আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

অভূতপূর্ব নির্বাচন -

কোন কাইজ্জ্যার মধ্যে নাই , আম্লীগ, বিমম্পী বুঝিনা, রাজাকার দূরে যা, শিবির তোরা দূরে থাক । দেশে সুশাসন চাই । তবে দেশের বিচারপতি গন হতে হবে পাকি বিচার পতিদের মত ।
অভিনব, অভূতপূর্ব এবং বিশ্ববাসীকে বিস্মিত ও হতবাক করলেও এটি আজকে বাংলাদেশের নির্মম ও নিষ্ঠুর বাস্তবতা যে, নির্বাচন কমিশন ৩০০ আসনের মধ্যে আপাতত ১৫৪টি আসনই বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত ঘোষণা করেছে। নির্বাচন কমিশন এতটাই দুর্বল যে, এই ঘোষণাটুকু দেয়ার প্রাক্কালে তাদের প্রকাশভঙ্গিতে (বডি লাঙ্গুয়েজ) বিন্দুমাত্র শঙ্কা ও লজ্জার কোন প্রকাশ দৃষ্টিগোচর হয় না।

মনে হয় এটিই যেন তাদের কাছে প্রত্যাশিত ছিল। এই নির্বাচন তফসিল সবটুকু বাতিল না হলে শেখ হাসিনা এমনিতেই তো সরকার গঠনের সাংসদ পেয়ে গিয়েছেন। যারা প্রতিনিয়ত তারস্বরে চিৎকার করেন সাংবিধানিক ধারা অব্যাহত রাখার জন্য, সমস্ত মানুষের মৌলিক অধিকার এবং ভোট প্রদানের অধিকারকে সুনিশ্চিত করার জন্য যারা প্রাণ বিসর্জন দিতে উদগ্রীব, যে কোন ত্যাগের মহিমায় নিজের সত্তাকে উদ্ভাসিত করার জন্য নিষ্কলুষ চিত্তের বাসনা-ঘোষণা করেন তাদের বিবেকের সিংহাসনে অধিষ্ঠিত জাগ্রত সত্তাটিকে তারা কি প্রশ্ন করে দেখেছেন, কি কারণে দেশের বেশির ভাগ জনগোষ্ঠী অর্থাৎ ১৫৪টি আসনের ভোটারগণ তাদের ভোট প্রদানের অধিকার থেকে প্রবঞ্চিত হলেন? অনেকেরই অভিমত ও অভিব্যক্তি এই দাঁড়িয়েছে যে ৫ই জানুয়ারি পর্যন্ত বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত সাংসদের সংখ্যা দু’শ’কেও ছাড়িয়ে যেতে পারে। রাজনৈতিক অঙ্গনের বন্ধুরা কৌতুক করে বলেন- গিনেস বুকে বাংলাদেশের নাম ইতিমধ্যেই লিপিবদ্ধ হয়ে গিয়েছে। ভবিষ্যতে কোন দেশ- যেখানে গণতন্ত্রের লেশমাত্র বিরাজমান- এ রেকর্ড ভাঙতে পারবে না; এটি অবাস্তব, একান্তই অসম্ভব এবং বিশ্ববাসীর কাছে অনন্য সাধারণ কৌতুকপূর্ণ।

