আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

জন্মই আজন্ম পাপ?

কিছু কষ্ট থাকে যা প্রকাশের জন্য সব ভাষাই ব্যর্থ। সংখ্যালঘু হবার যাতনাও তেমনি। নিজেদের সাথে ঘটে যাওয়া কিছু তুচ্ছ ঘটনা শেয়ার করছি গল্পের আদলে। ঘটনা গুলো ছোট হতে পারে কিন্তু কেন যেন ভুলতে পারি না, ভোলা যায় না!
(১)
মিষ্টি বিকেল। মাঠে আট ন’বছরের কিছু বাচ্চামেয়ে খেলছে, বরফ-পানি।

হঠাৎ একজনকে ছুঁয়ে দিতেই ‘বরফ...বরফ’ বলে শোরগোল শুরু হয়ে গেল।
এককোণে আরেকটা মেয়ে চুপচাপ দাঁড়িয়ে অসহায় চোখে খেলা দেখছে।
ওকে দেখে শেষ পর্যন্ত একজনের মায়া হল। বলল
-এই শ্যামা আয় না, খেলি।
হাসিমুখে দৌড়ে ছুটে গেল শ্যামা।

ওকে আসতে দেখে কজন বেঁকে বসল।
‘না না ওকে নিব না’... ‘ওর সাথে আড়ি’ বলে আপত্তি জানালো।
-কেন, ও আসলে কি হয়? তোরা ভারি হিংসুটে তো!
-ওমা জানিস না, ওরা তো হিন্দু, ওরা দোজখে যাবে...জানিস, ওরা নাকি নামাজও পড়ে না!
কাঁচুমাচু হয়ে আরেকজন বলল- ওদের সাথে মিশলে গুনাহ হবে..
-ধুর, বানিয়ে বানিয়ে বলিস না তো, মিশলে কিছু হয় নাকি!
-বানিয়ে বানিয়ে বলছি না তো, আমার আম্মু বলেছে।
-তুই একটা মিথ্যুক। তাহলে আগে যে আমরা ওকে খেলায় নিতাম, কেন?
-তখন তো জানতামই না যে ও হিন্দু, জানলে তো মিশতামই না।


কথায় ব্যস্ত হয়ে ছিল ওরা, তাই খেয়ালই করল না শ্যামা নামের হিন্দু মেয়েটা যে কিনা দোজখে যাবে সে কাঁদতে কাঁদতে চলে গেছে।
(২)
সকাল এগারটা। আজকে তুষারের ধর্ম পরীক্ষা। এক ঘণ্টা পেরিয়ে গেছে, পরীক্ষার হলে পিনপতন নিস্তব্ধতা, সবাই ঘাড় গুঁজে লিখছে। অস্থির লাগছে তুষারের, এখনো প্রশ্ন পায় নি সে।

স্যারের দিকে করুণ চোখে তাকাচ্ছে বারবার।
স্যার বললেন- তোমার কথা তো মনে ছিল না, একটু অপেক্ষা কর, প্রশ্নটা লিখে আনতে পাঠিয়েছি।
-স্যার এক ঘণ্টা তো পার হয়ে গেল...
-আরে খুব সহজ বিষয়, তাড়াতাড়ি লিখে ফেলতে পারবে।
আরো আধঘণ্টা পর হাতে লেখা একটা প্রশ্ন পেয়ে হাঁফ ছেড়ে বাঁচল তুষার। দ্রুত হাতে লিখছে সে, ঘন ঘন ঘড়ি দেখছে।

সব প্রশ্নের উত্তর লেখা চাই, এই সাবজেক্টে কম পেলে প্লেসে থাকতে পারবে না সে।
(৩)
ফোর্থ ইয়ারের ক্লাশ চলছে। সাবজেক্ট বেশ খটোমটো, নিরস- কমিউনিটি মেডিসিন। ছাত্রছাত্রীরা খোশগল্পে মগ্ন। তবু পূজা খুব মনোযোগ দিয়ে লেকচার শোনার চেষ্টা করছে।

কারণ পাশে বসা মেয়েটার সাথে কথা বলতে মোটেও রুচি হচ্ছে না তার। গায়ে পড়া স্বভাবের মেয়েটা একটু আগে কথা বলতে শুরু করেছিল এভাবে-
-আচ্ছা পূজা, তোদের ইন্ডিয়াতে আত্মীয় স্বজন আছে, তাই না?
-হুম, কিছু আছে। হঠাৎ এই প্রশ্ন কেন?
-তোরাও তো চলে যাবি নিশ্চয়ই? কবে যাবি,পাশ করার পর?
মেজাজ সপ্তমে চরে গেল পূজার। রাগে অন্ধ হয়ে চিবিয়ে চিবিয়ে উত্তর দিল
-তোরা দয়া করে যতদিন তোদের দেশে থাকতে দিবি ততদিন থাকবো, তারপর একদিন চলে যাব!
মেয়েটা কিছুক্ষণ অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকল, হয়ত একটা মালাউনের কাছ থেকে এতটা আস্পর্ধা সে মোটেও আশা করে নি!
(৪)
পলাশদের গ্রামের বাড়িতে এবারও প্রতিমা তৈরি হচ্ছে, পূজোর আমেজ সারা বাড়ি জুড়ে। ভার্সিটির বন্ধুরা সব দল বেঁধে পলাশের সাথে বেড়াতে এসেছে, পূজো দেখবে বলে।

গ্রামের বন্ধুরাও জুটে গেছে এরই মধ্যে, পলাশদের বাড়িতে তাই এখন চাঁদের হাট!
একসময় শারদ চাঁদটা যখন পেঁজা তুলোর আড়ালে চলে গেল, পলাশদের আড্ডা যখন ঝিমিয়ে পড়ল আর পুরো বাড়ি ঘুমে হয়ে গেল কাদা তখন আচমকা বাড়ির উঠোনে শুরু হল হুটোপুটি। কারা যেন মণ্ডপে গিয়ে দরজা ভেঙ্গে ফেলছে। শব্দ পেয়ে পলাশ জেগে গেল, ছুটে গেল প্রতিমার কাছে… পেছন পেছন ছুটে গেল শহুরে বন্ধু-গেঁয়ো বন্ধু মাসুদ, জুয়েল…হাসানরা! ওদের কাছে পরাস্ত হয়ে পালিয়ে গেল দুষ্টু লোকগুলো। শেষ পর্যন্ত প্রতিমা রয়ে গেল অক্ষত।
শেষ ঘটনাটা কাল্পনিক।

এরকম ঘটে কিনা জানি না। কিন্তু এমন ঘটনা অসম্ভব কিছু নয় বলেই বিশ্বাস করতে ইচ্ছে করে।

সোর্স: http://www.sachalayatan.com/

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.