আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

অভূতপূর্ব নির্বাচন এবং অতঃপর...

কথা নেই বার্তা নেই অকস্মাৎ দেশবাসী এবং আন্তর্জাতিক জগৎকে হতচকিত করে আল-কায়েদা নেতা আয়মান আল-জাওয়াহিরির আরবিতে প্রদত্ত বিবৃতির ইংরেজিতে করা অনুবাদ ইন্টারনেটে প্রকাশ হলো। সারা জাতিকে উদ্বেগ, আতঙ্ক, সংশয়, দ্বিধাদ্বন্দ্বের আবর্তে নিপতিত করা হলো। আল-কায়েদার প্রথম শ্রেণীর নেতৃত্ব একটি হাঁচি দিলেও সারা বিশ্বে সেটি প্রচারিত হয়। সিএনএন, বিবিসি, আল-জাজিরা, রয়টার্স, এএফপিসহ আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন কোনো মিডিয়ায় এ ধরনের বিবৃতির আলামত না এলেও বাংলাদেশে বিষয়টি নিয়ে তুলকালাম কাণ্ড সৃষ্টির উদ্দেশ্য এখনো পরিষ্কার নয়। তবে সঠিক তথ্য উদ্ঘাটনের আশু প্রয়োজনীয়তা অনিবার্য।

না হলে সামাজিক অঙ্গনে একটা মারাত্দক সন্দেহ ও বিভাজনেরই কেবল সৃষ্টি হবে না, বিপর্যয় ঘটে যাবে। বিশ্বজনমতে একটা নেতিবাচক মনোভাবও তৈরি হওয়ার আশঙ্কা রয়ে যাবে। মনে রাখতে হবে, বাংলাদেশ পৃথিবীর দ্বিতীয় বৃহত্তম মুসলিম দেশই শুধু নয়, সাম্প্রতিককালের কয়েকটি সন্ত্রাসমূলক কার্যকলাপ বাদ দিলে সবচেয়ে শান্তিপ্রিয়, অসাম্প্রদায়িক মানবতাবাদী দেশ।

বাংলাদেশে অভূতপূর্ব নির্বাচন হয়ে গেল ৫ জানুয়ারি। ১৫৩টি আসন যখন বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত।

সরকার গঠনে একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা যখন আওয়ামী লীগের করায়ত্ত, তখন প্রশাসনের উপরে তার মারাত্দক প্রভাবের মাত্রাটা এতই প্রবল হয়ে দাঁড়াল যে, তারা অদম্য উৎসাহে নামলেন আনুগত্যের প্রতিযোগিতায়_ কে কাকে হার মানাতে পারে। এমনিতেই ২০০১ এর নির্বাচনের পর হাওয়া ভবন (যাকে মড়াবৎহসবহঃ রিঃযরহ মড়াবৎহসবহঃ না বলে মড়াবৎহসবহঃ ধনড়াব ঃযব মড়াঃ. অথবা ধঁঃযড়ৎরঃধঃরাব মড়াঃ. বলে আখ্যায়িত করা হতো) দলীয়করণের যে নিষ্ঠুর প্রক্রিয়া শুরু করেছিল সেটি কানায় কানায় আওয়ামী লীগ পূর্ণ করে ২০০৮ সালের 'উরমরঃধষ' বিজয়ের পর। কি প্রশাসন, কি রাজনৈতিক অঙ্গন, কি সংগঠনের অভ্যন্তরীণ কার্যকলাপ, সংসদ, বিচারব্যবস্থা, সাংবাদিকতা ও সুশীল সমাজের একটা বিরাট অংশ কেবল নিরপেক্ষতাই হারিয়ে ফেললেন না, তাদের বিবেক বুদ্ধি প্রত্যয়, প্রতীতী সব কিছুই ক্ষমতার বেদিমূলে অর্ঘ্য প্রদান করলেন। নির্বাচন কমিশনের আচার-আচরণে প্রদীপ্ত সূর্যালোকের মতো প্রতিভাত হলো, তাদের নিরপেক্ষতা তো কল্পনার আবর্তের বাইরেই নয়, নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করা রাজনৈতিক শক্তিগুলোকে তারা রীতিমতো প্রতিপক্ষ হিসেবে দাঁড় করিয়ে আস্ফালন করতে লাগলেন, তাতে বাংলাদেশের মানুষ হতচকিত হলো। বিশ্বের জনগোষ্ঠী বিস্ময়াবিভূত হলো।

