আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

চলতি পথে পাওয়া-৪,৫,৬,৭

"চলতি পথে পাওয়া" সিরিজ টা নিয়ে একটু বলি আগে। নাম শুনে মনে হতেই পারে যে এটা হয়ত পথ চলতে গিয়ে দেখা বিভিন্ন ঘটনার বর্ণনা। হুম, হতে পারে। তবে তার চেয়েও বেশি হচ্ছে চলার পথে বসে থাকার সময় কতক বিচ্ছিন্ন ঘটনা দেখে বা এমনিতেই মনের ভেতর বিভিন্ন এলোমেলো চিন্তা ঘুরপাক খায়, তাদের বর্ণনা। লেখার ধরণ সাইকোডেলিক, অ্যাবস্ট্রাকটিভ, ম্যাজিক রিয়ালিস্টিক, স্যুরিয়ালিস্টিক আবার খুব সাধারণ বর্ণনাও হতে পারে।

চলতি পথে পাওয়া-১,২,৩
৪.
শহরের এই দিক টা আবছা অন্ধকার আর গাছে ঘেরা নির্জন! আকাশ জুড়ে চিল আর শকুনের ঝাঁকের নিরন্তর টহল চলছে। যদিও শহরের আনাচকানাচে এমনকি কোথাও পড়ে নেই একটি লাশ! তবে কি এই শহরে সব চলমান মৃতদের বাস?
৫.
বলেছিলাম কি ওই পাগলটার কথা? সেই পাগলটা, যে কিনা সমস্ত ক্ষয়ে যাওয়া সিস্টেমের বিরুদ্ধে একা যুদ্ধের ঘোষণা দিয়েছিল!? আমরা আন্দোলনে বসেছিলাম দাবী দাওয়ার পশরা সাজিয়ে! ঠিক তখনই কোথা থেকে হাঁক ছাড়তে ছাড়তে এল সেই পাগল -"কি? যুদ্ধ করবা? যুদ্ধ? সেনাপতি রে কইয়া দিও, একাই যুদ্ধ করমু, চামচ নিয়া আইতাছি!" মাথায় ধরে না কিছু। অত:পর নিজের বুঝতে পারার অক্ষমতা কে "ধুর! পাগলে কি না বলে" বলে সমাধান টানি!
৬.
চলতে চলতে পেলাম একটা নদী। কি যে তার উথাল পাথাল ঢেউ!! খেয়া ঘাটে নৌকা নেই কোন। কিন্তু আমার খুব তাড়া আছে ওইপারে যাবার।

পার হব বলে চোখ বুজে এক লাফ দিলাম। চোখ খুলে দেখি পৌছে গেছি। গায়ে লাগেনি পানির একটা ফোঁটাও! পেছনে তাকিয়ে দেখি নদী উধাও!! পরে আছে কেবলই একটা সরু নালা। দিনে দিনে আমিই খুব বড় হয়ে যাচ্ছি নাকি বাকি সব ছোট হয়ে যাচ্ছে?
হাঁটতে হাঁটতে পেলাম একটা পাহাড়। বিশাল শরীর নিয়ে স্থিরতা আর দৃঢ়তার প্রতীক হয়ে মাথা উঁচু করে দাড়িয়ে আছে।

ওপার যাবার পথ নেই কোন। কিন্তু আমার তাড়া আছে ওপারে যাবার। তাই, কিছু না ভেবেই চোখ বুজে দিলাম এক লাফ। চোখ খুলে দেখি পাহাড়ের অন্যপারে!! গায়ে লাগেনি আঁচড়ের দাগ একটাও। পেছনে তাকিয়ে দেখি দাড়িয়ে থাকা পাহাড়টাও উধাও! পড়ে আছে উঁইয়ের ঢিবি যেন।

দিনে দিনে আমিই খুব বড় হয়ে যাচ্ছি নাকি বাকি সব ছোট হয়ে যাচ্ছে?
বাঁচতে বাঁচতে দেখা পেলাম এক স্বপ্নের। কত যে র্ং তার! তবে খুব ছোট্ট একটা স্বপ্ন। হাতের মুঠিতেই এঁটে যায়। অবলীলায় যেই না ধরতে গিয়েছি, হয়ে গেল একটা আকাশ!! আমি বড় হওয়ার সাথে সাথে স্বপ্নেরাও বুঝি সব বড় হয়ে যাচ্ছে!!!
৭.
উড়ো পথে একটা উড়োজাহাজ যাচ্ছিল। যেতে যেতে সে দেখল নিচে একটা বিস্তীর্ণ সবুজ বন।

তার খুব ইচ্ছে হল বনটাকে ছুঁয়ে দেখবে। কিন্তু তার তো যেখানে সেখানে নামা বারণ! তাই সে রাগে গোঁ গোঁ আওয়াজ শুরু করল! তাই শুনে উড়োজাহাজের পাইলট এটা সেটা বোতাম টিপে তাকে শান্ত করার চেষ্টা করল। তবু তার রাগ থামে না। রাগে কাঁপা শুরু করল। না পেরে পাইলট 'বিপদ সংকেত' লেখা বোতামে দিল এক টিপ।

আর তাতেই উড়োজাহাজের যাত্রীদের মধ্যে শুরু হয়ে গেল হুটোপুটি।
এতক্ষণ ঘুমোতে থাকা বয়স্ক লোকটা ভাবল যে এটা হয়ত একটা দু:স্বপ্নের সূত্রপাত। শিগগিরই ভেঙে যাবে!
৭ টা ইন্ডাস্ট্রির মালিক বিলিয়নিয়র লোকটা ভাবল যে ইশ! উইল টা আগেই কেন করলাম না!
কিছুদিন আগেই স্কাইপে তে বিয়ে হওয়া স্পাউস ভিসা নিয়ে স্বামীর কাছে যাচ্ছিল যে মেয়েটি, সে শুধু শক্ত করে সিট আঁকড়ে বসে রইল। মনে মনে জীবন কে অভিশাপ দিতে দিতে ভাবল - জীবন খুব নিষ্ঠুর! সুখ স্বপ্নের উত্তুঙ্গে তুলে কেমন নির্মমতায় আছড়ে ফেলে!
মধুচন্দ্রিমায় কত কিছু করবে ভেবে পরিকল্পনা করতে থাকা দম্পতিটি ঝাঁকুনির মধ্যেও কোনমতে তাল সামলে একে অপর কে জড়িয়ে ধরল। ছেলেটি কিছুতেই মেয়েটির গায়ে আঁচড় লাগতে দিবে না যেন! আর মেয়েটিও কয়েক মুহূর্তের জন্য নিজেকে নিরাপদ ভাবল।


আর উড়োজাহাজ টি বনের উপর আছড়ে পড়তে পড়তে ভাবল - যাক, শেষমেষ সবুজ তো ছোঁয়া হল!!!
-------------------------------------- সুবোধ অবোধ

সোর্স: http://www.sachalayatan.com/

এর পর.....

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।