রাজনৈতিক অঙ্গনে আজকে এ কথাটি সর্বত্রই আলোচিত হচ্ছে যে, ফার্নান্দেজ-তারানকোর নেতৃত্বে পাঁচ সদস্যবিশিষ্ট জাতিসংঘের প্রতিনিধি দল (যার মধ্যে এ ধরনের রাজনৈতিক বিরোধ নিষ্পত্তির বিশেষজ্ঞরাও সংযুক্ত ছিলেন) প্রাণান্ত চেষ্টা করেছেন, দ্বারে দ্বারে ভিক্ষুকের মতো ঘুরে বেড়িয়েছেন। অনুরোধ-উপরোধের তো কথাই নয়, তাদের সব প্রচেষ্টা এবং দৌড়ঝাঁপ তাদেরকে শুধু ব্যর্থতার দীর্ঘনিঃশ্বাস ফেলতেই বাধ্য করেছে। হয়তো ভাবতে ভাবতে গিয়েছেন যে ইরানের মতো দেশের পারমাণবিক সমস্যার সমাধান সমঝোতার মাধ্যমে করা সম্ভব হয়েছে, সুদূর অতীতে ভিয়েতনাম যুদ্ধেরও সংলাপের মাধ্যমে সমঝোতা হয়েছে, কিন্তু এখানে কি হলো! প্রধানমন্ত্রী এবং বিরোধী দলের নেতার মানসপটে কি লেখা আছে সেটি পাঠ করা তো দূরে থাক, অনুমান করারও সাধ্য তাদের ছিল না। পৃথিবীর সকল রাজনৈতিক সমস্যার একটি যুক্তিসঙ্গত কারণ থাকে, সেটি বিচার-বিশ্লেষণ করলেই আলোচনা-পর্যালোচনার মধ্যে একটি সম্ভাব্য উপসংহার বেরিয়ে আসে যার আঙ্গিকে সমাধানের পথ তৈরি হয়। কি বিচিত্র এ দেশ, কি অভিনব দৃষ্টিভঙ্গি এদেশের কুক্ষিগত ও অপ্রতিরোধ্য নেতৃত্বের! কত অসহায় এদেশের মানুষ! শুধুমাত্র জেদ, প্রতিহিংসাপরায়ণতা এবং ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত থাকা কিংবা ক্ষমতার সিংহাসন আয়ত্তে আনার নির্লজ্জ লিপ্সা সমস্ত রাজনৈতিক উপাদানগুলোকে তিল তিল করে ধ্বংস করে দিয়েছে।

আমি বহুবার নিবন্ধে এবং টকশোতে হৃদয়ের সমস্ত আবেগের আবীর মাখিয়ে উচ্চারণ করেছি, লক্ষ লক্ষ মানুষের বুক নিঃসৃত রক্ত, অনেক জননীর সন্তান হারানো বেদনাক্লিষ্ট হৃদয়ের আর্তনাদের ফলস্বরূপ এদেশের স্বাধীনতা; দু’টি মানুষের আত্মম্ভরিতার কাছে এমন নির্মমভাবে মার খাবে তা ভাবলে জাতির বিবেক কুঁকড়ে কেঁদে ওঠে। মনে হয় যেন উত্তরাধিকার সূত্রে প্রাপ্ত নেতৃত্বের কাছে সমগ্র জাতি আজ নতজানু হয়ে গেল। জাতির অর্জিত সমস্ত গৌরব দাম্ভিকতার কালো মেঘে ঢেকে গেল। স্বাধীনতার চেতনা যে জাতিকে একসময় দুর্দমনীয় সাহসের প্রতীক এবং প্রতিভূ হিসেবে সমস্ত বিশ্বের কাছে একটি বিস্ময়কর অকুতোভয় জাতি হিসেবে প্রতিভাত করেছিল তাদের এই অসহায়ত্বের বেদনাক্লিষ্ট চেহারা ভাগ্যের নিষ্ঠুর পরিহাসের মতো পরিদৃষ্ট হচ্ছে। কার পাপে, কোন পাপে জাতি এই অগ্নিপরীক্ষার মুখোমুখি- ইতিহাস একদিন এর বিশ্লেষণ করবেই।

প্রধানমন্ত্রী যখন অগ্নিদগ্ধ মানুষকে আবেগাপ্লুত হৃদয় নিয়ে দেখতে যান তখনও তাদের কণ্ঠে এই আকুতি বেরিয়ে আসে, আপনারা একটি সমঝোতায় উপনীত হন। আমাদের এই অগ্নিদগ্ধ নিদারুণ দশা, এই যন্ত্রণাক্লিষ্ট পরিণতি থেকে দেশকে পরিত্রাণ দান করুন। বিরোধী দলের নেত্রীর কাছেও এই আকুতি, এই মিনতি, এই ফরিয়াদ, এই যন্ত্রণাক্লিষ্ট উচ্চারণ তারা করেছেন, তা শুধু কেবল তাদেরকেই নয়- গোটা জাতিকে নিষ্ঠুর চিত্তে নিরাশ করেছেন। কেউ কাউকে ছাড় দিতে চান নি। গণতন্ত্রের প্রতি অনুরক্ত মানুষ হিসেবে বেগম খালেদা জিয়াকে বিরোধীদলীয় নেত্রী ডাকতে আমারই সঙ্কোচ বোধ হয়।

