আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

বৃষ্টিভেজা ভালোবাসা

বাইরে ঝিরি ঝিরি বৃষ্টি পরছে। ইপ্সিতা ঘর থেকে বেরিয়ে বেলকনীতে রাখা বেতের চেয়ারটাতে এসে বসে। হাতে এক কাপ গরম চা। কাপ থেকে গরম চায়ের ধুয়া মিশে যাচ্ছে বৃষ্টির সাথে। অনেক দিন পরে অনেক আয়োজন করে এই বৃষ্টি দেখা।

কাপে চুমুক দিতে যাচ্ছিলো। হঠাৎ এক হালকা শীতল হাওয়া এসে ইপ্সিতাকে ভিজিয়ে দিয়ে গেলো। কি যে ভালো লাগার শিহরণ জেগে উঠলো মনে...............।
এক দৃষ্টিতে বৃষ্টি দেখছে। আর মনে পরে যাচ্ছে ফেলে আসা মধুর দিনের মধুর স্মৃতি কথা মালার এক একটা বিন্দু!
টিএসসির মোড়ে বৃষ্টি ভেজা এক সকালে পরিচয় হয়েছিলোইমনের সাথে।

ইপ্সিতা তখন সবে মাত্র অনার্স প্রথম বর্ষের ছাত্রী। রিক্সার জন্য অপেক্ষা করছিলো মোড়ে দাঁড়িয়ে। কোথা থেকে একটি এসে হাজির তার সামনে রিক্সা নিয়ে।
‘ইপ্সিতা শুনো’
‘আমাকে বলছেন’?
‘হ্যা। তোমার নামই তো ইপ্সিতা তাই না’?
‘জী!বলুন’
‘রিক্সা পাচ্ছিলে না তো! এটায় যাও’
‘আপনি’?
‘সে কি চিনতে পারোনি’?
না সূঁচক জবাব দিতেই বলে উঠলো ‘ঠিক আছে,বাসায় গিয়ে চিন্তা করো আমি কে?
এখন এই বৃষ্টিতে না দাড়িয়ে থেকে বাসায় যাও’।


ইপ্সিতা কথা বাড়ালো না। এই বৃষ্টিতে বেশি ক্ষন ভিজলে জ্বর এসে যাবে। এমনিতেই বসন্তের প্রথম মিষ্টি বৃষ্টিতে ভিজে আইস্ক্রিম খেয়ে সর্দি লাগিয়ে ফেলেছে। তাই দ্রুত রিক্সায় উঠে গেলো। কিছু দূর যেতেই মনে পড়লো ধন্যবাদ দেয়া হয়নি!তবে ছেলেটির মুখচ্ছবি তার পরিচিত লাগছিলো।



বাসায় এসে ফ্রেস হয়ে একটা গল্পের বই হাতে নিতেই মনে পড়ে গেলো কে সেই ছেলেটি। আরে হ্যা, সেদিন লাইব্রেরীতে পরিচয় হয়েছিলো। তার বান্ধবী সুমনার বড় ভাই এর ফ্রেন্ড। সম্পর্কটা একটু দুরের। তাই হয় তো মনে ছিলো না।


তার কিছু দিন পরেই আবার দেখা টিএসসির মোড়ে।
‘কেমন আছো?’
পেছনে ঘুরতেই দেখলো ইমন দাঁড়িয়ে আছে।
হাসি মুখে বললো ‘ভালো ,আপনি’?
‘চিনতে পেরেছো’?
হুম।
‘কে আমি’?
‘শুভ ভাইয়ের ফ্রেন্ড ইমন’!
হ্যা,ঠিক হয়েছে। আমি তো ভেবে ছিলাম সেদিন চিনেও না চেনার ভান করেছো।


ইপ্সিতা অবাক হয়ে বললো, আপনার এমন মনে হলো কেনো?
সুন্দরী মেয়েরা আবার একটু বেশি-ই ভাব নেয় কিনা।
কে বলেছে এ কথা আপনাকে?
আমি জানি।
আপনি যা জানেন তা সঠিক নয়।
তাই বুঝি?কি আর করা!
আপনার সাথে মাত্র দু'একদিন দেখা হয়েছিলো আমার তাই চিনিতে সময় লেগেছিলো। এই আর কি।

আপনি নাম বললে সঙ্গে সঙ্গেই চিনে ফেলতাম। ইপ্সিতা রাগে গিয়ে বললো। রাগে ওর গাল দুটি লাল আভা ছড়াচ্ছিলো। তা দেখে ইমন বেশ মজাই পেলো।
আহা,রেগে যাচ্ছো কেনো? সেদিন রিক্সা ডেকে দিয়ে উপকার করলাম।