নির্বাচনটি শুধু প্রশ্নবিদ্ধই হলো না, এটি আদৌ গ্রহণযোগ্য নির্বাচন নয় বলে প্রায় সবাই স্পষ্ট অভিমত ব্যক্ত করতে শুরু করলেন। আমাদের প্রতিবেশী রাষ্ট্র ভারতেরও অনেক প্রভাবশালী পত্রিকা একইভাবে তাদের অভিমত ব্যক্ত করল। কিন্তু সরকারের অনড় মনোভাবের ওপর তার আদৌ কোনো প্রভাব পড়েছে বলে প্রতীয়মান হচ্ছে না। বরং তাদের দাম্ভিকতা, অগণতান্ত্রিক এবং অনৈতিক আচরণ ক্রমেই তীব্র ও সুতীব্র হতে লাগল। দেশবাসী নিশ্চয়ই বিস্মিত হননি, প্রধানমন্ত্রী স্বয়ং বারবার বলেছিলেন, সাংবিধানিক ধারাবাহিকতার খাতিরে ৫ জানুয়ারির নির্বাচন সংগঠিত হওয়ার পর ২৪ জানুয়ারির মধ্যে সংলাপের মাধ্যমে তিনি একটি গ্রহণযোগ্য সিদ্ধান্ত জাতিকে উপহার দেবেন।

মন্দের ভালো হিসেবে, জাতি এ প্রস্তাবে অনেকটা আশ্বস্ত হয়েছিল এবং তাদের প্রত্যাশা পূরণের একটা সম্ভাবনার ইঙ্গিতও এর মধ্যে খুঁজে পেতে চেয়েছিল। জনান্তিকে জানিয়ে রাখি, বিরোধী দলের কূটনৈতিক ক্ষমতাশ্রয়ী এবং জঙ্গিবাদী আন্দোলনের কারণে ২০০৪ সালের ২১ আগস্টের নির্মম পাশবিকতাসহ (গ্রেনেড হামলা) অসংখ্য অগণিত নিপীড়ন, নির্যাতন, নিগ্রহের দৃষ্টান্তের আঙ্গিকে মানুষ অনেকটা গাছাড়া ভাব দিয়েছিল। তাই বিএনপিসহ ১৮ দলের আহূত কোনো আন্দোলনই জনগণকে উদ্বেলিত, উচ্ছ্বসিত এবং অংশীদারিত্বে টেনে আনতে পারেনি। শুধু ক্ষমতা দখলের এই লড়াইয়ে, মানুষ কোন যুক্তিতে ঝুঁকি নেবে? তাই বিএনপি নির্বাচনের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে ব্যর্থ হয়েছে। ১৫৩ আসনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতাকে অঙ্কের আবর্তে রেখে হিসাব করলে গড় ১৫% লোকেরও নির্বাচনে অংশীদারিত্ব আসেনি।

সেই বিবেচনায় ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের ম্যাচটি পরিত্যক্ত বললেও ভুল হবে না। এ জয় আওয়ামী লীগের গৌরবেরও নয়। অথচ বিএনপির প্রতিরোধের অক্ষমতার জ্বলন্ত উদাহরণ। ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের পর অনেকেই বলছেন, ৫ জানুয়ারি নির্বাচনের টিকিট হাতে নিয়ে প্লাটফর্মে দাঁড়িয়ে থেকে বেগম খালেদা জিয়া ট্রেনে উঠতে পারেননি। ওনাকে আরও ৫টি বছর প্লাটফর্মেই দাঁড়িয়ে থাকতে হবে ২০১৯ সালের ট্রেনের অপেক্ষায়।

