আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

খুদা কে লিয়ে (In the name of God) : মৌলবাদীদের জন্য একটি মাস্ট ওয়াচ মুভি

বিপ্লব স্পন্দিত বুকে মনে হয় আমিই মুজিব

মুভি রিভিও লিখি নাই । মুভি রিভিও আমি লিখতেও জানিনা । আমার উদ্দেশ্য শুধু এই মুভিটি সম্বন্ধে এখনো যারা অবগত নন , তাদেরকে এটি সম্পর্কে সামান্য কিছু জানানো ।

কিছু কিছু মুভি থাকে যেইগুলা দেখার পর এইগুলা নিয়ে কিছু বলতে, কিছু লিখতে , অন্তত ফেসবুকে একটা স্ট্যাটাস দিতেও ইচ্ছা করবে। পাকিস্তানী মুভি খুদা কে লিয়ে হচ্ছে সেই রকমই একটা মুভি।



পাকিস্তানী জিনিসের প্রতি অনেকেরই অনেক ধরণের চুলকানি থাকতে পারে , আমারো আছে , থাকাটাই স্বাভাবিক । কিন্তু পাকিস্তানী কোন মুভিতেই যদি টেরোরিজমের বিরুদ্ধে , ধর্মান্ধতার বিরুদ্ধে , ধর্মের নামে পাপ কাজ গুলোকে জিহাদ বলে চালিয়ে দেয়ার বিরুদ্ধে ম্যাসেজ থাকে তাহলে সেই পাকিস্তানী জিনিসকে , সেই পাকিস্তানী মুভিকে গ্রহণ করতে আমার আপত্তি কোথায় ? বিশ্বায়নের এই যুগে এইরকমটাই তো হওয়া উচিত । যদিও আমরা করছি তার উল্টোটা , ভালোটা গ্রহণ না করে , গ্রহণ করছি খারাপটা ।

যাই হুক , এইবার আসল ব্যাপারে আসি , এইবার মুভির ব্যাপারে কিছু বলি ।



খুদা কে লিয়ে (ইন দ্যা নেইম অব গড) ২০০৭ সালে পাকিস্তানে মুক্তিপ্রাপ্ত একটি উর্দু সিনেমা ।

পাকিস্তানে ব্যাপক সাফল্যের পর হিন্দীতেও এটি রিলিজ করা হয় ভারতে । পরবর্তীতে অবশ্য আরবী , ইংরেজী সহ আরো কয়েকটি ভাষায়ও পরিচালক মুভিটিকে রিলিজ করেন সারা বিশ্বেই ।

আইডিএমে ৮.২ রেটিং প্রাপ্ত মুভিটির কাহিনী লিখেছেন শোয়েব মনসুর । প্রযোজনা ও পরিচালনাও তারই । যারা অভিনয় করেছেন তাদের বেশীরভাগই পাকিস্তানী অভিনেতা , তাদের কাউকেই চিনিনা বলে নামও বলছি না ।

তবে ছবিটিতে সব চাইতে কম সময়ের কিন্তু সব চাইতে গুরুত্তপূর্ন একটি পার্ট করেছেন ভারতীয় অভিনেতা নাসিরউদ্দীন শাহ ।

ধর্মীয় গোঁড়ামি , এবং সেটাকে পুঁজি করে গড়ে উঠা বিভিন্ন টেরোরিস্ট সংঘটনের কার্যকলাপ , নাইন ইলাভেনের পর টেরোরিস্ট সন্দেহে সাধারণ মুসলমানদের উপর এফ বি আই এর নির্যাতন; মূলত এই সকল বিষয়ের উপরই নির্মিত হয়েছে ছবিটি । আপাতদৃষ্টিতে মুভিটির প্লট অতি সাধারণ মনে হলেও
মুসলামন-ক্রিশ্চিয়ান বিয়ে , ধর্মের কথা বলে, জিহাদের কথা বলে মানুষকে ব্রেইন ওয়াশ করা, টেরোরিজমের পথে ধাবিত করা , মেয়েদের উপর নির্যাতন করা , নারী শিক্ষার উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা এইসব বিষয়কে পরিচালক খুব সুন্দরভাবে , বাস্তবতার সাথে তুলে ধরতে পেরেছেন বলেই মুভিটি এতো সফলতা অর্জন করতে পেরেছে ।


মুভিটির মূল দুই চরিত্রে আছেন দুই ভাই সারমদ এবং মনসুর। ছোটবেলা থেকেই সেক্যুলার মানসিকতা সম্পন্ন ফ্যামিলিতে বড় হয়ে উঠা এই দুই ভাইয়েরই ছিলো গান বাজনার প্রতি প্রবল আগ্রহ ।

