আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ওরা দুটি বোন

খুব গোলমেলে, নিজেও ভাল জানি না। তবে আছে,এই ঢের।

এ হ'ল হেলেন,এক কালো সাহেবের মেয়ে। হেলেনেরও গায়ের রঙে ঘোর আঁধার ঘনিয়ে। আসলে ওরা দুটি বোন, পূর্ণিমা অমাবস্যার মত।

ওরা সব থাকে চাঁদনীর ঘুপচি গলিতে। দিনের আলো যেখানে ঢুকতে অনুমতি পায় না। ঐ চাঁদের আলো,সেও বুঝি সকলের জন্য নয়। সেই একবার সেই কালো সাহেবের বুকের অসুখ হল। চারপাশে আরো বেশি বেশি আঁধার, চোখের চারপাশ ঘিরে কালো,অথচ মেয়েদের ফুটিফুটি সময়, পোড়া সময় তার কোনো হিসেব বোঝে না।

বড় মেয়ের পড়াশোনা ততদিনে শেষের দিকে। বড় মেয়ের গায়ে দুধে আলতা রঙ। মায়ের মত। তার তখন প্রেম তুঙ্গে এক গোরা সাহেবের সাথে। কালো সাহেব ধুঁকছে শ্বাসকষ্টে,আর বড় মেয়ে তার ওড়ার স্বপ্নে বিভোর।

গোরা সাহেবের পাখনায় ভর ; সে তখন উড়ছে। তারপর একদিন বিয়ের গাউন গায়ে গোরা সাহেবের হাত ধরে সে উড়ে যায় দূর বহুদূর বিলেতের পথে। প্লেনের শব্দে কানে তালা লাগে তার। উত্তরাধিকার থেকে যায়, কালো মেয়ে হেলেনের বুকে অসুখ। চাঁদনীর অন্ধকার গলির ততধিক অন্ধকার ঘুপচি ঘরে এখন এক বুড়ি মা আর হেলেনের বাস।

অষ্টম শ্রেনীর পরে হেলেনের আর পড়া হয়নি। যা হয়, হেলেন এখন বাড়ি বাড়ি ঘুরে টিউশনি করে। সপ্তাহে সাতদিন। তার ছাত্রদের বয়েস তিন থেকে আট। তাদের প্রাইমারী জীবনে হেলেন জুড়ে আছে এখন ক্ষেপে ক্ষেপে দুপুর বারোটা থেকে রাত আটটা।

হেলেনের পড়ানোর সময়। এক এক ঘন্টা সময় হেলেন তার এক একটি ছাত্রকে দেয়। ঘড়ি ধরে হেলেন পড়াতে যায়, আবার ঘড়ি ধরে উঠে পড়ে। ট্রামে বাসে চাপে না হেলেন। আর অটোতেও নয়।

হেঁটে হেঁটে এবাড়ি ওবাড়ি ঘুরে ঘুরে সে ছেলে পড়ায়। ছোটোখাটো দেখতে হেলেন সুতী ছিটকাপড়ের ফ্রক পরে। পায়ে বাটার স্যান্ডাক। বারোমাস। 12টা-8টা।

বর্ষায় হেলেন নিজেকে ঢেকে রাখে সাদা বার্ষাতিতে। শীতে ওয়েলিংটনের মোড় থেকে কেনা গলাঢাকা সোয়েটারে। বড়দিনে হেলেন আর তার মা কেক বানায়। ছোট্টো ছোট্ট কেক। লুকনো বুকের ব্যথার মত,ভেতরে টুকরো শুকনো ফল।

হেলেন আর তার মা কেক বানায় হেলেনের ছাত্রদের জন্যে। বড়দিনে সে একটি করে কেক আর এক প্যাকেট চকোলেট উপহার দেয় তার ক্ষুদে ছাত্রদের। উজ্জ্বল হাসিতে উদ্ভাসিত হয় কালো মেয়ে হেলেনের মুখ। বুকের ব্যথার মত মাতৃত্ব যেন চাপা রোগ, কখনও সখনও ঝিলিক মারে মেয়েদের ভেতর। রোদ্দুর কখনো না এলেও।

নতুন ছিটকাপড়ের ফ্রকে হেলেন ঘুরে ঘুরে- তার ছাত্রদের বড়দিনের কেক দেয়। সেদিন রাস্তায় দেখা হয়ে যায় হেলেনের সাথে। এমনি এক বড়দিনে ছোটোখাটো দেখতে হেলেন আরও অনেকখানি ছোট হয়ে গেছে আকারে। অটো থেকে নামছিল, দেখে অবাক হই। জিজ্ঞেস করি, হেলেন তুমি অটোতে? ছোট্ট হয়ে যাওয়া হেলেন উজ্জ্বল হেসে বলে, এখন আর হাঁটতে পারি না যে! বুকের পুরোনো রোগ বাপ তাকে দিয়ে গেছে তার গায়ের রঙের মত।

রোগ লুকিয়ে থাকে, ভালবাসা ঠোঁট বাঁকিয়ে হাসে, ওয়েলিংটন থেকে কেনা পুরোনো সোয়েটারে ঢাকা কালো মেয়ের যৌবন কখন আসে আর যায় সে খেয়াল কেউ রাখেনি, চাঁদ বা সূর্য কেউ উঁকি মারেনি তাদের ঘুপচি ঘরে, এ যাবত, তবু মাতৃত্ব ঘুমিয়ে থাকলেও বার্ধক্য জানান দেয় হেলেনের মনুষ্য জন্মের কথা! ওরা আসলে দুটি বোন, যৌবনের পরপর বার্ধক্য আসে।


এর পর.....

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।