আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

কার বিরুদ্ধে লিখব , কোন ভাষায় লিখব



আমি রাজনীতি করিনা । এর সাথে জড়িত না হওয়ার কারন একে খুব ভালোবাবে বুঝি না , অবশ্য বোঝার চেষ্টাও করি না । আমি বুঝি মানবতা । মানুষের কল্যানকামিতা । যার মধ্যে মানুষের কল্যান নিহিত আছে সেটাই আমার কাছে সব ।

আমার জীবনের বিনিময়ে যদি কোন মানুষের কল্যান করতে পারি সেটাই জীবনের সবচেয়ে বড় পরিতৃপ্তি । আমাদের কল্যান সাধিত হচ্ছিল না বলেই ১৯৪৭ সালের ১৪ ই আগষ্ট পাকিস্তানের সাথে একাত্মতা ঘোষণা করে বৃটিষদের থেকে আলাদা হয়ে গেলাম । পাকিস্তানের বিমাতা সূলভ আচরনের কারনে তাদের সাথেও বেশিদিন স্থায়ী হওয়া সম্ভব হয়ে ওঠে নি । অবশ্য পাকিস্তান আমাদেরকে সহজে ছাড়তে চায় নি । আমাদের কাছ থেকে যে সকল সুযোগ সুবিধা তারা গ্রহন করত তার মায়া তারা ছাড়তে পারবে না বলেই আমাদের আঁকড়ে রাখতে চেয়েছিল ।

কাউকের্ ভালবাসার বন্ধনে আবদ্ধ রাখার জন্য যতটুকু আদর সোহাগ করা দরকার তার ছিটে ফোঁটাটুকুও তারা আমাদের সাথে করেনি । বরং প্রতি পদে পদে আমাদের হেনস্তা করে ছেড়েছে । বাঙালি জাতি যখন বুঝতে পেরেছে পাকিস্তানের সাথে একত্রে থাকা কোন অবস্থাতেই আর সম্ভব নয় তখন স্বাধীনতার ডাক দিয়েছে । জাতি বাঙালী হিসেবে অত্যন্ত প্রশংসণীয় । তারা জান দেবে তো মান দেবে না ।

মাত্র ২৩ বছরের সংসার জীবন ত্যাগ করে ১৯৭১ সালের ২৬ শে মার্চ স্বাধীনতার ঘোষনা হওয়ার পর দীর্ঘ ৯ মাসের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের সময় শেষে বাংলাদেশ লাভ করল একটি লাল সবুজের পতাকা । এই সময়টাতে পাকিস্তানী বাহীনি এবং তাদের এ দেশীয় দোসরদের যোগসাজোশে ৩০ লক্ষ বাঙালীল তাজা প্রাণ এবং দুই লক্ষ বাঙালী মা বোনের ইজ্জত বিলিয়ে দিতে হয়েছে স্বাধীনতার নজড়ানা হিসেবে । তবে বাঙালী জাতি স্বাধীনতার সংগ্রাম করে ইতিহাস সৃষ্টি করতে সক্ষম হয়েছিল । এত কম সময়ের মধ্যে পৃথিবীর কোন জাতি স্বাধীনতা লাভ করতে পারে নি । বাঙালী জাতির জন্য দূর্ভাগ্যও আছে বটে ।

বিশ্বের কোন জাতির এত কম সময়ের যুদ্ধে এত অধিক পরিমানে জীবনও দিতে হয় নি , দেশের জন্য তো নয়ই । তবুও আমরা গর্বিত আমরা স্বাধীন জাতি । স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে দেশে হাতে গোনা কয়েকটি দূর্ঘটনা ছাড়া বেশ ভালভাবেই পার করছিল । ২০০০ সালের আগ মূহর্ত পর‌্যন্ত বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কর্তৃক বাকশাল প্রতিষ্ঠা এবং এর খেসারত হিসেবে ১৯৭৫ সালের ১৫ ই আগষ্ট কিছু সেনা সদস্যের হাতে তার পরিবার সহ খুন , মেজর জিয়া খুন , সাবেক সেনা প্রধান হোসাইন মোহাম্মদ এরশাদ কর্তৃক গতন্ত্রকে নির্বাসনে পাঠিয়ে দীর্ঘ দশ বছর অবৈধ শাসন এবং খালেদা জিয়া কর্তৃক ১৯৯৬ সালের জনমত বিরোধী নির্বাচন করে সল্প সময়ের জন্য ক্ষমতা দখল । ২০০০ সাল পরবর্তী সময়ে ২০০৬ সালে বি এন পি ক্ষমতা ছাড়ার পর ফখরুদ্দীন-মঈনউদ্দীন কর্তৃক দুই বছর অবৈধ ক্ষমতা দখল এবং দুই নেত্রীর জেলজীবন ।

