আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

চলতি সপ্তাহেই বিএনপির আহ্বায়ক কমিটি

রাজপথের আন্দোলনে ব্যর্থ ও স্থবির সাংগঠনিক কার্যক্রমে গতি আনতে চলতি সপ্তাহের যে কোনো দিন ঢাকা মহানগরের নতুন আহ্বায়ক কমিটি দিতে পারেন বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া। কমিটির সদস্যসংখ্যা হতে পারে ২১। মেয়াদ হবে এক মাস। দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতাদের ওয়ার্ড, থানা ও মহানগরে পূর্ণাঙ্গ কমিটি দেওয়ার নির্দেশনা থাকবে। বর্তমান কমিটির আহ্বায়ক সাদেক হোসেন খোকাকে জেলে রেখেই আগামী সোমবার রাতে আগের কমিটির সঙ্গে জরুরি বৈঠক ডেকেছেন বেগম জিয়া।

এটাই বর্তমান আহ্বায়ক কমিটির সঙ্গে বিএনপি চেয়ারপারসনের শেষ বৈঠক বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। এদিকে সাংগঠনিক কার্যক্রমে গতি আনতে ঢাকা মহানগর সংগঠনকে দুই ভাগে ভাগ করার বিষয়েও আলোচনা চলছে। বৃহস্পতিবার রাতে দলের স্থায়ী কমিটির বৈঠকে এ নিয়ে বিস্তারিত কথা হয়। আগামী সোমবার বৈঠকের বিষয়টি স্বীকার করে ঢাকা মহানগর বিএনপির সদস্যসচিব আবদুস সালাম বাংলাদেশ প্রতিদিনকে জানান, ওই দিন রাতে গুলশান কার্যালয়ে বর্তমান কমিটিকে ডেকেছেন চেয়ারপারসন। নেতাদের বক্তব্য শুনে বেগম জিয়া দলের নতুন কোনো সিদ্ধান্ত থাকলে জানাতে পারেন।

তবে নতুন কমিটির বিষয়ে তার কিছুই জানা নেই বলেও মন্তব্য করেন তিনি। ২০১১ সালের ১৪ মে যুক্তরাজ্য সফরে যাওয়ার দিন বেগম খালেদা জিয়া বর্তমান আহ্বায়ক কমিটি অনুমোদন করেন। কমিটি দেওয়ার সময় নিজের হাতের লেখা নির্দেশনায় বেগম জিয়া বলেন, এ আহ্বায়ক কমিটি আগামী ছয় মাসের মধ্যে সর্বস্তরের কাউন্সিল অনুষ্ঠানের মাধ্যমে ঢাকা মহানগর শাখার পূর্ণাঙ্গ কমিটি নির্বাচন করবে। প্রায় দুই বছরেও বেগম জিয়ার এ নির্দেশনা বাস্তবায়ন করা হয়নি। খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, দুই বছর চলে গেলেও মহানগর বিএনপির পূর্ণাঙ্গ কমিটি দিতে ব্যর্থ হয়েছেন দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা।

একইভাবে অধিকাংশ থানা ও ওয়ার্ডেরও কমিটি গঠন করতে পারেননি তারা। এরই মধ্যে যে কয়টি থানা ও ওয়ার্ড কমিটি দেওয়া হয়েছে তার বিপরীতে পাল্টা কমিটিও এসেছে। মহানগর বিএনপির দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা বলেন, ঢাকা মহানগরে এমপি প্রার্থীরা চান একভাবে কমিটি, দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা চান অন্যভাবে। আবার স্থায়ী কমিটি থেকে শুরু করে অঙ্গ সংগঠনের শীর্ষ নেতারাও চান তাদের মতো করে কমিটি। সবার মন জয় করতে গিয়ে অনেক স্থানে কমিটি গঠন করা যায়নি বলেও স্বীকার করেন তারা।