নিজেরাও গাইতেন , কট্টর মোল্লাদের তীব্র বাধার মুখে স্টেজেও পার্ফরম করতেন ।

বন্ধুর পরামর্শে একদিন হটাৎ করেই সারমদ দেখা করেন মোল্লা তাহিরির সাথে । মোল্লা তাহিরি ছিলেন ধর্মীয় নেতার আদলে তালেবান জঙ্গীর একজন শীর্ষস্থানীয় নেতা । কোরআন হাদিসের ভুল ব্যাখ্যা দিয়ে মোল্লা তাহিরি সারমদকে বুঝাতে শুরু করেন যে , গান বাজনা ইসলামের চোখে হারাম । সারমদের এই সুর আল্লাহ দিয়েছেন আল্লাহর স্তব করার জন্য, আযান দেয়ার জন্য; শরিয়ত বিরোধী কাজের জন্য নয় ।



মোল্লা তাহিরির করা ব্রেইনওয়াশে প্রভাবিত হতে থাকেন সারমদ , এবং ধীরে ধীরে গান বাজনা ছেড়ে দিয়ে তিনিও তালেবানে যোগ দেন জিহাদের জন্য , ঈমানি দায়িত্ব ( মোল্লা তাহিরের ভাষ্যমতে) পালন করার জন্য ।


সারমদের বড় ভাই মনসুর সঙ্গীতে উচ্চ শিক্ষা নেওয়ার জন্য শিকাগো যান এবং নাইন ইলাভেনের পর জঙ্গি সন্দেহে গ্রেফতার হন ।

সারমদ এবং মনসুরের চাচাতো বোন(মেরি/মরিয়ম) লন্ডনে থাকেন , এবং ক্রিশ্চিয়ান ছেলের সাথে তার গভীর প্রণয় থাকে। কিন্তু মেয়ের এই সম্পর্ক মেনে নেন নি তার বাবা । এই হারাম(!) কাজের হাত থেকে মেয়েকে রক্ষা করার জন্য মেয়েকে নিয়ে আসেন পকিস্তান , মেয়ের অমতেই বিয়ে দিতে চান নিজের বড় ভাইয়ের ছোট ছেলে সারমদের সাথে ।


সারমদের বাবা মা এই বিয়েতে রাজী না হওয়ায় মোল্লা তাহিরির নির্দেশে মেয়েকে নিয়ে যান পাকিস্তান-আফগানিস্তান সীমান্তবর্তী এক গ্রামে । সেখানেই মেয়ের অমতে বাবা জোর করে বিয়ে দেন সারমদের সাথে ।

তালেবান অধ্যুষিত ঐ গ্রামে মেরি (সারমদের স্ত্রী) এর উপর করা নানা ধরণের নির্যাতন,সারমদের জঙ্গি জীবন থেকে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসা এগুলোর উপর ভিত্তি করেই এগুতে থাকে সিনেমাটি ।

কিভাবে কি হয়েছে এবং নাসিরউদ্দীন শাহ'র এই মুভিতে কি ভূমিকাই আছে সেটা জানতে হলে দেখতে হবে মুভিটি ।
তবে আগেই বলেছি এবং এখন আরেকবার বলে নিচ্ছি যে , নাসিরউদ্দীন শাহ'র পার্ট টাই সিনেমার মোড় ঘুরিয়ে দিয়েছে , এবং ইসলাম সম্বন্ধে মোল্লা তাহিরির কাছ থেকে যা জেনেছিলেন সারমদ সেটা যে ভুল ছিলো সেটাই প্রমাণ করে দিয়েছে ।



মুভিটি মিথ্যে প্রমাণ করে দিয়েছে ইসলাম সম্বন্ধে বিভিন্ন মানুষের ফ্যানাটিজম । মুভিটির কিছু গুরুত্তপুর্ন লাইন এবং তার প্রেক্ষাপট আমি কোট করছি ,

ইসলামি পোশাকের ব্যাপারে মুভ্যিটিতে বলা হয়েছে,
"Dressing is a part of culture,not of religion."


দাড়ির রাখার ব্যাপারে বলা হয়েছে যে , The beard is
a part of religion not the vice versa .
Beard is not the begining of love,
its the zenith of love ."


"Even Abu jahel had the beard ,
and his dress too was no different
than the prophet's . Bring a change in the inside,rather than the outside .
Light a fire inside,it will come out on its own ."


৯/১১ এর পর মুসলমানদের উপর করা নির্যাতনের ব্যাপারে মুভিটিতে বলা হয়েছে যে,
"I can't hate all Americans, because
some of them have done injustice to me .
In the same way, please don't hate
all muslims, because some of them
have done harm to your country. "


মুভিটির ডাউনলোড লিঙ্কঃ টরেন্ট

আইডিএম

উৎসর্গঃ তোমরা যারা হেফাজত কিংবা শিবির করো

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.