আমি আমার আগের নিবন্ধেও বলেছি, বেগম খালেদা জিয়ার রাজনীতিটা ক্ষমতাকেন্দ্রিক, কূটনৈতিকনির্ভর। সংগঠনকে সম্পূর্ণরূপে নিষ্ক্রিয় করে রাখা, সংসদে নিরবচ্ছিন্ন অনুপস্থিতি এবং সংগঠনের কর্মীদের মধ্যে কর্মচারীসুলভ আচরণের কারণে সংগঠনের সঙ্গে নেতা-কর্মীদের আত্দিক বন্ধন গড়ে তুলতে ব্যর্থ হয়েছেন তিনি। তত্ত্বাবধায়কের ইস্যু, বাড়ি ও সন্তানের মামলা ছাড়া একটা জনকল্যাণমুখী কর্মসূচি দিয়ে জনগণকে, এমনকি নিজের কর্মীদের রাজনৈতিক মানসিকতা, প্রতীতী ও প্রত্যয়বোধ সৃষ্টিতে সম্পূর্ণ ব্যর্থ হয়েছে তার দল। সংসদের ভেতরে ও বাইরে তত্ত্বাবধায়ক সরকার বাতিলের পর বেগম খালেদা জিয়ার নিস্পৃহতা রাজনৈতিক দৈন্যতাকে ফুটিয়ে তুলেছে। তার ২৯ ডিসেম্বর 'মার্চ ফর ডেমোক্রেসি' তার রাজনৈতিক সফলতা তো আনেইনি, ওই দিনই ইনসেনটিভ কেয়ারে থাকা গণতন্ত্রের জীবনরক্ষাকারী সংযোগটি বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে।

বিরোধী দলবিহীন একতরফা সংসদ চলছে। যেখানে একই কথা চর্বিত চর্বণ, ছায়ার বিরুদ্ধে লড়াই, স্তূতি-স্তাবকতার প্রতিযোগিতা, একমাত্র প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণের সদম্ভ প্রতিযোগিতা চলছে। প্রেসিডেন্ট, যিনি কেবল রাষ্ট্রের সাংবিধানিক প্রধানই নন, দলমতের ঊধের্্ব জাতির অভিভাবক। যদিও সাংবিধানিকভাবে তিনি ক্ষমতাবিহীন। (তার নিজের ভাষায় জানাজা পড়া এবং মন্ত্রিপরিষদ সচিবের লেখা সংসদে পাঠ করা ছাড়া) তার তেমন কিছু করার নেই।

এটি নিষ্ঠুর বাস্তব হলেও, মাননীয় প্রেসিডেন্টের কাছে আমার প্রত্যাশা ছিল ভিন্ন আঙ্গিকে। প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনা করে হলেও তার ভাষণে তিনি সমঝোতা ও জাতীয় ঐক্যের কথাটি আনতে পারতেন। তাহলে এই আতঙ্ক, অস্থিরতা, অস্থিতিশীলতা, উদ্বিগ্নতা থেকে জাতি স্বস্তি পেত, নিরুদ্বিগ্ন হতো এবং বিদেশিরা অহরহ নসিহতের সুযোগ পেত না।

অভূতপূর্ব এবং অভিনব কৌশলের নির্বাচনের ক্ষত শুকাতে না শুকাতেই সরকারের ইঙ্গিতে নির্বাচন কমিশন উপজেলা নির্বাচন অনুষ্ঠানের তোড়জোড় শুরু করেছে। যে দেশে ১৫৩ জন সংসদ সদস্য বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয় এবং তার পরেও সেখানে প্রশাসন থেকে শুরু করে রাষ্ট্রের সব পরিচালনা শক্তি অবধারিতভাবে ধরে নেয়, এই সরকারের অধীনেই পরবর্তীকালে তাদের চাকরি বাঁচাতে হবে, চাকরি করতে হবে, অস্তিত্ব বাঁচাতে হবে।

সেখানে প্রশাসন, বিচারব্যবস্থা, নির্বাচন কমিশনে এদের কাছ থেকে নিরপেক্ষ কামনা করা শুধু দূরাশাই নয়, চূড়ান্ত পাগলামির নামান্তর। রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞ না হলেও রাষ্ট্রবিজ্ঞানের ও ইতিহাসের ছাত্র হিসেবে এবং পঞ্চাশ বছরের রাজনীতির অভিজ্ঞতার আঙ্গিকে আমি জানি, অনেক গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে, বিশেষ করে যুক্তরাজ্য ও ভারতে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার রেখেই একটা স্বাধীন স্বার্বভৌম নির্বাচন কমিশন সফলতার সঙ্গে নির্বাচন অনুষ্ঠান করতে পারে। যেসব দেশে নির্বাচন কমিশন সম্পূর্ণ স্বাধীন, স্বতন্ত্র এবং কার্যত সরকারের মুখাপেক্ষী থাকে না। তাদের কোনো রাজনৈতিক আকাঙ্ক্ষা, অভিলাষ এবং অভিমত থাকে না। কিন্তু বিগত ভোটারবিহীন নির্বাচনের আগে এবং পরে নির্বাচন কমিশনের আচরণ যে কোনো লোকের মধ্যে ধারণাটি সুস্পষ্ট করেছে, তারা কেবল সরকারের আজ্ঞাবহই নয়, তাদের রাজনৈতিক চিন্তাচেতনাও সরকারি দলের সঙ্গে অনেকখানি সম্পৃক্ত।

