আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

নেপালে একপাল ৪


নানান রকম বৃষ্টির কথা শুনেছি... ঝিরঝিরে বৃষ্টি, রুমঝুম বৃষ্টি, ঝুমঝুম বৃষ্টি, টিপটিপ বৃষ্টি, টাপুর টুপুর বৃষ্টি, আষাঢ়ে বৃষ্টি, বজ্রবৃষ্টি, শিলাবৃষ্টি, মুষলধারে বৃষ্টি, ঝড়ো বৃষ্টি... আরো কতো কী! কিন্তু নেপালে সারাদিন ধরে যে বৃষ্টিটা পড়ছে সেটা এগুলোর কোনোটাই না। বিশিষ্ট সমাজসেবকের ত্রাণের মতো এই বৃষ্টি, কোনো কাজে লাগে না। রবিঠাকুর বেঁচে নেই, বৃষ্টির নতুন নাম কে দেবে? রবীন্দ্রনাথের পরে যেহেতু নজরুলই ভরসা তাই আমি এর নাম দিলাম কিপটে বৃষ্টি।
বৃষ্টি দেখেই বুঝেছি এই ব্যাটা দুর্ভাগ্যের মতো নাছোড়বান্দা, সারাক্ষণ সঙ্গে সঙ্গে ঘুরবে। এবং আকাশ পরিষ্কার না থাকলে যেহেতু সূর্য উঠবে না সেহেতু স্মরণকোটে গিয়ে সূর্যোদয় সূর্যাস্ত দেখা হবে না, মেঘলা আকাশ ঢেকে দিয়েছে পাহাড় পর্বত সব।

তাই আসলে কিছুই দেখা হবে না। এই আধেক দেখা আর না দেখার চেয়ে রেস্টুরেন্টের বারান্দায় বসে সোনালী শিশির পান করাই ভালো। পরেরবারে একবারে পুরোটা দেখবো এই সিদ্ধান্ত যখন নিলাম, তখনই দেখি সবাই বাইরে যাওয়ার তাড়া দিচ্ছে। শহর ঘুরতে বের হবে! কিছুক্ষণ আগেই দাম্পত্য ঘিটিমিটি হয়ে গেছে একচোট, তাই আর রিস্ক নিলাম না। কী যাতনা বিয়ে, বুঝিবে সে কিয়ে, কভু আসি বিষে, দংশেনি যারে... ঘেটুপুত্র থুক্কু গামছা মাথায় দিয়ে রাস্তায় নামলাম।


সূর্য চোখে দেখি নাই সারাদিন, কিন্তু ডুবে যে গেছে তা অন্ধকার দেখে টের পেলাম। পৃথিবীর সবচেয়ে বেসুরো কণ্ঠটির গর্বিত মালিক আমি, সেই কণ্ঠকে সম্বল করে গুনগুনিয়ে 'যেমন মেঘের আড়ে পাহাড় লুকায় দেখ না' গাইতে গাইতে রাস্তায় হাঁটছি। কিছুক্ষণ পরেই আবিষ্কার করলাম এটা আসলে স্বরচিত লালনগীতি হয়ে গেছে। সাঁইজি বলেছিলেন কেশের আড়ে পাহাড় লুকানোর কথা, আমি গাইছি মেঘের আড়ে! লালন বলে বিপদ আমার...
অবশ্য তারচেয়ে বড় একটা আবিষ্কারও হলো, হাঁটতে হাঁটতে কিছুদূর যেতেই দেখি সচল ওডিন, সস্ত্রীক ঘুরে বেড়াচ্ছে। হলো কিছুক্ষণ আড্ডা।

দলেও বেশিরভাগই সচল লেখক, হোথায় গিয়ে পেলাম আরেক সচল। বেশ একটা সচলাড্ডা ব্যাপার স্যাপার।
ডেভিডস রেস্টুরেন্টের খানা... মাছের একটা আইটেম, সঙ্গে ডিম ফ্রি! খেতে দারুণ সুস্বাদু থালি, এই জিনিসটা আমি সবসময়ই পছন্দ করি সোনালী শিশির
ধর্মীয় উপসনা উপলক্ষ্যে বেশিরভাগ দোকানপাটই বন্ধ। এমনকি পাব’এ লাইভ মিউজিকের আসরও বন্ধ। কদিন আগেই সচল দুষ্ট বালিকা পোখরা ঘুরে গেছে, তাই আর আমাদের রেস্টুরেন্ট খুঁজে বেছে নেওয়ার প্রয়োজন হলো না।

সেই দিলো এক রেস্টুরেন্টের সন্ধান। খাবার তো বেশ ভালোই, সবচেয়ে ভালো সামনের বারান্দাটা। বারান্দায় বসেই সারাদিন কাটিয়ে দেওয়া যায়। আমি আসলে যেখানেই একটু বসার সুযোগ পাই, সেখানেই সারাদিন কাটিয়ে দেওয়ার সুযোগ খুঁজি অবশ্য । যাহোক, সেখানে কেউ খেলো আর কিছু খাবার প্যাকেট করে নিয়ে চললাম হোটেলে।

সঙ্গী হলো স্কটল্যান্ড থেকে আগত জ্যাক ড্যানিয়েল সাহেব। তার সঙ্গে গল্প গুজব করে কখন যে রাত পার হয়ে গেলো টেরই পেলাম না।
পরদিন আবার যন্ত্রণা। সবাই ছুটলো ডেভিস ফলস না কী যেন একটা দেখবে বলে। আমি ভেবে পেলাম না উপর থেকে পানি পড়ছে সেটা এই বৃষ্টি বাদলা মাথায় নিয়ে টিকিট কেটে কেন দেখতে যেতে হবে? তারচেয়ে নাহয় ঐ রেস্টুরেন্টের বারান্দাতেই... কিন্তু ঐ যে... কী যাতনা বিয়ে বুঝিবে সে কীয়ে? তানিম ভাই আর জ্যোতি বুদ্ধিমানের মতো রেস্টুরেন্টের বারান্দায় বসে গেলো সারাদিনের জন্য।

আমি তাদের প্রতি তীব্র ঈর্ষা জ্ঞাপন করে চললাম জলপ্রপাত দেখতে। কিন্তু মাইক্রো থেকে নামতেই সবাই ঝাঁপিয়ে পড়লো কেনাকাটায়। যতো না কেনে, দেখে আর দামাদামি করে তারচেয়ে বেশি। আমি রাস্তা পার হয়ে এক রেস্টুরেন্টে বসে পড়লাম নেপাল আইস নিয়ে... দাম্পত্য রক্ষার রথ দেখাও হলো আবার কলা বেচাও হলো। আগে আছিলাম বোকা, অহন অইছি বুদ্ধিমান।


ডেভিস ফলস এর পাশের পার্কে পাওয়া গেলো এই শিলালিপি
বড় হলে একদিন এই দোকানটা পুরোটা কিনে ফেলবো

সোর্স: http://www.sachalayatan.com/     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।