হবে যেভাবে লিখছিলাম সেভাবেই। বাংলাব্লগের টিনের তলোয়ার যাদেরকে পীড়া দিচ্ছে তারা পীড়িত হতে থাকুক।

ইতিহাসকে শেষ বিচারে মজলুমের পক্ষে ধরে নেওয়ার ঘাড়ত্যাড়ামি ছাড়া ব্লগিং হবে না। কারণ আমরা ব্লগিংটাই করতে চেয়েছি।

সোর্স: http://www.sachalayatan.com/

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.