একটা ধন্যবাদ ও তো দিলে না।
দেখুন.........
থাক থাক,ইপ্সিতার মুখের কথা কেড়ে নিলো ইমন,আর সাফাই গাইতে হবে না। চা খাবে? চলো যাই,
আমি খাবো না।
তবে,আমি-ই খাবো। তুমি দেখো।


কি দেখবো?
আমার চা খাওয়া।
কারো খাওয়া দেখাটা খুব বাজে,আপনি যান তো।
এই যে আবার রেগে যায়,ক্ষণে ক্ষণে রেগে যাওয়াটাকি সুন্দরীদের প্রধান বৈশিষ্ট নাকি?
দেখুন, আমি সুন্দরী নই
হয়তো বা তোমার চোখে তা, কিন্তু আমার চোখ তো বলে ভিন্ন কথা। সেসব বাদ দাও। চলো চা খাই।


নাহ।
কেনো?এই মেঘলা দিনে রাস্তায় দাঁড়িয়ে চা খেতে মন্দ লাগবে না। সাথে রংধনুর সাত রঙ এর ছটা আর বৃষ্টির জলধারা মিশিয়ে নিলে যা লাগবে না.........
ইমনের কথা শুনে ইপ্সিতার মনেও চা খাবার লোভ জাগলো। এই স্নিগ্ধ দিনে গরম চা খেতে মন্দ হবে না।

এভাবে একটু একটু করে ভাব জমতে থাকে ইমনের সাথে।

কখনো ক্যাম্পাসের নরম ঘাসের উপরে বসে,কখনো বা চায়ের দোকানে চা খেতে খেতে। কখোনো বা ফেসবুকে। গল্প চলতো ঘন্টার পর ঘন্টা তবে গল্পের বিষয় ছিলো অদ্ভুত! কখনো খোলা আকাশ নিয়ে,কখনো বা গল্প অথবা কবিতাঁর নায়ক-নায়িকাদের প্রেম নিয়ে। গল্প হতো,ঝগড়া হতো, আবার এই হতো।

এমনি করে কখন যে ইমনের প্রেমে পড়ে গিয়েছিলো বুঝতে পারেনি।

যেদিন শুনলো ইমন ক্যাম্পাস ছেড়ে চলে যাচ্ছে সেদিন মনে হচ্ছিলো কিছু একটা হারিয়ে যাচ্ছে জীবন থেকে। বলি বলি করেও বলা হয়নি, ‘আমি তোমায় ভালোবাসি’! ইমন ও কখনো বলেনি তাকে। তবে তার কথায় মাঝে মাঝে মনে হতো সেও ইপ্সিতাকে............কিন্তু না বললে বুঝবে কি করে?

ইপ্সিতা মাঝে মাঝে বলতো ইমন কে, আমি হারিয়ে গেলে কি আপনি কষ্ট পাবেন’?
ইমন কি জেনো ভেবে চুপ থাকতো। কিছুক্ষণ চুপ থেকে বলতো ‘জানি না’! এই না জানাটা যে কত্তো কষ্ট দিয়েছে ইপ্সিতাকে!

ইমন চলেই গেলো। কোথায় গেলো জানিয়ে যায়নি।

ওর বান্ধবীর কাছে একটি কবিতার বই দিয়ে গিয়েছিলো। শেষের কবিতা। এর বইয়ের প্রথম পাতায় লিখা ছিলো,
'বলতে গিয়েও হয়নিকো বলা
করে নানান অবহেলা,
অযত্নে রইলো পড়ে
মনের কথা মনের ঘরে।
ভালো থেকো তুমি সবসময়েই
আমিও রইবো আগের মতন সেই'
এর মানে কি? ভালোবাসে সে? নাকি? একি সবই ছলনা! ইপ্সিতা কিছুই জানে না। এর পর পেরিয়ে গেছে বেশ ক’টি বছর।


এর মাঝে কত্তোবার যে ইমন এর জন্য কেদেছে ইপ্সিতা! প্রতিক্ষনেই মনে হতো, ইমন না বলুক তার উচিত ছিলো বলে দেয়া, কতটা ভালোবাসে তাকে!
কিংবা, ইমন তো একটি বার হলতে পারতো তার হাতটি ধরে, 'ভালোবাসি তোমায়!

