আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

হেফাজতে ইসলামের সমালোচনা

মুসাফির। হাঁটছি পৃথিবীর পথে পথে, অনিশ্চিত গন্তব্যে। কাগজের নৌকা দিয়ে সাগর পাড়ি দেবার দুরন্ত প্রয়াস।

সত্যি কথা বলতে কি, লেখালেখির ইচ্ছে অনেক আগে থেকেই। কিন্তু এতদিন লিখিনি কারণ অন্যকে সমালোচনা করতে বা উপদেশ দিতে চাইনি।

কেননা এটা মানুষের সহজাত প্রবৃত্তি। প্রবৃত্তির অনুসরণ-অনুশীলন না করে একে বদলাতে চেষ্টা করেছি। তারপর গত তিন বছর আগে মনে হল একটু প্র্যাকটিস করা দরকার। তবে যথাসম্ভব নিজের প্রতি খেয়াল রেখেই। লেখালেখির এ তিন বছরে নিজেকে কিছুটা হলেও বদলাতে পেরেছি।

এ কৃতিত্ব আমার অনলাইন পাঠক-সমালোচকদের। একজন মানুষের জীবনে সমালোচক ও সমালোচনা খুবই জরুরি। প্রতিটি দল, সংগঠন বা প্রতিষ্ঠানেরও সমালোচনা এক অপরিহার্য অঙ্গ। অথচ আজ এটাকে আমরা ভালো চোখে দেখি না। এখনও যে তেমন একটা লিখি তা নয়।

লেখার চেয়ে পড়াই আমাকে আনন্দ দেয় বেশি। যতটুকু লিখি, মনের উপর জোর খাটিয়ে। স্বতস্ফূর্ত লেখা খুব কম। বিশেষ করে স্বতস্ফূর্ত কোনো লেখা মনে উদয় হলে যখন নিজেকে প্রশ্ন করি এর দ্বারা কি হবে, কাকে বলছি, কেন বলছি, বরং এ কথাগুলো আমার নিজেকেই বলা উচিত। তখন লেখালেখির ইচ্ছে চুপসে যায়।

এভাবে কত লেখা যে হারিয়ে যায়! ডায়রি লিখছি অবশ্য সাত বছর ধরে। কারণ এটা নিজের সঙ্গে এক প্রকার কথা বলা।

চারপাশে ঘটছে হাজার ঘটনা। রক্ত-মাংসের মানুষ যারা, প্রভাবিত হবেই। কখনও অট্টহাসি, তুমুল উল্লাসে ফেটে পড়া, আবার কখনও কুৎসিৎ গালি, মানুষ চিবিয়ে খাওয়ার বাসনা।

দুঃখ, হতাশা, ভালোবাসা, আবেগ, উৎকণ্ঠা এমনিভাবে প্রভাবিত হচ্ছি আমরা চারপাশের ঘটনা দ্বারা প্রতিনিয়ত। কিন্তু আপনি ভেবেছেন কি, এসব ‘সস্তা আবেগের’ উর্ধ্বে আমাদের যে উঠতে হবে? কিছু একটা ঘটলেই আজকাল ফেসবুক-ব্লগে পোস্টের জোয়ার! এটা যেন ভার্চুয়াল চা-স্টল। আর টকশো, আহা বেচারা! কিন্তু আমরা ভাবি না এসব পাইকারি কথা পরিবেশ-পরিস্থিতির সত্যিকার কতটুকু উন্নতি করছে। হ্যাঁ, যদি স্রেফ নিজের আবেগ প্রকাশের জন্যই আপনি বাংলালিংক দরে স্ট্যাটাস দিয়ে থাকেন, টকশো করে থাকেন, আমার আপত্তি নেই। কারণ এখানে পরিবেশ-পরিস্থিতির চেয়ে আপনার আবেগটাই গুরুত্বপূর্ণ।

নিজেকে হাল্কা করুন। ভালো থাকুন। তবে এটা করতে গিয়ে আবার নতুন করে ঝামেলা পাকাবেন না প্লিজ! তাই এক্ষেত্রে উত্তম হবে কোনো উন্মোক্ত অঙ্গনে এসব সস্তা আবেগ-অনুভূতি প্রকাশ না করে মার্কেট থেকে একশ’ টাকা দিয়ে একটা ডায়রি আর পাঁচ টাকা দিয়ে একখান কলম কিনে বসে যান বিশ্ব জয় করতে। দেখব এবার, আপনাকে ঠেকায় কে?

