আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

সামরিক হস্তক্ষেপ (Military intervention)




সম্প্রতি ইউক্রেনের সায়িত্বশাসিত ক্রিমিয়া অঞ্চলে পার্শ্ববর্তী রাষ্ট্র রাশিয়ার সৈন্য নিয়োগ করাই 'সামরিক হস্তক্ষেপ' শব্দটি আবারো বিশ্বসম্প্রদায়ের কাছে গুরুত্বপূর্ন আলোচনার বিষয় হয়ে উঠেছে । আন্তর্জাতিক আইনে সামরিক হস্তক্ষেপ বা মিলিটারি ইনটারভেনশন কি এবং কোন সময়ে করা যায় সে বিষয়েই কিছু কথা লিখলাম ।
সাধারণভাবে একটি সার্বভৌম রাষ্ট্র কতৃক অন্য একটি রাষ্ট্রের অভ্যন্তরে সেদেশের মিলিটারি নিয়োগ সবসময় অগ্রহণযোগ্য এবং আন্তর্জাতিক আইনের বিরোধী, কেননা এতে রাষ্ট্রের সার্বভৌম চেতনা ও অখন্ডতার উপর প্রকাশ্য আগ্রাসন করা হয় । ফলশ্রুতিতে আন্তরাষ্ট্রীয় সম্পর্ক ও আন্তর্জাতিক স্থিতিশিলতা রক্ষার উপর সুদুরপ্রসারী প্রভাব পড়ে । জাতিসংঘ সনদের অনুচ্ছেদ ২(৪) এ স্পষ্টভাবে বলা আছে যে, 'আন্তর্জাতিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে সকল সদস্য আঞ্চলিক অখন্ডতার বিরুদ্ধে কিংবা অন্যকোন রাষত্রের রাজনৈতিক স্বাধীনতার বিরুদ্ধে বল প্রয়োগের ভীতি প্রদর্শন থেকে এবং জাতিসংঘের উদ্দেশ্যের সঙ্গে সামঞ্জস্যহীন কোন উপায় গ্রহণ করা থেকে নিবৃত্ত থাকবে' ।

পাবলিক ইন্টারন্যাশনাল ল অনুসারে, বল প্রয়োগ ও হস্তক্ষেপ বহুপ্রকারেই হতে পারে, তার মধ্যে সরাসরি মিলিটারি ডিপ্লয়মেন্ট বা সামরিক বাহিনী অন্য একটি দেশের মধ্যে প্রবেশ হলো সবচেয়ে নিকৃষ্ট ও শান্তি রক্ষায় সর্বশেষ পন্থা হিসাবে পাবলিক ইন্টারন্যাশনাল লতে ধরা হয় । একইসাথে এ ধরণের কার্যক্রম নিয়োগকারী রাষ্ট্রের সাম্রাজ্যবাদী ও আগ্রাসী মনোভাবেরও বহিঃপ্রকাশ যা সবসময় নিন্দনীয় ।
তবে আন্তর্জাতিক আইনে কোন রাষ্ট্রের অভ্যন্তরে চলা গৃহযুদ্ধের সময় শান্তি ফিরিয়ে আনতে জাতিসংঘের মাধ্যমে বা জাতিসংঘের সহায়তায় তৃতীয় কোন রাষ্ট্রের মিলিটারি প্রবেশ স্বীকৃত প্রথা হিসাবে বিবেচিত । এছাড়াও আত্মরক্ষার স্বার্থে, ব্যপক মানবিক বিপর্যয় দেখা দিলে মানবতার স্বার্থে, বিদেশে অবস্থানকারী নিজের দেশের নাগরিকদের নিরাপত্তার স্বার্থে, কোন সন্ধি বা চুক্তির শর্তানুযায়ী রাষ্ট্রের সশস্ত্র বাহিনী অন্য একটি অঞ্চলে প্রবেশের বৈধতা পায় । তবে ক্রিমিয়ার ক্ষেত্রে সমস্যা দেখা দিয়েছে সেটি একটি স্বায়িত্বশাসিত অঞ্চল এবং তাই সে অঞ্চলটি যেহেতু সার্বভৌম নয়, তাই সেখানকার প্রধানমন্ত্রীর আহবানে সে অঞ্চলের শান্তিশৃংখলা রক্ষায় তৃতীয় একটি দেশের মিলিটারি প্রবেশ আদৈও আন্তর্জাতিক আইনে বৈধ কি না, নাকি এটি নিছক ঐ অঞ্চলে রাশিয়ার প্রভাব বলয় (sphere of influence) বজায় রাখার জন্য হস্তক্ষেপ তা নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে ।


হস্তক্ষেপ সংক্রান্ত আন্তর্জাতিক আইনে কোন পতনশীল সরকারের সাহায্য সবসময় হস্তক্ষেপ হিসাবে বিবেচিত হয় । আবার কোন অঞ্চলের বিদ্রোহীদের সাহায্য করাও আনর্জাতিক আইনের লংঘন । তবে এটিও প্রতিষ্ঠিত নীতি যে, কোন তৃতীয় সরকারের পক্ষ থেকে যদি অবৈধ হস্তক্ষেপের ব্যবস্থা করা হয়ে থাকে, তবে অন্য একটি রাষ্ট্র সেক্ষেত্রে অন্যপক্ষকে সাহায্য করলে তা হস্তক্ষেপ হিসাবে বিবেচিত হবে না । সিরিয়ার বিদ্রোহীদেরকে যেহেতু যুক্তরাষ্ট্র সহায়তা করেছে, তাই আসাদ সরকারকে রাশিয়ার সহযোগীতাও বৈধ । তবে মানবিক হস্তক্ষেপে (Humanitarian intervention) কোনপক্ষেরই কোন বাধা নেই ।

যেমন ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের রক্তক্ষয়ী স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় ভারত কতৃক হস্তক্ষেপ ছিল মানবিক হস্তক্ষেপ । আন্তর্জাতিক আইনে আরেকটি প্রতিষ্ঠিত নীতি হচ্ছে, স্বাধীনতা সংগ্রামে লিপ্ত যেকোন Defacto Government কে অন্যকোন রাষ্ট্র সহায়তা করতে পারে । এক্ষেত্রে হস্তক্ষেপ বলে গন্য হয় না । তবে অবশ্যই ডীফ্যাক্টো গভার্নমেন্ট থাকতে হবে, যুদ্ধকালীন পরিস্থিতি থাকতে হবে, যুদ্ধটি হতে হবে আত্মনিয়ন্ত্রনের অধিকার প্রাপ্তির জন্য, বিপরীত পক্ষের পতন মোটামুটি নিশ্চিত বলে প্রতিয়মান হবে , এরুপ ক্ষেত্রেই কেবল এটি সম্ভব । ।


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.