উনি এবং ওনার সদস্যরা কোন দুরাশায় আজও সংসদ থেকে পদত্যাগ না করে সংসদের বৈধতা অক্ষুণ্ন রাখছেন তা বোধগম্য নয়। এই নিরপরাধ মানুষগুলো, এই আত্মত্যাগী জাতির সম্পূর্ণ বিধ্বস্ত হওয়ার পেছনে শুধুই দাম্ভিকতা; হিরোশিমা-নাগাসাকিতে পারমাণবিক বোমার আঘাতের চাইতেও নির্মমভাবে তাদের বিধ্বস্ত করছে। আজকের পরিস্থিতি ইতিমধ্যেই যে ক্ষতি করেছে তা পরিপূর্ণ সারিয়ে তুলতে দীর্ঘ সময় লাগবে। আত্মপ্রত্যয়ী, দাম্ভিকতা-বিমুক্ত, সত্যাশ্রয়ী, দুর্নীতি-বিবর্জিত নেতৃত্বের প্রয়োজন মর্মে মর্মে উপলব্ধি করছে সমগ্র জাতি। আমি এখানেও পুনরুল্লেখ করতে চাই যে, প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে শুরু করে প্রশাসন, বিচার ব্যবস্থা, শিক্ষা-দীক্ষা সর্বত্রই যে বিভাজন তৈরি হয়েছে তাকে একটি মিলনের মোহনায় দাঁড় করানো অসম্ভব-প্রায় হতে চলেছে।

ধর্মঘট-অবরোধের নামে যে বীভৎস নারকীয় হত্যাযজ্ঞ ও সমাজ ধ্বংসের যে উন্মত্ততা দেখা যাচ্ছে তাতে সমস্ত জাতি শুধু বিপর্যস্ত নয়, মুক্তির জন্য উৎকণ্ঠিত হৃদয়ে অপেক্ষা করছে- কে দেখাবে এই সম্ভাবনার আলো? আমি হতাশ চিত্তের মানুষ নই। মুক্তিযুদ্ধের সঙ্গে আমার সম্পৃক্ততা দীর্ঘদিনের। বঙ্গবন্ধুকে বিশ্বাস ও প্রত্যয়ের প্রতীক বানিয়ে এই অভূতপূর্ব বিজয় সাধনের সম্পৃক্ততার আঙ্গিকে আমার এখনও লালিত বিশ্বাস রয়েছে গোটা জাতির এই ত্যাগ-তিতিক্ষা, মননশীলতা, অকুতোভয় সংগ্রামী অগ্নি-স্ফুলিঙ্গ চিরকালের জন্য নিষপ্রভ হতে পারে না। যারা এই হত্যাযজ্ঞের স্রষ্টা, সহিংস সন্ত্রাসের উন্মত্ততায় যারা আজ ব্যপৃত; তাদের প্রতি ঘৃণা শুধু আমার নয়, দেশের শতকরা ৯৫ ভাগ মানুষের। কিন্তু এই ৯৫ ভাগ মানুষেরই স্থির বিশ্বাস- নিরাপত্তা বিধানে ব্যর্থ সরকারের দাম্ভিকতা বড়ই বেমানান, বড়ই অনভিপ্রেত।

সাংবিধানিক বিশেষজ্ঞরাই নন, দেশের সাধারণ মানুষের আজ আলোচ্য বিষয়, ষষ্ঠদশ সংশোধনীর মাধ্যমে দেশের শাসন ক্ষমতা আরও ১০ বছরের জন্য বাড়িয়ে নিলে পরিণতি যত ভয়াবহই হোক না কেন, এই নির্বাচনের প্রহসনটি বিশ্ববাসীকে অবলোকন করতে হতো না। একটি নিরপেক্ষ, স্বাধীন-সার্বভৌম নির্বাচন কমিশনের মাধ্যমেও অন্তর্বর্তী সরকারের নেতৃত্বে নির্বাচন হয় এটি কোন নতুন কথা নয়। আমেরিকা, বৃটেন, ভারত থেকে শুরু করে পৃথিবীর প্রায় সকল দেশে এই পদ্ধতি প্রচলিত কিন্তু ভুলে গেলে চলবে না সেই সমস্ত দেশে একটি সহনশীলতার রাজনৈতিক আঙ্গিক ও অবকাঠামো তৈরি হয়েছে। প্রশাসন, বিচার ব্যবস্থায় নিরপেক্ষতা নিয়ে এত গভীর সন্দেহ সেসব দেশে দৃশ্যমান নয়। কিন্তু বাংলাদেশকে গণতান্ত্রিক অবক্ষয়ের আবর্তে নিমজ্জিত করার জন্য দু’টি নেতৃত্বই সুকৌশলে এমন প্রভাব বলয় তৈরি করেছেন যে- তাদের কথার বাইরে কোনরকম রাজনৈতিক প্রতিরোধ গড়ে তোলার শক্তি সুশীল সমাজ থেকে শুরু করে অন্য কোন রাজনৈতিক সংগঠন, এমন কী ক্ষমতাসীন ও বিরোধী দলের নেতৃত্বের মধ্যে নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে।