কতবার স্বপ্নে দেখেছে ইমন তার হাতটি ধরে বলছে, তুমি কি আমার সঙ্গি হবে জীবনে চলার পথে?
কিন্তু কিছু না বলেই চলে গেছে সে। অজানা পথের সীমানায়।

তার ঠিক দু'বছর পর সেদিন দেখা হলো তার সাথে। সেই সে টিএসসির মোড়েই।
ইপ্সিতা ক্লাস শেষে ফ্রেন্ডদের সাথে গল্প করছিলো।

এর মাঝে ইমন এসে হাজির।
‘কেমন আছো ইপ্সিতা’?
ইপ্সিতারর মনে হলো সারাটা দুনিয়া মনে হয় কাঁপছে!এ কার কন্ঠ শুনছে সে?আজ এত দিন পর...কেমন করে সম্ভব এটা!
নিজেকে কোনোরকম সামলে নিয়ে বললো ‘তুমি!’
খানিকটা হেসে বললো, হ্যা আমি।
‘এতো দিন কোথায় ছিলে’?
গভীর আবেগে তুমি করেই বলা শুরু করে দিলো। ঠোট কেঁপে উঠছিলো,কন্ঠ জড়িয়ে আসতে চাইছিলো নোনাজলের স্রোতে!
একটু খানি হেসে বললো, ‘ঐ আকাশ কে প্রশ্ন কর এতো দিন কোথায় ছিলাম.........’।

নাহ একটুকুও বদলায় নি।

। এখনো সেই আগের মত করেই ছেলে মানুষি করে।
‘জানো?আমি চাকরি পেয়েছি’।
‘ওহ’
‘তুমি শুনে খুশি হওনি’!
;হ্যা হয়েছি’।
‘ভাবছি বিয়েটা এবার করেই ফেলবো।

কি বলো’?
প্রশ্নটা শুনে বেশ অবাক হলো।
‘সেটা তো আপনার ইচ্ছে’।
চলো চা খাই,যাবে?
এতো দিনের মান অভিমান,রাগ-অনুরাগ সব ভুলে ইমনের সাথে চললো ইপ্সিতা,সেই চিরচেনা মাঠের ধারে। সেদিনো কিছু বললোনা ইমন! হাকলা কথা বলেই বিদায় নিলো।
তার কিছু দিন পরে ইমন হাজির তার বাসায় সাথে তার বাবা-মা।

ব্যাপারটা বুঝতে পারছিলো না ইপ্সিতা। কি হতে যাচ্ছে। এর পর যা হলো তাতে বেশ অবাক হলো । না শুধু অবাক বললে ভুল হবে, আনন্দে আত্মহারা হয়ে মারা যাবার মতন অবস্থা তাঁর । বাবা-মাকে সঙ্গে নিয়ে অংটি পরিয়ে দিলো ইপ্সিতার হাতে।

মুখে তাঁর দুষ্টূমি মিশ্রিত দ্বিগন্ত জয়ের হাসি।
সে কি আনন্দ ইপ্সিতার। জেনো একটা স্বপ্নের মাঝে বিচরন করছে সে। চোখ দিয়ে টপ টপ করে পড়তে থাকলো আনন্দ আশ্রু।
বিয়েটাও হয়ে গেলো।

জেনো না চাইতেই সব চাওয়া পুর্ণ হলো তার।
ভাবতে ভাবতে ঠোটের কোনে হাসি ফুটে উঠোলো ইপ্সিতার। ছেলেটা একটা
ভীতুর ডিম! ভালোবাসার কথা বলার সাহস-ই নেই। তাকে ভীতু বলবে না তো কি বলবে?

সেই ভীতুর ডিম এত কাল পরে এসে এভাবে এক ঝটাকায় তাকে এমন আপন করে নিবিড় বা৺ধনে জড়াবে ,তা কি ভেবেছিলো ইপ্সিতা?
ভাবনার শেষ প্রান্তে এসে দেখলো চা টা ঠান্ডা হয়ে গেছে। আর খেতে ইচ্ছে হচ্ছে না।

একটু পরেই ইমন ওফিস থেকে ফিরবে । রাতের মেঘলা আকাশে মেঘের লুকচুরি দেখবে আজ দু’জন তারা। হাতে থাকবে ''লিখা মগে ধোয়া ছড়ানো চা, গল্পে গল্পে পাড় করবে রাত, মেঘের সাগরে চাঁদের তরীতে ভাসবে দুজনে। একান্তই দু;জনার হয়ে!।

সোর্স: http://prothom-aloblog.com

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।