নির্বাচনের আগে অতিআগ্রহে বিএনপির প্রতিপক্ষ হিসেবে একটি অস্তিত্ববিহীন বিএনএফেরও তারা নিবন্ধন প্রদান করে কৃতার্থ হন। এখন ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের পর সরকার যেভাবে উক্তি করছে, এহেন অবস্থায় উপজেলা নির্বাচনের নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্নটা একান্তই স্বাভাবিক। কিন্তু উপজেলা নির্বাচনের এ উদ্যোগটি কৌশলগত দিক থেকে আওয়ামী লীগের জন্য একটি বিরাট দূরদর্শিতার পরিচয় তুলে ধরেছে এবং বিএনপিকে নিশ্চিতভাবে আরেকটি গোলক ধাঁধায় অবর্তিত করেছে। নির্বাচন না করলে বিএনপির অস্তিত্ব বিপন্ন হওয়ার প্রচণ্ড আশঙ্কা রয়েছে। আর করলে হার জিতের প্রশ্নটা বাদ দিলেও ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের পরোক্ষ স্বীকৃতি প্রদান হয়ে যায়।

খালেদা জিয়ার অবস্থা এখন শ্যাম রাখি না কূল রাখি। বেগম খালেদা জিয়া, সংসদীয় গণতন্ত্রে বিশ্বাস করে না বলেই আমার বদ্ধমূল ধারণা। জনগণকে নিখুঁত প্রত্যয়ে উজ্জীবিত করে '৬৯ বা '৭১-এর মতো একটা গণঅভ্যুত্থান সৃষ্টি করার কোনো সাংগঠনিক শক্তি তার নেই বললেই চলে। নির্বাচনোত্তরকালে অনেকেই এই অভিমত ব্যক্ত করেছেন (যেটি বহু আগেই আমি বারবার উল্লেখ করেছি)। দেশের সুশীল সমাজ এমনকি বিএনপিরও একটি অংশ বিএনপির আজকের লেজেগোবরে অবস্থার জন্য কূটনৈতিক নির্ভরতা, প্রত্যয়দ্বীপ্ত নেতৃত্ব ও কমিটি গঠনের ব্যর্থতাকে গুরুত্ব দিচ্ছে।

এটা বিএনপির জন্য একটি মহাসংকটকাল। তাদের প্রতি কোনো পক্ষপাতিত্ব না করেও আমি বলতে পারি, দেশের গণতন্ত্রকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিতে হলে একটি কার্যকরী বিরোধী দলের অস্তিত্ব দেশে অনিবার্য। জাতীয় পার্টির উভয় অংশ একত্রিত করলেও তাদের পক্ষে গৃহপালিত বিরোধী দলের ভূমিকা পালন করা সম্ভব নয়। এর মধ্যে জাতীয় সংসদের স্পিকার সংসদকে কার্যকর ও প্রাণবন্ত করার অভিলাষ ব্যক্ত করেন কোন যুক্তিতে তা বোধগম্য নয়। সংসদের এই বেহাল অবস্থাই মধ্যবর্তী নির্বাচনের যৌক্তিকতাকে শক্তিশালী করে দাঁড় করায়।

উপরন্তু গোদের উপর বিষফোঁড়ার মতো বাইরের চাপ তো রয়েছেই।

আওয়ামী লীগের ক্ষমতা নিরঙ্কুশ। তবুও কেন তারা কেবল ছায়ার বিরুদ্ধেই তলোয়ার ঘুরাচ্ছেন। এটি দেশবাসী ও আমার বোধগম্য নয়। ২০০৮ এর নির্বাচনের চেয়েও তাদের সংখ্যাগরিষ্ঠতা বেড়েছে এবং তাদের অভিব্যক্তি, একই ধারায় নির্বাচন হলে কেয়ামত পর্যন্ত তারা ক্ষমতায় থাকবে এটি তাদের দুঃস্বপ্ন নয়, নিষ্ঠুর ও নির্মম বাস্তবতা।