বাংলাদেশে দুই নেত্রীর বাইরে মত প্রকাশের সাহসিকতা সংসদ এবং সংগঠনে তো নেই-ই বরং দাম্ভিক দু’টি মানসিকতার কাছে আজকের শাসনতন্ত্র জিম্মি হয়ে গেছে। এটি এতটাই প্রকাশ্য ও প্রতিভাত যে এর থেকে বিন্দুমাত্র সংস্কারের চিন্তা আজকে দুঃসাহস ও দুঃস্বপ্নের নামান্তর। এ ঝুঁকি নিতে সকলেই নারাজ। অনেক প্রথিতযশা ব্যক্তিত্ব আজকে কোন পথের দিশা দিতে পারছেন না;- কারণ সামাজিক বিভাজন। সময় ক্রমশই ফুরিয়ে আসছে।

নিশ্চিতভাবে দেশ গৃহযুদ্ধের মুখোমুখি। এই মুহূর্তে যে কোন মূল্যে একটি প্রতিরোধ গড়ে তোলা না গেলে সামাজিক বিপর্যয় ঠেকানোর অন্য কোন বিকল্প নেই। যুদ্ধাপরাধীদের ফাঁসি জাতির কাঙ্ক্ষিত। তবে তা কোন দল-গোত্র-মহলবিশেষের কোন আক্রোশের ফলস্বরূপ নয়, গোটা জাতি যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের মাধ্যমে রক্তের ঋণ শোধ করতে চায়। এটিকে রাজনৈতিক ইস্যু বানাতে গিয়ে প্রলম্বিত ধারায় এই বিচারকার্য পরিচালিত করার কারণে পরাজিত শক্তিকে শক্তি সঞ্চয়ের যে সুযোগ করে দেয়া হয়েছে তার দায়-দায়িত্ব শাসকরা অস্বীকার করবেন কিভাবে? আজকে সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদী কার্যকলাপ একদিকে যেমন জনজীবনকে অতিষ্ঠ করে তুলেছে তেমনিভাবে সরকারের জননিরাপত্তা বিধানের ব্যর্থতাকেও প্রকট করে তুলেছে।

খোদা না করুন, স্বাধীনতার শত্রুদের এই বীভৎসতা দমনে সরকার ব্যর্থ হলে (প্রধানমন্ত্রী নিজেই বলেন, জনগণই একে প্রতিরোধ করবে) বাংলাদেশে সোমালিয়া, মিশর, আফগানিস্তান, সিরিয়ার মতো গৃহযুদ্ধের সৃষ্টি করবে কিনা প্রধানমন্ত্রী কি সেই ভয়াবহতাটি উপলব্ধি করেন? অনেক বিজ্ঞজনের অভিব্যক্তি শুনেছি, সমস্যা সৃষ্টি করছেন দু’জন- এর সমাধান তাদেরকেই দিতে হবে। এখানেও আমার বিনীত প্রশ্ন, সেটি কবে? বাংলাদেশে কিয়ামত হয়ে গেলে? গণতন্ত্র তো মৃত, অর্থনীতি তো বিধ্বস্ত, শাসনতন্ত্র তো অসহায়, নির্বাচন কমিশন ক্ষমতাসীনদের আজ্ঞাবহ, স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব হুমকির মুখে। জাতিসংঘের বার বার প্রচেষ্টা, সকল গণতান্ত্রিক দেশের অনুরোধ-উপরোধ এবং বাংলাদেশের জনগোষ্ঠীর নিষ্কলুষ প্রত্যাশা সম্পূর্ণ ব্যর্থ হবে- এটি আমি বিশ্বাস করি না, মানতেও চাই না। আল্লাহ সর্বশক্তিমান এবং সমস্ত ক্ষমতার একমাত্র অধিকারী। ১৬ কোটি মানুষের হৃদয়ের অনুরণন তিনি পুরোটাই জানেন।

তারই কাছে আমাদের সকরুণ মিনতি, এই বিধ্বংসী পরিস্থিতি ও অভিশপ্ত নেতৃত্ব থেকে আল্লাহ আমাদের রক্ষা করুন। Click This Link
 

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.