২০০৯ সালের বি ডি আর বিদ্রোহ আরেকটি কলঙ্কজনক অধ্যায় । এত সব চড়াই উৎড়াই পেড়িয়ে আশু ভবিষ্যতের মঙ্গল কামনা করেছিলাম । তা হয়নি । যুদ্ধপরাধীর বিচার নিয়ে দেশে অস্থিরতার শুরু হয়েছিল । সরকারী দল ছিল জিরো টলারেন্স মুডে ।

বিরোধীদলও যেখানে যতটুকু সুযোগ পেয়েছে তার সবটুকুই কাজে লাগিয়েছে । এ দু’দল মিলে জিম্মি করেছে এদেশের ১৬ কোটি মানুষকে । মূলত সকল মানুষ জিম্মি হয়েছে দুই দলের দুই নেত্রীর কাছে । সরকারের কাছে বিরোধীদলের দাবী পৌঁছানের জন্য এত দিন হরতাল কর্মসূচী পালন করলেও দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করার পর থেকে গত ২৬ নভেম্বর থেকে দেশে লাগাতার সড়ক , রেল ও নৌ পথ অবরোধ চলছে । মাঝখানে কেবল শুক্রবার বিরতি ছিল ।

অবরো্ধের দিনগুলোতে পাখির মত মানষ মারা হচ্ছে । আহতের সংখ্যা গননা করার সময় নাই । নিহতের সংখ্যা গুনেই এগুতে পারছি না । যারা আহত হয়ে আছে তারা মৃতের চেয়েও কষ্টে আছে । মৃতেরা তো মরে বেঁচে গেছে কিন্তু আহতরা প্রতি মূহুর্তে মৃত্যুকে আলিঙ্গন করছে ।

কি দোষ এই নিরীহ মানুষগুলোর ? কারো কাছ থেকে কোন সদুত্তর পাওয়া যাবে না । বাংলাদেশে মৃত্যের মিছিল চলছে । লাশের মিছিল দিচ্ছে লাশ । একেকটা লাশের সাথে কবরে যাচ্ছে একেকটা পরিবারের স্বপ্ন । মৃত্যু দেখে মানুষের কষ্ট হবে এটাইতো স্বাভাবিক ।

তবে সব লাশ দেখে কষ্টের অনুভূতি একরকম হয়না । লেগুনা চালকের লাশের পাশে বসে তার মায়ের কান্না দেখে সারা দেশ কেঁদেছিল । লাশ নিয়ে চলছে দলাদলির রাজনীতি । লাশের সারি যত দীর্ঘায়িত হচ্ছে হরতাল অবরোধের কর্মসূচী তত কঠোর থেকে কঠোরতর হচ্ছে । মাননীয় প্রধানমন্ত্রী এবং বিরোধীদলীয় নেত্রী কেউ কারো কথা থেকে একচুলও নড়বেন না ।

বিশ্বের সবচেয়ে বড় সংস্থার মহাসচিবের দীর্ঘ ফোনালাপও এদেরকে তাদের কক্ষচ্যুত করতে ব্যর্থ হয়েছে । দুই নেত্রীর যুদ্ধে রাষ্ট্রের ক্ষতি হচ্ছে হাজার হাজার কোটি টাকা । এ সম্পদ তাদের বাপ , স্বামীদের সম্পদ নয় । স্বাধীনতা যুদ্ধে একজনের বাপ , অন্যজনের স্বামীর ভূমিকা ছিল অনস্বীকার‌্য । জাতি আজও তা ভোলেনি ভবিষ্যতেও ভূলবে না ।

এ ভূমিকার জন্য জাতি তাদেরকে যে সম্মান এবং স্বীকৃত দেখিয়েছে তা অতুলনীয় । আশা করা যায় জাতি ভবিষ্যতেও এ ধারা অব্যাহাত রাখবে । কিন্তু তাদের কন্যা এবং পত্নী জাতি যে মরন খেলায় মেতে উঠেছে তার কারনে তাদের উত্তরসূরীদের সম্মানে ভাটা লাগলেও লাগতে পারে । চার দিনের গত চারদিনের হরতালে প্রায় অর্ধশত মানুষ নিহত হল । শুধু পঞ্চাশজন মানুষ নিহত হলেও হত কিন্তু নিহত হয়েছে পঞ্চাশটি পরিবার ।

এমনও অনেক পরিবার আছে যাদের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি ছিলেন নিহত ব্যক্তি । কে নেবে ঐ পরিবারগুলোর ভরনপোষণের দায়িত্ব ? শেখ হাসিনা বা খালেদা জিয়ার পক্ষ থেকে কিছু অর্থ সাহায্য করা হতে পারে ! কতদিন চলবে তাতে ? বড়জোড় একমাস কিংবা একবছর । বাকী দিনগুলো । নিহতদের মধ্যে অনেকের সন্তান-সন্ততি আছে , কারো স্ত্রী আবার অনাগত সন্তানের প্রতীক্ষায় । কে নেবে তাদের শিক্ষার দায়ভার ? আপনারা বলতে পারেন আর কত মানুষ খুন করে আপনাদের বুকের জ্বালা মিটবে ? ঢাকা মেডিকেলের বার্ন ইউনিট সহ সারা বাংলাদেশের হাসপাতাল গুলোতে যারা চিকিৎসা নিচ্ছেন তাদের সুস্থ হয়ে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসার সম্ভাবনা কতটুকু ।