এই নিষ্ঠুর বাস্তবতা ও জাতীয় উদ্বেগ সরকারের প্রতি মানুষের আস্থা সৃষ্টি করতে পারছে না। তবুও যদি তারা জনগণের সমর্থনের ব্যারোমিটারটাকে ঊধর্্বগামী করতে চান তাহলে তাদের উক্তি অভিব্যক্তিতে অবশ্যই প্রাধান্য পেতে হবে দুর্নীতি-দুর্বৃত্তায়নের বিরুদ্ধে দলমত নির্বিশেষে কঠোর অবস্থানের কথা। শেয়ারবাজার, হলমার্ক, ডেসটিনিসহ অসংখ্য নির্মম দুর্নীতির বিরুদ্ধে তারা কতটুকু কঠোর হতে পারবেন তা দেখার জন্য দেশবাসী একান্তই আগ্রহী। যদি দ্রুত বিচার আইনে, তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি আওয়ামী লীগ দিতে পারে তাহলে অবস্থার পরিবর্তন হওয়া সম্ভব। আওয়ামী লীগকে ঘোষণা দিতে হবে ১. সংসদ কেবল আইন প্রণয়ন ও নীতিনির্ধারণ করবে এবং সংসদের নির্ধারিত নীতি নিরপেক্ষভাবে প্রশাসন বাস্তবায়ন করবে।

২. উন্নয়নে বিকেন্দ্রীকরণের লক্ষ্যেই উপজেলা পরিষদকে পূর্ণ স্বায়ত্তশাসন এবং সব উন্নয়ন প্রকল্পে পূর্ণ অধিকার প্রদান করতে হবে। এতে সংসদ সদস্যের যে কোনো হস্তক্ষেপ আইন করে বন্ধ করতে হবে। আমরা গভীর বেদনাহত চিত্তে লক্ষ্য করেছি, আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে উপজেলা পরিষদ এমনকি জেলা পরিষদও সম্পূর্ণ ক্ষমতাবিহীন, বিকলাঙ্গ এবং অকার্যকর একটা প্রতিষ্ঠানে রূপান্তরিত হয়েছিল। সব উন্নয়নের কর্মকাণ্ডের মূল শক্তি ছিল সংসদ সদস্যদের কুক্ষিগত। এটি শুধু সংসদকেই বিতর্কিত করে না বরং জনপ্রতিনিধির দ্বারা (উপজেলা প্রশাসনের) যে উন্নয়ন কাজ পরিচালনা করার ভূরি ভূরি দৃষ্টান্ত পৃথিবীতে প্রচলিত আছে তাকে ব্যাহত করে।

৩. বিচারব্যবস্থা আইনের সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ প্রয়োগ সততার সঙ্গে তুলে ধরবে। দল, সরকার ও বিরোধী দলের কোনো প্রভাব তাদের নিরপেক্ষতাকে বিন্দুমাত্র প্রশ্নবিদ্ধ করবে না। এই ভাবমূর্তি প্রতিষ্ঠিত না হলে সমাজ শঙ্কামুক্ত হবে না। সরকারের ওপরও জনগণের আস্থা ফিরবে না।

গোলাপী এখন সংসদের ট্রেনে উঠতে না পেরে উপজেলা ট্রেনে উঠতে চাইছেন- প্রধানমন্ত্রীর এই উক্তিটির অর্থ কি? সব ক্ষমতা এমনকি শাসনতন্ত্রও তার অাঁচলে বাঁধা থাকা বাস্তবতা সত্ত্বেও তিনি কি ভয় পাচ্ছেন? উপজেলা নির্বাচনে বিএনপি সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেলে ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের নূ্যনতম গ্রহণযোগ্যতাও নিঃশেষিত হবে।

বিএনপি যখন এই নির্বাচনকে নিয়ে আত্দকলহে অতিষ্ঠ তখন সরকারের পক্ষ থেকে নির্যাতন, নিপীড়ন, বিদ্রূপ ও কটাক্ষে জর্জরিত করে উপজেলা নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর একটি সুযোগ সৃষ্টি করে দেওয়ার কি যুক্তি থাকতে পারে তা বোধগম্য নয়।

লেখক : স্বাধীন বাংলা ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের নেতা

 

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.