আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

আইসিসির প্রস্তাবনা এবং বাংলাদেশের করণীয়।



একদম গোটা গোটা অক্ষরে পরিষ্কার ইংরেজিতে লেখা আইসিসির প্রস্তাবনাগুলো পড়ার পর আন্ডার মেট্রিক একজন ক্রিকেট অজ্ঞেরও সত্যটা উপলব্ধি করতে দেরি হওয়ার কথা না। সেখানে বাংলাদেশ ক্রিকেটের বোর্ডের কর্তাব্যক্তিরা মিটিংয়ে নাকি বিসিসিআই-সিএ-ইসিবি'র প্রস্তাবনায় সম্মত হয়েছেন! এতদিন দেখেছি, পরিচালনা পর্ষদে কতধরণে ক্রিকেট অজ্ঞরা থাকে। আলী আসগর লবীর মত মানুষও এককালে ক্রিকেটের হর্তাকর্তা ছিলো। কিন্তু যে জিনিসটা খুব অবাক করলো তা হলে ২৩ জনের মাঝে আইসিসির প্রস্তাব মেনে নেওয়াদের মাঝে ফারুক-বাশার-নান্নুরাও ছিলেন! এ তো স্রেফ বাংলাদেশ ক্রিকেটের সাথে রাজাকারি কাজ কারবার! নাজমুল হাসান পাপন এও নাকি বলেছেন, 'আগামী দশ বছর টেস্ট খেললেও আমাদের র্যাংকিংয়ের ৮ নাম্বারে ওঠা হবে না'! কী ধৃষ্টতা! বলেছেন ভোটিংয়ের সময়ে 'ঝোপ বুঝে কোপ' দেওয়ারও। ওয়েল, ভোটিংটা কি পাপন সাহেবকে দেখিয়ে হবে? ঝোপটা দেখতে পারলেই না কোপ!

আজেবাজে শব্দ খরচ করে লাভ নেই।

ইন্ডিয়া-অস্ট্রেলিয়া-ইংল্যান্ডকে গালি দিয়েও লাভ হবে না। এটা হাসিনা-খালেদা না যে সাধারণ আন্দোলনে চাপে থাকবে। ব্যাপারটা বৈশ্বিক। সুতরাং অনলাইনে 'শ্লার ইন্ডিয়া, শ্লার অস্ট্রেলিয়া' বা 'বাকি সাতটা দেশ মিলে আমরা আলাদা খেলুম' লিখে একদমই কোনো লাভ নেই। তো এই মুহূর্তে করণীয় কী? সহজ হিসেবে বাংলাদেশের করণীয় খুব কম।

আবার যেটুকু করণীয় সেটাও খুব বেশি। জানামতে বাংলাদেশের হাতে আছে ১ টা মাত্র ভোট। যেটাকে নাজমুল হাসান পাপন 'ঝোপ বুঝে কোপ'এর ক্যাটাগরিতে ব্যবহার করতে চাচ্ছেন। আমাদের কাজ স্রেফ ভোটটা আমাদের স্বার্থে ব্যবহার করতে বাধ্য করানো। একটু ব্যাখ্যা দেই।

দশটা পূর্ণ সদস্য দেশের ৩ টা ভোট ক্রিকেটের তিন মোড়ল রাষ্ট্র অলরেডি তাদের পক্ষে বুকিং করে রেখেছে। প্রস্তাব অনুমোদন হতে তাদের দরকার আর ৩ টা ভোট। প্রস্তাব অনুমোদন বাতিল করতে বাকি ৭ টা রাষ্ট্রের ৬ টার ভোট প্রয়োজন। যদ্দুর জানা গেছে শ্রীলংকা, দক্ষিণ আফ্রিকা আর পাকিস্তান এই প্রস্তাবনার বিপক্ষে। স্বাভাবিক হিসেবে জিম্বাবুয়েও বাংলাদেশের কাতারে পড়বে, মানে টেস্ট না খেলে কন্টিনেন্টাল কাপ খেলতে হবে তাই জিম্বাবুয়েরও এই প্রস্তাবনার বিপক্ষে অবস্তান নেওয়ার কথা।

বাংলাদেশ বাদে এরপর বাকি থাকে কেবল ওয়েস্ট ইন্ডিজ আর নিউজিল্যান্ড। জানামতে অস্ট্রেলিয়া-নিউজিল্যান্ডের মধ্যে ক্রিকেটীয় সুসম্পর্ক নেই। তাই অস্ট্রেলিয়ার কর্তাগিরি নিউজিল্যান্ডের মেনে নেওয়ার কথা না। সুতরাং নিউজিল্যান্ডকেও পাশে পাওয়া যেতে পারে। বাকি থাকলো ওয়েস্ট ইন্ডিজ।