আমি আজকাল নিজেকে একটু আবেগের উর্ধ্বে নিতে চেষ্টা করছি। কারণ এটা না করলে নিরপেক্ষ বিশ্লেষণ ও মূল্যায়ন সম্ভব হয় না।

আমাদের চারপাশে এই যে এত এত অন্যায়-অত্যাচার, ক্ষমতার মিথ্যা অহঙ্কার, জুলুম-নির্যাতনÑ এসবের মৌলিক কারণ কি? কিভাবে একটি রাষ্ট্র ও সমাজকে ধীরে ধীরে উন্নতির চূড়ায় উঠাতে হবে? কিভাবে হাজার মানুষের অন্তরে জ্ঞানের আলো ছড়াতে হবে, সমাজকে শিক্ষিত করে তুলতে হবে? যে তরুণরা আজ রাজপথে প্রতিবাদী, সমাজ বদলাবার প্রত্যয়ে জীবন রাখে বাজি, দেখা গেল তারাই ক্ষমতা পেলে অতীতের অনুসরণ করে, স্বৈরাচারীর ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়। মুহূর্তে বদলে যায় তাদের ভাষা, আচার-আচরণ। তার প্রত্যক্ষ প্রমাণ, দেখুন আপনি যে ক্ষেত্রে ক্ষমতাবান সে ক্ষেত্রে আপনার ‘অনুভূতি’। আমি অনেক অফিসের শিক্ষিত বসদের চিনি, যারা জুনিয়র-কর্মচারিদের সঙ্গে চরম অমানবিক আচরণ করেন। পরিবার, প্রতিষ্ঠান, সমাজ ও রাষ্ট্রের প্রতিটি সেক্টরেই এমন চিত্র।

এত মানুষের ভেতরে ‘মানুষ’ খুঁজে পাওয়া মুশকিল। তাই এখন নিজেকেই সন্দেহ করি।

বাংলাদেশের সমকালীন রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে ‘হেফাজতে ইসলাম’ এ দেশের প্রায় সব আলেম ও কওমি ধারার লোকদের ধর্মীয় প্রশ্নে একীভূত করতে পারলেও তারা সহসা ‘রাজনীতির’ কথা বলতে পারেন না। এমনকি যদি রাষ্ট্রক্ষমতা হুজুরদের হাতে দিয়েও দেয়া হয়Ñ প্রথমত তাদের দৃষ্টিভঙ্গির সঙ্কীর্ণতা ও যোগ্যতার ঘাটতি আছে। দ্বিতীয়ত, দেশের মানুষ মেনে নেবে না।

কারণ তাদের চোখে ভেসে উঠে তালেবানী শাসনের চিত্র। জনগণের মন থেকে এ ভয় দূর করার কি ব্যবস্থা আমরা নিয়েছি? সরকার এবং সরকারে যেতে ইচ্ছুকদের জনগণের মনের ভাষা বুঝার ক্ষমতা থাকতে হবে। আগে আইন নয়, ‘আইনের ক্ষেত্র’ তৈরি করতে হয়। আমরা কি সে কাজটা জনগণের ময়দানে করছি? আজ আলেমদের রাজনৈতিক তৎপরতায় বাধা থাকলেও ধর্মীয় কোনো কাজে বাধা নেই। সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলিম দেশ হিসেবে এ সুযোগটা আমরা ভোগ করছি।

