আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

দুটি চাঞ্চল্যকর জবানবন্দি

দশ ট্রাক অস্ত্র মামলায় দণ্ডিত চোরাকারবারি হাফিজুর রহমান ও এনএসআইর সাবেক পরিচালক উইং কমান্ডার সাহাবুদ্দিন আহমেদের ১৬৪ ধারায় দেওয়া জবানবন্দি সে সময় তুমুল চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করেছিল। ২০১০ সালের ফেব্রুয়ারিতে হাফিজুর রহমানের জবানবন্দি নেওয়া হয় প্রায় ১১ ঘণ্টা ধরে। অন্যদিকে সাহাবুদ্দিন জবানবন্দি দেন প্রায় ১২ ঘণ্টা। দেশের ইতিহাসে এ জবানবন্দি দুটি সময়ের দিক থেকে রেকর্ড সৃষ্টি করে। আবার জবানবন্দি দেওয়ার পর দুই আসামি তা প্রত্যাহারেরও আবেদন জানান।

হত্যার হুমকি দিয়ে জবানবন্দি নেওয়া হয় অভিযোগ তুলে প্রত্যাহারে নিজ হাতে লেখা আবেদন জানিয়েছিলেন হাফিজ। সাহাবুদ্দিনও হত্যার হুমকি দিয়ে জবানবন্দি নেওয়া হয় বলে আদালতের কাঠগড়ায় দাবি করেন। তৎকালীন মহানগর হাকিম মোহাম্মদ মাহবুবুর রহমান এ দুজনের জবানবন্দি গ্রহণ করেন। হাফিজের জবানবন্দি : হাফিজ বলেছেন, অস্ত্রগুলো সরকারের জেনেই তিনি খালাসের ঠিকাদারি নেন। পরে ঘটনাস্থলে চট্টগ্রামের তৎকালীন ডিসি (পোর্ট) আবদুল্লাহেল বাকি ও এসি (পোর্ট) মাহমুদুর রহমানের ভূমিকার কারণে তিনি বুঝতে পারেন, এগুলো উলফার।

এর সঙ্গে সরাসরি সম্পৃক্ত গোয়েন্দা সংস্থা এনএসআই ও ডিজিএফআইর কয়েকজন কর্মকর্তা। যেহেতু সরকারের দায়িত্বশীল এ দুটি সংস্থার লোকজন সার্বক্ষণিক তদারকিতে ছিলেন সেহেতু তিনি ধারণা করেছিলেন এ অস্ত্র রাষ্ট্রের। তিনি ২০০৫ সালে গ্রেফতারের পর প্রথম জিজ্ঞাসাবাদেও এসব তথ্য দিয়েছিলেন। কিন্তু উপস্থিত পুলিশ কর্মকর্তারা তখন তাকে হুমকি দিয়ে বলেছিলেন, 'এসব কথা বললে তুই মরবি'। হাফিজুর রহমান আরও জানান, রাতে অস্ত্র বহনকারী জাহাজটিকে পথ দেখাতে নৌবাহিনীর জাহাজ থেকে আলো ফেলে সাহায্য করা হয়।

প্রথমে এ চালান খালাসের চিন্তা ছিল চট্টগ্রাম বন্দরে। কিন্তু সেখানে সমস্যা হবে মনে করে নেওয়া হয় সিইউএফএল জেটিঘাটে। নিজেকে সে ফ একজন শ্রমিক সরবরাহকারী বলে দাবি করেন হাফিজ। তৎকালীন সরকারের কোনো মন্ত্রী জড়িত কি না- এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, সরাসরি খালাস প্রক্রিয়ায় দুটি গোয়েন্দা সংস্থার কর্মকর্তারা ভূমিকা রাখেন। তবে তারা কাদের নির্দেশনায় কাজ করেছেন, তা তার জানা নেই।

আর অস্ত্র বহনকারী জাহাজ দেখলেও অন্ধকারের জন্য তিনি জাহাজটির নাম দেখেননি। হাফিজ অস্ত্র খালাসে জড়িত থাকার কথা অস্বীকার করেননি। তবে তার দাবি, অস্ত্রগুলো যে ভারতের বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠন উলফার ছিল তা তিনি জানতেন না। এমনকি পণ্যগুলো যে অস্ত্র ছিল, তাও তার অজানা ছিল। সাহাবুদ্দিনের জবানবন্দি : এনএসআইর সাবেক উইং কমান্ডার সাহাবুদ্দিনও আদালতে ফৌজদারি কার্যবিধির ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দেন।

তিনি এতে উলফা নেতা পরেশ বড়ুয়ার সঙ্গে ডিজিএফআইর মহাপরিচালক মেজর জেনারেল (অব.) রেজ্জাকুল হায়দার চৌধুরীর সম্পর্কের বর্ণনা দেন বলে সম্পূরক অভিযোগপত্রে উল্লেখ রয়েছে। সাহাবুদ্দিন জবানবন্দিতে জানান, তিনি অসুস্থ হয়ে ২০০৪ সালের ৩০ মার্চ সিএমএইচে ভর্তি হন। ৩১ মার্চ বিকালে রেজ্জাকুল হায়দার পরেশ বড়ুয়াকে সঙ্গে নিয়ে সাহাবুদ্দিনকে দেখতে যান। সেখানে রেজ্জাকুল হায়দার তাকে জানান, অস্ত্র আসার তারিখ পরিবর্তন হয়েছে। পরে পরেশ বড়ুয়াকে নিয়ে সিএমএইচ ত্যাগ করেন রেজ্জাকুল।

সাহাবুদ্দিন আরও জানান, এনএসআই মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আবদুর রহিম তাদের ডেকে অস্ত্র আসার বিষয়টি জানিয়ে খালাসকারীদের সহযোগিতা করতে বলেছিলেন। মূলত সাহাবুদ্দিনের বক্তব্যেই আসামির তালিকায় নাম ওঠে আবদুর রহিমের। এরপর ২০১২ সালের ২২ মে সাক্ষ্যে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের (সিএমপি) সাবেক কমিশনার এস এম সাবি্বর আলী জানান, ঘটনার দিন রাত আনুমানিক ৩টার দিকে ডিসি (পোর্ট) আবদুল্লাহেল বাকি সেখানে পেঁৗছে এনএসআইর উপ-পরিচালক মেজর লিয়াকত হোসেনকে দেখতে পান। লিয়াকত নিজের পরিচয় দিয়ে বলেন, ঊধর্্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে মালামাল খালাস করা হচ্ছে, আপনি কেন আটকাচ্ছেন, বরং খালাসের ব্যাপারে সহযোগিতা করুন। এরপর মেজর লিয়াকত এনএসআই মহাপরিচালক আবদুর রহিমের সঙ্গে কথা বলার জন্য ডিসি বাকির দিকে মোবাইল ফোনসেট এগিয়ে দেন।

কিন্তু তিনি কথা বলতে অস্বীকার করেন।

 

 

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।