ধারণা করি, ওয়েস্ট ইন্ডিজ টাকা আর প্রলোভনের কাছে বিক্রি হতে পারে। সে সম্ভাবনা অবশ্য জিম্বাবুয়েরও আছে। তাতেও ভোটিংয়ের ফলাফল ৫-৫ হলেও প্রস্তাবনা পাশ ঠেকানো যায় বলেই বোধ করি। আর এই অবস্থায় বাংলাদেশের ভোটটা খুব, খুব মূল্যবান হয়ে দাঁড়ায়। এই একটা ভোটের ভুল ব্যবহারই হয়তো ক্রিকেটকে অন্ধকার যুগে ঠেলে দিতে পারে।

স্রেফ একটা ভোটে ক্রিকেটেরই ভাগ্যলিখন হয়ে যেতে পারে। তাই ভোটটার গুরুত্ব শুধু বাংলাদেশের স্বার্থেই না, ক্রিকেটের স্বার্থেও।

২৮ এবং ২৯ তারিখ দুবাইতে আইসিসির সভা বসবে। ওই সভাতেই আগামী দিনের ক্রিকেটের ভাগ্য লিখন হবে। নাজমুল হাসান পাপন ২৭ তারিখেই দুবাইয়ের উদ্দেশ্যে দেশ ত্যাগ করবেন বলেই ধারণা করি।

তার মানে হাতে আছে ২৫ এবং ২৬ তারিখ। মাত্র দু' দিন। যেহেতু আইসিসি পর্যন্ত বাংলাদেশ থেকে বিসিবির একটা প্রতিনিধি দলই যাবে, আমি বা আপনি যাবো না, তাই চাপটা সৃষ্টি করতে হবে বিসিবির উপর যাতে 'ঝোপ বুঝে কোপ'-এর জায়গায় 'না ভোট'টা তারা দেশ থেকেই নিশ্চিত করে যান। এটুকু করতে পারলেই হবে। এর বেশি করারও এই মুহূর্তে কিছু আছে বলে মনেও হয়না।

আর এজন্য অনলাইনের না, একটা জোরালো অফলাইনের আন্দোলন খুব দরকার।

আমি শীতের রাতে সারারাত জেগে থেকে বিশ্বকাপের টিকিট কেটেছিলাম। পরীক্ষার জন্যে বিশ্বকাপ দেখা না হলেও সে রাতে শত শত মানুষের চোখে যে ক্রিকেটাবেগ দেখেছিলাম তার সাথে আর কোনো আবেগের তুলনা চলে না। মিরপুরে এশিয়া কাপে বাংলাদেশ-ভারত ম্যাচের শেষে যখন বাংলাদেশ জেতে তার সাথে সাথে একদমই অপরিচিত এক লোক আমাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরেছিলো। এত শক্ত করে ধরেছিলো যে আমার মনে হয়েছিলো শুকনা-পটকা ওই লোকটা সারাজীবনে আর কিছু ধরতে এত শক্তি ব্যয় করেনি।

এদেশে ক্রিকেটে কোনো সাম্প্রদায়িকতা নেই। এই প্রশ্নে সমগ্র বাংলাদেশ এক, সব সম্প্রদায় অভিন্ন। এশিয়া কাপেই দেখেছিলাম দিনরাত একে অন্যের বিষেদাগার করা হাসিনা-খালেদাকেও এক ছাদের নিচে নিয়ে এসেছিলো এদেশের ক্রিকেটাররা। আমি নিশ্চিত, এই ভালো না থাকার দেশে অসংখ্য সুন্দর দিন উপহার দেওয়া, বিষন্ন সন্ধ্যাগুলো রাঙিয়ে দেওয়া এই ক্রিকেটের স্বার্থে আরেকবার রাস্তায় নামতে আপনাকে ডাকা লাগবে না। আমি জানি সেই শীতের রাতে টিকেট কাটার মত আমি, আপনি, আমরা আবার একই লাইনে এসে দাঁড়িয়ে যাবো।

এই স্ট্যাটাসটা শুধু দু'টো তারিখ মনে করিয়ে দিতেই, ২৫ এবং ২৬ শে জানুয়ারি।

পুনশ্চ: 'আগামী দশ বছর টেস্ট খেললেও বাংলাদেশের র্যাংকিংয়ের ৮ এ ওঠা হবে না' কথাটা বলার ধৃষ্টতা দেখানোর জন্যে জনসম্মুক্ষে বাংলাদেশ ক্রিকেট টিমের কাছে পাপনের ক্ষমা চাওয়ার দাবী উঠুক।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.