দু’দিন পর এটাও থাকবে না।

হেফাজত যে বিএনপিকে সমর্থন দিচ্ছে, বিএনপির ব্যর্থতার দায়ভার নিতে কি তারা প্রস্তুত? আর এভাবে বছরের পর বছর ‘পরনির্ভরশীল’ হয়ে থাকার ভবিষ্যৎ ক্ষতিটা আমরা কতটুকু উপলব্ধি করতে পারি? অন্তত সংখ্যালঘু একটা ধর্মীয় জনগোষ্ঠীর যতটুকু রাষ্ট্রীয় সুযোগ-সুবিধা ও অধিকার আদায়ের ক্ষমতা থাকে তাও এ দেশের আলেমদের নেই। এ জন্য কি আলেমরা দায়ি নন? প্রবীণ আলেমগণ অতীতের বিভিন্ন সীমাবদ্ধতার কারণে রাজনৈতিক অঙ্গনে নেতৃত্ব, প্রজ্ঞা ও দূরদর্শিতার পরিচয় দিতে পারেননি। কিন্তু আজ এ সীমাবদ্ধতাগুলো কেটে যাবার পর কওমি তরুণরাও একই পথে হাঁটবে এটা আমরা মেনে নিতে পারি না। আমার রাজনৈতিক লেখাগুলো কওমি তরুণরা বুঝেন বলে মনে হয় না।

রাজনৈতিক লেখা বা বক্তব্য রাজনৈতিক দৃষ্টিতেই দেখতে হয়। এখানে ধর্মীয় গোঁড়ামো চলে না। অবশ্য এক্ষেত্রে আমারও যথেষ্ট ঘাটতি আছে। যেভাবে বা যে কৌশলে বিষয়গুলো তুলে ধরা দরকার, আমি হয়তো সেভাবে করছি না।

আমরা দেড় টাকা রুজি করি চার টাকা খেয়ে।

এই সামান্য ক’টি সিটি নির্বাচন নিয়ে গত কয়েকটি মাস ধরে মাতামাতিতে আমরা অনেকে যারপর না-ই ত্যক্ত-বিরক্ত। কোনো উন্নত বা উন্নয়নশীল দেশে জাতীয় নির্বাচন নিয়েও এত মাতামাতি হয় না। এই পাঁচটি নির্বাচনে সর্বমোট কত কোটি ডলার খরচ হয়েছে? এগুলো কাদের টাকা? কিভাবে এগুলো উঠবে? কত লাখ শ্রমিক-কর্মচারী-শিক্ষক-ব্যবসায়ী কর্মবিরতি পালন করেছেন? এই জাতির কি পরিমাণ মেধা-মনন এতে খরচ হয়েছে? যাক, এ বিষয়ে আজ আর বললাম না। তবে এতটুকু বলে রাখি, এতে হেফাজতের বিন্দুমাত্র লাভ হবে না। মার খাব আমরা, ফল যাবে অন্যের ঘরেই।

তাই তাদের সতর্ক করছি, কোনো প্রকার বাড়াবাড়ি বা উল্লসিত হবার কারণ নেই। হেফাজত বাড়াবাড়ি করলে আমি কঠোর প্রতিবাদ করব। আমাদের প্রতিটি কথা, পদক্ষেপ ও সিদ্ধান্ত বস্তবসম্মত হতে হবে। জনগণের সঙ্গে দূরত্ব কমাতে হবে। দেশ-বিদেশের লাখ-লাখ মুসলমান শুধু আমাদের কারণেই আমাদের ঘৃণা করে।

যে যত কাছের, আমি তত বেশি তার সমালোচনা করব।

রাজনীতির মুখোশ ও মনুষ্যত্বের বিকাশ গ্রন্থ থেকে (পৃষ্ঠা-৬২-৬৩)

হেফাজত ২৯ তারিখের সাংঘর্ষিক 'রাজনীতি' থেকে সরে এসেছে। তাই তাদের ধন্যবাদ। অনেক কিছুই বলার ছিল, কিন্তু বলে কি লাভ? আমার কথা কে শুনবে? তাই পুরনো এ লেখাটি দেয়া।





অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.