অবরোধের দিনগুলোতে যারা রাস্তায় নামেন , গাড়ীতে চলেন তারা একেবারে অনুপায় । মৃত্যুকে হাতে নিয়ে কেউ হাউশ করে রাস্তায় বের হন না । গতকাল দেখলাম এ্যামবুলেন্সে হামলা হয়েছে । বিস্মিত না হয়ে পারি নি । এ্যামবুলেন্সে যে রোগীকে তুলতে হয় সে তো ৮০% মৃত ।

তাহলে আমরা মৃতকেও ছাড় দেব না । তাকে আবার মারব । কোথায় সভ্যতা ! কোথায় মানবতা ! কয়েকদিন পর‌্যন্ত ভাবতেছি বাংলাদেশে খুনীর সংখ্যা কত ? সঠিক সংখ্যা নিরুপন করতে পারি নি । তবে যেই সুযোগ পাচ্ছে সেই খুন করে চলছে । নিজ হাতে খুন করার সুযোগ না পেয়ে অনেকে খুনের নঁকশা তৈরি করে দিচ্ছে অথবা খুনের মদদ দিচ্ছে ।

কার বিরুদ্ধে লিখব , কোন ভাষায় লিখব আর কিইবা লিখব । আমরা কি এই স্বাধীনতা চেয়েছিলাম ? স্বাধীনতার অর্থ কি এই ? কাকে ধিক্কার জানাব স্বাধীনতাকে নাকি আমাদের কর্মকান্ডকে ? পাকিস্তানামালে আমরা ঠিকমত চাকরি পাই নি , তিনবেলা পেটপূরে খেতে পারি নি কিন্তু জীবনের নিরাপত্তা পেয়েছিলাম । তাহলে কি স্বাধীনতা না পাওয়াই ভাল ছিল না ? কষ্টে অনেক কথা এসে যায় তবে সবগুলো মনের কথা নয় । এক মা সেদিন তার সন্তান আগুনে পুরে মরে যাওয়ার পর প্রলাপ করে বলছিল কিসের গনতন্ত্র । ধিক্কার জানাই এই গনতন্ত্রকে ।

ওমা ! এ দেশে গনতন্ত্র আছে সেটা আপনাকে কে বলল ? গনতন্ত্র এখন বঙ্গভবন এবং গনভবনে বাস করে । সেটা সমগ্র দেশে থাকার দরকার কি ? সাধে কি এরিস্টটল গনতন্ত্রকে সবচেয়ে নিকৃষ্ট বলেছেন । জাতির মঙ্গলের জন্য দু’জনকেই নমনীয় হতে হবে । যদি মনে করেন জাতির কল্যানের চেয়ে আপনাদের জিদের মূল্য বেশী স্বেচ্ছায় সরে দাঁড়ান । এ জাতি অকৃতজ্ঞ নয় ।

বঙ্গবন্ধু এবং জিয়াউর রহমানের খাতিরে বাকীজীবন আপনাদের ভরনপোষণ করবে । শুনেছি মানুষের বয়স যত বাড়ে তত তার আচার-আচারণ শিশুদের আচার-আচারণের মত হতে থাকে । আপনাদের আচারণ কি শিশু পর‌্যায়ে আছে ? ক্ষমতা চিরস্থায়ী করার এত লিপ্সা কেনো বলতে পারেন ? ইতিহাস থেকে ক্ষমতালিপ্সুদের পরিনতি দেখে শিক্ষা নিতে পারেন না । আপনাদের চেয়ে হাজারগুন ক্ষমতাবান ফেরআউনের ক্ষমতাও চিরস্থায়ী হয় নি । আপনারা এখনো প্রভূ দাবী করতে পারেন নি কিন্তু ফেরাআউন খোদায়ী দাবী করেও পার পায়নি ।

বিশ্বের দাতা সংস্থাগুলো আপনাদের টনক নাঁড়তে পারেনি । তাদের কথা উপেক্ষা করে আপনারা তাদের অপমান করেছেন । তাদের সাহায্য ছাড়া আপনাদের দেশে যে সম্পদ আছে তা নিয়ে কতদিন চলতে পারবেন ? এখনো সময় উৎরে যায় নি , জাতির মঙ্গলকে আপনাদের মঙ্গল মনে করুন এবং জনগনের চাহিদানুযায়ী ক্ষমতার ব্যবহার করুন । মুখে বুলি না আউরিয়ে দেশের জন্য কিছু করুন ।


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.