জানা গেছে, সোমবার রাতে বৈঠকের পর পরই বর্তমান কমিটি ভেঙে দেওয়া হতে পারে। আবার পর দিন মঙ্গলবার নতুন কমিটির ঘোষণা আসতে পারে। এদিকে, ২১ সদস্যবিশিষ্ট নতুন আহ্বায়ক কমিটির প্রধান চূড়ান্ত না হলেও দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, আ স ম হান্নান শাহ ও ব্যারিস্টার রফিকুল ইসলাম মিয়ার নাম শোনা যাচ্ছে। তবে শারীরিক অসুস্থতার কারণে হান্নান শাহ এরই মধ্যে তার ঘনিষ্ঠজনদের কাছে 'না' জানিয়ে দিয়েছেন। অন্যদিকে গতকাল ব্যারিস্টার রফিকুল ইসলাম মিয়া বাংলাদেশ প্রতিদিনকে জানিয়েছেন, এই বয়সে তিনি এ ধরনের দায়িত্বের কথা ভাবছেন না।

মির্জা আব্বাসের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি। জানা গেছে, স্থায়ী কমিটির বৈঠকে দলের কয়েকজন সিনিয়র নেতা নগর বিএনপি আহ্বায়ক সাদেক হোসেন খোকাকে কারাগারে রেখে কমিটি গঠনের বিরোধিতা করছেন। অবশ্য কেউ কেউ বলছেন, খোকার কারাগার থেকে বের হতে দেরি হবে। সে পর্যন্ত অপেক্ষা করতে গেলে কমিটি গঠন শেষ পর্যন্ত নাও হতে পারে। সূত্র জানায়, বৃহস্পতিবার রাতে বিএনপির স্থায়ী কমিটির বৈঠকে আন্দোলনে মহানগরের বর্তমান কমিটির ভূমিকা নিয়ে বিভিন্ন সমালোচনা হয়।

২৯ ডিসেম্বর ঢাকায় তাদের আত্দগোপনের সমালোচনা করা হয়। একইভাবে কথা ওঠে সাদেক হোসেন খোকা জেলে থাকা অবস্থায় মহানগরের প্রভাবশালী অন্য নেতাদের ভূমিকা নিয়েও। বাইরে অনেক কথা বললেও আন্দোলনে তাদের ভূমিকাও শূন্যের কোঠায় বলে মনে করেন স্থায়ী কমিটির অনেক সদস্য। ঢাকা মহানগরের অন্য অঙ্গ সংগঠনের নেতাদের ভূমিকারও সমালোচনা করা হয়। তাই সার্বিক দিক বিবেচনায় একজন ক্লিন ইমেজের সাংগঠনিক দক্ষতাসম্পন্ন নেতার নেতৃত্বে মহানগর কমিটি ঢেলে সাজানোর ব্যাপারে সবাই একমত পোষণ করেন।

একইভাবে মহানগরের পর পরই ছাত্রদল, যুবদলসহ অন্যান্য অঙ্গ সহযোগী সংগঠনেরও নতুন কমিটি দেওয়া হবে বলে বিএনপির নীতিনির্ধারক পর্যায়ের একাধিক নেতা জানান। ঢাকা মহানগরের দায়িত্বপ্রাপ্ত আহ্বায়ক পর্যায়ের এবং থানা ও ওয়ার্ড পর্যায়ের নেতাদের অধিকাংশই আর্থিকভাবে বিত্তশালী। বিশেষ করে সাবেক ওয়ার্ড কাউন্সিলরদের প্রায় সবাই বাড়ি, গাড়িসহ বিশাল সম্পদের অধিকারী। অনেকের সম্পদ শত কোটি ছাড়িয়ে গেছে। বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর তারা স্থানীয় আওয়ামী লীগের পাশাপাশি থানা পুলিশ প্রশাসনকে 'ম্যানেজ' করে চলছেন।

নিজেদের সম্পদ বাঁচানোর জন্য তাদের নির্দেশনা অনুযায়ী ওয়ার্ড পর্যায়ে সরকারবিরোধী মিছিল-মিটিং করতে পারছেন না। কর্মী-সমর্থকরা বিভিন্ন সময় মিছিল বের করতে চাইলে তাদের বলা হচ্ছে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে যেতে। দীর্ঘ দিন অবরুদ্ধ থাকা কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের আশপাশেও বিপুলসংখ্যক পুলিশ-র্যাবসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী অবস্থান করছে নিয়মিত।

 

 

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।